প্রশ্নঃ বেন্থামের উপযোগবাদের গঠন প্রণালি ব্যাখ্যা কর। মিলের উপযোগবাদ থেকে বেহামের উপযোগবাদের পার্থক্য দেখাও।

ভূমিকাঃ নৈতিকতার মানদণ্ড সম্পর্কীয় মতবাদগুলোর মধ্যে সুখবাদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু আমরা কিভাবে সুখের সন্ধান পেতে পারি? আমরা কি শুধুমাত্র নিজেদের সুখ কামনা করব নাকি পরের সুখ নিয়ে লালন করব? ইত্যাদি নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখী আমাদের প্রতিনিয়ত হতে হয়। সুখবাদ নিয়ে বিভিন্ন চিন্তাবিদ বিভিন্নভাবে তাদের মতবাদকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

বেন্থামের সুখবাদের গঠন প্রণালিঃ বেন্থাম পরিমাণগত সুখের উপর ভিত্তি করে সুখের সাতটি মানদণ্ডের কথা নির্দেশ করেছেন। নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. তীব্রতাঃ সব সুখের তীব্রতা এক রকম নয়। কোনটি বেশি তীব্র আবার কোনটি কম তীব্র। যে সুখটি বেশি তীব্র সেটি আমাদের কাম্য হওয়া উচিত।

২. স্থায়ীত্বঃ সুখ ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। আমাদের সব সময় দীর্ঘস্থায়ী সুখ কামনা করা উচিত।

৩. উর্বরতাঃ যে কাজ বেশি সুখ উৎপাদন করে সে কাজ শুভ এবং যে কাজ সুখ উৎপাদর করে না সে কাজ অশুভ। অর্থাৎ উর্বরতাসম্পন্ন সুখই আমাদের কাম্য হওয়া উচিত।

৪. বিস্তৃতিঃ বেন্থামের সুখবাদের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো সর্বাধিক পরিমাণ লোকের জন্য সর্বাধিক পরিমাণ সুখম অন্বেষণ করা। অর্থাৎ তিনি সার্বিক সুখের উপর জোর দিয়েছেন।

৫. বিশুদ্ধিঃ আমাদের খেয়াল রাখা উচিত যেন সুখের মধ্যে কোনো প্রকার দুঃখ লুকিয়ে না থাকে। তার মানে হলো বিশুদ্ধ সুখই আমাদের কাম্য।

৬. নৈকট্যঃ সুখের নৈকট্য বলতে সুখের ধারাবাহিকতাকে বোঝানো হয়। অর্থাৎ নিকটবর্তী সুখই আমাদের পরম উদ্দেশ্য। 

৭. নিশ্চয়তাঃ নিশ্চিতপূর্ণ সুখই আনন্দ আনয়ন করে। অনিশ্চিতপূর্ণ সুখের পেছনে আমাদের ছোটা উচিত নয়। 

বেন্থাম ও মিলের উপযোগবাদের মধ্যে পার্থক্যঃ নিম্নে বেন্থাম ও মিলের উপযোগবাদের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা হলো- 

(ক) পরিমাণগত ও গুণগতঃ বেন্থাম সুখের পরিমাণগত বৈশিষ্ট্যের কথা স্বীকার করেছেন। অন্যদিকে মিল সুখের গুণগত বৈশিষ্ট্যের কথা জোর দিয়ে প্রচার করেছেন।

২. বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণঃ বেন্থাম নৈতিক বাধ্যবাধকতার উৎস হিসেবে কয়েকটি নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। যেমন (১) সামাজিক (২) ধর্মীয়, (৩) রাষ্ট্রীয়, ৪. প্রাকৃতিক। কিন্তু মিল বেন্থামের বাহ্যিক নিয়ন্ত্রণের সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন।

৩. কাম্য বস্তুঃ মিল মনে করেন, সর্ব সাধারণের সুখই পরম উদ্দেশ্য। অন্যদিকে বেন্থাম মনে করেন, মানুষ যে অন্যের সুখ কামনা করে তার পেছনে ব্যক্তির নিজ সুখের আকাঙ্ক্ষা লুকিয়ে আছে।

৪. অভিজ্ঞতাবাদঃ বেন্থাম ও মিল উভয়েরই মতবাদ আলোচনা করলে দেখা যায় যে তারা সবাই অভিজ্ঞতাবাদকে বেশি সমর্থন করেছেন।

৫. সুখের মানঃ বেন্থাম সুখের কয়েকটি প্রণালির কথা প্রচার করেছেন। যেমন, তীব্রতা, নিশ্চয়তা, স্থায়িত্ব ইত্যাদি। মিল এসব প্রণালির মধ্যে দিয়ে উচ্চতর সুখের কথা প্রচার করেছেন। মিল এ প্রসঙ্গে বলেছেন যে, একজন মূর্খ মানুষ হওয়ার চেয়ে একজন অসুখী সক্রেটিস হওয়া ভালো।

উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বেন্থামের উপযোগবাদ আত্মসুখের উপর প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং এ মতবাদ গ্রহণযোগ্য নয় । সুখের পরিমাণগত ভিত্তিকে নিরূপণ করতে গিয়ে তিনি অনেকগুলো নিয়ন্ত্রণের আশ্রয় নিয়েছেন। সুতরাং নীতি দর্শনের ইতিহাসে বেন্থামের উপযোগবাদের গুরুত্ব অপরিসীম।