প্রশ্নঃ বিবৃতি ও স্বীকৃতির সংজ্ঞা দাও। কোন পরিস্থিতিতে এবং কোন উদ্দেশ্যে যাদেরকে সাক্ষীরূপে ডাকা হয় নি তদের বিবৃতি ও স্বীকৃতি সাক্ষ্যে গ্রহণীয় হবে কি? স্বীকৃতির সাক্ষ্যগত মূল্য কি?

বিবৃতি ও স্বীকৃতির সংজ্ঞাঃ বিবৃতি বলতে মৌখিক বা লিখিত উক্তি কিংবা অঙ্গুলী নির্দেশ বা সংকেতকে বুঝায় । কোন ব্যক্তির উপস্থিতিতে দেয়া বিবৃতি তার আচরণের পরিচয় বহন করে। স্বীকৃতি হচ্ছে, সাক্ষ্য আইনের ১৭ ধারা মোতাবেক বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক মোখিক বা লিখিত উক্তি, যা ঘটনা সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তের সূচনা করে। এছাড়া সাক্ষ্য আইনের ২০ ধারা মতে মামলার কোন পক্ষ নালিশী কোন বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রকাশ্যভাবে যে সকল ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে তাদের বিবৃতিও স্বীকৃতি।

সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয়নি এমন ব্যক্তির বিবৃতি ও স্বীকৃতি : সাক্ষী হিসেবে ডাকা হয় নি এমন ব্যক্তির বিবৃতি ও স্বীকৃতির প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনের ৩২ ধারায় বিধান রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি মৃত কিংবা যাকে খুঁজে পাওয়া যায় না অথবা সে সাক্ষ্য দেয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে অথবা যাকে হাজির করা এমন সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ যে সংশ্লিষ্ট মামলার অবস্থা বিবেচনায় আদালতের মতে তা অযোক্তিক তবে সেরূপ ব্যক্তির লিখিত বা মৌখিক বিবৃতি নিম্ন বর্ণিত ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ঘটনা-

(১) মৃত্যুর কারণ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রেঃ যে মামলায় কোন মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, সে ব্যক্তি তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অথবা যে পরিস্থিতিতে তার মৃত্যু ঘটেছে সে পরিস্থিতি সম্পর্কে যদি কোন বিবৃতি দিয়ে থাকে তবে তা প্রাসঙ্গিক।

এরূপ বিবৃতি প্রদানকালে বিবৃতিদাতার মৃত্যুর আশংকা থাক বা না থাক এবং সে মামলায় তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে যে প্রশ্ন উঠে তার প্রকৃতি যাই হোক, উক্ত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক হবে।

(২) স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাকালেঃ যখন বিবৃতি প্রদানকারী ব্যক্তি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিবৃতিটি দিয়ে থাকে এবং বিশেষ করে যখন ইহা তার সাধারণ কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য রক্ষিত খাতায় কিছু লিপিবদ্ধ করা হয়; অথবা তার দ্বারা লিপিবদ্ধ বা স্বাক্ষরকৃত। কোন সরকারী ঋণপত্র, মাল, অর্থ বা সম্পত্তির প্রাপ্তি স্বীকারের রসিদে তার কোন বিবৃতি থাকে; অথবা যখন তার দ্বারা লিপিবদ্ধ ও স্বাক্ষরকৃত কোন ব্যবসা সংক্রান্ত দলিলে লিখিত তার বক্তব্য হয় অথবা যখন সেই ব্যক্তির স্বাক্ষরকৃত বা লিপিবদ্ধ পত্রের বা অন্য কোন তারিখ সম্বলিত দলিলের তারিখ সম্পর্কিত তার বিবৃতি হয়।

(৩) বিবৃতি প্রদানকারীর স্বার্থ-বিরোধী বিবৃতিঃ যখন বিবৃতিটি বিবৃতি প্রদানকারীর আর্থিক বা মালিকানার স্বার্থ-বিরোধী হয়; অথবা যখন বিবৃতিটি সত্য হলে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী বা ক্ষতিপূরণের দেওয়ানী মামলা চলতে পারতো; তাহলে এরূপ বিবৃতি প্রাসঙ্গিক হবে।

(৪) সর্বসাধারণের অধিকার, প্রথা বা সাধারণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রদানকারী বিবৃতি: যদি বিবৃতিতে সর্ব-সাধারণের অধিকার বা প্রচলিত প্রথা বা সাধারণের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিবৃতিদাতার অভিমত ব্যক্ত থাকে এবং যার অস্তিত্ব থাকলে তা বিবৃতিদাতার অবগত থাকার সম্ভাবনা থাকে এবং সেই বিবৃতি যদি সংশ্লিষ্ট অধিকার, প্রথা বা বিষয় সম্পর্কে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই প্রদত্ত হয়ে থাকে, তবে তা প্রাসঙ্গিক।

(৫) আত্মীয়তার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিবৃতিঃ যদি বিবৃতিটি এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রক্তের, বৈবাহিত বা দত্তক . সম্পর্কিত অস্তিত্ব বিষয়ে হয় যাদের মধ্যে অনুরূপ রক্তের বৈবাহিক বা দত্তক সম্পর্কের অস্তিত্ব বিষয়ে বিবৃতি প্রদানকারীর অবগতির বিশেষ সুযোগ থাকে এবং যদি বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই বিবৃতিটি প্রদত্ত হয়ে থাকে তবে তা প্রাসঙ্গিক।

(৬) পারিবারিক বিষয় সম্পর্কিত দলিল বা উইল লিপিভুক্ত বিবৃতিঃ বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে প্রদত্ত কোন বিবৃতি যখন কোন মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে রক্ত, বৈবাহিক বা দত্তক সম্পর্কিত বিষয়ে হয় এবং তা যদি মৃত ব্যক্তিদের কারো উইল বা পারিবারিক বিষয়াদি সংক্রান্ত কোন দলিলে লিপিবদ্ধ হয় অথবা পারিবারিক কোষ্ঠিতে কবরের স্মৃতিফলকে, পারিবারিক চিত্রে বা অন্য যে সকল জিনিসে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাতে করা হয়ে থাকে তবে তা প্রাসঙ্গিক হবে।

(৭) অধিকার বা প্রথা সম্পর্কেঃ সাক্ষ্য আইনের ১৩ (ক) ধারায় উল্লিখিত কার্য-সংক্রান্ত কোন দলিলে বা উইলে লিপিবদ্ধ থাকে, তবে সেই লিখিত বিবৃতি প্রাসঙ্গিক।

(৮) কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতিঃ যদি বিবৃতিটি কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত হয়ে থাকে এবং বিচার্য বিষয়ের সাথে বা প্রাসঙ্গিক কোন মনোভাব বা ধারণা এতে ব্যক্ত থাকে তবে সেই বিবৃতিটি প্রাসঙ্গিক।

উপরিউক্ত ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি বা নিখোঁজ ব্যক্তি বা সাক্ষ্য প্রদানে অক্ষম ব্যক্তি বা যার উপস্থিতি অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ বা সময় সাপেক্ষ এরূপ ব্যক্তির বিবৃতি প্রাসঙ্গিক ও গ্রহণযোগ্য হবে।

স্বীকৃতির সাক্ষ্যগত মূল্যঃ সাক্ষ্য আইনের ৩১ ধারা অনুযায়ী স্বীকৃতি চূড়ান্ত প্রমাণ নয়, তবে প্রমাণ প্ৰতিবন্ধ করতে পারে। স্বীকৃতি প্রমাণের দায়িত্ব পরিবর্তন করে মাত্ৰ।

যেমন, ক দাবী করছে যে, দাখিলকৃত খত মূলে সে খ এর নিকট এক হাজার টাকা পাবে। খ এই খত সম্পাদনের কথা স্বীকার করলো, কিন্তু বললো যে এটা শুধু সম্পাদন হয়েছে এ বাবদ ক এর নিকট হতে সে কোন টাকা নেয় নি। জবরদস্তি করে তার নিকট হতে খত সম্পাদন করানো হয়েছে।

সাধারণভাবে ক-কে প্রমাণ করতে হতো যে, খ তার নিকট হতে টাকা নিয়েছে এবং স্বেচ্ছায় খত সম্পাদন করেছে। কিন্তু খ এর স্বীকৃতির ফলে ক তার প্রমাণের প্রাথমিক দায়িত্ব হতে মুক্তি পেলো। এই দায়িত্ব এখন খ এর উপর অর্পিত হলো। এখন খ-কেই প্রমাণ করতে হবে যে জোর করে তার নিকট হতে খত সম্পাদন করায়ে নেয়া হয়েছিল । খ এর স্বীকৃতি দ্বারা তার নিকট ক এর প্রাপ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হলো না বটে, তবে ক তার প্রাথমিক দায়িত্ব হতে রেহাই পেলো মাত্ৰ৷