বৈশাখী মেলা 

১৪ এপ্রিল ২০১৭ 

রাত ১০টা ২০ মিনিট 

ব্যস্ত একটি দিন কাটালাম। কলেজের আয়ােজনে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান উপভােগ করলাম। এরপর বন্ধুরা মিলে বিজিবি প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত মেলায় ঘুরতে গেলাম। মেলার প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে আমি তাে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। আরে এ যে ঢাকা শহরের ভিতর এক টুকরাে গ্রাম। প্রতিটি স্টল কুঁড়েঘরের আদলে তৈরি, সামনে কলাগাছ লাগানাে, তাতে পাকা কলার কাঁদি ঝুলছে। তারও সামনে একটি ছােটো পুকুরে মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে, উপরে কচুরিপানা ভেসে বেড়াচ্ছে। কোনাে স্টলের সামনে লাউ, কুমড়া, মরিচ গাছ। লাগানাে। একটি আঙুর গাছও দেখলাম। তাতে থােকা থােকা আঙুর ঝুলছে। স্টলগুলাের কোনােটিতে আছে দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রসিদ্ধ মিষ্টি, দই ইত্যাদি। কোনােটিতে বাচ্চাদের খেলনা। কোনােটিতে মরিচ, মশলা, ধনে, জিরা গুঁড়া। কোনােটিতে দেশি তাত বস্ত্র। কোনােটিতে দেশি বাদ্যযন্ত্র একতারা, দোতারা, বাঁশি ইত্যাদি। কোনােটিতে বেল, তরমুজ, বাঙ্গি, কাঁচা আম ইত্যাদির শরবত। কোনােটিতে বসানাে হয়েছে পেঁকি। একটি স্টলে দেখলাম কলুর বলদকে। যে বলদ ঘানি টানছে, আর তৈরি হচ্ছে সরিষার তেল। বলদের চোখ দুটি বাঁধা। এজন্যই বুঝি কবি বলেছিলেন, মা, আমায় ঘােরাবি কত কলুর চোখ বাঁধা বলদের মত? কলুর বলদের ঘানি টানা এই প্রথম দেখলাম । বিশাল মাঠের মাঝখানে একটি স্টলে একজন মুড়ি ভাজছে। মুড়ি ভাজার সব সরঞ্জাম দেখলাম। একজন সাপ খেলা দেখাচ্ছে, বানরের নাচ দেখাচ্ছে একজন, একজন কুমার মাটির জিনিসপত্র বানাচ্ছে। নাগরদোলায়। বাচ্চারা দোল খাচ্ছে, একজন জাদু দেখাচ্ছে। একটি স্টলে ঐতিহ্যবাহী পতুল নাচ হচ্ছে, বাইরে একজন বসে বায়ােস্কোপ দেখাচ্ছে, আছে ঐতিহ্যবাহী কুলফি। ছেলেবুড়াে সবাই মজা করে কুলফি ও আখের রসের শরবত খাচ্ছে। একটি স্টলে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রকম পিঠার আয়ােজন করা হয়েছে। একটি স্টলে আছে কদমা, বাতাসা, খােরমা, নাড়ু। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে, প্রতিটি • স্টলের সামনেই কৃত্রিমভাবে খনন করা অগভীর পুকুর আছে। আছে ফলে ভরা আমগাছ। বৈশাখের দুপুরে কাঁচা আম দেখলেই জিভে পানি আসে। একটি পুকুরের উপরে একটি কাঠের দুইতলা সমান উঁচু বাংলাে দেখলাম, যাতে উঠতে হয় কাঠের সিঁড়ি দিয়ে। গােরুর গাড়িও দেখলাম । কী নেই এখানে? গ্রামীণ সব ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের সম্মিলন ঘটেছে এই মাঠে। সারাদিন ঘুরে এর মধুময় স্মৃতিটুকু হৃদয়ে ধারণ করে বাসায় ফিরেছি। এমন একটি চমৎকার দিনের কথা আমি কখনাে ভুলব না।