বিচ-লা-মার: এই ভাষাটি এককালে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে ব্যবহৃত হত। মূলত ইংরেজির সঙ্গে স্পেনীয় ও পাের্তুগিজ ভাষার অল্পস্বল্প উপাদান মিশ্রিত হওয়ার ফলে এই মিশ্র ভাষাটি গড়ে উঠেছিল। এই ভাষায় যেমন শব্দের লিঙ্গ এবং কারক অনুযায়ী রূপভেদ নেই, তেমনি ক্রিয়ার কাল পুরুষ বচন-এরও রূপভেদ নেই। যেমন— ‘সে খাচ্ছে’-এর রূপ হচ্ছে ‘He Kaikai’, আবার ‘সে সব খেয়েছে’-এর রূপ হল ‘He Kaikai all finish’ 

পিজিন ইংরেজি: চিনদেশের উপকূলবর্তী বন্দরগুলিতে, জাপানে এবং আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার চিনা অধিবাসীদের মধ্যে এই মিশ্র ভাষার ব্যবহার ছিল। ইংরেজি ‘Business’ শব্দের চিনা উচ্চারণ পিজিন বলে ভাষাটির এইরূপ নামকরণ হয়েছে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে উদ্ভূত এই ভাষায় বেশ কিছু চিনা শব্দ থাকলেও ইংরেজি শব্দই বেশি। চিনা ভাষায় র’ নেই বলে পিজিনে র>ল উচ্চারিত হয়। ফরাসিরা যেখানে বাণিজ্যের জন্য গেছে, সেখানে ‘পিজিন ইংরেজি মতাে একাধিক মিশ্র ফরাসি ভাষা প্রচলিত হয়েছে। এই ভাষাগুলি বিশ্বে ফরাসি পিজিন (French Pidgin) নামে পরিচিত। যেমন—ভিয়েতনামে ফরাসি এবং ভিয়েতনামি (Vietnamese) ভাষার মিশ্রণে তৈরি হয়েছিল ভিয়েতনামের ফরাসি পিজিন।

চিনুক: উত্তর আমেরিকার ওরেগন অঞ্চলে চিনুক বা চিনুক জারগন ভাষার উদ্ভব হয়েছিল। চিনুক, নুটকা প্রভৃতি (আমেরিকার আদিম ভাষা) ভাষার শব্দের সঙ্গে ফরাসি এবং ইংরেজি শব্দের সংমিশ্রণে এবং চিনুক ভাষার উচ্চারণরীতিকে গ্রহণ করে তৈরি হয় চিনুক জারগন মিশ্রভাষা। অষ্টাদশ শতকে উদ্ভূত এই ভাষা উনিশ শতকেই লুপ্ত হয়ে যায়।

মরিশাস ক্রেয়ল: ভারত মহাসাগরের মরিশাস দ্বীপটি ফরাসিদের অধিকারে এলে তারা সেখানে শ্রমিকের কাজ করানাের জন্য মাদাগাসকার দ্বীপের বহু কৃষ্ণাঙ্গকে নিয়ে আসে। সেই সময়েই ফরাসি ভাষার সঙ্গে মাদাগাসকারি ভাষার মিশ্রণে তৈরি হয় মরিশাস ক্ৰেয়ল ভাষা। পরবর্তীকালে মরিশাস দ্বীপটি ইংরেজদের দখলে চলে গেলে ইংরেজরা আখ চাযের জন্য ভারত থেকে প্রচুর শ্রমিক আমদানি করে। তাই এরপর মরিশাস ক্রেয়ল ভাষায় কিছু ইংরেজি ও ভারতীয় শব্দও ঢুকে পড়ে। এই ভাষাতেও শব্দের বা ক্রিয়াপদের কোনাে রূপভেদ নেই। যেমন- ‘আমি খাব’ কথাটি এ ভাষায় বলা হয় Mo va manze, আবার ‘আমি খেয়েছিলাম’ কথাটি হল Mo te manze।

বর্তমান বিশ্বে ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি লাভ করলেও চিন, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মান, ফ্রান্স, রাশিয়া, ইতালি প্রভৃতি উন্নত দেশের মানুষ এখনও আত্মমর্যাদার সঙ্গে নিজেদের ভাষাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। বিশ্ব-ঐক্য এবং একবিশ্বের ভাবনা বিশ্ব মনীষীদের পাশাপাশি ভাষাবিজ্ঞানীদেরও ভাবিত করেছে। মানুষে মানুষে ভাষাগত ব্যবধান দূর করার জন্য ভাষাবিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে তাই একটি বিশ্বভাষা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছেন। মানুষের জাতিগত পরিচয়বাহী ভাষাটিকে অক্ষুন্ন রেখেই প্রতিটি মানুষের জন্য দ্বিতীয় একটি ভাষার চিন্তা করেছেন তাঁরা। সেই ভাষাটি অবশ্যই কৃত্রিম এবং তাকে হতে হবে সর্বজনীন। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত দার্শনিক রেনে দেকার্ত (Descartes) ই প্রথম এইরকম কৃত্রিম এক আন্তর্জাতিক ভাষার কল্পনা করেছিলেন। এরপর জার্মান চিন্তাবিদ জোহান মার্টিন শ্লেয়ের (Schleyer) ও এমনই এক বিশ্বভাষার পরিকল্পনা করেন, যার নাম তিনি দেন ভােলাপ্যুক (Volapuk)। এর পর ফ্রান্সিস বেকন, জন উইলকিন্স্ প্রভৃতি বহু চিন্তাবিদ এ ধরনের বিশ্বজনীন ভাষার পরিকল্পনা করেন।

যে কৃত্রিম আন্তর্জাতিক ভাষাটি ‘বিশ্বভাষা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, তা হল এসপেরান্তো (Esperanto)। পােল্যান্ডের চক্ষুচিকিৎসক ডা. এল. এল. জামেন্হফ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর এসপেরান্তো [যার অর্থ DOCTOR HOPEFUL] ছদ্মনামে রুশ ভাষায় একটি গ্রন্থ রচনা করেন। বইটিতে সর্বপ্রথম বিশ্বভাষার গঠনবৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়। ডা. জামেন্হফের ছদ্মনাম অনুসারে বইটিতে আলাচিত বিশ্বভাষাটির নাম দেওয়া হয় এসপেরান্তো।

বিশ্বভাষা এসপেরান্ত প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি বিশ্ববাসীর জন্য তৈরি করা একটি দ্বিতীয় ভাষা। ভাষাটি এমন সহজসরল যে, পৃথিবীর যে-কোনাে মানুষ সহজেই এই ভাষায় কথা বলতে ও বুঝতে সক্ষম হবে। বিশ্বভাষা এস্পেরান্তোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল-

  • ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাগুলির ওপর ভিত্তি করেই এসপেরান্তো ভাষা গড়ে উঠেছে। ধ্বনিতত্ত্বের ক্ষেত্রে স্লাভ এবং রূপতত্বের ক্ষেত্রে লাতিন-উদ্ভূত রােমান্স (Romance) ও জার্মানিক ভাষাগুলির দ্বারা এই কৃত্রিম ভাষা প্রভাবিত। এই ভাষায় ৫টি স্বরধ্বনি, ২৩টি ব্যঞ্জনধ্বনি, ২টি অর্ধস্বর এবং ৬টি যৌগিক স্বর আছে। ৯২১টি শব্দমূলের সঙ্গে বিভক্তি-প্রত্যয় যুক্ত হয়ে এই ভাষার শব্দ তৈরি হয়।

  • এসপেরান্তো ভাষার ব্যাকরণ সহজসরল এবং সংক্ষিপ্ত। এই ভাষার ব্যাকরণে আছে মাত্র যােলােটা নিয়ম। এই ভাষার ক্রিয়াপদ বচন ও পুরুষ নিরপেক্ষ।

বাংলায় ‘আমি’ উত্তমপুরুষের ক্রিয়ারূপ ‘ঘুমাই’ হলেও ‘সে’ প্রথম পুরুষের ক্রিয়ারূপ ‘ঘুমায়’। কিন্তু এসপেরান্তো ভাষায় উত্তমপুরুষে এবং প্রথমপুরুষে একই ক্রিয়ারুপ ব্যবহৃত হয়েছে।

সারা পৃথিবীর কুড়ি লক্ষ মানুষ এই ভাষায় কথা বলতে সক্ষম। তবু এখনও সাধারণ বিশ্ববাসীর মধ্যে এই ভাষা বিশেষ জনপ্রিয় হয়নি।

ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করার পদ্ধতিগত সুবিধা কী? এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

ইন্দো ইউরােপীয় ভাষাবংশের পরিচয় দাও।

ইন্দো-ইরানীয় শাখার পরিচয় দাও।

গ্রিক ও ইতালীয় ভাষাশাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশের ইন্দোইরানীয়, ইতালীয় এবং গ্রিক—এই তিনটি প্রধান শাখা ব্যতীত অপর সাতটি অপ্রধান শাখার পরিচয় দাও।

সেমীয় ভাষাবংশের বিস্তৃত পরিচয় দাও।

হ্যামেটিক বা হ্যামীয় শব্দটি কীভাবে এসেছে? হ্যামীয় ভাষাবংশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

আফ্রিকার ভাষাপরিবার এবং ফিন্নো-উগ্ৰীয় ভাষা পরিবারের বিস্তৃত পরিচয় দাও।

আলতাইক ও ককেশীয় ভাষাপরিবারের বিস্তৃত বিবরণ দাও।

আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলােচনা করাে।

অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ (Unclassified) ভাষা কাকে বলে? পৃথিবীর উল্লেখযােগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার বর্ণনা দাও।

মিশ্র বা জারগন ভাষার বৈশিষ্ট্য ও বিভাগ উল্লেখ করাে।

সাংকেতিক ভাষা কাকে বলে? এই ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মানুষের ভাষার সঙ্গে বিভিন্ন মানবজাতি ও উপজাতির সম্পর্ক কী?