বিকাশ হল একটি প্রক্রিয়া যা ব্যক্তির ক্ষমতার সূচনা বা বৃদ্ধি করে এবং যা ব্যক্তিকে উৎকর্ষতার সঙ্গে কার্যসম্পাদনে সাহায্য করে। বিকাশকে আরও অর্থবহ করে তুলতে এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা প্রয়ােজন।

(১) শিখনের ফলে বিকাশ: পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলে শিশু যে শিখন অভিজ্ঞতাগুলি অর্জন করে তারই সমন্বয় হল বিকাশ।

(২) বিকাশ হল সংশ্লেষণ: বিকাশ হল একটি প্রক্রিয়া। প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক শিখন সামগ্রিক বিকাশকে কার্যকারী করে তােলে। তবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র একক শিখনের সমন্বয় হল বিকাশ, এ ধারণা সঠিক নয়। মনােবিজ্ঞানী পিয়াজের মতে বিকাশের 4টি প্রক্রিয়া আছে—

  • পরিমন,

  • অভিজ্ঞতা,

  • মানসিক যােগাযােগ (ভাষার মাধ্যমে শিখন,

  • শিক্ষালয়ের শিক্ষা বা পিতামাতার প্রশিক্ষণ) এবং

  • ভারসাম্যকরণ।

(৩) বিকাশ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: মাতৃগর্ভ থেকে আমৃত্যু বিকাশ ঘটে। যদিও এর হার সবসময় স্থির থাকে না। হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।

(৪) ব্যক্তির বিভিন্ন বিকশিগুলি পারস্পরিক সম্পর্ক যুক্ত: ব্যক্তির দৈহিক বিকাশ, মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, প্রাক্ষোভিক বিকাশ পৃথকভাবে ঘটে না। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং পরস্পর নির্ভরশীল।

(৫) বিকাশ একটি ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া: ব্যক্তিসকলের বিকাশে অসমতা পরিলক্ষিত হয়। দৈহিক, মানসিক, সামাজিক প্রভৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পার্থক্য শুধু ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে নয়, একই ব্যক্তির বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন হারে বিকাশ ঘটে।

(৬) বিকাশ সামগ্রিক থেকে বিশেলের দিকে ঘটে: প্রতিটি বিকাশই সামগ্রিক থেকে বিশেষের দিকে ঘটে। শিশু যখন কিছু ধরার চেষ্টা করে তখন সমস্ত হাতকেই যে ব্যবহার করে। পরে হাতের সমস্ত আঙুলগুলি ব্যবহার করে এবং অবশেষে দুটি বা তিনটি আঙুল দিয়েই ধরতে পারে।

(৭) বিকাশে লিঙ্গগত পার্থক্য বর্তমান: স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে বিকাশের পার্থক্য আছে। বালিকারা বালকদের থেকে অনেক আগে পরিণত হয়। বালিকাদের বয়ঃসন্ধিক্ষণ বালকদের থেকে অনেক আগে আসে।

  • বিকাশ হল মিথস্ক্রিয়ার ফল।

  • বংশগতি ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফলেই বিকাশ ঘটে।

  • বিকাশ ধারাবাহিকতা মেনে চলে।

  • বিকাশ ওপর দিকে (মস্তিষ্ক) শুরু হয়ে নীচের দিকে ঘটে।

  • বিকাশ কেন্দ্র থেকে পরিধির দিকে অগ্রসর হয়।

  • বিকাশের ফলে যে চলন ঘটে তার ধারাবাহিকতা বিশ্বের সব শিশুর ক্ষেত্রেই দেখা যায়। যেমন-হামাগুড়ি, দাঁড়ানো, হাঁটা।

  • বিকাশ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।

  • ভবিষ্যদ্বাণীর নীতি।

  • সরল রৈখিক বনাম স্পাইরাল নীতি।

বৃদ্ধি ও বিকাশ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং নির্ভরশীল হলেও উভয় প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়-

বৃদ্ধি

  • আকার ও আয়তনে বেড়ে যাওয়াকেই বৃদ্ধি বলে।

  • বৃদ্ধি হল কারণ।

  • বৃদ্ধির ধারণা কেবল দৈহিক বা শরীরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

  • বৃদ্ধি স্বতঃস্ফূর্ত তবে অনুশীলনের প্রভাব দেখা যায়।

  • বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনুশীলন বিশেষ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট, হাতের পেশির ব্যায়াম করলে হাতের পেশির বৃদ্ধি হবে, পায়ের পেশির ওপর এর প্রভাব নেই।

  • বৃদ্ধি একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ঘটে।

  • বৃদ্ধি পরিমাপযােগ্য।

  • বৃদ্ধি পরিমাণগত।

  • শিক্ষা বৃদ্ধির পরিমাণকে প্রভাবিত করলেও তা বাতি কিনা সে ব্যাপারে শিক্ষামনােবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে।

বিকাশ

  • আকার ও আয়তনে বৃদ্ধির সঙ্গে সক্রিয়তা এবং কার্যসম্পাদনে উৎকর্ষতা বিকাশের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

  • বিকাশ তার ফল।

  • বিকাশের ধারণায় দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক সবই অন্তর্ভুক্ত।

  • পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার ফলেই বিকাশ ঘটে অর্থাৎ ব্যক্তির সক্রিয়তা এবং অনুশীলন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।

  • বিকাশ সামগ্রিক, মানসিক বিকাশের চর্চা করলে তার প্রতিফলন সামাজিক, প্রাক্ষোভিক বিকাশের ওপরেও দেখা যায়।

  • বিকাশ আমৃত্যু ঘটে।

  • বিকাশ পর্যবেক্ষণসাপেক্ষ।

  • বিকাশ গুণগত।

  • শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হল ব্যক্তির পূর্ণবিকাশ ।