বাল্যকাল অর্থাৎ ছয় বছর থেকে বারো বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা প্রাথমিক স্তরে অর্থাৎ নিম্নপ্রাথমিক স্তরে এবং উচ্চপ্রাথমিক স্তরে (ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত) শিক্ষাগ্রহণ করে।
প্রাথমিক শিক্ষা হল ব্যক্তির পক্ষে ন্যূনতম আবশ্যিক শিক্ষা যা তাকে গণতন্ত্রের উপযুক্ত নাগরিক হয়ে উঠতে সাহায্য করে। সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য হল一
(১) শারীরিক বিকাশ: শরীরচর্চা, ব্যায়াম, খেলাধুলাে প্রভৃতি নানান ধরনের সঞ্চালনমূলক কাজের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের। শারীরিক বিকাশে সহযােগিতা করা।
(২) মানসিক বিকাশ: এই বয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে চিন্তাশক্তি, বিচারক্ষমতা, সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি প্রভৃতির যথাযথ বিকাশে সাহায্য করা।
(৩) সামাজিক বিকাশ: সমাজতত্ত্বসম্মত সামাজিক আচার আচরণে ও সমাজকল্যাণকর দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে সাহায্য করা।
(৪) প্রাক্ষোভিক বিকাশ: ছেলেমেয়েদের মধ্যে সমাজের পক্ষে কাম্য প্রক্ষোভগুলির ব্যবহার গড়ে তােলা, প্রক্ষোভগুলিকে আরও পরিণত করে তােলা এবং প্রয়ােজনে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানাে।
(৫) জ্ঞানের বিকাশ: এই স্তরের ছেলেমেয়েদের বিজ্ঞান, গণিত, ভাষা, ইতিহাস, ভূগােল প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানার্জনে সাহায্য করা।
(৬) নাগরিকতার শিক্ষা: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভাবী সুনাগরিকরূপে শিক্ষার্থীর উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি গঠন।
(৭) শ্রমের মর্যাদা: কোনাে কাজই ছােটো নয়—শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই বােধ জাগিয়ে তােলা।
সৌন্দর্যবোধের বিকাশ: বিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সৌন্দর্যবােধ গড়ে তুলতে সাহায্য করা।
(৮) নৈতিক মূল্যবােধের বিকাশ: বিভিন্ন রকম পাঠক্রমিক ও সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির সাহায্যে ভালােমন্দের বিচার, ন্যায়-অন্যায় বােধ, কোনটা করণীয় কোষ্টা করণীয় নয় ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন করা এবং আচরণের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা।
(৯) দেশ ও জাতির উন্নয়ন: প্রাথমিক শিক্ষার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হল—দেশ ও জাতির উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা।
প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু জাতির উন্নয়নের মূলভিত্তি, সেজন্য প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন ও উদ্দেশ্যপূরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া প্রয়ােজন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জাতীয় ভাবধারার প্রয়ােজনীয় গুণগুলির যথাযথ বিকাশ সাধন করা এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য।
প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে কোঠারি কমিশন দুটি স্তরে ভাগ করেছে—
-
নিম্নপ্রাথমিক (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি) এবং
-
উচ্চপ্রাথমিক (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি)।
এই দুটি স্তরের জন্য দুরকমের পাঠক্রমের উল্লেখ করা হয়েছে—
(১) নিম্নপ্রাথমিক স্তরের পাঠক্রম: এই স্তরে শিশু শিখনের মৌলিক কৌশলগুলি, যেমন—পঠন, লিখন ও প্রাথমিক গণিত শিখবে। এর পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে অভিযােজনের উপায়গুলি আয়ত্ত করবে। এই স্তরের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্তির জন্য যে বিষয়গুলির কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল—
-
একটি ভাষা (মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষা),
-
গণিত,
-
পরিবেশবিদ্যা,
-
সৃজনশীল কার্যাবলি,
-
কর্ম-অভিজ্ঞতা ও সামাজিক কর্মসূচি এবং
-
স্বাস্থ্যশিক্ষা।
(২) উচ্চপ্রাথমিক পাঠক্রম: এই স্তরের পাঠক্রম বিস্তৃত এবং গভীর হবে। শিক্ষার্থীকে মাতৃভাষার পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি ভাষা শিখতে হবে। গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগােল, পৌরবিদ্যা, শারীরশিক্ষা পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হবে। এই স্তরের পাঠক্রমে থাকবে—
-
দুটি ভাষা [মাতৃভাষা বা স্থানীয় ভাষা এবং হিন্দি (সরকারি ভাষা) বা ইংরেজি],
-
গণিত,
-
সমাজবিদ্যা (ইতিহাস, ভূগােল এবং পৌরবিদ্যা),
-
বিজ্ঞান,
-
শিল্প,
-
কর্মশিক্ষা ও সামাজিক কর্মসূচি,
-
শারীরশিক্ষা এবং
-
নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা।
সংক্ষেপে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে বলা যায়, এই শিক্ষা প্রাথমিক স্তরে খেলাধুলাে ও শরীরচর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেহের সুষম বিকাশে সাহায্য করে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন সৃজনশীল এবং উৎপাদনমূলক ক্ষমতার বিকাশ ঘটায় এবং নানা ধরনের অভিজ্ঞতামূলক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মানসিকতার উন্নতি ঘটায়। এর সঙ্গেই পঠনপাঠনের মাধ্যমে ভাষা, গণিতের চর্চা, পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের দ্বারা শিক্ষার্থীকে তার সমাজ ও নিজের জাতির এক উপযুক্ত উপাদান হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে।
Leave a comment