১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে বিজয় দিবস কি ও কেন তা তুলে ধরা প্রয়োজন। আমাদের জানতে হবে বিজয় দিবস কি ও কেন এর সঠিক ইতিহাস।

১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস আর এই বিজয় দিবস বাংলাদেশ একটি বিশেষ দিবস হিসাবে দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। নিচে বিজয় দিবস কি ও কেন তা আলোচনা করা হলো –

বিজয় দিবস কি ও কেন 

১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস আর এই বিজয় দিবস বাংলাদেশ একটি বিশেষ দিবস হিসাবে দেশের সর্বত্র রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। বাংলাদেশে ১৬ই ডিসেম্বর দিনটিকে বিশেষভাবে পালন করা হয়। ১৯৭২ সালের ২২ শে জানুয়ারি ১৬ ই ডিসেম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয় এবং এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী 

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সদস্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। আর এর ফলে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ যে স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয় অর্জন করে এবং বাংলাদেশ নামের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে তা প্রকৃতপক্ষে ছিল বাংলাদেশের জন্য বিশেষ করে বাঙ্গালীদের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো যুদ্ধ

আরো পড়ুনঃ ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস – (রচনা) – সম্পর্কে কিছু কথা

কারণ ১৯৪৭ সালের আগস্ট মাসে প্রথমবার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের পরাধীনতার শৃংখল থেকে প্রায় পৌনে ২00 বছর পর বাঙালিরা মুক্তি লাভ করে। আর শেষ মুক্তি লাভের মাধ্যমে জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র। ইতিহাস থেকে জানা যায় ১৯০৬ সালে ঢাকায় নবাব সলিমুল্লাহর উদ্যোগে মুসলিম লীগ নামের রাজনৈতিক সংগঠনটির জন্ম হয় এবং ১৯০৬ সালে আয়োজন করা হয় সেদিনের সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ 

রাজনৈতিক সম্মেলনের মাধ্যমে অবিভক্ত ভারতের মুসলমানদের জন্য এটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার সম্ভবতা নিয়ে আলোচনা করা হয় আর এই সম্মেলনে মোঃ আলী জিন্নাকে ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন এবং তিনি যুক্তি দেখান যে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলে উপমহাদেশীয় জনগণের স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কর্মকাণ্ডের 

অন্যায় ভাবে বাধা সৃষ্টি করা হবে কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল মোহাম্মদ আলী জিন্না মুসলিম লীগ গঠনের কর্মকান্ডে জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করলেও পরবর্তীতে তিনি মুসলিম লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং অবিভক্ত ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বা অঞ্চলের মুসলিম প্রধান অঞ্চল সমূহ নিয়ে তিনি স্বতন্ত্র স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র অর্থাৎ পাকিস্তান রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দান করেন এবং পর্যায়ক্রমে তিনি মুসলিম জনগণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনকায়দে আজম নামে।

আর এভাবে জন্ম হয় পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি দেশের। পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা আর পশ্চিম পাকিস্তানের শতকরা ৯০ জন লোকের ভাষা ছিল উর্দু অথচ ভারত থেকে দেশ বিভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান কেও শাসন করতো এবং নাজিম উদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়ে এসে পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ঘোষণা করেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। আর নাজিমুদ্দিনের এই ভাষণের প্রতিবাদে 

আরো পড়ুনঃ ২১শে /একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি জেনে নিন

১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বাংলার বহু ভাষা সৈনিক বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলার রাজপথ রঞ্জিত করেন। প্রথমে পাকিস্তানের সংবিধান বাংলা এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমিক গৃহীত হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাকে বাদ দিয়ে শুধু উর্দুকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এদেশের জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা শক্তিশালী হয়ে ওঠে

আর এর প্রমাণ মেলে ১৯৭0 সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের মাধ্যমে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাঙালি নিরঙ্কুড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলে জনগণের চেতনাকে পশ্চিম পাকিস্তান বাহিনী বর্বরতার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত করেন যার কারণে বাঙালি ও ১৯৭১ সালে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ই ডিসেম্বর তাদের বিজয় অর্জন করে আর এ কারণে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে আজও অমর হয়ে আছে। আর এজন্যই ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় দিবস।

বিজয় দিবসের ইতিহাস

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি হল আমাদের সবচেয়ে প্রিয় দিবস । এই বিজয় দিবস এমনি এমনি আসেনি । এর পেছনে রয়েছে ৩0 লক্ষ নরনারী আত্মত্যাগের ইতিহাস । এই দিনটি আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর থেকে যুদ্ধে জয়লাভ করে বিজয় অর্জন করেছি । প্রতি বছরই এই দিনটি আবার ঘুরে ঘুরে এসে হাজির হয় । আমরা এই দিনটি পালন করি হাজারো রকমের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে । বিজয় দিবসের এই দিনে আমাদের হৃদয় নানা কিছু ভেসে আসে।

এ দিনটিকে ঘিরে আমাদের মনে হাজারো প্রশ্ন দোলা খায় । আর তা হলো – কেমন করে এ বিজয় অর্জিত হল ! কিসের বিজয় ! কে আমাদের শত্রু ! কে আমাদের মিত্র বা বন্ধু ! এগুলো সহ আরো কত প্রশ্ন । কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশ কে বিভক্ত করে দেয় দুটি ভিন্ন রাষ্ট্রে একটি হলো ভারত এবং অন্যটি হলো পাকিস্তান । এই পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় । যার একটির নাম হল পূর্ব পাকিস্তান ও অন্যটি পশ্চিম পাকিস্তান ।

পাকিস্তানের শোষণ ও শাসন

পাকিস্তান ও ভারত বর্ষ নামক দুটি দেশের জন্ম হয় ১৯৪৭ সালে । ব্রিটিশরা আমাদের শাসন করে ওই দিন পর্যন্ত । বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর থেকেই বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে যায় । সমগ্র ভারতবর্ষকে ব্রিটিশ বানিয়ারা শাসন এবং শোষণ করে প্রায় দুইশত বছর ।১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকে পাকিস্তানের পূর্ব অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম অংশ পশ্চিম পাকিস্তান নামে বিভক্ত হয় ।

পাকিস্তানের ভূখণ্ড পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুটি ভিন্ন ভূখণ্ড হলেও এর শাসনকার্য পরিচালনা হত মূল ভূখণ্ড অর্থাৎ পশ্চিম পাকিস্তান হতে । এটা শাসন না বলে শোষণ বললে ভাল হয় । অনাচার , অত্যাচার , জুলুম , নির্যাতনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য এবং বাংলা ভাষার জন্য আমাদের দেশে আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৭ সালের পর থেকে । প্রথমে এই আন্দোলন ছিল মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন। যখন জিন্নাহ ঘোষণা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু ।

১৯৪৮ সালে জিন্নাহ যখন পূর্বপাকিস্তানে আসেন তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার জন্য স্মারকলিপি দেয় । তখন থেকেই শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন । এই সূত্র ধরেই শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে সালাম , জব্বার , রফিক সহ আরো অনেকে প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছেন বাংলা তাদের প্রাণের দাবী । ২১ ফেব্রুয়ারি আজ বিশ্বজুড়ে ভাষা দিবস । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন ।

১৯৬৯ সালের আইয়ুব খান বিরোধী গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে আসে । যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন যা ছিল বাংলার মানুষের প্রাণের দাবি । বঙ্গবন্ধুর

নেতৃত্বে সারা পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে । এর ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করে পাকিস্তান শাসন করবেন কিন্তু ইয়াহিয়া তা করতে দিলেন না ।

বঙ্গবন্ধু এ আন্দোলন অব্যাহত রাখলেন । ইয়াহিয়া খান.২৫ শে মার্চ কালো রাত্রিতে গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করে দেন । ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ আন্দোলনকারী বাংলার মানুষের ওপর লেলিয়ে দেয় পাকিস্তানি বাহিনী । যার ফলে তারা শুরু করে এক হত্যাযজ্ঞ । তখন থেকে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধ । পূর্ব পাকিস্তানীরা  তাদের ন্যায্য অধিকার টুকুও পেত না । এর মূলে ছিল বৈষম্য , যেমন- চাকরির বৈষম্য ,অর্থনৈতিক , অধিকার , সাংস্কৃতিক এমনকি স্বাতন্ত্র্য অধিকারের মতো বিশাল বৈষম্য।

অন্যায়ের প্রতিবাদ

অনেকবার বিরোধিতা করা হয় পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে । কিন্তু আন্দোলন ততটা জোরদার ছিল না । এ আন্দোলন জোরদার হয় তখন , যখন মাতৃভাষায় আঘাত লাগে ।২৯৪৮ সালের ২১ শে মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা । যদিও পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ভাষা ছিল বাংলা । পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আরেকটি সমাবেশে তিনি ঘোষণা করেন সরকারি কাজে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ব্যবহার করা হলেও রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।

তখন বাংলার দামাল ছেলেরা হুংকার দিয়ে ওঠে । যদিও এর পেছনে আরও অনেক কারণ ছিল । যেমন – ডাকটিকিট , ট্রেনের টিকিট , ফর্ম , এমনকি মুদ্রাও ছিল উর্দু এবং ইংরেজি ভাষা । এগুলোর মধ্যে বাংলার কোন নাম গন্ধ ছিল না । আর এই অন্যায়ের প্রতিবাদ গড়ে ওঠে বাংলা তথা পূর্ব পাকিস্তানের ঘরে ঘরে । আর এ প্রতিবাদ যুদ্ধে রূপ লাভ করে । ১৯৭১সালের২৫ শে মার্চ কালো রাত এর পর থেকে।

অর্থনৈতিক মুক্তি

এ যুদ্ধে যদিও বাঙালি দের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় তবু ও তারা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই । অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যই আমরা .১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছি । কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হলেও আমরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ছিলাম না । নানা বৈষম্যের কারণে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব

পাকিস্তান অনেক পিছিয়ে পড়ে । ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মোট বিনিয়োগের শতকরা প্রায় ২১ থেকে ২৬ ভাগ এবং ১৯৬০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় শতকরা ৩২ থেকে ৩৬ ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যয় করা হয়।

এমনকি রেভিনিউ খাতে ওই সময় পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় করা হয় মোট ৮৯৮ কোটি টাকা , আর পূর্বপাকিস্তানে ব্যয় করা হয় মাত্র ২৫৪ কোটি টাকা । আর এভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের লোক দরিদ্র থেকে আরো দরিদ্র হচ্ছিল । নানাভাবে শ্বসনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারছিল না ।

তাই গড়ে ওঠে আন্দোলন এবং সবশেষে মুক্তিযুদ্ধ । তখন ৪0 শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত । সরকার ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন । যা আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ ।

মুক্তিযুদ্ধে বহিঃবিশ্বের সহায়তা

বাঙালিরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় সবাই এই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন । দীর্ঘ .৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয় । এসময় বীর বাঙালিরা গেরিলা যুদ্ধ এমনকি ট্যাংক যুদ্ধ সংঘটিত হয় । এ সময় বাংলাদেশকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন ভুটান ,ভারত এবং বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম । বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভুটান , এবং বাংলাদেশকে প্রশিক্ষণ , সেনা সদস্য , যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সহযোগিতা করে ভারত।

এর পাশাপাশি প্রায় ১ কোটি শরণার্থী আশ্রয় দেয় ভারত । বাংলাদেশকে আরো সহযোগিতা করে বহিঃবিশ্বের গণমাধ্যমগুলো । এই গনমাধ্যমগুলো বিশ্বের সামনে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর অত্যাচার গুলো সবার সামনে তুলে ধরে । যার ফলস্বরূপ বহিঃবিশ্বে জনমত গড়ে উঠতে সহায়তা করে । এতে বহিঃবিশ্ব বাংলাদেশকে সমর্থন করে এবং তা মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা প্রদান করে ।

পাকবাহিনীর পিছু হটা

১৯৭১ সালে জাতী ঐক্যবদ্ধভাবে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে । তাদের মধ্যে কোন অনৈক্য বা বিভেদ ছিলনা । রাজনৈতিকভাবে সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতার যুদ্ধ যুদ্ধ করেছে । আর ভারতীয় সেনারা যখন বাঙালি সেরাদের সাথে যুক্ত হয় তখন পাক সেনাবাহিনী নড়ে চড়ে বসে এবং তারা বুঝতে পারে এ যুদ্ধে তাদের হার নিশ্চিত । তারা ধীরে ধীরে পিছু হটতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে তারা ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় ।

পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয় । এসময় আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেন বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ডেপুটি চিফ-অফ-স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল করিম খন্দকার এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন জেনারেল নিয়াজী এবং যৌথ বাহিনীর পক্ষ থেকে যৌথ বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪.৩০ মিনিটে। এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান

১৯৭১ সালের ১৬ই  ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক নতুন একটি দেশ বিশ্বের মানচিত্রে তাদের অবস্থান করে নেয় । এই বিজয়ের আগেই .১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল ইসরাইল বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় । যদিও বাংলাদেশ তা গ্রহণ করেনি । কারণ ইসরাইল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র শোষণ করে । পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিজয় লাভের আগেই ৬  ডিসেম্বর ভুটান ও  ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। 

যুদ্ধে জয়লাভের পর ১২ই জানুয়ারি পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়া , ১৩ জানুয়ারি বার্মা ১৬ই জানুয়ারী  নেপাল এবং পরবর্তীতে অন্যান্য দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় । বাংলাদেশ কমনওয়েলথ এর সদস্য পদ লাভ করে১৯৭৪ সালে । সর্বশেষ ১৯৭৪  সালের  ২২ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

বিজয় দিবস উদযাপন

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রতিটি বাঙালির জন্য একটি বিশেষ দিন । তাইতো স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫0 বছর পরেও এই দিবসটি বিশেষ আয়োজন এর মধ্য দিয়ে পালন করা হয় । বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দুটি দিবস পালন করা হয় । এর একটি ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস । প্রত্যেক দেশের ই একটি জাতীয় দিবস থাকে । উপনিবেশবাদী শাসন থেকে মুক্ত হওয়ায় এই দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়।

এই বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয় । যেখানে উপস্থিত থাকেন  বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি । রাষ্ট্রীয় সাজে এখানকার সড়কগুলোকে ও সাজানো হয়ে থাকে । এদের বাংলার আকাশে-বাতাসে লাল-সবুজের পতাকা দেখা যায় । এছাড়াও বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠান , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় । বিভিন্ন স্কুলগুলোতেও অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা । 

এ দিবসকে কেন্দ্র করে নির্মাণ করা হয় টেলিফিল্ম , নাটক এমনকি চলচ্চিত্র । বাংলার প্রতিটি আনাছে-কানাছে চলে বিজয়মেলা । বিভিন্ন ত্যাগ-তিতিক্ষার পরে আমরা এ দিবসটি পেয়েছি । বাংলার ইতিহাসে এটি একটি বিশেষ দিন । যুগের পর যুগ বাঙালি মনে রাখবে ১৯৭১ সালের১৬ই  ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস ।

বিজয় দিবস সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

  1. ১৯৭২ সালের ২২ শে জানুয়ারি ১৬ ই ডিসেম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা হয় এবং এই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়।
  2. ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রতিটি বাঙালির জন্য একটি বিশেষ দিন ।
  3. বিজয় দিবস এমনি এমনি আসেনি এর পেছনে রয়েছে ৩0 লক্ষ নরনারী আত্মত্যাগের ইতিহাস ।
  4. যুগের পর যুগ বাঙালি মনে রাখবে ১৯৭১ সালের১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস ।
  5. ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে আর এর মাধ্যমে জন্ম হয় একটি বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র।
  6. ১৯৭১ সালে বিজয় দিবসের মাধ্যমে বাঙালি প্রমাণ করেছে বাঙ্গালী বীরের জাতি।
  7. বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন আলোচনা সভার মাধ্যমে দিনটি পালন করা হয়।
  8. বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান ঢাকায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়।
  9. ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ নামক নতুন একটি দেশ বিশ্বের মানচিত্রে তাদের অবস্থান করে নেয় ।
  10. ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সদস্য নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর কি বার ছিল

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন কারণ এই দিন দীর্ঘ ৯ মাস রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের পর ঢাকার রেসকোস ময়দানে বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানী বাহিনী ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে আর এর ফলে অর্জিত হয় বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে আর সেই দিন কি বার ছিল! 

তাই আমাদের যাদের মনে প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশ যেদিন প্রথম বিজয় লাভ করে সেই দিন কি বার আমি তাদের জন্য বলছি, বাংলাদেশের ইতিহাসে সেই দিন ছিল বৃহস্পতিবার। আর এই বৃহস্পতিবার দিনে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়।

উপসংহার

১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস টি হল আমাদের সবচেয়ে প্রিয় দিবস । এই বিজয় দিবস এমনি এমনি আসেনি । এর পেছনে রয়েছে ৩0 লক্ষ নরনারী আত্মত্যাগের ইতিহাস । এই দিনটি আমরা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর থেকে যুদ্ধে জয়লাভ করে বিজয় অর্জন করেছি । প্রতি বছরই এই দিনটি আবার ঘুরে ঘুরে এসে হাজির হয় । আমরা এই দিনটি পালন করি হাজারো রকমের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে । বিজয় দিবসের এই দিনে আমাদের হৃদয় নানা কিছু ভেসে আসে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে , ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে মনে রাখবে । আমাদের বাঙালি হিসেবে প্রত্যেকটা মানুষের জানা দরকার বিজয় দিবস কি ও কেন পালন করা হয় ।