সূচনা: বেলগ্রেডে আয়ােজিত নবম নির্জোট সম্মেলন (১৯৮৯ খ্রি.) থেকে শুরু করে ২০১১ খ্রিস্টাব্দে আয়ােজিত বিশেষ বেলগ্রেড সম্মেলন পর্যন্ত নির্জোট আন্দোলনের ধারা বজায় থেকেছে।

বেলগ্রেড সম্মেলন (১৯৮৯ খ্রি.)

  • আয়ােজন: ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর যুগােশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে নবম নির্জোট সম্মেলন বসে। এই সম্মেলন চলে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ: নবম নির্জোট সম্মেলনে ১০২টি সদস্য রাষ্ট্র অংশগ্রহণ করে। এ ছাড়াও অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে এই সম্মেলনে যােগ দেয় পােল্যান্ড, হাঙ্গেরি, কানাডা, জার্মানি, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে প্রভৃতি দেশ। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধি এই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তিনি নির্জোটভুক্ত দেশগুলির সামনে জাতিপুঞ্জের নেতৃত্বে এক পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক তহবিল ‘প্ল্যানেট প্রােটেকশন ফান্ড’ (PPF) গঠনের প্রস্তাব রাখেন।

  • আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সেগুলির সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলােচনা করা হয়। মানবাধিকার রক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণ, নিরস্ত্রীকরণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলােচনা করা হয়।

জাকার্তা সম্মেলন

  • আয়ােজন: ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর দশম নির্জোট সম্মেলন বসে। এই সম্মেলন চলে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে (১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে ১২-১৫ মে) ইন্দোনেশিয়ার বালিতে কো-অর্ডিনেটিং ব্যুরাের সভা বসে।

  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবর্গ: এই সম্মেলনে মােট ১০৮টি দেশের প্রতিনিধি যােগ দেয়। সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে উপস্থিত থাকে বসনিয়া হার্জেগােভিনা এবং শ্লোভেনিয়া। এ ছাড়াও মায়ানমারকে পূর্ণ নির্জোট সদস্য রাষ্ট্রের মর্যাদা দেওয়া হয়।

  • আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা, উপসাগরীয় যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক স্তরে সন্ত্রাসবাদের প্রসার, গ্যাট চুক্তিতে স্বাক্ষর দান, আণবিক মারণাস্ত্রের সম্প্রসারণ রােধের চুক্তি প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলােচনা করা হয়।

কার্টাজেনা সম্মেলন

  • আয়ােজন: একাদশ নির্জোট সম্মেলন আয়ােজিত হয় কলম্বিয়ার রাজধানী কার্টাজেনাতে (১৯৯৫ খ্রি., ১৮-২০ অক্টোবর)।

  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবর্গ: এই সম্মেলনে ১০৬টি দেশ যােগদান করে। এই সম্মেলনের উদবােধন করেন কলম্বিয়া প্রজাতন্ত্রের সভাপতি এইচ. ই. আর্নেস্তো স্যাম্পার পিজানাে।

  • আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে আলােচনার মূল বিষয় ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে জোটনিরপেক্ষতার প্রাসঙ্গিকতা। এই প্রথম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ এবং সেগুলির রূপায়ণের পদ্ধতি নিয়ে আলােচনা করা হয়। এ ছাড়াও সম্মেলনটিতে জীববৈচিত্র্যে (Biodiversity) সর্বপ্রথম আলােচিত হয়।

ডারবান সম্মেলন

  • আয়োজন: জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দ্বাদশ সম্মেলনটি বসে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবান শহরে (১৯৯৮ খ্রি., ২-৩ সেপ্টেম্বর)।

  • আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, AIDS-জাতীয় মারণ ব্যাধির প্রসার রােধ, আন্তর্জাতিক মাদক দ্রব্য চালান, সন্ত্রাসবাদ-এর মােকাবিলা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলােচনা করা হয়। সম্মেলনে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী সর্বাত্মক নিরস্ত্রীকরণের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন।

কুয়ালালামপুর সম্মেলন

  • আয়ােজন: মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর শহরে নির্জোট আন্দোলনের ত্রয়ােদশ সম্মেলনটি বসে (২০০৩ খ্রি., ২৪ ২৫ ফেব্রুয়ারি)।

  • আলােচিত বিষয়: সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের প্রসার, ইরাক সম্পর্কে মার্কিন নীতি, বিশ্ববাণিজ্যের বৈষম্য প্রভৃতি বিষয়ে আলােচনা করা হয়। এ ছাড়াও সদস্য রাষ্ট্রগুলি মধ্যপ্রাচ্যে এক গণবিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্র মুক্তাঞ্চল গঠনের ওপর জোর দেয়।

হাভানা সম্মেলন

  • আয়ােজন: কিউবার হাভানাতে চতুর্দশ নির্জোট সম্মেলনটি বসে (২০০৬ খ্রি., ১১-১৬ সেপ্টেম্বর)।

  • আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে ইরানের সঙ্গে আমেরিকার পরমাণু সম্পর্কিত সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান পদ্ধতি নিয়ে আলােচনা হয়। পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলি লেবাননের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণের নিন্দা করে এবং রাষ্ট্রসংঘের পুনর্বিন্যাসের দাবি জানায়। এই সম্মেলনে প্যালেস্তাইন সংকটের ওপর বিশদ আলােচনা হয়। সামগ্রিকভাবে এই সম্মেলনে সাম্রাজ্যবাদের বিরােধিতা করা হয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির আর্থসামাজিক সংকটের দ্রুত সমাধানের ওপর জোর দেওয়া হয়।

শারম-এল-শেখ সম্মেলন

  • আয়ােজন: মিশরের শারম-এল-শেখ শহরে পনেরােতম নির্জোট সম্মেলনটি বসে (২০০৯ খ্রি., ১১-১৬ জুলাই)।

  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবর্গ: এই সম্মেলনে ১১৮টি দেশ যােগ দেয়। সম্মেলনে মিশরের প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান হােসনি মুবারক নির্জোট আন্দোলনকে সজীব ও প্রাণবন্ত আখ্যা দেন। এই সম্মেলনে উপস্থিত একমাত্র ইউরােপীয় সদস্য দেশটি ছিল বেলারুশ।

  • আলােচিত বিষয়: এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের ওপর আলােচনা ও বিতর্ক হয়। বলা হয়, কোনাে ধর্ম, গােষ্ঠী, সম্প্রদায় বা সভ্যতার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের দ্বন্দ্বমূলক সম্পর্ক নেই। সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমােহন সিং এক সর্বাত্মক সহযােগিতার চুক্তি তৈরি ও তা কার্যকর করার প্রস্তাব রাখেন।