ব্যক্তিজীবনের মূল লক্ষ্য হল পরিবেশের সঙ্গে অভিযােজন। পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে অভিযােজনে যে দুটি উপাদানের বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়, তা হল বৃদ্ধি ও বিকাশ। Ernest Jones-এর মতে, দেহের উচ্চতা ও ওজন বেড়ে যাওয়াকে বৃদ্ধি বলে। যেমন— শিশুর উচ্চতা বৃদ্ধি, ওজন বৃদ্ধি, হাতের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ইত্যাদি।
বিকাশ হল প্রার্থীর মধ্যে ক্রমপরিবর্তন যা শুধুমাত্র শারীরিক পরিবর্তনে সীমাবদ্ধ থাকে না। ব্রিয়াগত (functional) পরিবর্তনও আবশ্যিক শর্ত, যেমন—কোনাে কিছু করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া, নির্ভুলভাবে কর্মসম্পাদন করতে পারা ইত্যাদি। বিকাশ অবশ্যই বৃদ্ধির ফলে সম্ভব কিন্তু বৃদ্ধিই বিকাশ নয়।
(১) বংশধারা ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়া: বংশধারা ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলেই বৃদ্ধি ঘটে। শিক্ষকের কাজ হল, এমন পরিবেশ রচনা করা যা মিথস্ক্রিয়াকে উৎসাহিত করে এবং বৃদ্ধিকে সার্থক করে তােলে।
(২) বয়সানুযায়ী বৃদ্ধির হার: বিভিন্ন বয়সে বৃদ্ধির হার বিভিন্ন। Meredith অধ্যয়ন করে দেখেছেন- বয়ঃসন্ধিক্ষণের কিছু পূর্ব থেকেই বৃদ্ধির হার পুনরায় দ্রুত হয়। বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরে ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধির হার হ্রাস পায়।
(৩) বৃদ্ধি ও অনুশীলন: বৃদ্ধির ওপর অনুশীলনের প্রভাব সম্পর্কিত একাধিক পরীক্ষা হয়েছে এবং ধনাত্মক প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। (হিলগাউ-1932, ব্রুনার-1963)। উপযুক্ত বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকগণ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের ব্যবস্থা করবেন।
(৪) বৃদ্ধির হারের তারতম্য: শিশুদের মধ্যে বৃদ্ধির হারে পার্থক্য দেখা যায়। কিছু শিশু দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং কোনাে কোনাে শিশুর বৃদ্ধি শ্লথ. গতিতে হয়। শিক্ষার্থীর জন্য বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা কর্মসূচি পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বৃদ্ধির এই বৈশিষ্ট্যের ওপর গুরুত্ব দেবেন। সকলের জন্য একই কর্মসূচি সুপারিশ করা শিক্ষা মনােবিজ্ঞানসম্মত নয়।
(৫) নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: একটা স্তর পর্যন্ত বৃদ্ধি নিরবচ্ছিন্ন এবং ধারাবাহিক। বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই বৈশিষ্ট্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আবার একই সঙ্গে অসুবিধাজনক। শিক্ষাক্ষেত্রে এটি তাৎপর্যপূর্ণ এই অর্থে যে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপরিকল্পনার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। অসুবিধা হল এই যে, বৃদ্ধি নিরবচ্ছিন্ন ও ধারাবাহিক হওয়ার জন্য স্তরভিত্তিক ভাগ করা সম্ভব হয় না।
Leave a comment