পায়রাবন্দ রংপুরের একটি অখ্যাত গ্রামের নাম। সে গ্রামেরই এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে নতুন যুগের নববার্তা নিয়ে বেগম রোকেয়া জন্মেছিলেন। পারিবারিক ঐতিহ্য তার বিদ্যাশিক্ষার অনুকূল ছিল না। সে যুগে মুসলিম নারীরা বিদ্যাশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল। বেগম রোকেয়া গোপনে বাংলা ভাষা শিক্ষা করেন রাতের ঘুম তুচ্ছ করে। তার ঐকান্তি ক আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে শিক্ষিত করে তোলে। ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্ম। পর্দার অন্তরালে ছিল তার বাস। সৌভাগ্যক্রমে বেগম রোকেয়া স্বামী হিসেবে লাভ করেন এক উদারমনা, শিক্ষিত, সুরুচিসম্পন্ন ভদ্রলোককে। তার নাম সাখাওয়াত হোসেন। বেগম রোকেয়া স্বামীর উৎসাহ ও উদ্দীপনায় লেখাপড়ার প্রতি আরো বেশি অনুরাগী হন।
বেগম রোকেয়ার দাম্পত্য জীবন সুখের ও আনন্দের হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তার বিয়ে হয় এবং ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বৈধব্য বরণ করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রোকেয়া নিজেকে বড়ো নিঃসঙ্গ মনে করেন। নারীদের শিক্ষার জন্য তিনি স্বামীর নামে ভাগলপুরে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টির নাম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে বেগম রোকেয়া স্কুলটি কলকাতায় স্থানান্তরিত করে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করেন। অভিজাত পরিবারের পর্দা প্রথার কুফল সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা বেগম রোকেয়ার ছিল। বাংলার মুসলিম মহিলাদের দুঃখময় অবহেলিত জীবনকে তিনি মুক্ত করার মানসে নারী শিক্ষা প্রচলনে ব্রতী হন। বেগম রোকেয়া বাংলাদেশে নারী শিক্ষার অগ্রদূতী। বেগম রোকেয়া শুধু শিক্ষাবিস্তার করেই তার কর্তব্য শেষ করেননি, সমাজসংস্কার ও সমাজ গঠনমূলক কাজেও তিনি সক্রিয় অংশ নেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে দুস্থ মহিলাদের কল্যাণে তিনি আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম বা মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।
বেগম রোকেয়ার সবচেয়ে বড়ো পরিচয় তিনি লেখিকা এবং বিশ শতকের উন্মেষকালের শ্রেষ্ঠ মুসলিম লেখিকা। বেগম রোকেয়া বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের আলোকে তার গ্রন্থের কাহিনি রচনা করেছেন। সমাজের কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতা ও জড়তা দূর করার জন্যই বেগম রোকেয়া লেখনী ধারণ করেছিলেন। সমাজের নানা অবিচার অত্যাচার তাকে পীড়িত করেছিল। তাই তিনি প্রবল প্রতিবন্ধকতার মুখেও মুসলিম মহিলাদের মুক্তির লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন।
বেগম রোকেয়ার রচনাবলি:
১. মতিচুর (প্রবন্ধ গ্রন্থ) ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে ১ম খণ্ড প্রকাশিত।
২. মতিচুর (প্রবন্ধ গ্রন্থ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে ২য় খণ্ড প্রকাশিত)।
৩. পদ্মরাগ (উপন্যাস) ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত।
৪. অবরোধবাসিনী (ব্যঙ্গরসাত্মক কাহিনি) ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত।
৫. সুলতানার স্বপ্ন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment