অথবা, বিচারবাদ কী?
উত্তরঃ সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের সমাজ ও সমাজবদ্ধ মানুষ ও প্রাণীর প্রতি তার অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, একটি কাজ একজনের জন্য শুভ কিন্তু সেই কাজটি অন্য জনের কাছে মন্দের কারণ হতে পারে। সে কারণে ব্যক্তির ঐচ্ছিক ক্রিয়ার মানদণ্ড নিরূপণ করতে গিয়ে নীতিবিদ্যায় বিভিন্ন ধরনের মতবাদের উদ্ভব ঘটে।
বিচারবাদঃ নৈতিকতার মানদণ্ড হিসেবে পরিচিত বুদ্ধিবাদ বা বিচারবাদের বিরুদ্ধ মতবাদ। সুখবাদ মনে কর যে, সুখই নৈতিকতার মানদণ্ড। পক্ষান্তরে বুদ্ধিবাদ বা বিচারবাদ, মনে করে যে, মানুষের বুদ্ধিই নৈতিকতার মানদণ্ড। সুখবাদের অনুসারীদের মতে, যে কাজ সুখ উৎপাদন করে সে কাজ ভালাে এবং যে কাজ দুঃখ আনয়ন করে সে কাজ মন্দ। সুখবাদীরা তাদের এই বক্তব্যের সমর্থনে মানুষের বিচার-বুদ্ধিকে অবজ্ঞা করে অনুভূতির উপর গুরুত্বারােপ করেন এবং ফলে বিচার বুদ্ধিকে অনুভূতির দাস হিসেবে পরিগণিত করেন। বুদ্ধিবাদীরা সুখবাদীদের এই বক্তব্যকে অস্বীকার করে বলেন যে, মানুষের বিচার বুদ্ধিই নৈতিকতার মানদণ্ড। তাদের মতে, যে কাজ বিচার বুদ্ধিকে সহায়তা করে সে কাজ ভালাে এবং যে বিচার-বুদ্ধিকে সহায়তা করে না সে কাজ মন্দ। তারা তাদের বক্তব্যকে সমর্থন করতে গিয়ে অনুভূতিকে প্রাধান্য না দিয়ে বিচার-বুদ্ধিকে প্রাধান্য দেন। তারা মনে করেন, অনুভূতি মানুষকে কামনা-বাসনার দাস হিসেবে পরিগণিত করে নানা প্রলােভন দেখায় এবং ফলে সচরাচর ভালাে কাজের পরিবর্তে মন্দ কাজের দিকে চালিত হয়। তাই বিচার-বুদ্ধি অনুভূতির দাস নয়। অনুভূতিই বিচার-বুদ্ধির দাস। মানুষ বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন জীব হিসেবে বিচার-বুদ্ধিই নৈতিকতার মানদণ্ড। আধুনিককালের ইমানুয়েল কান্ট এই মতবাদকে নিয়ে অনেক আলােচনা করেছেন।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, নৈতিকতার আলােচনার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবাদের ইতিহাস সুখবাদের ইতিহাসের মতই অতি প্রাচীন। আর তাই আমরা এই মতবাদের আলােচনা প্রাচীন গ্রিসে সিনিক এবং স্টোয়িকদের মধ্যে দেখতে পাই। যা হােক না কেন, নৈতিকতার ক্ষেত্রে বুদ্ধিবাদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।
Leave a comment