“ফ্যাসাদ। লটারির টিকিট না কিনলে লটারিতে টাকা পাবার উপায় নেই, ভোটে না দাঁড়ালে এম-এল-এ হবার উপায় নেই।”- উৎস নির্দেশ করো।

আলোচ্য অংশটি সতীনাথ ভাদুড়ীর ‘চরণদাস এম.এল.এ.’ শীর্ষক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

লটারিতে টাকা পেতে হলে যেমন প্রাথমিক কর্তব্য হল লটারির টিকিট কাটা, এম.এল.এ. হতে গেলে তেমনি প্রাথমিক কর্তব্য হল ভোটে দাঁড়ানো। কিন্তু চরণদাসের মতো এম.এল.এ-দের পক্ষে ভোটে দাঁড়ানোর এবং জেতার একটা বড় সমস্যা এই যে এঁরা কেউ জনসংযোগ রাখেন না। ভোটে জেতার পর জনগণের প্রতিনিধির কাজের চেয়ে নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ এবং নিজেকে বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে বিশেষ উদ্যোগী হয়ে থাকে। কিন্তু এই বন্দোবস্ত চিরস্থায়ী থাকে না। আবার তাদের ভোটে দাঁড়াতে হয়। এখন চরণদাসের মতো ব্যক্তিদের একটা বড় সমস্যা ও ভয়ের কারণ এই যে তারা জনসংযোগের জন্যে টাকা দিয়ে অন্য লোক নিযুক্ত করে থাকেন। ভোটের আগে যদি সেই সব লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে ভোটারদের মন ঘুরিয়ে দেয় তা হলে বিপদ হতে পারে। তাই চরণদাসকে নির্বাচন ক্ষেত্রে আসতে হয়। এটা তাঁদের মতো লোকের পক্ষে বিড়ম্বনার সামিল। তাই ব্যঙ্গ করে লেখক এখানে ‘ফ্যাসাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

“শুনেই ছুটে এসেছেন তিনি নকল ছেড়ে আসল ভগবানের শরণে”—কার সম্বন্ধে এ কথা বলা হয়েছে? এই আসল ভগবান কারা? তাদের কাছে কে, কেন ছুটে এসেছেন?

আলোচ্য কথাটি চরণদাস এম. এল. এ সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

এখানে আসল ভগবান ভোটারদের বলা হয়েছে।

চরণদাস এম.এল.এ., তাঁর নির্বাচন ক্ষেত্রে পারতপক্ষে আসেন না। এম.এল.এ. হবার পর থেকেই গ্রামের পৈতৃক বাড়িটা সরকারকে ভাড়া দিয়ে তিনি শহরে থাকেন। সেখানে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর পুরোনো অম্বলের ব্যথাটা সেরে গেছে। ছেলে মেয়েরাও ভালো স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এদিকে আসতে হলে তিনি এসে ওঠেন সার্কিট হাউসে। ভোটারদের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। তাঁর থেকে মাসোহারা নিয়ে যোগাযোগ রাখে লখনলাল, বচকনের মতো তাঁর পার্টি অফিসের কর্মীরা। কিন্তু এখন তিনি সেই ভোটারদের কাছে ছুটে এসেছেন। কারণ হাইকমাণ্ড থেকে জানানো হয়েছে যে, ভোটারদের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক কম তাদের আসছে বার আর এম.এল.এ করা হবে না। এই শুনেই ছুটে এসেছেন চরণদাস তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রে ভোটার নামক নরনারায়ণের কাছে।

“এ যাত্রায় উনি একেবারে পুরনো চরণদাসজী সেজেছেন”—উক্তিটি কার? এই মন্তব্যের কারণ কী?

আলোচ্য উক্তিটি এম.এল.এ. চরণদাসের পার্টিকর্মী লখনলালের।

চরণদাস এম.এল.এ. হবার পর থেকেই শহরে বাস করেন। সেখানে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর পুরোনো অম্বলের ব্যথাটা সেরে গেছে। ছেলে মেয়েরাও ভালো স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এদিকে আসতে হলে তিনি এসে ওঠেন সার্কিট হাউসে। নির্বাচন ক্ষেত্রের ভোটারদের সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। তাঁর থেকে মাসোহারা নিয়ে যোগাযোগ রাখে লখনলাল, বচকনের মতো তাঁর পার্টি অফিসের কর্মীরা। আগে তিনি ছিলেন গ্রামের সকলের ভালোবাসার জন। কিন্তু শহরে থাকার জন্যে স্বাভাবিক ভাবেই সংযোগ যথেষ্ট পরিমাণে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। কিন্তু হাইকমাণ্ডের নির্দেশে যখন তিনি গ্রামে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তখন শহরের বিলাসী ব্যবহার্য ত্যাগ করে তাঁকে পুরনো দিনের মতো গ্রাম্য বস্তুই ব্যবহার করতে হবে। গ্রাম্য বস্তু ব্যবহার করতে না দেখলে গ্রামের মানুষেরা তাঁকে আপনজন বলে মনে করতে পারবে না। এই সত্যটি বুঝিয়ে দেবার জন্যে লখনলাল বিদ্রুপাত্মক এই মন্তব্য করেছিল।

“আরে চথুরি, মানুষ কি আর বদলায়। যে যেমন ছিল তেমনি থাকে।”—উক্তিটি কার? এই মন্তব্যের কারণ কী?

আলোচ্য উক্তিটি এম.এল.এ. চরণদাসের। 

চরণদাস এম.এল.এ. হবার পর থেকেই শহরে বাস করেন। এদিকে আসতে হলে তিনি এসে ওঠেন সার্কিট হাউসে। গ্রামের পথে হাঁটা তো দূরস্থান, গ্রামের মানুষের কাছাকাছি আসার ইচ্ছা বা অবকাশও তার থাকে না। কিন্তু হাইকমাণ্ডের নির্দেশে জনসংযোগ বাড়ানোর কাজে বাধ্য হয়েই তাঁকে আসতে হয়েছে নিজের গ্রামে তথা নির্বাচন কেন্দ্রে। সেখানে এসে নিজেকে গ্রামেরই একজন মানুষ হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্যে দাঁতন হাতে খালি পায়ে গ্রাম বেড়াতে বেরিয়ে ছিলেন। খালি পায়ে গ্রামের পথে দাঁতন করতে বেরিয়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে হেঁকে ডেকে তিনি কথা বলছিলেন। এমন সময় চথুরি তাঁকে দাঁতন করতে করতে খালি পায়ে বেড়াতে দেখে তাঁর বিস্মিত হয়ে পুরনো অভ্যাস বজায় রাখার জন্যে তাঁকে সাধুবাদ দেওয়ার উত্তরে চরণদাস এই কথা বলেছিলেন। বস্তুত তিনি যে দীর্ঘ শহর বাসের পর আজও তাদেরই মতো সহজ আছেন এই কথাটিই চথুরিকে বোঝাতে চেয়েছিলেন।

“পাবলিক অবুঝ, জনতা খামখেয়ালী, জনসাধারণ নিমকহারাম”-নির্দেশ করো? এই মন্তব্যের কারণ কী?

আলোচ্য অংশটি সতীনাথ ভাদুড়ীর চরণদাস এম.এল.এ.’ শীর্ষক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। চরণদাসের মতো এম.এল.এ. ও তাঁর পার্টিকর্মীদের কাছে জনগণের ভোটাধিকারী ছাড়া অন্য কোনো অধিকার নেই। ভোটার তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদের মতে তারা ফাঁকি দিয়ে বেঁচে আছে অন্যায় ভাবে। কিন্তু চরণদাস এম.এল.এ-র নির্বাচন কেন্দ্রের যারা ভোটাধিকারী, তারা ইদানীং যেন চরণদাসদের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়। গ্রামে কোনো রাজনৈতিক নেতা এলে তার মালার জন্যে ফুল পর্যন্ত এরা দিতে পারে না। এমন কি সকাল বেলায় খোদ এম.এল.এ. সাহেব নিজে বেড়াতে গিয়ে দেখেছেন সকলেই যেন তাঁকে এড়িয়ে চলতে চায়। অথচ অনেককে তিনি অনেক সুপারিশ পত্র লিখে দিয়েছেন, শহরে তাঁর বাড়িতে উঠে তার অন্ন ধ্বংস করে অনেকে হাইকোর্টের মামলা চালায়। তার পরেও চরণদাস সহ সমস্ত পার্টিকর্মী দেখেছেন, চরণদাসের প্রতি গ্রামবাসীদের কোনো শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা নেই। সবই নিবেদিত হয়েছে জগৎগুরু সহস্রানন্দের উদ্দেশ্যে। গ্রামবাসীর এই অশ্রদ্ধার প্রতিফলন ভোটবাক্সে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় পার্টি অফিসের মিটিঙে এই নিষ্ফল ধিক্কার ধ্বনিত হয়েছিল।

“বেয়াদব লোকদের বৈজ্ঞানিকভাবে মেরে শায়েস্তা করতে আমি বিশেষজ্ঞ”-ঘোষণাটি কার? এই মন্তব্যের আলোক্যে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

আলোচ্য ঘোষণাটি চরণদাস এম.এল.এ-র।

মৌলবী সাহেব জন গণনার কাজে পার্টি অফিসে এসে চরণদাসের নাম এখানে নথিভুক্ত হবে কি না জানতে চাইলে, চরণদাস তাঁর উপর ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন। এবং সেই সঙ্গে তিনি যে প্রয়োজনে বাহুবল প্রয়োগ করতে পারেন, সে কথা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় জানিয়ে দেন। তাঁর এই মন্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যায়, চরণদাসের মতো এম.এল.এ-রা নীতি নির্ধারিত পথে চলতে গিয়ে বাধা পেলে প্রয়োজনে গায়ের জোর খাটোতেও কুণ্ঠিত হন না। এঁরা দেশের আইন প্রণয়নের অংশীদার হলেও আইনের তোয়াক্কা করেন না। প্রভাবশালী বা প্রতিপত্তি সম্পন্ন কোনো লোকের সঙ্গে যুক্তিতে পরাস্ত হলে, ইলেকশনের আশায় মীমাংসা জিইয়ে রাখে না। তখন এঁদের হিংস্র নখ দাঁত বেরিয়ে পড়ে। এবং সেই হিংস্র নখ দাঁতের আচড় কামড় এমনই সুনিপুণ যে তা দীর্ঘস্থায়ী এবং কোনো উপায়েই তা প্রতিকার অযোগ্য। তাই এই ঘোষণার মধ্যে দিয়ে চরণদাসের ক্ষমতার দাম্ভিক অপব্যবহার প্রবণ হিংস্র চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে।