প্রশ্নঃ বিচারিক, বিচারিক বহির্ভূত এবং অস্বীকৃত অপরাধ স্বীকারোক্তির সংজ্ঞা দাও। 

বিচারিক স্বীকারোক্তি (Judicial confession): ১৮৭২ সালের সাক্ষী আইনে স্বীকারোক্তির কোন সংজ্ঞা দেয়া হয় নি। তবে ১৭ ধারায় স্বীকৃতির সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, স্বীকৃতি হচ্ছে, মৌখিক বা লিখিত উক্তি, যা বিচার্য বিষয় বা প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্তের সূচনা করে। স্বীকারোক্তি স্বীকৃতির একটা শাখাবিশেষ এবং স্বীকারোক্তির অর্থ হচ্ছে অপরাধ স্বীকারমূলক উক্তি। ইহা দু’ধরনের হতে পারে, বিচারিক স্বীকারোক্তি এবং বিচারিক বহির্ভূত স্বীকারোক্তি। ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বা আদালতে আইনগত কার্যক্রমের যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত স্বীকারোক্তিকে বিচারিক স্বীকারোক্তি বলে।

বিচারিক বহির্ভূত স্বীকারোক্তি (Extra-judicial confession): যে স্বীকারোক্তি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট করা হয় নি কিংবা আইনগত কার্যক্রমের যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রদত্ত হয় নি, যেমন ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ও ৩৬৪ ধারার অধীনে লিপিবদ্ধ স্বীকারোক্তি ইত্যাদিকে বিচারিক বহির্ভূত স্বীকারোক্তি বলে।

একজন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে লিপিবদ্ধ না করে একজন ব্যক্তি হিসেবে ঘরোয়াভাবে স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করলে তাকে বিচারিক না বলে বিচারিক বহির্ভূত স্বীকারোক্তি বলা যায়। এরূপ স্বীকারোক্তির সাক্ষ্যগত মূল্য খুবই কম এবং এর সমর্থনকারী সাক্ষ্য তর্কাতীত হলেই কেবলমাত্র এর উপর নির্ভর করা যায় বলে বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে।

প্রত্যাহৃত স্বীকারোক্তি (Retracted confession): অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধ সম্পর্কে স্বীকারোক্তি করে পরবর্তী পর্যায়ে বিচারের সময় বা তার আগে সেই স্বীকারোক্তি প্রত্যাহার করলে তাকে প্রত্যাহৃত স্বীকারোক্তি বলা হয় । সাধারণত পূর্ব প্রদত্ত স্বীকারোক্তি তা বিচারিক হোক বা বিচারিক বহির্ভূত হোক, যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বীকার করে এবং আদালতের নিকট তা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় তবে সমর্থনকারী সাক্ষ্য ব্যতীত এর উপর ভিত্তি করে আদালত বিচার কার্য চালাতে পারে। কিন্তু প্রত্যাহৃত স্বীকারোক্তির ক্ষেত্রে সমর্থনকারী সাক্ষ্যের প্রয়োজন হয়। যদি এটা প্রতীয়মান হয় যে, স্বীকারোক্তি করার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তা করেছে স্বীকারোক্তিটি প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি দ্বারা প্রভাবিত হয়নি বা সেটি পুলিশের কাছে বা পুলিশের হেফাজতে থাকার দরুণ আইনত নিষিদ্ধ না হয়ে থাকে তবে সেই স্বীকারোক্তিটি প্রত্যাহার করা হলেও এর সাক্ষ্যগত মূল্য অক্ষুণ্ণ থাকে।

২৯ ডি. এল. আর ২৭১ এ প্রকাশিত সিদ্ধান্তে দেখা- যায় যে, যদি আদালতে স্বীকারোক্তিটি স্বেচ্ছাকৃত প্রমাণিত হয় তবে অন্যান্য সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত না হলেও প্রত্যাহৃত স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আসামীকে সাজা দিলে তা বে-আইনী হয় না বলে সুপ্রীমকোর্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তবে সহ-অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এর মূল্য একেবারেই কম। তাই প্রত্যাহৃত স্বীকারোক্তি সহযোগী অপরাধীর দণ্ডের একমাত্র ভিত্তি হতে পারে না বলে উক্ত মামলায় সুপ্রীমকোর্ট রায় দিয়েছেন।