দণ্ডবিধি–১৮৬০
THE PENAL CODE, 1860
(১৮৬০ সালের ৪৫ নং আইন)
প্রাথমিক আলোচনা
- প্রথম আইন কমিশন গঠিত হয় কত সালে?– ১৮৩৪ সালে
- Penal Code প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৮৩৭ সালের ১ম ভারতীয় আইন কমিশনের সভাপতি ও কমিশনার—
১। সভাপতি লর্ড ম্যাকলে (Thomas Babington Macaulay -T.B Macaulay)
[লর্ড উপাধি লাভের পর Lord Macaulay হিসেবে পরিচিত হয়]
২। কমিশনার ম্যাকলয়েড(Lord J.M. Macleod)
৩। এন্ডারসন(G.W. Anderson)
৪। মিলেট( F.Millet)
- Penal Code ( দন্ডবিধি) একটি Substantive Law (মূল আইন)।
- Penal Code টি ৫১১টি ধারা আছে।
- দণ্ডবিধি, ১৮৬০ সালের কত নম্বর আইন— ৪৫ নম্বর
- Penal Code ১৮৬০ সালের ৬ অক্টোবর প্রণয়ন করা হয়।
- পেনাল কোড কত সাল হতে কার্যকর হয়—১৮৬২ সালের ০১ জানুয়ারি।
- সর্বশেষ সংশোধনী হয়—২০০৪ সালে
- কোন আইন অনুসারে দণ্ডবিধিতে বর্ণিত অপরাধের বিচার করা হয়? —ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮
বার কাউন্সিলের পরীক্ষার সিলেবাস [Syllabus of Bar Council Enrolment Examination] অনুযায়ী দন্ডবিধির ধারা ভিত্তিক আলোচনা
দন্ডবিধির ধারাঃ ১। বিধির শিরোনাম ও কার্যকারিতার সীমা (Title and extent of operation of the Code)
ধারাঃ ২। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত অপরাধসমূহের শান্তি (Punishment of offences committed within Bangladesh)
ধারাঃ ৩। বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত কিন্তু আইনবলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিচারযোগ্য অপরাধ সমূহের শান্তি (Punishment of offences committed beyond, but which by law may be tried within Bangladesh)
ধারা ৪। রাষ্ট্রের সীমানার বাহিরে সংঘটিত অপরাধ সমূহের ক্ষেত্রে বিধির আওতা সম্প্রসারণ (Extension of Code to extra-territorial offences)
মনে রাখুন— দণ্ডবিধির ৪ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশী নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশের বাইরে/বিদেশে যেকোন স্থানে সংঘটিত যেকোন অপরাধের প্রতি দপ্তবিধি বিধানসমূহ প্রযোজ্য হবে এবং উক্ত নাগরিক যে অপরাধ বিদেশে করেছে তার বিচার করে যে শান্তি দণ্ডবিধিতে উল্লেখ আছে তাকে সেই দণ্ড দেওয়া যাবে।
- বাংলাদেশের নাগরিকের বিদেশে অপরাধ সংঘটন ও তার বিচার [দণ্ডবিধির ৩ ও ৪ ধারা)]
- বাংলাদেশে নিবন্ধিত জাহাজে বা উড়োজাহাজে অপরাধ সংঘটন [দণ্ডবিধির ৪ ধারা মতে বিচার]
- এক্ষেত্রে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৮৮ ধারা অনুসারে অপরাধীকে বাংলাদেশের যেকোন জায়গায় পাওয়া গেলে সরকারের অনুমতি নিয়ে সেখানেই তার বিচার করা যাবে।
- বাংলাদেশের বাইরে সংঘটিত অপরাধ সম্পর্কে বর্ণিত আছে কোন ধারায়?
- —-দণ্ডবিধির-৩ ও ৪ ধারায়
ধারাঃ ৫। এই আইন কতিপয় আইনকে ক্ষুন্ন করবে না (Certain laws not to be affected by this Act)
ধারাঃ ৬ । বিধির সংজ্ঞাসমূহের অর্থ ব্যতিক্রমসমূহ সাপেক্ষে হবে (Definitions in the Code to be understood subject to exceptions)
ধারাঃ ৭। একবার ব্যাখ্যাকৃত অভিব্যক্তির তাৎপর্য (Sense of expression once explained)
ধারাঃ ৮। লিঙ্গ (Gender)
ধারাঃ ৯। বচন (Number)
ধারাঃ ১০। পুরুষ-মহিলা (Man-Woman)
ধারাঃ ১১। ব্যক্তি (Person)
“ব্যক্তি” বলতে সমিতিভুক্ত হউক বা না হউক, যেকোন কোম্পানি বা সমিতি বা ব্যক্তি-সংস্থা অন্তর্ভুক্ত বুঝাবে। ব্যক্তি যেমন মানুষ হতে পারে তেমনি নিম্নের উদাহরণগুলোও হতে পারে—
- সমিতিভুক্ত কোম্পানি ব্যক্তিরূপে গণ্য।
- সমিতিভুক্ত নহে এমন কোন কোম্পানি ব্যক্তিরূপে গণ্য।
- সমিতি ব্যক্তিরূপে গণ্য।
- গর্ভস্থ শিশু ব্যক্তিরূপে গণ্য।
ধারাঃ ১২। জনগণ ( Public) জনসাধারণ (Public) বলতে রাষ্ট্রের অন্তর্গত জনসমষ্টিকে বুঝায়। ১২ ধারা অনুসারে জনসাধারণ বলতে জনসাধারণের কোন অংশ, শ্রেণী বা সম্প্রদায়ও অন্তর্ভূক্ত হবে।
ধারাঃ ১৩। বাতিল (Omitted)
ধারাঃ ১৪। রাষ্ট্রের কর্মচারী (Servant of the State) রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী বলতে সকল অফিসার ও কর্মকর্তাকে বুঝায়, যারা বাংলাদেশ সরকারের দ্বারা বা কর্তৃত্বে নিযুক্ত হয়ে কর্মরত আছে।
ধারাঃ ১৫। বাতিল (Omitted)
ধারাঃ ১৬। বাতিল (Omitted)
ধারাঃ ১৭। সরকার (Government)
ধারাঃ ১৮। বাতিল (Omitted)
ধারাঃ ১৯। বিচারক (Judge)
ধারাঃ ২০। বিচারালয় (Court of justice)
.ধারাঃ ২১। সরকারী কর্মচারী (Public servant)
সরকারী কর্মকর্তা বলতে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে বুঝায়। সরকারী কর্মকর্তাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেন এবং রাষ্ট্রের তহবিল হতে তাদের বেতন দেওয়া হয়। রাষ্ট্র জনগণের কর হতে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন প্রদান করে। তাদের কাজ জনস্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাগণ জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ অনুসারে সরকারী কর্মকর্তা বলতে প্রজাতন্ত্রের কাজে বেতনভূক্ত পদে কর্মরত কোন ব্যক্তিকে বুঝায়। দেওয়ানী কার্যবিধির ২(১৭) ধারায় ও দন্ডবিধির ২১ ধারায় সরকারী কর্মকর্তাদের বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে। দন্ডবিধির ২১ ধারায় সরকারী কর্মকর্তা বলতে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ অন্তর্ভূক্ত হবেন-
১। প্রজাতন্ত্রের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সকল কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ;
২। প্রত্যেক জজ যারা বিচারিক কাজে নিযুক্ত;
৩। বিচার আদালতের সকল অফিসার, যারা যেকোন পর্যায়ে বিচার কাজের সাথে যুক্ত;
৪। বিচার আদালত বা সরকারী কর্মকর্তাদের সহায়তাকারী প্রত্যেক জুরি, এসেসর বা পঞ্চায়েতের সদস্য;
৫। প্রত্যেক সালিসদার বা অন্য ব্যক্তি, যাদের নিকট বিচার আদালত বা অন্য কোন যোগ্যতাসম্পন্ন সরকারী কর্তৃপক্ষ কোন বিষয় বা ঘটনা সিদ্ধান্ত বা রিপোর্টের জন্য প্রেরণ করে;
৬। প্রত্যেক ব্যক্তি, যারা পদাধিকার বলে কাউকে আটক করার বা রাখার ক্ষমতা রাখে;
৭। সরকারের প্রত্যেক অফিসার, যাদের দায়িত্ব হল অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধের সংবাদ প্রদান, অপরাধীদের বিচারে আনায়ন অথবা যারা জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা বা যোগাযোগ ব্যবস্থা সংরক্ষণ করেন;
৮। প্রত্যেক অফিসার, যারা সরকারের পক্ষে সম্পত্তি গ্রহণ, ধারণ ও ব্যয় করেন;
৯। প্রত্যেক অফিসার, যারা সরকারের পক্ষে জরীপ, পরিমাপ ও চুক্তি করেন;
১০। প্রত্যেক অফিসার, যারা সরকারের পক্ষে রাজস্ব প্রক্রিয়া কার্যকর করেন;
১১। প্রত্যেক অফিসার, যারা সরকারের আর্থিক স্বার্থ বিষয়ে তদন্ত ও বিপোর্ট প্রদান করেন;
১২। প্রত্যেক অফিসার, যারা সরকারের অন্যান্য আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করেন;এবং
১৩। প্রত্যেক অফিসার, যারা ভোটার তালিকা প্রস্তুত, প্রকাশ, সংরক্ষণ ও সংশোধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
ধারাঃ ২২। অস্থাবর সম্পত্তি (Moveable property)
অস্থাবর সম্পত্তি বলতে স্থানান্তর বা পরিবহনযোগ্য শারীরিক সম্পত্তিকে বুঝায়, যেমন-খাদদ্রব্য, আসবাবপত্র, কাপড়, গাড়ী, গয়না, গবাদি পশু ইত্যাদি। ভূমি ও ভূমির সাথে স্থায়ীভাবে প্রথিত বস্তুনিচয় ছাড়া সকল শারীরিক সম্পত্তিকে অস্থাবর সম্পত্তি (Moveable property) বলে। তবে General Clauses Act, 1897-এ বলা হয়েছে, কোন সম্পত্তি স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত না হলে তা অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। দণ্ডায়মান বৃক্ষ, বাড়ন্ত ফসল ও ঘাস স্থাবর সম্পত্তি নয় বিধায় এগুলি অস্থাবর সম্পত্তি।
ধারাঃ ২৩। অবৈধ লাভ (Wrongful gain)/অবৈধ ক্ষতি (Wrongful loss)
অবৈধ লাভ হল বেআইনী ভাবে এরূপ সম্পত্তি অর্জন করা, যে সম্পত্তিতে অর্জনকারীর কোন আইনগত অধিকার নেই। অবৈধ ক্ষতি হল বেআইনী ভাবে এরূপ সম্পত্তির ক্ষতি করা, যে সম্পত্তির উপর ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির আইনানুগ অধিকার ছিল।
ধারাঃ ২৪। অসাধুভাবে (Dishonestly)
কোন ব্যক্তিকে যদি অবৈধ লাভ করাবার অভিপ্রায়ে বা অন্যকে অবৈধ ক্ষতি করার অভিপ্রায়ে কিছু করা হয় তবে তা অসৎভাবে (Dishonestly) করা হয়েছে বলা হবে।
ধারাঃ ২৫। প্রতারণামূলকভাবে (Fraudulently)
দন্ডবিধির ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি অন্য কিছু ছাড়া প্রতারণার অভিপ্রায়ে কিছু করে তাহলে তাকে প্রতারণামূলকভাবে (Fraudulently)বলা হবে।
ধারাঃ ২৬। বিশ্বাস করার কারণ (Reason to believe )
ধারাঃ ২৭। স্ত্রী, কেরানী বা ভৃত্যের অধিকারভুক্ত সম্পত্তি (Property in possession of wife, clerk or servant)
ধারাঃ ২৮। নকপকরণ (Counterfeit)
যদি কোন ব্যক্তি প্রতারণা করার অভিপ্রায়ে বা প্রতারণা হবে জেনেও একটি জিনিসের সদৃশ অন্য আর একটি জিনিস তৈরি করে তাহলে বলা হবে ঐ ব্যক্তি জাল বা নকল করেছে।
ধারাঃ ২৯। দলিল (Document)
বস্তুর উপর মানুষের বক্তব্যকে দলিল বলে। দলিল জড় পদার্থ, মানুষের মাধ্যমে ইহা আদালতে সাক্ষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ২৯ ধারা, ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৩ ধারা ও General Clauses Act-এর ৩(১৬) ধারাতে “Document” বা “দলিল”-এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, “দলিল”-এর অর্থ হল কোন পদার্থের উপর অক্ষর, সংখ্যা বা চিহ্নের সাহায্যে অথবা ঐ পন্থাসমূহের একাধিক পন্থায় প্রকাশিত বা বর্ণিত কোন বিষয়, যে পন্থায় ঐ বিষয় কোন উদ্দেশ্যে লিপিবদ্ধ করার ইচ্ছা করা হয় বা লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন-চুক্তিপত্র, চেক, কবাশা, আমোক্তারনামা, মানচিত্র, প্লান, নির্দেশনা অনুসারে কাগজের উপর কিছু লেখা। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দলিলের অর্থ এরূপ সংজ্ঞার মধ্যে সীমিত নেই। এর অর্থ খুবই বিস্তৃত হয়েছে। দলিল বলতে বর্তমানে শুধুমাত্র কাগজে লেখা ও নিবন্ধিত দলিলকে বুঝায় না-দলিলের ফটোকপি, টেপ-রেকর্ড, ভিডিও ক্যাসেট প্রভৃতি দলিল হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে।
ধারাঃ ৩০। মূল্যবান জামানত (Valuable security)
দন্ডবিধির ৩০ ধারা অনুসারে, মূল্যবান জামানতের অর্থ হল এখন দলিল, যা দ্বারা কোন আইনগত অধিকার সৃষ্টি, বর্ধিত, হস্তান্তরিত, নিয়ন্ত্রিত, বিলুপ্ত বা মুক্ত হয়, অথবা যা দ্বারা কোন ব্যক্তি আইনগত দায়িত্ব স্বীকার বা নির্দিষ্ট আইনগত অধিকার নেই বলে স্বীকার করে। যেমন-বিনিময়পত্র বা হুন্ডি (Bill of exchange), ভাড়ার রশিদ, কবুলিয়াত, অঙ্গীকারনামা প্রভৃতি মূল্যবান জামানত (Valuable security)।
ধারাঃ ৩১। উইল (A will)
দন্ডবিধির ৩১ ধারা অনুসারে উইল বলতে যে কোন অসিয়তমূলক/ইচ্ছাপত্রের দলিলকে বুঝায়। অন্যদিকে Succession Act, 1925 (১৯২৫ সালের ৩৯ আইন)-এর ২ ধারা অনুযায়ী উইল (A will) হলো—–
(ক) একটি ঘোষণা;
(খ) যাএকটি উইলকারীর ইচ্ছাকে ঘোষণা করে;
(গ) যা তার সম্পত্তির বিলিবন্দেজ সম্পর্কে প্রদত্ত হয়; এবং
(ঘ) যা তার মৃত্যুর পরে কার্যকরী হয়।
General Clauses Act, 1897 (১৮৯৭ সালের ১০ আইন)-এর ৩ ধারায় বলা হইয়াছে যে, উইলের মধ্যে codicil ও অন্তর্ভুক্ত এবং যে দলিল সম্পত্তি সম্পর্কে মরণোত্তর বিলিবন্দেজের নির্দেশ দেয়, তাই হলো উইল।
ধারাঃ ৩২। অবৈধ বিচ্যুতিসমূহ আইনসমূহের উল্লেখকারী শব্দসমূহের সংজ্ঞাভুক্ত (Words referring to acts include illegal omissions)
ধারাঃ ৩৩। কাজ, বিচ্যুতি (Act, Omissions)
ধারাঃ ৩৪। একই উদ্দেশ্য সাধনকল্পে কতিপয় ব্যক্তি দ্বারা কৃত কাজসমূহ (Acts done by several persons in furtherance of common intention)
দণ্ডবিধির কোন ধারায় অভিন্ন ইচ্ছাজনিত দায় (Common Intention) সম্পর্কে বিধান আছে—-৩৪ ধারা
ধারাঃ ৩৫। যেক্ষেত্রে অনুরূপ কাজ কোন অপরাধমূলক জ্ঞান বা অপরাধমূলক উদ্দেশ্য নিয়ে হওয়ার দরুন অপরাধমূলক বলে গণ্য হয়(When such an act is criminal by reason of its being done with a criminal knowledge or intention)
ধারাঃ ৩৬। আংশিকভাবে কাজ এবং আংশিকভাবে বিচ্যুতির সাহায্যে সংঘটিত ফলাফল (Effect caused partly by act and partly by omission)
ধারাঃ ৩৭। কোন অপরাধ সম্পাদনকারী/সংঘটনকারী কতিপয় কাজের একটি সম্পাদনের মাধ্যমে সহযোগিতা (Co-operation by doing one of several Acts constituting an offence)
ধারাঃ ৩৮। অপরাধমূলক কাজে জড়িত ব্যক্তিগণ বিভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন (Persons concerned in criminal act may be guilty of different offences)
ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে যৌথদায় (Joint liability) [ধারা-৩৪, ধারা-৩৫, ধারা-৩৭ এবং ধারা-৩৮]
মনে রাখুন—-যখন অনেক ব্যক্তিবর্গ তাদের সাধারণ অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করার জন্য কোন অপরাধমূলক কাজ করে তখন তারা উক্ত অপরাধের জন্য যৌধভাবে দায়ী হবে। এটাকে ফৌজদারী অপরাধের জন্য যৌথ নাম (Joint liability) বলে। দণ্ডবিধির ৩৪, ৩৫, ৩৭ এবং ৩৮ ধারায় যৌথ দায় (Joint liability) নীতিসমূহ আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নলিখিত ৪ টি কারনে কতিপয় ব্যক্তি যৌথভাবে ফৌজদারী অপরাধে দায়ী হতে পারে—
- অভিন্ন অভিপ্রায় বা common Intention নিয়ে অপরাধ করলে[ধারা-৩৪];
- অপরাধমূলক জ্ঞান এবং অভিপ্রায় (Criminal knowledge and intention) নিয়ে অপরাধ করলে[ধারা-৩৫];
- কিছু কাজের একটি সম্পাদনের মাধ্যমে অপরাধে সহযোগিতা করলে [ধারা-৩৭];এবং
- অপরাধমূলক কার্য সংঘটনে নিয়োজিত বা জড়িত থাকলে।[ ধারা-৩৮]
আরো মনে রাখুন—-
- কিছু ব্যক্তি অভিন্ন অভিপ্রায় (common Intention) নিয়ে অপরাধ করলে তাদের প্রত্যেকে একইভাবে দায়ী হবে এবং এমনভাবে শাস্তি পাবেন যেমনটি তারা দায়ী হতো বা শাস্তি পেতো যদি তারা পৃথক পৃথকভাবে অপরাধটি করতো।
- Common Intention এর জন্য কোন ব্যক্তিকে দায়ী করতে হলে অপরাধটি অবশ্যই সংগঠিত হতে হবে এবং সেখানে সর্বনিম্ন ২ জন আসামী থাকতে হবে। কারণ দুইয়ের অধিক ব্যক্তি না থাকলে Common Intention গঠিত হয় না।
- দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার সাথে ৩৪ ধারা প্রাসঙ্গিক। পেনাল কোডের ৩০২ ধারা হলো খুনের শাস্তি আর এর সাথে ৩৪ যুক্ত করলে সংঘবদ্ধভাবে খুন করার শাস্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তি মিলে খুন করার ক্ষেত্রে ৩০২/৩৪ ধারায় মামলা হয়। সর্বোপরি বলা যায়, ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ হল সংঘবদ্ধভাবে খুন করা।
- যৌথভাবে দায়ী করতে হলে ৩৪ ধারা অনুযায়ী খুন করার জন্য যে অভিন্ন ইচ্ছা (Common intention) ছিল তা প্রমাণ করতে হবে।
ধারাঃ ৩৯। স্বেচ্ছাকৃতভাবে (Voluntarily )
ধারাঃ ৪০। “অপরাধ” (Offence)
দন্ডবিধির ৪০ ধারায় বলা হয়েছে, অপরাধ” হল এই ধারার ২ ও ৩ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধ্যায়ে ও ধারায় উল্লেখিত কাজ ব্যতিত যেকোন কাজ, যা এই আইন শাস্তিযোগ্য করেছে। কোন কাজ বিশেষ ও স্থানীয় আইনে শাস্তিযোগ্য হলেও তা অপরাধ হবে। কোন কাজ করা হতে বিরত থাকাও অপরাধ হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।অপরাধের উপাদান বা বৈশিষ্ট্যসমূহ (Elements or characteristics of offences)—-
১। অপরাধ হল একটি অন্যায় ও বেআইনী কাজ করা বা করা হতে বিরত থাকা;
২। অপরাধ করার সময় অপরাধী মন [Mens rea(ল্যাটিন শব্দ) or guilty mind(ইংরেজি) থাকবে;
৩। কাজটি করা বা না করা আইনে নিষিদ্ধ হবে;
৪। কাজটি করা বা না করা সমাজ, রাষ্ট্র, ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জন্য ক্ষতিকর হবে;
৫। কাজটি করা বা না করার জন্য আইন অনুসারে শান্তির বিধান থাকবে; এবং
৬। কাজটি করা বা না করা সমাজের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিপন্থী হবে।
খারাঃ ৪১। বিশেষ আইন (Special law) —নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রয়োগযোগ্য আইন।
ধারাঃ ৪২। স্থানীয় আইন (Local law)
ধারাঃ ৪৩। অবৈধ, আইনত সম্পাদন করতে বাধ্য (Illegal. Legally bound to do)
ধারাঃ 88 ক্ষতি (Injury) —কোন ব্যক্তির দেহ, মন, সুনাম বা সম্পত্তিতে অবৈধভাবে করা কোন অনিষ্ট করা।
ধারাঃ ৪৫। জীবন ( Life) —বিষয় প্রসঙ্গে ভিন্নরূপ কিছু না বুঝালে “জীবন” বলতে মানুষের জীবনকে বুঝায়।
ধারা ৪৬। মৃত্যু (Death) —বিষয় প্রসঙ্গে ভিন্নরূপ কিছু না বুঝালে “মৃত্যু” বলতে মানুষের মৃত্যুকে বুঝায়।
ধারাঃ ৪৭। প্রাণী (Arimal) —মানুষ ছাড়া যেকোন জীবন্ত জীব।
ধারাঃ ৪৮। জাহাজ (Vessel)
মানুষ বা সম্পত্তি পরিবহণের জন্য যেকোন জলযানকে বুঝায়। General Clauses Act, 1897-এর ৩ (৫৬) ধারা অনুসারে নৌযানের অন্তর্ভুক্ত হল নৌচালনায় ব্যবহৃত কোন জাহাজ, নৌকা বা অন্য কোন ভিন্ন বর্ণনার জলযান।
ধারাঃ ৪৯। বছর-মাস (Year, Month)
ধারাঃ ৫০। ধারা (Section)
ধারাঃ ৫১। হলফ (Oath)
ধারাঃ ৫২। সরল বিশ্বাস (Good faith)
দন্ডবিধির ৫২ ধারায় সৎ বা সরল বিশ্বাস কাকে বলে তা বলা হয় নাই। শুধুমাত্র যথাযথ সতর্কতা ও মনোযোগের সাথে কোন কিছু করা না হলে বা বিশ্বাস না করা হলে তা সরল বিশ্বাসে করা বা বিশ্বাস করা হবে না, অর্থাৎ যথাযথ সতর্কতা ও মনোযোগের সাথে কোন কিছু করা হলে বা বিশ্বাস করা হলে তা সরল বিশ্বাস বলে বিবেচিত হবে। তামাদি আইনের ২(৭) ধারায় অনুরূপ কথা বলা হয়েছে। দন্ডবিধির ৭৬ ধারা অনুসারে আইন বলে করতে বাধ্য কোন কাজ সৎ বা সরল বিশ্বাসে করা হলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না।
ধারাঃ ৫২ক। আশ্রয় (Harbour)
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
-
পেনাল কোডের ৩৪ ধারার অধীন সাধারণ উদ্দেশ্যে অপরাধ সংঘটনের জন্য ন্যূনতম আসামি হতে হবে?—২ জন
-
Joint Liability (যৌথ দায়) হবে—
1.সাধারণ অভিপ্রায় থাকলে;
2.অপরাধমূলক জ্ঞান এবং অভিপ্রায়ে অপরাধ করলে;
3.কতিপয় কার্যের একটি সম্পাদনের মাধ্যমে অপরাধে সহযোগিতা করলে।
-
দণ্ডবিধির কত ধারায় প্রতারণামূলকভাবে (Fraudulently) এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে?— ২৫ ধারা
-
কোনো ব্যক্তির অবৈধ লাভ করানোর উদ্দেশ্যে বা অবৈধ ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে যে কাজ করে তা কি হিসেবে গণ্য হবে?—সৎভাবে
-
অভিন্ন অভিপ্রায় (Common Intention) নিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি অপরাধ করলে তাদের প্রত্যেকে —-যৌথভাবে দায়ী হবে।
-
দণ্ডবিধির কত ধারায় “Injury” এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে? — ৪৪ ধারা
-
(Document) দলিল এর সংজ্ঞা দণ্ডবিধির কোন ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে?— ২৯ ধারা
-
(Offence) অপরাধের সংজ্ঞা দণ্ডবিধির কত ধারায় দেওয়া আছে?—৪০ ধারা
-
The Penal Code, 1860 এর কোন ধারায় ‘Nothing is said to be done or believed in good faith which is done or believed without due care and attention’ উল্লেখিত হয়েছে?—- ৫২ ধারা
-
“Persons concerned in criminal act may be guilty of different offences” বলা হয়েছে— ৩৮ ধারায়
-
‘যখন একাধিক ব্যক্তি কোন কাজ অপরাধমূলক জ্ঞান বা অভিপ্রায় নিয়ে সম্পাদন করে তখন তারা যৌথভাবে দায়ী হবে’ এটি দণ্ডবিধি –৩৫ ধারা
Leave a comment