প্রশ্নঃ বিবাহ বিচ্ছেদ কী? বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলো নির্দেশ করে।
অথবা, বিবাহ বিচ্ছেদ কী? বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায়গুলো আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ বর্তমানে পৃথিবীতে অনেক সামাজিক সমস্যা বিরাজ করছে। বিবাহ বিচ্ছেদ এগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আমরা পাই, বিবাহ বিচ্ছেদ কোনো অপরাধ নয়। তবে এটি একটি সামাজিক সমস্যা। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে অনেক সময় সমাজে অশান্তির সৃষ্টি হয়। শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আবার অনেক ক্ষেত্রে বিবাহবিচ্ছেদ একটি আইনস্বীকৃত সামাজিক সমস্যা। বিভিন্ন কারণে বিবাহবিচ্ছেদ সংঘঠিত হয়ে থাকে।
বিবাহ বিচ্ছেদঃ বৈবাহিক চুক্তি বাতিল করার মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানোর প্রক্রিয়াকে বিবাহ বিচ্ছেদ বা Divorce বলে। পৃথিবীর প্রায় সকল সমাজেই বিবাহ বিচ্ছেদের প্রথা প্রচলিত। স্বামী-স্ত্রী একত্রে বাস করতে থাকলে অনেক সময় বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে অমিল দেখা দেয়। যার ফলে তারা দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে অনাগ্রহী হয়ে পড়েন। ফলে তারা চূড়ান্তভাবে পৃথক থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এই প্রক্রিয়াকে বিবাহ বিচ্ছেদ বলে।
বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ ৪ বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দরিদ্রপীড়িত উন্নয়নশীল দেশ। নানারকম সামাজিক সমস্যা নিয়ে মানুষ বসবাস করে। ফলে পারিবারিক অনেক সমস্যা থেকেও মানুষ মুক্ত নয় । বাংলাদেশে বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনে বিভিন্ন কারণ কাজ করে। বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান কারণগুলো হলো:
(১) যৌতুক প্রথাঃ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বরপক্ষ কন্যার কাছে যৌতুক দাবি করে। কন্যাপক্ষ যৌতুক দিকে ব্যর্থ হলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
(২) নির্যাতনঃ স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে নারীরা দাম্পত্য জীবনে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
(৩) সন্তান দানে অক্ষমতাঃ আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে সন্তান না হলে সাধারণত এ জন্য নারীদেরকে দায়ী করা হয়। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটে।
(৪) দাম্পত্য কলহঃ স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কলহ দেখা দেয়। এই কলহের কারণে অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
(৫) দরিদ্রতাঃ দারিদ্রতার কারণে অনেক সময় স্বামী তার স্ত্রীর ভরণপোষণ অক্ষম হয়ে পড়েন যা বিবাহ বিচ্ছেদের অন্যতম কারণ।
(৬) নৈতিক অবনতিঃ নৈতিক অবনতির কারণে স্বামী বা স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য উপায়ঃ বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেয়া হলে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে।
(১) যৌতুক প্রথা নির্মূলে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে।
(২) আত্ম-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে হবে।
(৩) মাদক সমস্যা রোধ করতে হবে।
(৪) নারী নির্যাতন রোধে কঠোর আইন করতে হবে।
(৫) নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।
(৬) নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে।
(৭) সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।
(৮) নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
(৯) নারীকে অধিকার সচেতন করতে হবে।
(১০) নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বিবাহ বিচ্ছেদ বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে । তাহলেই দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হবে ও বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমে আসবে। বিবাহ বিচ্ছেদ এখন একটি সামাজিক সমস্যা যা সমাজের বহু ব্যক্তির ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। শিশুদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফলে এই ধরনের শিশু বড় হয়ে নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়তে পারে যা একটি সমাজের জন্য ক্ষতিকর। ফলে বিবাহ বিচ্ছেদ রোধে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে করে সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের হার কমে যাবে ও নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী ও চিন্তামুক্ত হবে। ফলে এটা সমাজে স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক হবে।
Leave a comment