একটি মানুষের সুস্থ এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে হাসির কোন বিকল্প নেই। আর হাসির এই উপকারিতার কথা চিন্তা করে বিশ্ব হাসি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্ব হাসি দিবস মানুষ একসঙ্গে পালন করার চেষ্টা করে। তাই যারা বিশ্ব হাসি দিবস বিস্তারিত জানতে চান আমার পোস্ট তাদের জন্য।
বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ বিভিন্ন দিবস পালিত হয়ে থাকে। বিশ্ব হাসি দিবস এগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি দিবস। ১৯৯৮ সালের ১০ মে তারিখে বিশ্বব্যাপী হাস্য যোগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মদন কাটারিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্ব হাসি দিবস উদযাপন করেছিলেন।নিচে বিশ্ব হাসি দিবস আলোচনা করা হলো-
বিশ্ব হাসি দিবস
প্রতিদিন একজন মানুষকে হাসিখুশি থাকা দরকার সে নিজের জন্যই হোক বা অন্যের জন্যই হোক তার হাসা প্রয়োজন। কারণ হাসির চেয়ে ভালো ওষুধ এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। হাসলে শরীর মন সবকিছুই ভালো থাকে। হাসি চিন্তা ভাবনা থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়, শরীরের নানা রকম ব্যথা বেদনা ও কমায়। শুধু হাসি মনের উপকার করে তা নয় এটা শরীরের জন্য উপকারী।
আরো পড়ুনঃ আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস সম্পর্কে জেনে নিন
চিকিৎসা বিজ্ঞান আজ এ কথা প্রমাণ করেছে যে মানুষ যত হাসিখুশি থাকে তার হার্ট তত ভালো থাকে।এই পৃথিবীতে মানুষ অনেক রকম ভাবে হেসে থাকে। যেমন – অট্ট হাসি, উচ্ছল হাসি, প্রাণ খোলা হাসি। আবার কেউ কেউ মুচকি হাসে বা মৃদু হাসে। তবে এই পৃথিবীতে মানুষ যেভাবে হাসুক না কেন হাসলে মানুষের মন ভালো থাকে।
হাসি দিবসের ইতিহাস
সারা বিশ্বে প্রতিবছর মে মাসের প্রথম রবিবার বিশ্ব হাসি দিবস পালন করা হয়। ১৯৯৮ সালের ১০ মে তারিখে বিশ্বব্যাপী হাস্য যোগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ মদন কাটারিয়া প্রথমবারের মতো বিশ্ব হাসি দিবস উদযাপন করেছিলেন। ডক্টর মদন কাটারিয়া ৫০০ জোক আন্দোলনেরও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি মূলত লাভটা হাস্য উজ্জ্বল আন্দোলন আরম্ভ করেছিলেন ফেসিয়াল ফিডব্যাক হাইপোথিসিস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে।
আরো পড়ুনঃ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস সমূহ সম্পর্কে জেনে নিন
একজন মানুষের মুখের অভিব্যক্তি এবং তার আবেগকে প্রভাবিত করতে পারে ফেসিয়াল ফিডব্যাক। হাসির মাধ্যমে সৌভ্রাতৃত্ব এবং বন্ধুত্বের বিশ্বজনীন সচেতনতা সৃষ্টি করাই হলো বিশ্ব হাসি দিবসের প্রধান উদ্দেশ্য।আর এই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্যে মানুষ সাধারণত তার জন্মস্থানে একত্রিত হয়। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে লাফিং ক্লাব লাফটার যোগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে প্রায় ১০৫ টি দেশ।
১৯৯৮ সালের ১০ মে তারিখে ডঃ মদন ক্যাটারিয়া মুম্বাইতে প্রথমবারের মতো বিশ্ব হাসি দিবস উদযাপন করেন। তারপর থেকে সারা বিশ্ব নিয়মিত হাসি দিবস পালন করে থাকে। আবার ধারণা করা হয় ১৯৬৩ সালে হার্ভি বল স্মাইলি বা হাসির চিহ্ন ব্যবসায়ীর কারণে তৈরি করেছিলেন এবং কোন কিছু ভালো বা উৎসাহ বোঝাতে তার এই চিহ্নটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
আরো পড়ুনঃ জাতীয় শিক্ষক দিবস – শিক্ষক দিবস – রচনা জেনে নিন
১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিল্পী হার্ভি রোজ বল হলুদ রঙের বৃত্তের মধ্যে দুটি চোখ এবং অর্ধ চন্দ্র আকৃতির মুখের ছবি আঁকেন যা বিশ্বব্যাপী স্মাইলি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এটি বাণিজ্যিক ভাবেও ব্যবহারে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।আর ১৯৯৯ সালে এই চিহ্ন কে সামনে রেখে প্রথম ওয়ার্ল্ড স্মাইল দিবস পালন করা হয়। ২০০১ সালে হার্ভি মারা গেলে পরে ওয়ার্ড স্মাইল ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং স্মরণীয় করে রাখতে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
বিশ্ব হাসি দিবসের উক্তি
বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশ বিভিন্ন দিবস পালিত হয়ে থাকে। এমন অনেক দিবস রয়েছে যেগুলো মানুষ সঠিকভাবে জানে না। যদিও সারা বিশ্বই প্রায় বিশ্ব হাসি দিবস পালন করে থাকে। কিন্তু এখনো সাধারন মানুষের কাছে এই দিবসটি প্রায় অজানায় রয়ে গেছে। এরপরেও কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি বিভিন্ন উক্তির মাধ্যমে এই দিবসটি পালন করে থাকেন সেটা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হলো-
আপনি যখন সবসময় হাসতে পারেন এবং সবসময় উপহাস করতে পারেন এটি একটি সস্তা ঔষধ – লর্ড বাইরন।
একটি ভালো প্রাণ খোলা হাসি অনেক ব্যথা নিরাময় করে – ম্যাডেলিন ল এঙ্গেল।
আপনি যদি হাসতে না চান তাহলে অন্তত নিজেকে নিয়ে হাসুন – বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন।
একজন আশাবাদী ভুলে যেতে হাসে, একজন হতাশাবাদি হাসতে ভুলে যায় – টম নান্স বেরি।
হাসি ছাড়া একটি দিন নষ্ট হয় -চার্লি চ্যাপলিন।
আপনাকে শুধুমাত্র একটি উন্মাদনার ফুলীঙ্গ দেয়া হয় আপনাকে এটা হারাতে হবে না – রবিন উইলিয়াম।
হাসির আক্রমণের বিরুদ্ধে কিছুই দাঁড়াতে পারে না – মার্ক টোয়েন।
ঠোঁটে একটি হাসি শুরু হয়, একটি হাসি ছড়িয়ে পড়ে চোখে, একটি হাসি আসে পেট থেকে কিন্তু একটি ভালো হাসি আত্মা থেকে বিস্ফোরিত হয়, উপচে পড়ে এবং তার পাশে বুদবুদ হয় – ক্যারোলিন বামিংহাম।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের উৎসব রচনা সম্পর্কে জেনে নিন
কবি রোকনুজ্জামান খান বলেছেন – হাসতে নাকি জানেনা কেউ কে বলেছে ভাই। এই শুনোনা কত হাসি খবর বলে যায়। খোকন আসে ফোকলা দাঁতে, চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে, কাজলা বিলের শাপলা হাসে, হাসে সবুজ ঘাস। খলসে মাছের হাসি দেখে হাসেন পাতি হাস। এত হাসি দেখে যারা গোমড়া মুখে চাই, তাদের দেখে প্যাঁচা মুখেও কেবল হাসি পায়।
শেষ কথা
হাসি এমন একটি বস্তু যা দেখলে সবার মন ভালো হয়ে যায়। আবার বিজ্ঞানসম্মতভাবেও দেখা যায় যে হাসিখুশি থাকলে মানুষের শরীর রিলাক্স হয় এবং টেনশন কমে যায়। হাসি মানুষের হার্টের পক্ষে উপকারী। মানুষের দুঃখ, যন্ত্রণা, বেদনা কমাতে এবং নীরোগ জীবন যাপনকরতে হাসির কোন বিকল্প নেই। প্রতিদিন একটি মানুষকে অন্তত চার থেকে পাঁচ রকম হাসির ব্যায়াম করা উচিত।
অনেকদিন আছে যেদিন মানুষের খারাপ মনে হয় কিন্তু একটা প্রাণ খোলা হাসি মানুষের সারা দিনের ক্লান্তি দূর করে দেয়। তাই মানুষকে সারাক্ষণ হাসিখুশি থাকা উচিত।
Leave a comment