সমাজ-বিপ্লবের আর্থনীতিক ভিত্তি: মার্কসীয় দর্শন অনুসারে সামাজিক বিপ্লবের আর্থনীতিক ভিত্তি হল উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে অসঙ্গতি ও দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্বের ফলেই শ্রেণী-সংগ্রামের সৃষ্টি হয়। বিকাশের নির্দিষ্ট একটি স্তরে উৎপাদন শক্তির সঙ্গে প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্কের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই অবস্থায় পুরাতন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমাজ-বিপ্লব সংগঠিত হয়। শ্রেণী সংগ্রামের উদ্দেশ্য হল শোষিত শ্রেণী কর্তৃক রাষ্ট্রীয় বা রাজনীতিক ক্ষমতা দখল করা। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আগে পর্যন্ত যত বিপ্লব সংগঠিত হয় তাদের প্রতিটির মাধ্যমে একটি শোষক শ্রেণীর পরিবর্তে আর একটি শোষক শ্রেণী ক্ষমতাসীন হয়। কেবলমাত্র শোষণের ধারা নতুন রূপ ধারণ করে। তবে প্রত্যেক বিপ্লবের ফলে সমাজ এক ধাপ করে উন্নততর পর্যায়ে উন্নীত হয়। কেবল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ফলেই শ্রেণী শোষণের অবসান ঘটে।

উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে বিরোধই হল মূল: মার্কসবাদী চিন্তাবিদদের অভিমত অনুসারে সামাজিক বিপ্লবের মূল ভিত্তি হল উৎপাদনশক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব। এবং উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে এই দ্বন্দ্বই হল যাবতীয় সামাজিক দ্বন্দ্বের মূল কারণ। হার্বার্ট আপথেকারের মতানুসারে আজ পর্যন্ত সকল শোষণমূলক সমাজব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হিসাবে মৌলিক ও পরিবর্তনের অতীত দ্বন্দ্ব-বিরোধগুলি প্রতীয়মান হয়েছে। তবে উৎপাদন উপাদান এবং উৎপাদন সম্পর্কের ভিতরকার দ্বন্দ্বটিই হল কেন্দ্রীয়। উৎপাদন-উপাদান ব্যক্তিগত মালিকানাধীন থাকে। কিন্তু উৎপাদন-সম্পর্ক হল সামাজিক। এই কারণে প্রথমটি দ্বিতীয়টির প্রতি বৈরীভাবাপন্ন হয়ে থাকে। আপথেকার বলেছেন: “It is due to fundamental and immutable contradictions, or antagonisms, which hitherto have characterised all exploitative social systems.” তিনি আরও বলেছেন: “Central is held to be the contradiction between the means of production and the relations of production.” সাবেকী উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে বিকাশমান উৎপাদন শক্তির দ্বন্দ্ব এক সময় চরম পর্যায়ে উপনীত হয়। এই অবস্থাতেই সামাজিক বিপ্লবের আর্থনীতিক বনিয়াদ তৈরী হয়ে যায়। সামাজিক বিপ্লবের উদ্দেশ্য হল উৎপাদন উপাদানের সাবেকী মালিকানার উচ্ছেদ সাধন ও সাবেকী উৎপাদন সম্পর্কের অবসান; এবং এমন এক উৎপাদন-সম্পর্ক স্থাপন যা বিকশিত নতুন উৎপাদন শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের বীজ বর্তমান: মানবসমাজের বৈষয়িক উৎপাদন প্রক্রিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্বের বীজ বর্তমান থাকে। সামাজিক বিপ্লব হল সেই দ্বন্দ্বেরই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। বস্তুত সমাজের বৈষয়িক ভিত্তির মধ্যেই মার্কসবাদীরা বিপ্লবের উৎসের অনুসন্ধান করেছেন। এবং তাঁরা ঐতিহাসিক বস্তুবাদের ভিত্তিতেই এ ক্ষেত্রে অগ্রসর হয়েছেন। অর্থশাস্ত্রের সমালোচনা প্রসঙ্গে’ শীর্ষক রচনায় মনীষী মার্কস-এর অভিমত অনুসারে সমাজের বৈষয়িক উৎপাদন শক্তি হল বিকাশশীল। উৎপাদন শক্তির বিকাশের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে সমকালীন উৎপাদন-সম্পর্কের সংঘাত অবশ্যম্ভাবী। কারণ তখন প্রচলিত উৎপাদন-সম্পর্ক বিকাশমান উৎপাদন-শক্তির শৃঙ্খলে পরিণত হয়। এই অবস্থায় সামাজিক বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী। এ প্রসঙ্গে মার্কসের আরও অভিমত হল যে-কোন একটি নির্দিষ্ট সমাজব্যবস্থার মধ্যে উৎপাদন শক্তি যতটা বিকশিত হওয়া সম্ভব বা সেই সমাজব্যবস্থার মধ্যে যতটা উৎপাদন শক্তির স্থান সংকুলান হতে পারে তা পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সামাজিক বিপ্লব ঘটে না বা সংশ্লিষ্ট সমাজব্যবস্থার অবসান হয় না।

ইতিহাসের চলিকা শক্তি: মার্কসবাদে বিপ্লবকে ইতিহাসের চালিকাশক্তি হিসাবে গণ্য করা হয়। মার্কস (Marx) বলেছেন: “Revolutions are the locomotives of history.” সামাজিক প্রগতির জন্য বিপ্লব অত্যাবশ্যক। এঙ্গেলস্ (Engels)-এর মতে “বিপ্লব হল এমন এক হাতিয়ার যার সাহায্যে সামাজিক আন্দোলন দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয়ে পুরাতন মৃত রাজনীতিক ধ্যান-ধারণাকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।” সেজন্য মার্কস ও এঙ্গেলস (Marx and Engels)-এর কথায় “সমাজের তাবৎ ইতিহাস হল শ্রেণী-সংগ্রামের ইতিহাস” (The history of all hitherto existing society is the history of class-struggles.”)

বিপ্লবের কারণ: শ্রেণীবিভক্ত সমাজের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বই বিপ্লবের জন্মদাতা। শোষক ও শোষিত শ্রেণীর মধ্যে শ্রেণীদ্বন্দ্ব হল সমাজ বিপ্লবের রাজনীতিক প্রেরণা। রাষ্ট্রশক্তিকে কেন্দ্র করেই শ্রেণীসংঘাতের এই রাজনীতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। রাষ্ট্রশক্তি শোষকশ্রেণীর দখলে থাকে এবং সমাজে প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্ককে বজায় রেখে শোষণকে অব্যাহত রাখে। এই শ্রেণীসংগ্রাম পুরোদস্তুর বিপ্লবে পরিণত হয় যখন সমাজের প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্কের সঙ্গে বিকশিত বা উন্নত উৎপাদন শক্তির অসামঞ্জস্য প্রকট হয়ে উঠে এবং বিরোধ ঘটে। উৎপাদন-উপাদানের উন্নতির ফলে উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবর্তিত হয় এবং নতুন উৎপাদন শক্তি এবং পুরাতন উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এই বিপ্লবের ফলে পুরাতন ব্যবস্থা ধ্বংস হয় এবং নতুন সমাজের উদ্ভব হয়। উৎপাদনশক্তির সঙ্গে উৎপাদন সম্পর্কের অসঙ্গতি বিপ্লবের কারণ সৃষ্টি করে। মার্কস-এর মতে সামাজিক সংঘাতের ভিত্তি হল উৎপাদন-উপাদান, উৎপাদন শক্তি এবং উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব।

উৎপাদন-শক্তিই হল সচল বিপ্লবী উৎপাদন: স্ট্যালিনের কথায় “উৎপাদন শক্তিই উৎপাদনের সবচেয়ে সচল ও বিপ্লবী উপাদান।” নিত্যনতুন যন্ত্রপাতির পরিবর্তন ও উন্নতির ফলে উৎপাদন শক্তির পরিবর্তন ও বিকাশ সাধিত হয়। কিন্তু উৎপাদন শক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে উৎপাদন-সম্পর্ক পরিবর্তিত হতে পারে না। ফলে বস্তুগত উৎপাদন শক্তির সঙ্গে চলতি উৎপাদন সম্পর্কের বিরোধ বাধে। পুরাতন উৎপাদন সম্পর্ক উৎপাদন শক্তির উন্নতিতে বাধার সৃষ্টি করে। উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে এই সংঘাতের ফলে সমাজ-জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিরোধ দেখা দেয়। তখন পুরাতন উৎপাদন সম্পর্ক উচ্ছেদ করে উন্নত নতুন উৎপাদন শক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদন সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সমাজবিপ্লব ঘটে এবং নতুন সমাজের আবির্ভাব হয়। সুতরাং বস্তুগত শক্তিই সামাজিক পরিবর্তনের মৌলিক উপাদান। বস্তুগত শক্তির বিরোধই পুরাতন সমাজের পতন ঘটিয়ে নতুন সমাজ সৃষ্টি করে। এমিল বার্ণস-এর কথায়: “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত শ্রেণীকে ক্ষমতাচ্যুত করার উদ্দেশ্যে যে সকল প্রকৃত বিপ্লব সংঘটিত হয় তা কেবলমাত্র ভাবী শাসকশ্রেণীর বিপ্লব নয়। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তা পুরাতন শাসক-শ্রেণীর দ্বারা নিপীড়িত সকল মানুষের বিপ্লব।”

বিপ্লবী পরিবেশ বিপ্লবের পূর্বশর্ত: লেনিনের মতানুসারে সমাজের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিপ্লবের সূত্রপাত করে। বিপ্লবের গতি ত্বরান্বিত হয় বাহ্যিক দ্বন্দ্বের দ্বারাও। বিভিন্ন সমাজব্যবস্থার অসমান উন্নতির জন্য বাহ্যিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। লেনিনের মতানুসারে বিপ্লবের জন্য দু’ধরনের পূর্বশর্ত থাকা প্রয়োজন: 

  • (১) বস্তুগত বা বিষয়গত অবস্থা (objective conditions) এবং 

  • (২) বিষয়ীগত অবস্থা (subjective conditions)। 

বিপ্লবের বিষয়গত অবস্থা বলতে তিনি বৈপ্লবিক পরিস্থিতি বা অবস্থা (revolutionary situation)-র কথা বুঝিয়েছেন। লেনিনের মতে বৈপ্লবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন, (ক) দেশে বিভিন্ন চরম সমস্যার জন্য শাসকশ্রেণীর নীতিতে সংকট দেখা দেয় এবং কোন পরিবর্তন ব্যতিরেকে শাসকশ্রেণীর পক্ষে দেশ শাসন অসম্ভব হয়ে। পড়ে; (খ) শোষিত শ্রেণীর দারিদ্র্য ও দুর্দশা অস্বাভাবিকভাবে তীব্রতর হয়; এবং (গ) সাধারণ মানুষ শোষণের অবসানকল্পে স্বাধীনভাবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনের জন্য তৈরী হয়। অর্থাৎ বিপ্লবের বস্তুগত অবস্থা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বিপ্লব সংঘটিত হয় না। আবার কেবলমাত্র বিপ্লবের বিষয়গত উপাদান বর্তমান থাকলেই বিপ্লবের ঘটনা এবং বিপ্লবের সাফল্য সুনিশ্চিত হয় না। বিপ্লবের বিষয়গত উপাদানের সঙ্গে বিষয়ীগত উপাদানের সংযুক্ত অবস্থানের মাধ্যমেই বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং সফল হয়। বিপ্লবের বিষয়ীগত উপাদানসমূহ হল: (ক) জনগণের বিপ্লবী চেতনা, সংগ্রামী মানসিকতা ও দৃঢ়তা; (খ) সকল সংগ্রামী শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করার জন্য অগ্রগামী বাহিনীর সংগঠন; (গ) সংগ্রামী অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং নির্ভুল রণনীতি ও রণকৌশল নির্ধারণে ও জনগণকে নেতৃত্ব দানে সক্ষম একটি রাজনীতিক দলের অস্তিত্ব। বিপ্লব কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। উপযুক্ত এক বৈষয়িক পরিবেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়। আর্থনীতিক বিচারে বিপ্লব অপরিহার্য হয়ে ওঠে তখনই যখন বাস্তব পরিবেশ উপযোগী হয়।


বিপ্লবের প্রকৃতি

বুর্জোয়া বিপ্লব ও সর্বহারার বিপ্লব: বিপ্লবের প্রকৃতি নির্ধারিত হয় বিপ্লবের মাধ্যমে কি ধরনের উৎপাদন-সম্পর্কের অবসান ঘটে এবং কি ধরনের উৎপাদন-সম্পর্কের সৃষ্টি হয় তার দ্বারা। সামত্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ক বিলুপ্ত করে ধনতান্ত্রিক সম্পর্ক স্থাপনের বিপ্লব হল বুর্জোয়া বিপ্লব। বুর্জোয়া শ্রেণীর নেতৃত্বে এই বিপ্লব ঘটে। উৎপাদন শক্তি বিকাশে এবং উৎপাদন-সম্পর্কের পরিবর্তনে এই শ্রেণী প্রগতিশীল ভূমিকা গ্রহণ করে। তার ফলে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদনসম্পর্ক উৎখাত করে পুঁজিবাদী সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শ প্রচারিত হয়। বুর্জোয়া বিপ্লবের উদাহরণ হিসাবে ১৬৪৮ ও ১৬৮৯ সালের ইংল্যাণ্ডের বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম (১৭৭৬) এবং ফরাসী বিপ্লব (১৭৮৯)-এর উল্লেখ করা হয়। আবার এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উৎপাদন শক্তি ও উৎপাদন সম্পর্কের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বুর্জোয়া শ্রেণী প্রচলিত উৎপাদন সম্পর্ক এবং আনুষঙ্গিক ধ্যান-ধারণাসমূহ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়। তখন বুর্জোয়া শ্রেণী প্রতিবিপ্লবী হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় বিপ্লব হয়। এই সংগ্রামে শ্রমিক শ্রেণী প্রগতিশীল ও বিপ্লবী ভূমিকা পালন করে। ‘কমিউনিস্ট ইস্তাহার’-এ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দ্বন্দ্ব এবং সর্বহারার বিপ্লবের অপরিহার্যতার কথা বলা হয়েছে। মার্কসীয় বৈপ্লবিক আদর্শে অনুপ্রাণিত শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রগামী অংশ বা সাম্যবাদী দল সর্বহারার বিপ্লব বা সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করে। তার ফলে নতুন সমাজব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা হয়।

সর্বহারা বিপ্লবের উদ্দেশ্য: মার্কসীয় তত্ত্ব অনুসারে সর্বহারা বিপ্লবের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হল রাজনীতিক সংগ্রামে জয়ী হওয়া এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা শাসন ক্ষমতা দখল করা। সর্বহারা শ্রেণী এই রাজনীতিক ক্ষমতার সাহায্যে বুর্জোয়া শ্রেণীর হাত থেকে যাবতীয় মূলধন কেড়ে নেবে এবং উৎপাদনের সকল উপাদান রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে ও উৎপাদন শক্তির উন্নতি সাধন করবে। এইভাবে উৎপাদনের উপর সমাজের সামগ্রিক মালিকানা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। ‘কমিউনিস্ট ইস্তাহারে আরও বলা হয়েছে যে, সর্বহারাদের বিপ্লবের ফলশ্রুতি হিসাবে সর্বহারা শ্রেণীর আন্তর্জাতিকতাবাদ প্রতিষ্ঠিত হবে। জাতি সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে। এক জাতির দ্বারা অপর জাতির উপর শোষণ ও পীড়নের ঘটনা আর ঘটবে না। নিপীড়িত জাতিগুলির মুক্তি ঘটবে।

বিপ্লব ও হিংসা এক নয়: মার্কসবাদ অনুসারে হিংসা ও বিপ্লব ওতপ্রোতভাবে সংযুক্ত নয়। বিপ্লবের সঙ্গে হিংসা থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে। তবে শাসক ও শোষক শ্রেণী হিংসাত্মক উপায়ে সর্বহারা শ্রেণীর সংগ্রামী শক্তি ও চেতনাকে শেষ করে দিতে চেষ্টা করে। শাসক শ্রেণীর হিংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লবে বলপ্রয়োগ ও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। এইভাবে বিপ্লবের সঙ্গে হিংসা জড়িয়ে পড়ে। লেনিন বিপ্লবের সৃজনশীল চরিত্রের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাঁর মতানুসারে বিপ্লব হল উৎপীড়িত ও শোষিতের মহোৎসব, হিংসার তাণ্ডব নয়। তিনি বলেছেন: “Revolutions are the festivals of the oppressed and the exploited.”

বিপ্লব হল গণতান্ত্রিক আন্দোলন: মার্কসীয় দর্শন অনুসারে বলা হয় যে, বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও পদ্ধতি গণতান্ত্রিক পরিবেশকে বিকশিত করে। বিপ্লবের প্রকৃতি যত বেশী মৌলিক হবে গণতন্ত্রের বিকাশও তত বেশী ব্যাপক ও গভীর হবে। বিপ্লব ষড়যন্ত্রমূলক বা অগণতান্ত্রিক নয়; প্রতি-বিপ্লবের চেষ্টাই হল ষড়যন্ত্রমূলক এবং অগণতান্ত্রিক। প্রতি-বিপ্লবের মাধ্যমে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির স্বার্থরক্ষার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়। সর্বহারা শ্রেণীর বিপ্লব এই চেষ্টাকে ধ্বংস করে এবং সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে। সাম্যবাদী সমাজেই গণতন্ত্রের বীজ নিহিত থাকে। তাই শোষণের অবসানকল্পে সর্বহারা শ্রেণী যে বৈপ্লবিক আন্দোলনের সামিল হয় তাকে প্রকৃত গণতান্ত্রিক আন্দোলন বলা হয়।