দন্ডবিধি আইনের ১৪১ ধারা অনুযায়ী,পাচঁ বা ততোধিক ব্যক্তির ওই সমাবেশকে  বেআইনী সমাবেশ[Unlawful assembly] বলে অভিহিত হবে যখন ঐ সমাবেশ অসৎ উদ্দেশ্য, রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজ বা শান্তি ভংগের কারণ বলে বিবেচিত হবে ।  কোন বেআইনি সমাবেশ হতে হলে পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি সাধারণ উদ্দেশ্যে একত্র হওয়া প্রয়োজন।[AIR 1950 FC 80]

মতি দাস বনাম বিহার রাজ্যে[AIR 1954 SC 657] মামলায় বলা হয়েছে যে, It was held that ‘an assembly, which was lawful to start with, became unlawful the moment one of the members called on the others to assault the victim and his associates, and in response to his invitation all the members of the assembly started to chase the victim while he was running.

 বেআইনি সমাবেশের উপাদান হলো-

  • ৫(পাঁচ) বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত [Assembly] বা উপস্থিতি;
  • সমাবেশকারীদের মধ্যে একটি সাধারণ উদ্দেশ্য(Common object) থাকবে;
  • ঐ সাধারণ উদ্দেশ্য হবে বেআইনি বা আইন বহির্ভূত;
  • সমাবেশে সকালে স্ব- জ্ঞানে এবং স্ব-ইচ্ছায় অংশগ্রহণ করবে;
  • বল প্রয়োগ বা অন্য কোন উপায় সরকারকে ভয়াভিভূত করা;
  • আইনগত প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বাধাদান;
  • অন্যায় ভাবে অনধিকার প্রবেশ বা দুষ্কর্ম সাধন করা;
  • বলপ্রয়োগে সম্পত্তির অধিকার অর্জন বা কাউকে বিরত রাখা।

মোটকথা, বেআইনি সমাবেশে উপস্থিত সদস্যবৃন্দ দন্ডবিধি আইনের ১৪১ ধারায় উল্লেখিত অপরাধের যেকোন একটিতে জড়িত থাকবে। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, যে ব্যক্তি উপরক্ত উপাদান সম্বলিত সমাবেশে যোগদান করবে বা অবস্থান করবে সেই ব্যক্তি বেআইনি সমাবেশকারী হিসেবে আইনের চোখে দোষী বলে গণ্য হবেন । তবে ‘সমাবেশ যখন বেআইনি হয়ে যায় তখন সেই সমাবেশে উপস্থিত কোন ব্যক্তি যদি উক্ত সমাবেশ স্থল ত্যাগ করে, তবে সেই ব্যক্তিকে বেআইনি সমাবেশের সদস্য বলা যাবে না। তিনি যদি চলে না যায় তবুও তিনি যদি তার মতামত স্পষ্ট করে এইভাবে ব্যক্ত করেন যে, সমাবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি একমত নন তবে তাকে বেআইনি সমাবেশের সদস্য হিসেবে গন্য করা যাবে না।[AIR 1950 (Allahabad ) 45]

আপনাদের জানা উচিত যে, বেআইনি সমাবেশ সম্পর্কে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা-১২৭ হতে ধারা-১৩২ পর্যন্ত বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বৈধ সমাবেশ যেভাবে অবৈধ হতে পারে-

  • ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’-মর্মে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সমাবেশে স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। তাই বলা যায়, সাংবিধানিকভাবে সকল নাগরিকের জনসমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। তবে কিছু কাজ বা কর্মকাণ্ডের জন্য বৈধ সমাবেশ অবৈধ বা বেআইনি সমাবেশে পরিণত হতে পারে। নিচে সেইসব কাজ বা কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরা হলো:
  • সরকার বা সরকারী কর্মচারীগণের বৈধ কাজ বা দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়া বা ভয়ভীতি প্রদর্শন করা। অর্থাৎ এমন কোন সমাবেশ থেকে ★অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে সরকার, জাতীয় সংসদ কিংবা সরকারী কর্মচারীকে তাদের আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা কিংবা আইনানুগ ক্ষমতা প্রয়োগে বাধা প্রদানকরে তবে ঐ সমাবেশ বেআইনি সমাবেশ হিসেবে গণ্য হবে।
  • আদালতের পরোয়ানা কার্যকরী কাজে অর্থাৎ আইন প্রয়োগে বাধাদান করা। যদি সংশ্লিষ্ট সমাবেশটি আইন প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে অথবা পরোয়ানা জারির কাজে অর্থাৎ আইনানুগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করে । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, যথাযথ বিধান মেনে কোন অপরাধীকে গ্রেফতার বা সম্পত্তি ক্রোক করার মতো আইনগত কাজে আইনের নির্দেশ কার্যকরী করার ক্ষেত্রে ৫(পাঁচ) বা ততোধিক ব্যক্তির বাধা প্রদান করা বেআইনি।
  • কোন অপকর্ম বা অনধিকার প্রবেশ করা বা অন্য কোন অপরাধজনক কাজ করা। যদি পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট সমাবেশটি কোন ক্ষতি কর বা অনিষ্টকর কার্য বা অনধিকার প্রবেশ বা অন্যবিদ অপরাধ সংঘটন করে তবে তা বেআইনি সমাবেশ বলে বিবেচিত হবে। AIR 1958 Rajasthan 226 মামলায় হয়েছে যে, কোন বাড়ি লুট করা কিংবা সম্পত্তির ক্ষতি করা বেআইনি সমাবেশের উদ্দেশ্য হতে পারে। কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে মারপিট করা বেআইনি সাধারণ উদ্দেশ্য রূপে পরিগণিত।
  • অপরাধমূলক বলপ্রয়োগের হুমকি প্রদর্শন করে বা ভয় দেখিয়ে সম্পত্তি দখল করা বা অন্য যেকোন আইনগত অধিকার[পথ বা পানির ব্যবহার বন্ধ করা] বা অধিকার আদায়ের চেষ্টা করা বা কাউকে বঞ্চিত করা, তদীয় দখল বা এখতিয়ারভূক্ত অন্য কোনো কল্পিত বা অশরীর অধিকার হতে বঞ্চিত করার মতো কাজ বেআইনি সমাবেশের সৃষ্টি করতে পারে। দেখুন, Ratan Lal And Ors. vs Hari Shanker And Ors; AIR 1949 Allahabad 180 মামলায় বলা হয়েছে যে,নিজের সম্পত্তিও জোর করে দখল নেওয়ার উদ্দেশ্যে সমাবেশ সংগঠন করা বেআইনি।
  • ফৌজদারি শক্তি প্রয়োগ করে বা অপরাধমূলক বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে আইনত বাধ্য নয় এমন কাজ করতে ওই ব্যক্তিকে বাধ্য করা কিংবা যে কাজটি করতে আইনত বাধ্য বা আইনানুগ অধিকার আছে, সেই কাজ করা হতে বিরত রাখা।
  • কোনো ব্যক্তিকে বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করা: অন্যের ওপর সমাবেশ যদি তাদের একটি বেআইনি কাজ করতে বাধ্য করে তবে সেই সমাবেশটি হবে বেআইনি সমাবেশ।

[An assembly of five or more persons is designated an “unlawful assembly,” if the common object of the persons composing that assembly is-

First.-To overawe by criminal force, or show of criminal force, Government or Legislature, or any public servant in the exercise of the lawful power of such public servant; or

Second.-To resist the execution of any law, or of any legal process; or

Third.-To commit any mischief or criminal trespass, or other offence; or

Fourth.-By means of criminal force, or show of criminal force, to any person to take or obtain possession of any property, or to deprive any person of the enjoyment of a right of way, or of the use of water or other incorporeal right of which he is in possession or enjoyment, or to enforce any right or supposed right; or

Fifth.-By means of criminal force, or show of criminal force, to compel any person to do what he is not legally bound to do, or to omit to do what he is legally entitled to do.

Explanation.-An assembly which was not unlawful when it assembled, may subsequently become an unlawful assembly.]

[★অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ: অপরাধমূলক বল প্রয়োগের সংজ্ঞায় দন্ডবিধি আইনের ৩৫০ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি কোন অপরাধ সংঘটনের জন্য কোন ব্যক্তির প্রতি উক্ত ব্যক্তির সম্মতি ছাড়া বলপ্রয়োগ [শক্তি প্রয়োগ] করে কিংবা অনুরূপ বলপ্রয়োগের মাধ্যমে যে ব্যক্তির প্রতি বল প্রয়োগ করা হয় সেই ব্যক্তির জখম, ভীতি বা বিরক্তি সৃষ্টি করার অভিপ্রায় [ইচ্ছা],  অথবা সেই ব্যক্তির ক্ষতি, ভীতি বা  বিরক্তি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে জেনেও তার সম্মতি ছাড়াই তার প্রতি বলপ্রয়োগ করে- এমন অবস্থায় সেই ব্যক্তি অপর ব্যক্তির প্রতি অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করেছে বলে গণ্য করা  হবে।]

বৈধ সমাবেশ অবৈধ সমাবেশে পরিনত হলে ছত্র ভঙ্গ করার পূর্বে কর্বত্যরত পুলিশ অফিসারে দায়িত্বঃ-

১। অবৈধ জনতা ও দাঙ্গা – হাঙ্গামা রোধকল্পে পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার, পুলিশ ইন্সপেক্টর বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যিনি (সাব-ইন্সঃ) এমন পদের অফিসার বে-আইনী সমাবেশে যোগদানকারী সকলকে ছত্র ভঙ্গ হবার জন্য আদেশ দিতে পারেন। কাঃবিঃ আইনের ১২৭(১)ধারা, পুলিশ আইনের ৩০(ক)১ পিআরবি-১৪২বিধি।

২। পুলিশ আইনের ৩০(ক)১ ধারা, কাঃবিঃ আইনের ১২৭(১)ধারা, পিআরবি-১৪২বিধি মতে পুলিশ অফিসার অবৈধ জনতা ছত্রভঙ্গ হওয়ার আদেশ প্রদান করার পরও যদি অবৈধ জনতা ছত্রভঙ্গ না হয় আদেশ অমান্য করে কেউ সমাবেশ শোভাযাত্রা করতে থাকলে পুলিশ অফিসার উক্ত অবৈধ জনতাকে বলপ্রয়োগ ও গ্রেফতারের মাধ্যমে জনসমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করতে পারেন। কাঃবিঃ আইনের ১২৮ ধারা, পুলিশ আইনের ৩০(ক)২ পিআরবি-১৪৩ বিধি।

৩। বে-আইনী সমাবেশের যোগদানকারী ব্যক্তিগন পুলিশের আদেশ অমান্য করে সরকারী বেসরকারী সম্পত্তি ধ্বংসাত্বক কাজে লিপ্ত হলে ও মানুষের জীবনাশমুলক কাজে লিপ্ত হলে প্রয়োজনে পুলিশ অফিসার আগ্নোয়াস্ত্রের ব্যবহার করার আদেশ দিতে পারে। সে সময় ৯৯ ধারা নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে দাঙ্গা-হাঙ্গামা রোধ করতে পারেন। পুলিশ আইনের ৩০(ক)২ পিআরবি-১৫৩(গ) বিধি, দঃবিঃ ১০০/১০৩ ধারা।

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের আগের নিয়মাবলী

  • পুলিশ অফিসার গুলি করার আগে সর্তকতা বানী শুনাবেন।

  • গুলি অবশ্যই নির্ধারিত লক্ষ্য নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে।

  • একেবারে অপরিহায কারন ব্যতীত কোনো রূপে বড়ধরনের কোন ক্ষতি সাধন করা উচিত নয়।

  • উদ্দেশ্য সফল হওয়া মাত্রই গুলি করা বন্ধ করতে হবে। [পিআরবি-১৫৪ বিধি]

গুলি চালনার নিদের্শ ও গুলি নিয়ন্ত্রন

  • পিআরবি ১৫১(৩) বিধির অধিনে অধিনায়ক পুলিশ অফিসার বলপ্রয়োগের এবং ম্যাজিষ্ট্রেট গুলি চালনার নির্দেশ দিবেন। কোনো ম্যাজিষ্ট্রেট সঙ্গে না থাকলে অধিনায়ক প্রয়োজন মনে করলে গুলি চালনার নির্দেশ দিবেন।

  • তিনি গুলি বর্ষণ কে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন যাতে নূনতম ক্ষতি সাধন করে তাড়াতাড়ি উদ্দেশ্যে সাধন করা যায় এবং তিনি গুলির সংখ্যা নির্ধারণ করে দিবেন।

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলে পুলিশ অফিসার অবশ্যই পিআরবি ১৫৬ বিধি অনুসরণ করবেন।

আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের পর পুলিশ অফিসারের করনীয়

  • পুলিশ দলনেতা যতশীঘই মৃতদেহ(যদি থাকে) হাসপালের মর্গে প্রেরণ করবেন।

  • আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠাবেন।

  • ফায়ারকৃত গুলির খোসাগুলো হিসাব করে ইস্যূকৃত গুলির সাথে মিলিয়ে দেখবেন কত রাউন্ড গুলি ফায়ার হয়েছে।

  • ঘটনার সম্পর্কে একটি নিখুঁত বিস্তারিত বিবরণ, গুলির পরিমান উল্লেখসহ যতশীঘই সম্ভব নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ সুপার , ঢাকা মহানগর হলে কমিশনার বা আইজিপির নিকট প্রেরণ করবেন।

পিআরবি ১৫৬,১২০ বিধি,ফৌঃকাঃ ১৫০ ধারা, পুলিশ আইন ২৩ ধারা।