বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার শীর্ষক একটি ভাষণ রচনা কর।
অথবা, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে একটি টেলিভিশন ভাষণ তৈরি কর।

মাননীয় সভাপতি, সমবেত সুধীবৃন্দ ।

আজ ৭ এপ্রিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্য রক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রতিটি মানুষকে সচেতন করে তোলাই এ দিবসের উদ্দেশ্য। দেশের প্রতিটি মানুষের তথা পৃথিবীর সকল মানুষের আজ কামনা দূষণমুক্ত বাতাস, প্রদীপ্ত সূর্যের আলো, প্রাণধারণের অবলম্বন, একটি নিরাপদ কলুষমুক্ত পৃথিবী, একটি সুন্দর প্রাণবন্ত নির্মল পরিবেশ। তাইতো কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে —

“ অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু
চাই বল, চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু। ”

সুধী, এ কথা সর্বজনস্বীকৃত যে, মানবজীবন ও সভ্যতার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পরিবেশ। মানুষের চাল-চলন, শিক্ষা-সংস্কৃতি তথা নিরাপদ জীবনধারণের জন্য পরিবেশের প্রভাব অপরিহার্য। পরিবেশের আশ্রয়ে মনুষ্য জগৎ, প্রাণিজগৎ ও উদ্ভিদজগতের প্রকাশ ঘটে। তাই পরিবেশের সঙ্গে মানুষের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। কিন্তু আজ পৃথিবীতে নানা কারণে পরিবেশ দূষিত হয়ে মানবসভ্যতাকে সঙ্কটময় ও মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে।

প্রিয় সুধী, দূষণযুক্ত এক অসহনীয় পরিবেশের মধ্যদিয়ে আমরা প্রাত্যহিক জীবনযাপন করছি। পরিবেশ বিজ্ঞানীগণ অনেক আগে থেকেই সাবধান করে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ বিষয়ে বেশ লেখালেখিও হচ্ছে। কিন্তু অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। বরং বলা যায়, দিন দিন অবস্থার আরো অবনতি হচ্ছে।

আমাদের শহরগুলো যানবাহনের কালো ধোঁয়ায় একাকার। এ বিষয়ে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় রাজধানী শহর ঢাকার অসুস্থ পরিবেশের কথা। অপরিকল্পিতভাবে এখানে বেড়ে ওঠছে বাড়িঘর। শহরের বহু এলাকাতেই যেখানে সেখানে দেখা যায় আবর্জনার স্তূপ। আমরা মহানগরীর বাসিন্দা বলে গর্ব অনুভব করি; কিন্তু এই শহরে বহু এলাকায় সুষ্ঠু পয়ঃপ্রণালির ব্যবস্থা নেই। আর রাস্তাগুলোতে শুধু যানবাহন আর যানবাহন। এসব যানবাহনগুলোর অধিকাংশ থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। যখন তখন যত্রতত্র যানজট লেগেই আছে। তখন যাত্রীরা আরো বেশি করে এই কালো ধোঁয়ার শিকার হন। কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগ। এই রোগ কেড়ে নিচ্ছে আমাদের জীবনীশক্তি কলকারখানার ধোঁয়া এগুলোতে নির্গত বর্জ্য পরিবেশ বিনষ্ট করছে।

অপরদিকে উজাড় হচ্ছে বন। একটি দেশে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এক চতুর্থাংশ বনভূমির প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের বনভূমি মাত্র ১৭%। সারাদেশে বেশি বেশি গাছকাটার ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে দেখা দিচ্ছে অনাবৃষ্টি, দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমাদের পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। তাই এখন থেকে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। অবশ্য সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে না তা নয়। তবে যেটুকু নিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। দেশে আইন আছে কিন্তু আইনের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নেই। যাতে আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়, সেদিকে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন এবং পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে যারা পরিবেশ বিঘ্নিত করছে তাদের জন্য কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি দেশের বনায়ন কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে হবে। গাছ আমাদেরকে অক্সিজেন দেয়। সারাদেশে তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। 

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সংগঠনগুলোকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। সারাদেশে পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটা ব্যাপক গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে অবশ্যই আমরা দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারব এবং সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। আশা করি, এ সংগ্রামে আমরা সফল হব। সজীব বাংলাদেশ এবং আলোকিত জীবনের প্রত্যাশায় আমার বক্তব্য এখানেই শেষ করছি। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।