প্রশ্নঃ বিশ্লেষণাত্মক মতবাদ কীভাবে ঐতিহাসিক আইন বিজ্ঞান মতবাদ থেকে পৃথক?
উত্তরঃ দেশের প্রচলিত আইনের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণ করে বিধায় মতবাদটিকে বিশ্লেষণমূলক মতবাদ বলা হয় ৷ কিন্তু ঐতিহাসিক মতবাদও আইনের অতীত অর্থাৎ বিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ করে থাকে।
(২) বর্তমানে প্রচলিত আইনকে নিয়েই চিন্তাভাবনা করে বিশ্লেষণী মতবাদ। এই আইনের আদর্শ বা উদ্দেশ্য নিয়ে এই মতবাদ চিন্তাভাবনা করে না কিংবা এর ঐতিহাসিক পটভূমির দিকেও নজর দেয় না। বরং বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দ্বারা সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করে প্রচলিত আইনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু ঐতিহাসিক মতবাদের প্রবক্তরা প্রচলিত আইনের ঐতিহাসিক পটভূমি এবং এর ধারাবাহিকতা ব্যাখ্যা করে সমাজে কিভাবে তা গৃহীত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে।
(৩) বিশ্লেষণমূলক মতবাদে রাষ্ট্রকেই আইনের মূল উৎস বলে গণ্য করা হয়। কেননা, রাষ্ট্রই আইন প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের জন্য কোনটি করণীয় এবং কোনটি বর্জনীয় তার নির্দেশ দিয়ে থাকে। কিন্তু ঐতিহাসিক ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদ কোনটাই রাষ্ট্রকে আইনের উৎস বলে মনে করে না। প্রথাকে ঐতিহাসিক মতবাদ আইনের অন্যতম উৎস বলে মনে করে কেননা প্রথার মাধ্যমেই যুগ যুগ ধরে মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
(৪) আজকাল সংসদ তথা রাষ্ট্র যে আইন প্রণয়ন করে তার কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্লেষণ করে বিশ্লেষণী মতবাদ, কিন্তু এই আইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সমাজে প্রয়োগ করে আদালত যা সমাজতান্ত্রিক মতবাদের উপজীব্য। কিন্তু সেই আইনের পটভূমি ও এর ধারাবাহিকতা সামাজিক প্রথা লংঘন করছে কিনা তা অনুসন্ধান করে ঐতিহাসিক মতবাদ।
(৫) বিশ্লেষণপন্থীগণ শুধু পরিপক্ব আইনগত ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ রাখে, কিন্তু ঐতিহাসিকপন্থীগণ সমাজের পুরাতন আইনগত ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে বর্তমান আইনের সাথে এর সম্পর্ক স্থাপনে ব্রতী হন।
(৬) ঐতিহাসিকপন্থীগণ মনে করেন যে, “আইন তৈরি করা হয় না, এটা স্বাভাবিকভাবেই থাকে মানুষ শুধু এটা উদঘাটন করে মাত্র।” কিন্তু বিশ্লেষণ সমাজতান্ত্রিকপন্থীগণের মতে, “মানুষের প্রয়োজনে আইনের সৃষ্টি হয়।”
(৭) বিশ্লেষণী মতবাদে বলে রাষ্ট্র বা সার্বভৌম না থাকলে আইন থাকতে পারে না। কিন্তু ঐতিহাসিক মতবাদ বিশ্বাস করে রাষ্ট্রের অস্তিত্ব প্রকাশের পূর্বেই আইনের অস্তিত্ব থাকে।
(৮) আইন ও এর প্রয়োগকে আলাদা করে দেখে ঐতিহাসিকপন্থীগণ। কিন্তু প্রয়োগ দ্বারা আইন অস্তিত্বহীন বলে মনে করেন বিশ্লেষণী ও সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রবক্তাগণ।
বিশ্লেষণী মতবাদে সংবিধি হচ্ছে একটা আদর্শ আইন। ঐতিহাসিক মতবাদে প্রথা এবং সমাজতান্ত্রিক মতবাদে নজীর হচ্ছে আদর্শ আইন।
ঐতিহাসিকপন্থীদের মতে, প্রথা হচ্ছে আইনের আনুষ্ঠানিক উৎস। কিন্তু বিশ্লেষণীপন্থীগণ মনে করেন যে, একটা প্রথাকে আইনে রূপান্তরিত হতে হলে এর বৈধতা সংসদের প্রণীত আইন দ্বারা অথবা বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
(৯) বিশ্লেষণ মতবাদে প্রচলিত আইনের ধ্যান-ধারণাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে একটা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দেয়। ঐতিহাসিক মতবাদে ক্রম বিবর্তনের দৃষ্টিতে প্রথা ও চিরাচরিত কার্যাবলী পর্যালোচনা করে প্রচলিত আইনের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে।
Leave a comment