অথবা, বৈষ্ণব পদাবলীতে রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলাই মুখ্য বিশ্লেষণ কর

উত্তর : এই বৈষ্ণব পদাবলীর সঙ্গে বৈষ্ণবধর্মের একটা প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন মহাকাব্যে ও পুরাণে শ্রীকৃষ্ণকে ‘পূর্ণব্রহ্ম’ কিংবা ‘অবতার’ অথবা ‘বিষ্ণুর অবতার’ বলে বর্ণনা করে তাঁর অপরিসীম শক্তি, বুদ্ধি গুণরাশির যথাযথ পরিচয় বিবৃত করা হলেও তিনি বৃন্দাবনে গোপীদের সঙ্গে যে বিভিন্ন ণীলায় মত্ত ছিলেন, সেই প্রেমস্বরূপেরও কিছুটা বিবরণ আমরা বিভিন্ন সূত্রে পেয়ে থাকি। ভাগবতে কৃষ্ণলীলা প্রসঙ্গে স্পষ্টভাবে রাধার নামটি কিন্তু কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু সেখানে ব্রজগোপীরা নিরুদিষ্ট কৃষ্ণপ্রসঙ্গে একস্থানে বলছে যে, কৃষ্ণ হয়তো তাঁর প্রিয়তমা সখীটিকে নিয়ে নির্জন কুঞ্জেও লীলা করছেন।

দ্বাদশ শতকে জয়দেব গোস্বামী রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা অবলম্বন করে যে অপূর্ব সংগীতধর্মী ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্য রচনা করেন, তাতেই আমরা সর্বপ্রথম রাধাকৃষ্ণ-লীলার পরিপূর্ণ বিবরণ লাভ করি। ‘ব্রহ্মবৈর্বত-পুরাণ’-আদি কোনো অর্বাচীন পুরাণেও রাধাকৃষ্ণের লীলাকাহিনি বিস্তৃতভাবে পরিবেশিত হয়।

বড়ু চণ্ডীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ নামক এক নাট্যগীতিতে বাংলাভাষায় প্রথম রাধাকৃষ্ণকাহিনি কীর্তিত হয়। প্রায় সমকালেই মিথিলার কবি বিদ্যাপতি ঠাকুর রাধাকৃষ্ণ লীলাকাহিনির বিভিন্ন দিক অবলম্বন করে ব্রজবুলি ভাষায় কিছু পদ রচনা করেন। এগুলোকেই পদাবলী সাহিত্যের প্রাচীনতম রূপ বলে মনে করা হয়।