অথবা, বিপ্লব ও বিবর্তনের ৫টি বৈসাদৃশ্য লিখ।
অথবা, বিপ্লব ও বিবর্তনের ৫টি বৈসাদৃশ্য উল্লেখ কর।
ভূমিকাঃ জগতের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ হিসাবে যেসব মতবাদ দার্শনিক আলােচনার অন্তর্ভুক্ত তাদের মধ্যে বিবর্তনবাদ ও সৃষ্টিবাদ অন্যতম। তবে বিবর্তনের বিপরীত মত হিসাবে বিপ্লব ও দর্শনে আলােচিত হয়েছে। বৈজ্ঞানিক ও মানবচিন্তার বিভিন্নতার কারণেই মতবাদগুলাে ব্যাপক ভাবনা ও আলােড়নের সৃষ্টি করেছে। এমনই এক শৃঙখলাপূর্ণভাবে পরিবর্তনের ধারণা নিয়ে বিবর্তনবাদ গঠিত হয়েছে। বিবর্তনবাদীদের মতে, জগতের প্রত্যেকটি জটিল বস্তুই সহজ ও সাধারণ অবস্থা থেকে আরম্ভ করে ক্রমে জটিল হতে হতে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
বিবর্তনঃ বিবর্তনের ইংরেজি প্রতিশব্দ Evolution। উৎপত্তিগত দিক থেকে Evolution শব্দটির অর্থ হলাে উন্মােচন করা, বিকশিত বা মেলে ধরা। জগত সম্পর্কে বিবর্তনবাদীরা যে মন্তব্য করেন তা এই Evolution শব্দের শাব্দিক অর্থের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্য আছে। অর্থাৎ বিবর্তনবাদীদের মতে, জগত মূলত ক্রমবিকাশের সাথে শৃঙ্খলাপূর্ণ উপায়ে বর্তমানরূপ লাভ করেছে।
বিপ্লবঃ বিপ্লব শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ Revolution। এই Revolution শব্দটি মূলত জোরপূর্বক পরিবর্তনের রূপকে নির্দেশ করে। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল বলেন, কোনাে একটি শাসনব্যবস্থার ছােটবড় যেকোনাে ধরনের পরিবর্তনই হলাে বিপ্লব। অর্থাৎ ক্রমিক নয় বরং প্রশাসনিকভাবে হঠাৎ আমূল বা কিঞ্চিত পরিবর্তনই বিপ্লব।
বিপ্লব ও বিবর্তনের মধ্যকার পার্থক্যঃ বিপ্লব ও বির্তনের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হলাে-
উৎপত্তিগত অর্থের দিক থেকেঃ
(১) বিপ্লব বলতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে বােঝায় অর্থাৎ যা আকস্মিক ও অস্বাভাবিকভাবে ঘটে সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করে, তাকে বিপ্লব বা বৈপ্লবিক পরিবর্তন বলে। অপরপক্ষে, বিবর্তন মূলত ক্রমিক ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিবর্তনকে বােঝায় অর্থাৎ, আকস্মিক বা অস্বাভাবিকভাবে নয় বরং ধীরে ধীরে ক্রমিকভাবে বিভিন্ন স্তরের মধ্যদিয়ে পরিবর্তন কাজ করে যায়, তাকে বিবর্তন বা বিবর্তনবাদ বলে ।
(২) ইতিহাসের দিক থেকে বৈপ্লবিক পরিণতির পেছনে কোনাে ইতিহাস থাকে না। অপরপক্ষে, বিবর্তন যে পরিবর্তন নিয়ে আসে তার পেছনে একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস থাকে।
(৩) ব্যাপকতার দিক থেকে বিবর্তন সর্বব্যাপক। অর্থাৎ এমন কোনাে বস্তু নেই যার উৎপত্তির ইতিহাস বিবর্তনের ইতিহাস নয়। পক্ষান্তরে, বিপ্লব প্রধানত সামাজিক ও রাষ্টীয় ব্যাপারে সীমাবদ্ধ।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায়, বিবর্তন ও বিপ্লবকে মূলত সমার্থক মতবাদ বলা যায় না। এ দুটি মতবাদ বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে বিপরীতার্থক মতবাদ। কেননা, বিবর্তন বা বিবর্তনবাদ যেখানে ক্রমবিকাশের ধারায় পরিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রদান করে। ঠিক এর বিপরীত মতবাদ হিসাবে বিপ্লব হত্যার প্রয়ােগে হঠাৎ করে পরিবর্তনে বিশ্বাসী। তবে এ দু’টি মতবাদই একই উদ্দেশ্য পরিচালিত হয়। অর্থাৎ উভয়ের কাজ হলাে পরিবর্তন আনয়ন করা।
Leave a comment