গীতিকবিতার ধারা সারদামঙ্গল কাব্য কতটুকু সার্থক আলোচনা কর
উত্তর: বিহারীলাল চক্রবর্তী (১৮৩৫-১৮৯৪) আধুনিক বাংলা সাহিত্যে গীতিকবিতার প্রবর্তক। তার শ্রেষ্ঠ গীতিকাব্য ‘সারদামঙ্গল’ (১৮৭৯)। এর মাধ্যমেই তিনি উনিশ শতকে শ্রেষ্ঠ স্থান দখল করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কাব্যটি পড়ে নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছেন এবং তাকে ভোরের পাখি হিসেবে অভিহিত করেছেন।
‘সারদামঙ্গল’ পাঁচ সর্গের কাব্য। এ কাব্যের সংক্ষিপ্ত সর্গ বিভাজন হলো- প্রথম সর্গে জীবধাত্রী উষা গায়ত্রীরূপে কবিচিত্তে কাব্যলক্ষ্মীর প্রথম আবির্ভাব। দ্বিতীয় আবির্ভাব করুণাময়ীরূপে। দ্বিতীয় সর্গে, হারানো আনন্দলক্ষ্মীর উদ্দেশ্যে কবিচিত্তের অভিসার, দীর্ঘ বিরহে হতাশা এবং শেষে সান্ত্বনা। তৃতীয় সর্গে কবিচিত্তের সংশয়, রহস্যময় দ্বন্দ্ব উচ্চকিত হয়েছে। কবির ভাষায়,
“কোথা সে প্রাণের পাখি
বাতাসে ভাসিয়ে থাকি
আর কেন গান ভোরে ডাকে না আমায়!
বল দেবী মন্দাকিনী
ভেসে ভেসে একাকিনী।”
সোনামুখী তরীখানি গিয়েছে কোথায়। চতুর্থ সর্গে হিমালয়ের উদার প্রশান্তির মধ্যে কবিচিত্তের আশ্বাস-অন্বেষণ। পঞ্চম সর্গে, সেই পুণ্যভূমিতে অভিলষিত আনন্দ উপলব্ধি প্রকাশ পেয়েছে। সারদামঙ্গল কাব্যে কবি প্রেম, প্রীতি এবং সৌন্দর্য চেতনার বিগ্রহরূপে সরস্বতীর মূর্তি কল্পনা করেছেন। এ কাব্যের বিষয় কবির বিচিত্র সম্পর্কের লীলা সারদা দেবীর সঙ্গে। প্রেম, প্রীতি, সৌন্দর্য প্রভৃতি সে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো কবিমানসে এক অখণ্ড কল্পনার বৃত্তে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে উঠে। সেই অনুভূতি পূর্ণায়ত রূপটিকেই তিনি সারদা মূর্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কবির কল্পনার জগৎটিকেই একমাত্র কাব্য বিষয়করূপে গ্রহণ করার এ দৃষ্টান্ত বাংলা কাব্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে।
‘সারদামঙ্গল’ কাব্যে বিহারীলাল চক্রবর্তীর ভাব তন্ময়তা অসাধারণ মহিমা লাভ করেছে। দেবী সারদা কবির কাছে একেক রূপে চিত্রিত হয়েছেন। কবি সারদামঙ্গল কাব্যের পাঁচটি সর্গে ভিন্ন আঙ্গিকে সারদাকে মূল্যায়ন করেছেন। কবির কাছে সারদা কখনো দেবী, কখনো মাতা, আবার কখনো প্রেমময়ী হয়ে উঠেছেন। কবি সমগ্র কাব্য জুড়েই সারদার ধ্যানে নিজেকে মগ্ন রেখেছেন। বিহারীলালের অসাধারণ তন্ময়তাই গীতিকবিতার জগতে এ কাব্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment