অথবা, জ্ঞানদাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও

অথবা, বৈষ্ণব পদকর্তা জ্ঞানদাসের পরিচয় দাও

উত্তর : জ্ঞানদাস এর জন্ম বর্ধমান জেলায় আনুমানিক ১৫৩০ খ্রিষ্টাব্দে। জ্ঞানদাস এর ভণিতাযুক্ত ১৮৬টি পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১০৫ টি পদই ব্রজবুলি ভাষায় রচিত। কিন্তু আধুনিক সংকলনের তথ্যমতে জ্ঞানদাসের পদের সংখ্যা আরো বেশি। হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় এর মতে, জ্ঞানদাস এর পদের সংখ্যা সর্বসাকুল্যে চারশত। বৈষ্ণব পদকর্তাগণের মধ্যে জ্ঞানদাস শ্রেষ্ঠ না হলেও প্রধান পদ রচয়িতাদের একজন। অনেক গবেষক জ্ঞানদাস এর পদে আধুনিক মানসের প্রতিফলন লক্ষ করেছেন। এই বিবেচনায় কেউ কেউ তাঁকে বৈষ্ণব পদরচয়িতাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গণ্য করেছেন। জ্ঞানদাস ছিলেন চণ্ডীদাস প্রভাবিত কবি। সে কারণে তাঁর রচিত পদে বিরহ বেদনার অপূর্ব প্রকাশ ঘটেছে। জ্ঞানদাসের পদে চণ্ডীদাসের অনুকরণে রাধাবিরহ বিষয়ক পদগুলোর কোনো কোনোটি চণ্ডীদাসকেও ছাড়িয়ে গেছে বলে সমালোচক মন্তব্য করেছেন। জ্ঞানদাস মূলত চণ্ডীদাসের পদ অনুসরণ করে নিজ প্রতিভার মৌলিক সংযোগ ঘটিয়ে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাকে মানব-মানবীর চিরন্তন ব্যথা-বেদনার প্রতিচ্ছবি করে তুলেছেন। এখানে তাঁর কয়েকটি পদ তুলে ধরা হলো:

ক. “রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।

প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁন্দে প্রতি অঙ্গ মোর॥

হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে।

পরাণ পিরিতি লাগি থির নাহি বান্ধো॥”

খ. “গুরু গরবিত মাঝে রহি সখি সঙ্গে।

পুলকে পুরয়ে তনু শ্যাম পরসঙ্গে॥

পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার।

নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার॥”

জ্ঞানদাস ব্রজবুলি ও বাংলা উভয় ভাষা বৈশিষ্ট্যে পদ রচনা করেছেন। সমকালের কীর্তন গানের বহুল প্রচারের কারণে জ্ঞানদাস সম্ভবত অধিক সংখ্যক পদ ব্রজবুলিতে রচনা করেন। জ্ঞানদাস চৈতন্য পরবর্তী কবি হিসেবে পদাবলীতে যথেষ্ট ভাব বিষয় বৈচিত্র্য তথা কবিত্বের চমৎকারিত্ব প্রদর্শনে সক্ষম হয়েছিলেন। জ্ঞানদাসের রাধাকে “হর্ষোৎফুল্ল মিলন-ব্যাকুলা সুরসিকা নায়িকা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। জ্ঞানদা