বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ ঘুরে বেড়াতে খুব পছন্দ করে । আর ঘুরে বেড়ানোর
সবচেয়ে দ্রুত  মাধ্যম হলো বিমান । আর বিমানে  ঘুরতে হলে বিমানবন্দর
সম্পর্কে জানা দরকার । বিশ্বের সবচেয়ে ১০ টি বড় বিমান সম্পর্কে জানতে আমার
পোস্ট টি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। আমি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি
বিমানবন্দর নিয়ে আলোচনা করেছি ।

বিশ্বে মানুষের তৈরি সবচেয়ে বড় বিমানের নাম Antonov An 225 Marya । এটি বিশ্বের
সবচেয়ে বড় কার্গো বা মালবাহী বিমানবন্দর । চীন জনসাধারণের ব্যবহারের দিক থেকে
বিশ্বের সবচেয়ে বড় রানওয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে । এই বিমানবন্দর টির
নাম ক্যামডো বাংদে । এই বিমানবন্দরটি চীনের তিব্বতে অবস্থিত । এই বিমানবন্দরটির
দৈর্ঘ্য ৫ হাজার ৫০০ মিটার বা ১৮ হাজার ৪৫ ফুট ।

কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সৌদি আরব

সৌদি আরবের দাম্মাম শহরে অবস্থিত কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি 
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর । এই বিমানবন্দরটির মোট আয়তন ৭৭ হাজার  ৬
শত হেক্টর । দানব আকৃতির এই বিমানবন্দরটি আয়তনে আরবদেশ বাহারাইনে চেয়েও বড় ।
এবং বিমানবন্দরের তালিকা অন্যান্য বিমানবন্দর অপেক্ষায় এটি দানবের মত বড় ।
তবে এখানে একটি বিশেষ উল্লেখ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে আর তা
হলো এ বিমানবন্দরটি মাত্র ৩ হাজার ৬৭৫ হেক্টর এলাকায় ব্যবহৃত হয়েছে যা এই
বিমানবন্দরটির ৫  শতাংশেরও কম । 

কিং ফাহাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বিমানবন্দরের তালিকায় সবচেয়ে নতুন এবং
কার্যকারিতার দিক থেকেও এর অবস্থান অনেক নিচে । এই বিমানবন্দর টি চালু হয়
১৯৯৯ সালের নভেম্বরে । তবে যাত্রী পরিবহনের দিক থেকেও এর অবস্থান অনেক
নিচে । এই বিমান বন্দরটি বছরে মাত্র .১ কোটি যাত্রী ব্যবহার করে । এই
বিমানবন্দরটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর হলে ও উৎপাদনমুখী অনেক কম ।

দেনভার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম এই বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের
দেনভার শহরে অবস্থিত । এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর । আয়তনে ডালাস
বিমানবন্দরের দ্বিগুণ । এই বিমানবন্দরটির মোট আয়তন  ১৩ হাজার ৫৭০ হেক্টর
। ফ্রন্টেইয়ার বিমান সংস্থা ও গ্রেট লেকস বিমান  পোতাশ্রয়  হল
এই দেনভার বিমানবন্দর । 

 আরো পড়ুনঃ  বিশ্বের সব চেয়ে দামী ১০ টি ঘড়ি- বিস্তারিত  জেনে নিন

এটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসেবেও পরিচিত । যাকে বলা হয় ৬টি
কংক্রিটের রানওয়ে বন্দর । এই বিমানবন্দরটি ২০১৬ সালে ৫ কোটি ৮0 লাখ যাত্রী
পরিবহন করেছিল এবং এই বিমানবন্দরটির   বিশ্বে অবস্থান ছিল 
১৮  তম ।

ডালাস বিমানবন্দর বা ফোট ওর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ,
যুক্তরাষ্ট্র

এই বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমানবন্দর ।  কিন্তু
বিশ্বে এই বিমানবন্দরটির অবস্থান তৃতীয় । ২০১৬ সালে এই বিমানবন্দরটি  ৬
কোটি  ৫৬  লাখ যাত্রী পরিবহন করে যা ছিল এই বিমানবন্দরটির ইতিহাসেও
সবচেয়ে বেশি যাত্রী । এবং যাত্রী পরিবহনের দিক থেকেও এটি বিশ্বের এগারতম
ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসেবে পরিচিত । এই বিমানবন্দরের আয়তন  ৬ 
হাজার  ৯৬৩ হেক্টর । যা ম্যানহাটন দ্বীপের চেয়েও বড় ।

এই বিমানবন্দরটি ও কংক্রিটে নির্মিত যাতে ৭টি  রান ওয়ে ও
৬টি  টার্মিনাল রয়েছে । এই বিমানবন্দরটি এতটাই বড় যে এর নিজস্ব পোস্টাল
কোড রয়েছে । এছাড়াও এখানে জরুরি চিকিৎসা সেবা ,  অগ্নিনির্বাপক কর্মী ও
নিজস্ব পুলিশ রয়েছে । মানের দিক থেকে এই বিমানবন্দরকে সবথেকে সেরা বিমানবন্দর
বলা হয়ে থাকে ।

ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ তম
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন ফাস্টার ডুলেসের নামে স্থাপিত । এই আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরটি বাল্টিমোর ওয়াশিংটন এলাকার প্রধান যে তিনটি বিমানবন্দর রয়েছে
তার মধ্যে অন্যতম । আয়তনের দিক থেকে সেরা হলেও যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে এই
বিমানবন্দরটি অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে ।

 আরো পড়ুনঃ  
টিভি কার্ড কি – টিভি কার্ড  কিভাবে কাজ করে -জেনে নিন বিস্তারিত

২০১৬ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রী চলাচল করেছে মাত্র ২ কোটি ২0 লাখের মতো ।
এই বিমানবন্দরটির আয়তন ৫ হাজার ২০০ হেক্টর । এবং বিশ্বে এর অবস্থান
চতুর্থ । এই বিমানবন্দরটিতে ও চারটি কংক্রিটের  রান ওয়ে রয়েছে
। এবং প্রধান টার্মিনালের পাশাপাশি দুইটি  সাব টার্মিনাল
রয়েছে  ।

কানসাস সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , যুক্তরাষ্ট্র

কানসাস সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি  ১৯৫০ সালে স্থাপিত হয়েছিল । এই
বিমানবন্দরটি আয়তনে সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর গুলোর মধ্যে একটি । তবে এটি
যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো ব্যস্ততম বিমানবন্দর নয় । কানসাস সিটি নামক
আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরটি মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস শহরে অবস্থিত । এই
বিমানবন্দরটির একটি অন্যতম সুবিধা রয়েছে আর তা হলো এখানে বিমান মেরামত করা
যায় । 

এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আয়তন হল ৪ হাজার ৩২০ হেক্টর । এতে  ১ টি
কংক্রিট রানওয়ে , ২ টি পিচ ঢালা  রান ওয়ে ও তিনটি টার্মিনাল রয়েছে ।
২০১৬  সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ১ কোটি ১0 লাখ যাত্রী চলাচল করেছে
। এই বিমানবন্দরটি একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলেও এর গুরুত্ব অন্যান্য
বিমানবন্দরের তুলনায় অনেক কম ।

সল্টলেক সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , যুক্তরাষ্ট্র

সল্টলেক সিটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি যাত্রী পরিবহনের দিক থেকে
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বন্দর গুলোর মধ্যে না থাকলেও আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের এর
অবস্থান  ১0 নম্বর । ২০১৬ সালে এই বিমানবন্দর  দিয়ে যাত্রী চলাচল
করেছে প্রায়  ২ কোটি  ৩0  লক্ষ । এই বিমানবন্দরটির মোট আয়তন ৩
হাজার ১১৬ হেক্টর । 

 আরো পড়ুনঃ    কম দামে ভালো মানের মোবাইল কিনুন 

এই বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের সল্টলেক সিটি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ।
এই বিমানবন্দরটিতে রয়েছে একটি কংক্রিটের রান ওয়ে , তিনটি পিচঢালা রান ওয়ে
এবং তিনটি  পিচ ঢালা হোলি প্যাড ।

সাং হাই পুডোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , চীন

সাংহাই শহরে দুইটি বড় বিমানবন্দর রয়েছে তার মধ্যে  অন্যতম এই বিমানবন্দর
। এই বিমানবন্দরটি সাংহাই শহর থেকে ৩0 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এই
সাংহাই  বিমানবন্দরটিতে বেশিরভাগ সময় আন্তর্জাতিক ফ্লাইট এর পাশাপাশি
সাংহাই  এয়ারলাইন্স ও চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনস এর পোতাশ্রয় হিসাবে
ব্যবহৃত হয় । এশিয়ার ৫ম ব্যস্ততম বিমানবন্দর গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এই
সাংহংপুডোং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । 

২০১৬ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে ৬ কোটি ৬0 হাজার যাত্রী চলাচল করেছে বলে মনে করা
হয় । কিন্তু কার্গো পরিবহনে এই বন্দরটির  অবস্থান বিশ্বে তৃতীয় । এই
বিমানবন্দরের আয়তন ৪  হাজার হেক্টর এবং এই বিমানবন্দরটিতে
৫টি কংক্রিটের রান ওয়ে এবং দুটি টার্মিনাল রয়েছে ।  ২০১৬ সালে এই
বিমান বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করা হয়েছে  ৩  লাখ ৪0 হাজার ২৮0 টনের
মতো ।

কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর , মিশর

কায়রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি মিশরের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর । এবং এটি
আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়
এই বিমানবন্দরটি যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো । তবে এটি যখন
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়নি তখন এই বিমানবন্দরকে যুদ্ধের ঘাঁটি
হিসেবে ব্যবহার করা হতো ।এই বিমানবন্দরটি মিশরের হেলি পলিশ শহরে অবস্থিত ।

 আরো পড়ুনঃ    হিট স্ট্রোক কাকে বলে  –  হিট স্ট্রোক কেন হয়  জেনে নিন

কায়রো  আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর  মিশরের বৃহত্তম বিমান
সংস্থা নীল এয়ার ও ইজিপ্ট  এয়ারের পোতাশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত
হয় । এই বিমান বন্দরের অবস্থান সপ্তম । এই বিমানবন্দরের আয়তন ৩ হাজার
৭০০  হেক্টর । এই বিমানবন্দরটি আয়তনে অনেক বড় হলেও যাত্রী পরিবহনের দিক
থেকে এর অবস্থান শীর্ষ তালিকায় নেই । এই বন্দর টিতে রয়েছে  ৩
টি  পিচঢালা রানওয়ে এবং তিনটি টার্মিনাল ।

সুবর্ণভূমি বিমানবন্দর  , থাইল্যান্ড

সুবর্ণভূমি নামের অর্থ সোনালী ভূমি বা সোনার জমিন । বিশ্বে এই বিমানবন্দরটির
অবস্থান অষ্টম । থাইল্যান্ডের এই সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
বৃহত্তম বিমানবন্দর । তবে এটি ব্যাংকক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামেও পরিচিত ।
শীর্ষ তালিকায় থাকা এই বিমানবন্দরটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুইটি বিমানবন্দরের
মধ্যে একটি । সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরটি জেট  এশিয়া এয়ারওয়েজ এবং
ব্যাংকক এয়ারওয়েজ সহ অনেকগুলো এশিয়ান বিমান সংস্থার মূল পোতাশ্রয়
। 

এই বিমানবন্দরটির মোট আয়তন  ৩ হাজার  ২৮০ হেক্টর । বিশ্বের যতগুলো
উঁচু টাওয়ার রয়েছে তার মধ্যে এই বিমানবন্দরটি একটি । এবং এই উঁচু
কন্ট্রোল টাওয়ার গুলোর একটি সহ একক ভবনের টার্মিনালের জন্য
সুবর্ণভূমি  বিমানবন্দরটি বিখ্যাত ।  এটি এশিয়ার নবম ব্যস্ততম
বিমানবন্দর ।২০১৬ সালে এই বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় ৫ কোটি ৬0 লাখ যাত্রী
যাতায়াত করে ।

শাল দে গোল বিমানবন্দর , ফ্রান্স

প্যারিসের এই বিমানবন্দরটি নামকরণ করা হয়েছে সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট শাল দে
গোল এর নাম অনুসারে । এই বিমানবন্দরটি ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর । এই বিমানবন্দরটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় বিমান বন্দর
গুলোর মধ্যে অন্যতম এবং এটি এয়ার ফ্রান্স এর মূলহাব হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
এই  বিমানবন্দরের  আয়তন ৩ হাজার ২০০ হেক্টর । 

 আরো পড়ুনঃ    শীতে ত্বকের ঘরোয়া পরিরচর্চার  ১৫ টি  টিপস   
 জেনে  নিন

২০১৬  সালে এই বিমানবন্দরটি ইউরোপের ২য়  ব্যস্ততম বন্দর  ছিল ।
তবে আন্তর্জাতিক চলাচলের  দিক থেকে ২০১৬  সালে বিশ্বে এই
বিমানবন্দরটি অবস্থান ছিল ৫ নম্বর । ২০১৭ সালে এই বন্দর দিয়ে যাত্রী 
চলাচল করেছে ৬ কোটি ৬0 লাখ । এই বন্দর টিতে  চারটি  পিচঢালা রান
ওয়ে এবং তিনটি টার্মিনাল রয়েছে ।

শেষ কথা

বিশ্বায়নের এই যুগে মানুষ ঘুরে বেড়াতে বেশ পছন্দ করে । এছাড়াও অনেকেই শখ করে
ঘুরে বেড়ান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। আর এই ঘুরে বেড়ানো সবচেয়ে
সহজ উপায় হল বিমানভ্রমণত। আর এই ঘুরে বেড়ানোর জন্য বিমানবন্দর সম্পর্কে জানা
বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

আমি বিশ্বের সবচেয়ে বড় .১০ টি বিমানবন্দর নিয়ে আলোচনা করেছি । আমি আশা করি
এই বিমানবন্দরগুলো সম্পর্কে জানলে আপনাদের অনেক উপকার হবে ।