যেসব প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষালয় প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাপ্রসারের দায়িত্ব পালন করে তাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল一

(১) বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র: প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হল বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র। এই কেন্দ্রগুলি বিভিন্ন ধরনের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ব্যবস্থা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল—

  • সাক্ষরতা সংস্থা: এই ধরনের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষালয়ে বিদ্যালয়ছুট বয়স্ক ব্যক্তিদের কেবল লেখা, পড়া এবং সহজ পাটিগণিত শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে

  • যুব সমিতি: এই ধরনের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, ব্যায়াম, শরীরচর্চা, সাহিত্য আলােচনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে।

  • মহিলা সমিতি: এই ধরনের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাসংস্থায় সূচিশিল্প, দর্জির কাজ, শিশুর যত্ন, নারী উন্নয়ন, গৃহস্থালির কাজ ও পুষ্টি বিষয়ে আলাপ-আলােচনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে।

  • জাতীয় সমাজসেবামূলক প্রকল্প : এই ধরনের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাসংস্থার মাধ্যমে সামাজিক শিক্ষা, জনসংখ্যা বিষয়ক শিক্ষা (population education), পরিবেশদূষণ, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আলাপ-আলােচনার ব্যবস্থা করা হয়। মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের এই সংস্থার সদস্য করা হয়।

(২) মুক্ত বিদ্যালয়: এই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদ্যালয়ছুট এবং নিরক্ষর ছেলেমেয়েদের পড়াশােনার ব্যবস্থা করা হয়।

(৩) মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়: মরত, বয়স্ক ও অন্যান্য আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। অল্পখরচে সাধারণ মেধার শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায়।

(৪) নৈশ বিদ্যালয়: নিরক্ষর বা অল্পশিক্ষিত চাষি, শ্রমিক বা অন্যান্য কাজকর্মে যুক্ত মানুষজন দিনের বেলা বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করতে পারে না। তাদের জন্য সন্ধেবেলা বা রাত্রে পড়াশােনার ব্যবস্থা করা হয়। বয়স্ক শিক্ষার প্রসারের জন্য পশ্চিমবঙ্গে প্রায় দুহাজার নৈশ বিদ্যালয় আছে।

(৫) দূরাগত শিক্ষাকেন্দ্র: এই ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরাগত শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনা বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। এখান থেকে অনেকসময় স্টাডি মেটিরিয়াল বিতরণ করা হয় এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের মাধ্যমে কনট্যাক্ট প্রােগ্রাম পরিচালনা করা হয়।

(৬) ধারাবাহিক শিক্ষাকেন্দ্র: এই ধরনের প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি সান্ধ্যকালীন কোর্স, রবিবারের জন্য কোর্স বা বিভিন্ন অবকাশকালীন শিক্ষার ব্যবস্থা করে।

(৭) সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান: বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানেও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার ব্যবস্থা থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি মূলত সাধারণ মানুষের আর্থিক সাহায্যে চললেও কিছু কিছু সরকারি অনুদানও পেয়ে থাকে।

(৮) ইকো ক্লাব: এখানে পরিবেশ রক্ষা, দূষণ প্রতিরােধ, পৃথিবীতে সমস্ত প্রাণীর অস্তিত্বের গুরুত্ব এবং মানুষ ও প্রকৃতির সম্পর্ক বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তােলা হয়। এই সংস্থায় পরিবেশ সম্পর্কে নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের আলােচনা এবং সেমিনারের ব্যবস্থা করা হয়।

(৯) বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় সংস্থা: বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও ধর্মীয় সংস্থাও বর্তমানে প্রথাবহি্ভূত শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(১০) বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা: বিভিন্ন ধরনের রাষ্ট্রীয় সংস্থা, যেমন—সরকারি শিক্ষাদপ্তর, সমবায় বিভাগ, সমষ্টি উন্নয়নবিভাগ, স্বাস্থ্যবিভাগ, শিল্পবিভাগ প্রভৃতি প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। এই সংস্থাগুলি নিজেদের দপ্তরের কর্মরত ব্যক্তিদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।

আলােচ্য প্রতিষ্ঠানগুলি ছাড়াও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষাপ্রদানের জন্য বিভিন্ন ধরনের গতানুগতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও কাজ করে। পঞ্চায়েত স্তর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে UNESCO. FAO, WHO প্রভৃতিও প্রথাবহির্ভূত শিক্ষার সংস্থা হিসেবে কাজ করে।