বিশ শতকের গােড়াতেই যাত্রার বিষয়ে পরিবর্তন লক্ষ করা গেল। সমকালীন রাজনৈতিক পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে চারণকবি মুকুন্দদাস স্বদেশিয়ানায় ভরিয়ে তুললেন গ্রামের যাত্রামকে। বিদেশি শাসক থেকে শুরু করে অত্যাচারী, ব্যভিচারী স্বদেশি জমিদার ও সুদখাের মহাজন হয়ে উঠল তাঁর গানে আক্রমণের লক্ষ্য। তার প্রদর্শিত পথে যাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন মথুর সাহা ও ভূষণ দাস। এরপর উল্লেখ করতে হয় ব্রজেন্দ্রনাথ দের কথা, যিনি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের পটভূমিকায় রচনা করেন ‘আকালের দেশ নামক একটি পালা। এই পালায় রাজশক্তি পরাজিত হয় সংঘবদ্ধ কৃষক শক্তির কাছে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে শােভাবাজার রাজবাড়িতে যাত্রার আসর বসলে তা শহুরে শিক্ষিতদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং যাত্রার মধ্যে ক্রমশ শহুরে নাগরিক প্রভাব পড়তে থাকে। ক্রমশ যাত্রার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে সিনেমা ও থিয়েটার। ফলে, বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যুগের চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করলেন যাত্রা নির্মাতারা। মঞে এল হিটলার, লেনিন, সুভাষচন্দ্রের মতাে ব্যক্তিত্বদের নিয়ে তৈরি যাত্রাপালা অথবা ভিয়েতনামের যুদ্ধের কথা। নকশালবাড়ি আন্দোলনের পটভূমিকায় উৎপল দত্ত ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে রচনা করলেন ‘রাইফেল’। সেই সময়ের দু-জন উল্লেখযােগ্য যাত্রাপালা রচয়িতা হলেন ভৈরবনাথ গঙ্গোপাধ্যায় ও শম্ভুনাথ বাগ।

এইভাবেই বারেবারে যাত্রাশিল্পে এসেছে প্রয়ােজনীয় নানারকম বাঁক এবং নতুনত্ব। পূর্বের সাদামাটা সারল্য হারিয়ে, সিনেমা-থিয়েটারের প্রভাবে যাত্রাও আজ হয়ে উঠেছে ঐশ্বর্যমণ্ডিত বর্ণবহুল।

গণনাট্য আন্দোলন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বজোড়া। আর্থিক মন্দায় চারদিকে শুরু হয় অরাজকতা। এই সুযােগে স্বদেশপ্রেমের মুখােশে ইতালি, জার্মানি, স্পেন, গ্রিস প্রভৃতি দেশে শুরু হয় একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সাম্রাজ্যবাদ। লােরকা, র্যালফ ফক্সের ন্যায় অনেক বিশ্ববন্দিত ব্যক্তি এইসব ফ্যাসিস্ট শক্তির হাতে নিহত হন। রবীন্দ্রনাথ, রােমা রোলা, আদ্রে জিদ প্রমুখ দার্শনিক ও চিন্তাশীল ব্যক্তি এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রতিবাদ করতে থাকেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ভারতে গণনাট্য সংঘ বা গণনাট্য আন্দোলনের জন্ম হয়। কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক মঞ হিসেবে গড়ে তােলা হয় IPTA (Indian People’s Theatre Association)। সেই সময় প্রতিষ্ঠিত গণনাট্য সংঘ যে আদর্শগুলি মেনে চলত সেগুলি হল-

  • নাটকে থাকবে বাস্তব সমস্যার রূপায়ণ ও জনগণের সম্মিলিত প্রতিবাদ-প্রতিরােধের পথ।

  • ব্যক্তি এখানে শ্রেণির প্রতিভূ হয়ে নাটকে চিত্রিত হবেন।

  • ব্যক্তিনায়কের মধ্যে প্রাধান্য লাভ করবে গােষ্ঠীর প্রতি চিন্তা।

  • শিল্পের উদ্দেশ্য হবে জনগণের সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে পরিবর্তনের উপায় সম্পর্কে তাদের সচেতন করিয়ে দেওয়া।

  • আমজনতার হৃৎস্পন্দনকে স্পর্শ করার জন্য নাটকে থাকবে লােকসংগীত বা লােক-উৎসবের ঘটনা।

নাট্যকার তুলসি লাহিড়ির ‘ছেঁড়া তার’ বা বিজন ভট্টাচার্যের ‘দেবীগর্জন’ নাটকে IPTA-র সাহিত্যাদর্শের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।

বাংলা কথাসাহিত্যকে বঙ্কিমচন্দ্রই প্রথম সৌন্দর্য ও শিল্প সার্থকতা দান করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-

ইতিহাস ও রােমান্স-আশ্রয়ী উপন্যাস: ‘দুগ্গেশনন্দিনী’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘মৃণালিনী’, ‘যুগলাঙ্গুরীয়’, ‘চন্দ্রশেখর’ ও ‘রাজসিংহ’ তার ইতিহাস ও রােমান্স-আশ্রয়ী উপন্যাসের পর্যায়ে পড়ে। মােগল ও পাঠানের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে রচিত ‘দুর্গেশনন্দিনী’ একটি রােমান্স জাতীয় রচনা। নবকুমার- মতিবিবি কপালকুণ্ডলা ত্রিকোণ প্রেমকাহিনিকে কেন্দ্র করে রচিত ‘কপালকুণ্ডলা’ একটি বিশুদ্ধ রােমান্স। শৈবলিনীর অতৃপ্ত কামনার বিশ্বঘাতী, বিধ্বংসী রূপ লক্ষ করা যায় ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসে। এর সঙ্গে উপন্যাসটিতে যুক্ত হয়েছে মীরকাশিম ও দশনী বেগমের ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ। ‘রাজসিংহ’ হল বঙ্কিমচন্দ্রের একমাত্র বিশুদ্ধ ঐতিহাসিক উপন্যাস-যা তিনি নিজেও স্বীকার করেছেন।

সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যামূলক উপন্যাস: বঙ্কিমচন্দ্রের সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যামূলক উপন্যাসগুলি হল ‘বিষবৃক্ষ’, ‘কৃষকান্তের উইল’, ‘ইন্দিরা’, ‘রজনী’ এবং ‘রাধারাণী’। সমাজ ও পরিবারের নানান সমস্যা, সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির দ্বন্দ্ব, নরনারীর সম্পর্কের জটিলতা এইসব উপন্যাসে চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে।

তত্ত্বমূলক ও দেশাত্মবােধক উপন্যাস: বঙ্কিমচন্দ্রের তত্ত্বমূলক ও দেশাত্মবােধক উপন্যাসের পর্যায়ে পড়ে ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ ও ‘সীতারাম’। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে ব্যবহৃত ‘বন্দেমাতরম’ সংগীতটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যতম প্রেরণা হয়ে উঠেছিল। ‘দেবী চৌধুরাণী’-তে গীতার নিষ্কাম কর্ম ও অনুশীলন তত্ত্বের আদর্শ অনুসৃত হয়েছে।

সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সমকালে আবির্ভূত হয়েও তারকনাথ গঙ্গােপাধ্যায় অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর স্বর্ণলতা উপন্যাসের মাধ্যমে।

তারকনাথ গঙ্গােপাধ্যায় ‘স্বর্ণলতা’ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের অনুসরণে ইতিহাস ও রােমান্সের জগতে বিচরণ করেননি। উনিশ শতকের গ্রামবাংলার পটভূমিতে একান্নবর্তী পরিবারের গার্হস্থ্য জীবনের পরিচয় এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন তারকনাথ। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে দুই ভাইয়ের সংসারে বিপর্যয় নেমে আসে, কীভাবে বড়াে বউ প্রমদার কুটিলতায় ছােটো বউ সরলার জীবন এগিয়ে যায় করুণ পরিণতির দিকে। সামাজিক-পারিবারিক এই কাহিনির বর্ণনায় তারকনাথ যেভাবে বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন, সেকালের বিচারে তা সত্যিই অভিনব। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্রগুলি টাইপধর্মী, যদিও তারকনাথের লেখনীর সঞ্জীবনী স্পর্শে তারা একেবারে সজীব রক্তমাংসের মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। এই উপন্যাসের নাট্যরূপের নাম ‘সরলা’, যা নাটক হিসেবেও অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছিল।

‘স্বর্ণলতা’ ছাড়া তারকনাথ আরও কয়েকটি উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ লিখেছেন। সেগুলি হল ‘ললিত সৌদামিনী’ (১৮৮২), ‘হরিষে বিষাদ’ (১৮৮৭), ‘তিনটি গল্প’ (১৮৮৯) এবং ‘অদৃষ্ট’ (১৮৯১)। এই রচনাগুলিতে স্বর্ণলতা উপন্যাসের ধারাকেই তিনি মােটামুটিভাবে অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন। তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই রচনাগুলি সমকালে প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

প্রবণতা অনুযায়ী রবীন্দ্রকাব্যের পর্ব-বিভাগ করে শেষ পর্বের কাব্যধারার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি সূত্রাকারে লেখাে।

প্রবণতা অনুসারে রবীন্দ্র কাব্যধারার পর্ব-বিভাগ করাে।

সূচনাপর্বের রবীন্দ্রকাব্যগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।

উন্মেষপর্বের রবীন্দ্রকাব্যগুলির পরিচয় দিয়ে এই পর্বের এরূপ নামকরণের যথার্থতা বিচার করাে।

‘ঐশ্বর্যপর্ব’-এর কাব্য আক্ষরিক অর্থেই ঐশ্বর্যময়- আলােচনা করাে।

রবীন্দ্রকাব্যের গীতাঞ্জলিপর্ব সম্পর্কে আলােচনা করাে।

বলাকাপর্ব ও গদ্যকবিতাপর্বের রবীন্দ্রকাব্য সম্পর্কে আলােচনা করাে।

কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কাব্যরচনার বৈশিষ্ট্য কী, সম্পর্কে আলােচনা করাে।

বাংলা কবিতার ইতিহাসে মােহিতলাল মজুমদারের স্থান নির্দেশ করাে।

কাজি নজরুল ইসলামের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

জীবনানন্দ দাশের দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম উল্লেখ করাে। তাঁর কবিতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী?

রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যচর্চার পরিচয় দাও।

রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের কাব্যচর্চার পরিচয় দাও।

বাংলা নাট্যসাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

বাংলা নাটকের ইতিহাসে দীনবন্ধু মিত্রের অবদান আলােচনা করাে।

বাংলা নাটকের ইতিহাসে গিরিশচন্দ্র ঘােষের দান সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

রবীন্দ্রনাথের নাট্যপ্রতিভার পরিচয় দাও।

রবীন্দ্রনাথের হাস্যরসাত্মক নাটকগুলির পরিচয় দাও।

রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি রূপক-সাংকেতিক নাটক সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাসে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভূমিকা/কৃতিত্ব নিরূপণ করাে।

বাংলা নাটকে ক্ষীরােদপ্রসাদ বিদ্যাবিনােদের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

বাংলা নাট্য-আন্দোলনে বিজন ভট্টাচার্যের ভূমিকা বিশ্লেষণ করাে।

বিজন ভট্টাচার্য রচিত একটি নাটকের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বাংলা নাটকে বিজন ভট্টাচার্যের কৃতিত্ব আলােচনা করাে।

নাট্যকার উৎপল দত্তের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উৎপল দত্তের নাটকগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

শুরু থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত বাংলা যাত্রাপালার ক্রম ইতিহাস বিবৃত করাে।

নবনাট্য আন্দোলনের জন্মকথা উল্লেখ করে এই নাট্য আন্দোলনের পরিচয় দাও।