উত্তর : মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে বৈষ্ণব পদাবলী। এ পদাবলী সাহিত্যের অমর কবিতাগুলো রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা অবলম্বনে রচিত।

প্রাচীন যুগে কাব্যের কবিতার শেষে কবিরা নিজের নাম যোজনা করে আত্মপরিচয় দিতেন। বৈষ্ণব পদাবলীতে সেই রীতি অনুসৃত। বৈষ্ণব পদাবলীতে কবি পদের শেষে নিজের নামের উল্লেখ করে যে পরিচয় দেন, তাকেই ভণিতা বলা হয়। এ ভণিতার সাহায্যে পদাবলীর কবিকে সহজে চিনে নেওয়া যায় এবং কবির পদের বৈশিষ্ট্য অনুধাবন করা যায়।

বৈষ্ণব পদাবলিতে প্রধান নায়িকা কৃষ্ণের প্রেমিকা রাধা। সমর্থা নায়িকা বলতে বুঝায় যে নায়িকা অন্তরে স্বতঃসিদ্ধ কৃষ্ণরতি এবং যাঁর রতির মূলে আছে একমাত্র কৃষ্ণেন্দ্রীয় প্রীতি এবং প্রেমে কৃষ্ণ বশীভূত। যেমন-বৃন্দাবনের শ্রীরাধা, ললিতা, বিশাখা, চন্দ্রাবলি সমর্থা নায়িকা। এদের মধ্যে শ্রীরাধা সর্বশ্রেষ্ঠ। নায়িকার আটটি অবস্থা থাকে।

নায়িকার আটটি অবস্থা:

  1. অভিসারিকা
  2. বাসকসজ্জা
  3. উৎকণ্ঠিতা
  4. বিপ্রলব্ধা
  5. খণ্ডিতা
  6. কলহান্তরিতা
  7. প্রোষিতভর্তৃকা
  8. স্বাধীনভর্তৃকা।

নিচে বৈষ্ণব পদাবলী অবলম্বনে রাধার তথা নায়িকার অষ্ট অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হলো:

  1. অভিসারিকা : প্রিয় মিলনের জন্য কুঞ্জ অভিমুখে গমনকারিণী।
  2. বাসকসজ্জা: মিলনের উদ্দেশ্যে নিজ অঙ্গসজ্জা এবং গৃহ সজ্জায় নিরতা।
  3. উৎকণ্ঠিতা : নায়কের জন্য গৃহকুঞ্জে উৎসুকভাবে অপেক্ষারতা।
  4. বিপ্রলব্ধা : নায়কের দ্বারা প্রতারিত অথবা বঞ্চিতা।
  5. খণ্ডিতা : প্রতিনায়িকার কাছ থেকে আগত নায়ককে দেখে রুষ্টা।
  6. কলহান্তরিতা : নায়ককে হারিয়ে নায়িকার অনুতপ্তা।
  7. প্রোষিতভর্তৃকা : নায়কের মথুরা গমনে নায়িকার বিরহ।
  8. স্বাধীনভর্তৃকা : নায়ককে নিজ অধিকারের মধ্যে লাভকারিণী।

পর্যুক্ত আটটি অবস্থায় নায়িকার বিরহ প্রকাশ পায়। তাই আটটি অবস্থাই নায়িকার বিশ্লেষণ তথা বিশেষ গুণ।