অথবা, পদকর্তা বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের রাধার একটি তুলনামূলক আলোচনা লিপিবদ্ধ কর
অথবা, বিদ্যাপতির রাধা স্বীয় নবস্ফুটা, আর চণ্ডীদাসের রাধা গভীর ও ব্যাকুলা – এ উক্তির আলোকে উভয় পদকর্তার সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য নির্দেশ কর
উত্তর: বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাস, চৈতন্য পূর্ব এই দুই কবি পদাবলী গানের দুই শ্রেষ্ঠ কবি। উভয়েই প্রবল প্রেরণা ও প্রদীপ্ত প্রতিভার সমন্বয়ে রাধাকৃষ্ণের অপূর্ব প্রেমলীলা নিয়ে পদাবলী রচনার দুটি ধারা প্রবর্তন করেছিলেন। সেই ‘মুক্তবেণী সঙ্গমেই’ চৈতন্যোত্তর পদাবলী সাহিত্যে বিপুল সমৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল। শ্রীচৈতন্যদেব এই কবিদ্বয়ের কাব্যরস আস্বাদনে ভাবে বিভোর হতেন। ‘শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থে উল্লেখ আছে,
‘বিদ্যাপতি জয়দেব চণ্ডীদাসের গীত।
আস্বাদয়ে রামানন্দ স্বরূপ মহিত ৷৷’
বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের কাব্যে ভাবের দিক দিয়ে সহধর্মিতা থাকলেও উভয়ের রাধা চরিত্র চিত্রণে জীবানুভূতির মৌলিক পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এ প্রসঙ্গে সমালোচক নীলরতন সেন মন্তব্য করেছেন,
“একই বিষয়বস্তুকে বাংলার রজকিনী প্রেমিক বাশুলী সেবক পল্লিকবি এবং মিথিলার তৎকালীন শাস্ত্রবিদ, ছন্দবিদ, আলঙ্কারিক, রাজদরবারের শ্রেষ্ঠ নাগরিক কবি- দুই পৃথক আধারে সাজিয়ে রসিক শ্রোতামণ্ডলীর কাছে পরিবেশন করেছেন। লোকশ্রুতির কিছু মর্যাদা দিয়ে বলতে ইচ্ছা হয়, রানীকে কেন্দ্র করে মানুষের কবি কামগন্ধহীন নিকষিত সদৃশ যে প্রেমামৃতের সন্ধান পেয়েছিলেন কৃষ্ণপ্রিয়ার চিত্রাঙ্কনে সেই বৈরাগিনী যোগিনী প্রেম রাধিকাকেই ফুটিয়ে তুলেছেন। …………………..চণ্ডীদাসের রাধা বিদ্যাপতির রাধার মতো মন ও দেহের বর্ণোজ্জ্বলতায় অতি চমক সৃষ্টি করেননি,- কামাসক্তিবিহীন প্রগাঢ় প্রেমচিত্রাঙ্কনে ভাষা ও ছন্দেও কবি নিরাভরণ তন্ময় চিত্ররূপের আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যাপতির রাধায় চিত্র বর্ণবৈভবে কৈশোর, বয়ঃসন্ধি ও নবযৌবনে, পূর্বরাগ, অভিসার, মান, রসোদ্গারের লীলা বিভ্রমে দর্শককে প্রতি মুহূর্তে যেন চমকিত করে তুলতে থাকে।” (বৈষ্ণব পদাবলী পরিচয়)
সমালোচকের এই কাব্যের প্রেক্ষিতে আমরা রাধা চরিত্রের আলোচনায় দেখতে পাই- কবি বিদ্যাপতি রাধা চরিত্রের পরিকল্পনায় অপূর্ব কবিত্বের পরিচয় দিয়ে কামকলায় অনভিজ্ঞা বালিকা রাধাকে শৃঙ্গার রসের পূর্ণাঙ্গ নায়িকায় রূপান্তরিত করেছেন। প্রগাঢ় প্রেমানুভূতি দেহমনকে আচ্ছন্ন করে রাধার মনে ভাবান্তর এনেছেন, কৃষ্ণ বিরহের তন্ময়তায় কবি রাধার বিশ্বভুবন বেদনার রঙে রাঙিয়ে দিয়েছেন। বিদ্যাপতির রাধার দুই রূপ। পূর্বরাগের পদে রাধার লীলাচাতুর্য, প্রথম তারুণ্যের লাবণ্য-দীপ্তি ও নবীন মাধুর্য প্রকাশিত হয়েছে। তবে বয়সের নবীনতা ঘোচেনি। ফলে,
‘কবহু বান্ধএ কচ কবহু বিথারি।
কবহু ঝাঁপএ অঙ্গ কবহু উঘারি ৷৷’ (পদ-৩৯)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রাধার সেই মানসিক অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন,
“দূরে সহাস্য সতৃষ্ণ লীলাময়ী, নিকটে কল্পিত শঙ্কিত বিহ্বল কেবল একবার কৌতূহলে চম্পক অঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়া অতি সাবধানে অপরিচিত প্রেমকে একটু মাত্র স্পর্শ করিয়া অমনি পলায়নপর হইতেছে। …….. যৌবন সেও সবে আরম্ভ হইতেছে, তখন সকলই রহস্যে পরিপূর্ণ। সদ্যবিকচ হৃদয় সহসা আপনার সৌরভ আপনি অনুভব করিতেছে; আপনার সম্বন্ধে আপনি সবেমাত্র সচেতন হইয়া উঠিতেছে ; তাই লজ্জায় ভয়ে আনন্দে সংশয়ে আপনাকে গোপন করিবে কি প্রকাশ করিবে ভাবিয়া পাইতেছে না।”
বিদ্যাপতির রাধার দ্বিতীয় রূপটি বিদগ্ধ রসবতী নারীর, যার জানে চাতুরী, অ্যাথিতে কেটাক্ষ, ভ্রুতে বিদ্যুচ্ছটা, শিঞ্জিনীতে আহ্বান। রাধা চিত্তের যে প্রগলভ নাগরী রূপ প্রকটিত তা বিদ্যাপতি তুলে ধরেছেন। তাঁর অঙ্কিত রাধার দ্বিতীয় রূপের মধ্যে নাগরিকা বিলাসিনী নারীর উল্লসিত দেহকামনা অলঙ্কার আশ্রিত মার্জিত রূপ নির্মিতির মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে-
‘পিয়া যব আওব এ মঝু গেহে।
মঙ্গল যতই করব নিজ দেহে ৷৷ (পদ-২৮২)
সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিদ্যাপতি সৌন্দর্য পিয়াসী শিল্পীয় মুগ্ধ দৃষ্টিতে লীলাময়ী রাধাকে দেখেছেন। তাই রাধার রূপচিত্রণে বিদ্যাপতির তীব্র সম্ভোগ কামনা আছে। তিনি কামনাবাসনাজাত। বিশিষ্ট রসরূপই উপভোগ করতে চেয়েছেন এবং ভাষাবদ্ধ করেছেন।
অন্যদিকে, চণ্ডীদাসের রাধা কিশোরী বালিকা নয়, পূর্বরাগ পর্যায়েও নয়। সে পরিপূর্ণ যুবতী, স্বাধীনা, ব্যক্তিত্বময়ী। প্রথম থেকেই সে কৃষ্ণ প্রেমে আকুলা। শ্রীরাধা যেন ‘বৃন্তহীন পুষ্পাসন আপনাতে আপনি বিকশিত পরিণত নায়িকারূপে কৃষ্ণ প্রেমে আত্মহারা। কৃষ্ণের চিত্র দর্শনে রাধা আত্মসম্মিত হয়েছে। কৃষ্ণের নাম শ্রবণে সে বলে ওঠে,
‘সই, কেবা শুনাইল শ্যাম-নাম।
কানের ভিতর দিয়া মরমে পশিল গো
আকুল করিল মোর প্রাণ ৷৷ ‘ (পদ-৫৭)
সামান্য নাম শুনেই রাধার তন্ময়তা প্রাপ্তি- তাহলে অঙ্গের স্পর্শ ঘটলে কি হবে। ভক্ত কবি চণ্ডীদাস রাধার তন্ময় প্রেমাকুলতার রস বিগলনে নিজেও বিগলিত হয়েছেন। ক্ষেত্রগুপ্তের ভাষায়,
“কবি তাঁর সৃষ্ট রাধাকে আপন আত্মার প্রতিফলন হিসেবে গড়েছেন। রাধার ভাবানুভূতিকে দূরে দাঁড়িয়ে নিরাসক্ত দর্শকের (বা আর্টিস্টের) দৃষ্টিতে দেখা ও রূপবিদ্ধ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কারণ তিনি আপন কবিসত্তাকে রাধার মধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন। রাধার ক্রন্দনে চণ্ডীদাসের ব্যক্তি অনুভূতি ও প্রেম জিজ্ঞাসার আর্তি ঝঙ্কার তোলে।” (বৈষ্ণব পদ সাহিত্য)
তাই চণ্ডীদাস যখন রাধার অনুরাগের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন- ‘জপিতে জপিতে নাম অবশ করিল গো’
তখন মনে হয় চণ্ডীদাস স্বয়ং শ্রীরাধায় পরিণত হয়ে গেছেন। কৃষ্ণের মধুময় নাম জপ করতে করতে কবির দেহমন অবশ হয়ে গেছে।
চণ্ডীদাস সাধকের গভীরতা ও তন্ময়তা নিয়ে যোগমগ্না রাধাকে উপস্থিত করেছেন। তাঁর তুলিতে আঁকা কৃষ্ণ দর্শনাকুল রাধার রূপ হলো,
ঘরের বাহিরে দণ্ডে শতবার
তিলে তিলে আইসে যায়।
মন উচাটন নিশ্বাস যঘন
কদম্ব-কাননে চায়। (পদ-৫৮)
পূর্বরাগের নায়িকার মধ্যে লজ্জা ও সঙ্কোচ মিশ্রিত যে তৃষ্ণা নব পরিচয়ের আকস্মিক চিত্তোদ্ভেদজাত সে চাঞ্চল্য প্রত্যাশিত চণ্ডীদাসের পদে তা চমৎকার ধরা পড়েছে।
আক্ষেপানুরাগের পদে চণ্ডীদাস রাধার বেদনাবিধুর মূর্তি অত্যন্ত সুন্দরভাবে অঙ্কন করেছেন। রাধাকৃষ্ণ প্রেমে দেহ রিপুগুলোকে আত্মরসে রাখতে পারেনি। ফলে কৃষ্ণকে ডেকে স্বগত মনে গাঢ় অনুরাগ মেশানো আক্ষেপ জানিয়ে নিজের ব্যাকুলতা প্রকাশ করেছে,
‘ঘর কৈনু বাহির, বাহির কৈনু ঘর।
পর কৈনু আপন, আপন কৈনু পর ৷৷ (পদ-১২২)
বিদ্যাপতির রাধার এ জাতীয় আক্ষেপ নেই।
অভিসার পদে বিদ্যাপতি রাধার যে অভিসারিকা রূপ অঙ্কন করেছেন তাতে দেখা যায় পরকিয়া প্রেমের দুর্লভ্য বিঘ্ন অতিক্রম করে সাহসী রাধা অভিসারে যায়-
‘নব অনুরাগিণী রাধা।
কছু নাহি মানএ বাধা। (পদ-১৪৫)
অন্যদিকে, চণ্ডীদাসের অভিসারিকা রাধা প্রাকৃত গৃহকর্মে ব্যস্ত। প্রতীক্ষারত কৃষ্ণের কাছে যেতে যে ব্যাকুল হলেও পথ কোথায়? কেননা ‘ঘরের গুরুন ননদী দারুন’ তাই যে বিলম্ব করে। কিন্তু প্রেমিক কৃষ্ণ যখন রাধার দেরি দেখে নিজেই উপস্থিত হয়, তখন সব বাধা জলাঞ্জলি দিয়ে রাধাকে বেরোতে হয়।-
“এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা
কেমনে আইল বাটে।
আঙ্গিনার মাঝে বঁধুয়া ভিজিছে
দেখিয়া পরাণ ফাটে ৷৷ (পদ-১৬৫)
এ রাধা ঠিক অভিসারিকা নয়। অভিসার সাজসজ্জায় দুর্নিবার পথ পরিক্রমায় লীলাময়ী যে রাধাকে বিদ্যাপতি চিত্রিত করেছেন চণ্ডীদাসের প্রেমাকুলা রাধা তার থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র।
বিরহ পদে বিদ্যাপতির রাধার দেহগত মিলনের আকাঙ্ক্ষা অপসৃত হয়ে গিয়েছে। সেই স্থান অধিকার করেছে গভীর নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। কৃষ্ণ মথুরায় চলে গেলে প্রিয়জনের বিরহে রাধায়-
‘শূন ভেল মন্দির শূন ভেল নগরী।
শূন ভেল দশদিশ শূন ভেল সগরি ৷৷’ (পদ-২৪৮)
বিদ্যাপতির রাধার গভীর বেদনা কিন্তু অন্তরের অতলে তলিয়ে যাওয়ার নয়, ‘হৃদয়ের পাত্র উপচে চারপাশের জগৎ সংসার প্রকৃতিকে প্লাবিত করার মতো বিপুল।’ বেদনার একটি ঐশ্বর্যের দিক আছে, সেখানে সে একা নয়, বিশ্ব প্রকৃতির বিরাট পটভূমিকার সাথে তার সংযোগ :
এ সখি হামারি সুখের নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর। [পদ-২৪৯]
এখানে রাধার অন্তর বেদনায় অকৃত্রিমতা থাকলেও ঐশ্বর্য। চেতনাও আছে-
‘কুলিশ শত শত পাত-মোদিত
ময়ূর নাচত মাতিয়া।
মত্ত দাদুরী ডাকে ডাহুকী
ফাটি যাওত ছাতিয়া॥’ (পদ-২৪৯)
পদটির মধ্য দিয়ে বুক নিঙড়ানো, প্রাণ নিঙড়ানো যন্ত্রণা নেই, তৎপরিবর্তে আছে এক প্রকার রসাবেশ। পক্ষান্তরে, চণ্ডীদাস বিরহকে রাধা জীবনের কোনো একটা বিশেষ পর্যায় বলে মনে করেননি। রাধার দৃষ্টিতে কৃষ্ণ জগৎময় ছড়িয়ে রয়েছে, দেহধারী কৃষ্ণ মথুরায় চলে গেলেও রাধার অন্তরের কৃষ্ণ হতো। অন্তরেই বাস করে। তাই রাধা বলেছে,
‘তোমরা যে বল শ্যাম
মধুপুরে যাইবেন।
………………..
কোন পথে বধু পলাইবে ৷৷
বিদ্যাপতির ঐশচেতনা কেবল বিরহের কবিতায় নয়, তাঁর রচিত মিলনের আনন্দোল্লাসেও অভিব্যক্ত এবং সুখে কিংবা দুঃখে, মিলনের আনন্দোল্লাসে কিংবা বিরহের আর্তক্রন্দনে, কোন তত্ত্বচিন্তার দ্বারা প্রভাবান্বিত হননি বিদ্যাপতি। এ আনন্দ প্রত্যক্ষ সরল এবং অকৃত্রিম। তাই ‘ভাবসম্মিলনে’ রাধার কণ্ঠে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস বেজে ওঠে-
আজু মঝু গেহ গেহ করি মানল
আজু মজু দেহ ভেল দেহা।
………………………..
সোই কোকিল অব লাখ ডাকউ
লাখ উদয় করু চন্দা। (পদ-২৮৪)
অন্যদিকে, চণ্ডীদাসের রাধার এই উল্লাস, আনন্দ বা উচ্ছলতা নেই। ভাবসম্মিলনের আনন্দ মুহূর্তে বিচ্ছেদের অন্তিমতম বেদনাকে প্রকাশ করে দিল রাধা-
‘বহু দিন পরে বঁধুয়া এলে।
দেখা না হইত পরাণ গেলে ৷৷ (পদ-২৭৮)
বিদ্যাপতির রাধা চরম মিলনের দিনেও কৃষ্ণকে চিনতে পারেনি। অনন্তকাল প্রিয়মুখ দর্শনেও তার তৃষ্ণা মিটবে না, তৃপ্তির নিবিড়তা শেষ হবে না। তাই রাধা বলেছে,
‘জনম অবধি হাম রূপ নেহারলু
নয়ন না তিরপিত ভেল।
……………………………………….
লাখ লাখ যুগ হিয়ে হিয়ে লাখলু
তব হিয়া জুড়ন না গেল ৷৷ (পদ-২৯১)
অন্যদিকে, চণ্ডীদাসের রাধার অন্তরেই তো শ্যামের বাস। কল্পনার কামনার রঙে রসে তার নির্মাণ। তাইতো তার কোন বস্তুসত্তা নেই। তাকে কেবল চাওয়া যায়, বিশ্বের ইঙ্গিতে ভঙ্গিতে তাকে অনুসন্ধান করা যায়, তাকে একটি মানবরূপে ধরা যায় না। সে সবচেয়ে বেশি আয়ত্তের অতীত। তাই গভীর আলিঙ্গনে :
‘দুহু ক্রোড়ে দুহু কাদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া।’ (পদ-১৮৮)
নিখিলের রূপ থেকে অরূপের দিকে চিরন্তন সৌন্দর্য ও প্রেমকামনার ও বিরহের এই সুতীব্র সুগভীর আর্তি চণ্ডীদাসের কবিতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ।
সুতরাং বলা চলে বিদ্যাপতি সুখের কবি, চণ্ডীদাস দুঃখের কবি। বিদ্যাপতির রাধা ধূলিমাটি মাখা মর্তেরই এক মানবীয় মূর্তি। পক্ষান্তরে, চণ্ডীদাসের রাধার ধ্যানমগ্ন আধ্যাত্মমূর্তি আমাদের সম্মুখে উপস্থাপিত হয়েছে। বিদ্যাপতির রাধা প্রথমে একেবারে লৌকিক। পরবর্তীকালে প্রেমের কৃচ্ছসাধনায় অতীন্দ্রিয়তাকে আহ্বান করলেও শেষ পর্যন্ত সে যোগিনী হয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু চণ্ডীদাসের রাধা প্রথম থেকেই যোগিনী রাধা। এ কারণেই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,
“বিদ্যাপতির রাধা নবীনা নবস্ফুটা, চণ্ডীদাসের রাধা গভীর ও ব্যাকুলা।”
Leave a comment