গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে জাদুবাস্তবতার এক অসামান্য প্রয়ােগে চেনা বাস্তবকে অতিক্রম করে যাওয়া হয়েছে।
গল্পের সূচনাতেই ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াের আবির্ভাবের পটভূমিতে লেখক পেলাইওদের উঠোনে কাকড়ার ভিড়, তাদের নবজাত শিশুর জ্বর ইত্যাদি ঘটনার মধ্য দিয়ে জগতের বিষণ্ণতাকে তুলে ধরেছেন। প্রতীকী ব্যঞ্জনায় ডানাওয়ালা বুড়াের আবির্ভাব তাই অমঙ্গলের দ্যোতক।
ডানাওয়ালা বুড়ােকে কেন্দ্র করে মানুষের ভিড়কারাের তাকে দেবদূত বলে আখ্যা দেওয়া, পাদ্রে গােনসাগার তাকে শয়তান হিসেবে চিহ্নিত করা, তাকে নিয়ে পেলাইও-এলিসেন্দার ধান্দাবাজি—এসবই একত্রিত হয়ে প্রতীকায়িত করে চরিত্র এবং সমাজমনস্তত্ত্বকে। তবে গল্পের শ্রেষ্ঠ প্রতীক নিঃসন্দেহে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র ডানাওয়ালা বুড়াে। এক অদ্ভুত উদাসীনতা আর অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে চারপাশের জগতে তার অবস্থান যেন হয়ে ওঠে নীরব প্রত্যাখ্যানের প্রতীক। এরপর ডিসেম্বরে প্রথম রােদুর পেয়ে তার ডানায় পালক গজানাে আর ডানা মেলে যেভাবে সেই থুরথুরে বুড়াে দিগন্তে মিলিয়ে যায় তার প্রতীকী তাৎপর্যও অসামান্য। সমাজের মানুষের বিচিত্র স্বভাব, তাদের স্বার্থপরতাকে স্পষ্ট করে দিয়ে ডানাওয়ালা বুড়াে চলে যায় অন্য কোনখানে। এইভাবে রহস্যময়তা আর ব্যঞ্জনায় প্রতীকের ব্যবহার ঘটিয়েছেন লেখক তাঁর গল্পে।
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো গল্পে পেলাইও সর্বপ্রথম বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােটিকে দেখেছিল।
প্রবল এবং অবিশ্রান্ত বৃষ্টির তৃতীয় দিনে পেলাইও-দের বাড়ির ভিতরে সমুদ্র থেকে অজস্র কাঁকড়া উঠে এসেছিল। পেলাইওকে সব কাঁকড়াগুলােকে মেরে ‘ভিজে-একশা’ উঠোন পেরিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আসতে হয়েছিল। কারণ, তাদের নবজাত শিশুটির সারারাত ধরে জ্বর হয়েছিল এবং পেলাইও ও তার স্ত্রীর ধারণা হয়েছিল কাঁকড়ার বদ গন্ধের জন্যই তাদের বাচ্চার জ্বর হয়েছে। সেইসময় সারা পৃথিবীকে যেন এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা গ্রাস করেছিল। সমুদ্র আর আকাশ হয়ে উঠেছিল একটাই ছাইরঙের ধূসর বস্তু। আর বেলাভূমির বালি যেন হয়ে উঠেছিল পচা খােলক মাছগুলির ভাপে সেদ্ধ হওয়া দগদগে স্তূপ। এরকম পরিস্থিতিতে দুপুরবেলাতেই প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা আলােয় পেলাইও যখন মৃত কাকড়াগুলােকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে আসছিল, তখন সেই অস্পষ্ট আলােয় সে দূর থেকে লক্ষ করে যে, তাদের বাড়ির উঠোনের পেছনদিকের কোণটায় কী একটা যেন ‘ছটফট করে নড়তেনড়তে কাতরাচ্ছে’। খুব কাছে গিয়ে সে দেখতে পায় বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে কাদার মধ্যে মুখ গুজে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। বুড়ােটি অত্যন্ত চেষ্টা করলেও তার ডানা দুটিতে এতই বাধা পাচ্ছে যে, কিছুতেই সে আর উঠতে পারছে না। এভাবেই কাহিনিতে বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে প্রথমবার দেখা গিয়েছিল।
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো’ গল্পে ডানাওয়ালা বুড়াের আবির্ভাব কাহিনিতে এক অসাধারণ নাটকীয় মােড় নিয়ে আসে। প্রবল বৃষ্টিতে পেলাইওদের বাড়ির ভিতরে কাঁকড়া উঠে আসত। সেই কাঁকড়া মেরে তাদের সমুদ্রে ফেলে আসার সময়ে পেলাইও আবিষ্কার করে কাদার মধ্যে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা এক থুরথুরে বুড়ােকে, দুটি বিশাল ডানার কারণে যে সেই কাদা থেকে কিছুতেই উঠতে পারছিল না। পরনে ন্যাকড়াকুডুনির পােশাক, কয়েকটি মাত্র চুল অবশিষ্ট থাকা টাক-পড়া চকচকে মাথা, প্রায় দাঁতহীন ফোকলা মুখে সেই বৃদ্ধের অদ্ভুত চেহারা দেখে এলিসেন্দাদের প্রথমেই তাকে মনে হয়েছিল ঝােড়াে কাকের প্র- প্রপিতামহ। তার ছিল পালক খসা অতিকায় দুটি শিকারি পাখির ডানা। অর্থাৎ চেহারার মধ্যেই সেই ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়াে যেন এক নাটকীয়তা সৃষ্টি করেছিল। তাকে প্রথমবার দেখে পেলাইওর দুঃস্বপ্ন’ মনে হয়েছিল। এরপর পুরো গল্প জুড়ে প্রায় নিষ্ক্রিয় থেকেও এই ডানাওয়ালা বুড়ােই কাহিনিকে নিয়ন্ত্রিত করেছে। তাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন চরিত্রের আগমন ঘটেছে, সক্রিয়তা তৈরি হয়েছে, পেলাইও ও এলিসেন্দার জীবনও ভিন্ন খাতে বইতে শুরু করে। তার আবির্ভাবের পটভূমিকায় পেলাইও এবং এলিসেন্দার হতভম্ব অবস্থা যেন বৃষ্টির দিন, কাঁকড়ার উপদ্রব, আর সদ্যজাতের অসুখকে ছাপিয়ে অভাবিত বিস্ময়ের জন্ম দেয়।
গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর লেখা ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়াে’ গল্পে পেলাইও র বাড়িতে ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ােকে দেখে সমাজের নানা স্তরের মানুষের নানা প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। পেলাইও এবং এলিসেন্দার প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল যে, সে ছিল তুফানে ডুবে যাওয়া কোনাে ভিনদেশি জাহাজের নিঃসঙ্গ নাবিক। পেলাইও-দের জ্ঞানী প্রতিবেশিনী, জীবনমৃত্যুর সব গলিঘুঁজিরই হদিশ ছিল যার নখদর্পণে, তার মন্তব্য ছিল যে ডানাওয়ালা বুড়াে আসলে এক ফরিশতা বা দেবদূত। কৌতূহলী জনতার একাংশের আচরণে, মজা করার ইচ্ছায় মনে হচ্ছিল যে, থুরথুরে বুড়ােটি যেন কোনও অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন জীব নয়, সার্কাসের জন্তু। আবার দর্শকদের মধ্যে সরলমতি কেউ ভেবে নিয়েছিল তাকে সমস্ত জগতের পুরপিতা করে দেওয়া উচিত। কঠিন হৃদয়ের কারও কারও মনে হয়েছিল, তাতে একজন পাঁচতারা সেনাপতির পদে উন্নীত করে দেওয়া দরকার, যাতে দেশের হয়ে লড়াই করে সব যুদ্ধবিগ্রহই সে জিতিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ দর্শকদের এই অংশ ভেবেছিল যে, ডানাওয়ালা বুড়াে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। অনেকের আবার মনে হয়েছিল ওই বুড়ােকে দিয়ে জ্ঞানে গুণে সেরা এক ডানাওয়ালা জাতির জন্ম দেওয়া সম্ভব হলে, তারাই বিশ্বব্ৰত্মাণ্ডের দায়িত্ব নিতে পারত। পাদরি গান সাগার অবশ্য এই ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ােকে জোচ্চোর ফেরেববাজ বলে মনে হয়। গােনসাগার মতে, এই ডানাওয়ালা বুড়াে মােটেও কোনাে দেবদূত নয়, কারণ তাকে বড্ড বেশি মানুষের মতাে দেখাচ্ছে, এবং সে মােটেও ঈশ্বরের ভাষা বােঝে না। সে জানেও না, কীভাবে যাজক বা পাদরিদের সম্ভাষণ করে কথা বলতে হয়। পাদরি গােনসাগা এও ভেবেছিলেন যে, বুড়াে লােকটি হয়তাে আসলে একটি শয়তান। রােমান ক্যাথোলিকদের উৎসবকে আচমকা পণ্ড করে দেওয়ার তালে আছে সে।
“তবে তাই হােক।”—এক্ষেত্রে কবির অভীষ্ট কী?
“বাণীর কমল খাটিবে জেল।” -দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতাটি অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
নুন কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
নুন কবিতায় কবির যে জীবনবােধের প্রকাশ ঘটেছে তা উদ্ধৃতিযােগে আলােচনা করাে।
‘নুন’ কবিতার শিল্পসার্থকতা আলােচনা করাে।
“নিম্নবিত্তের নােনা চোখের জলের দিনলিপি নয়, জয় গােস্বামীর ‘নুন’ কবিতাটি শেষপর্যন্ত হয়ে উঠেছে লবণাক্ত সমুদ্রের গর্জন।” -ব্যাখ্যা করাে।
“চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে” -এই চলে যাওয়ার মধ্যে দিয়ে জীবনের কোন বিশেষ তাৎপর্যের দিকে কবি ইঙ্গিত করেছেন?
“মাঝে মাঝে চলেও না দিন” কবির এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিত আলােচনা করাে।
“আমরা তাে এতেই খুশি; বলাে আর অধিক কে চায়?” -কবির এই মন্তব্যের মর্মার্থ আলােচনা করাে।
“সে অনেক পরের কথা। টান দিই গঞ্জিকাতে।” -মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।
“রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে/সব দিন হয় না বাজার; হলে হয় মাত্রাছাড়া” -উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে কোন জীবনসত্যের প্রকাশ ঘটেছে?
“কী হবে দুঃখ করে?কবির এই মন্তব্যের কারণ কী?
“করি তাে কার তাতে কী?” -মন্তব্যটির তাৎপর্য লেখাে।
“আমরা তাে অল্পে খুশি”—কোন্ প্রসঙ্গে বক্তা এ কথা বলেছেন? এই ‘অল্পে খুশি’ হওয়ার তাৎপর্য কী?
“আমরা তাে অল্পে খুশি” -বক্তা সত্যিই খুশি কি না আলােচনা করাে।
“বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গালাপচারা।” -অংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
“কিনে আনি গােলাপচারা” -গােলাপচারা কিনে আনলেও বক্তার জীবনচর্যার প্রকৃত স্বরূপ আলােচনা করাে।
“রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি” -রাগকে নিয়ন্ত্রণ না করে কবি তার মাথায় চড়ে কাকে কী বার্তা দিতে চান?
“আমি তার মাথায় চড়ি” -কে কার মাথায় চড়ে? পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
“সে অনেক পরের কথা” -বক্তার কোন্ বিষয়কে কেন অনেক পরের কথা বলা হয়েছে?
“ফুল কি হবেই তাতে”—কোন্ ফুলের কথা এখানে বলা হয়েছে? এই সংশয়ের কারণ কী?
“মাঝে মাঝে চলেও না দিন”—দিন চলে না কেন? এর ফল কী হয়?
নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলােচনা করাে।
শ্রমজীবী বঞ্চিত মানুষের জীবনযন্ত্রণা ‘নুন কবিতায় যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে লেখাে।
“আমাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক” -কেন কার কাছে এই দাবি করেছে?
“সব দিন হয় না বাজার” -বাজার হয় না কেন? হলে কী কী বাজার হয়?
“সে অনেক পরের কথা”—কোন্ কথা? উক্তিটির মর্মার্থ লেখাে।
Leave a comment