অথবা, বার্কলিকে আত্মগতভাববাদী বলা যায় কী না?
ভূমিকাঃ জ্ঞানের বিষয় কী? অর্থাৎ জ্ঞানের বিষয় কি জ্ঞাতসাপেক্ষ না জ্ঞাতানিরপেক্ষ এ নিয়ে দর্শনের ইতিহাসে দার্শনিকদের মধ্যে এক বিতর্কের সাক্ষাৎ পাই এবং এ বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে দার্শনিকবৃন্দ দু’শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যায়। যেমন যারা জ্ঞানকে জ্ঞাতসাপেক্ষ বলে মনে করেন তাদের বলা হয় জ্ঞাতা-সাপেক্ষ। আর যারা জ্ঞাতা নিরপেক্ষ মনে করেন তাদের বলা হয় বস্তুবাদী দার্শনিক। ভাববাদের অন্তর্গত বার্কলির আত্মগত ভাববাদের আলােচনা আমরা নিম্নে প্রদান করব। তার আগে ভাববাদ বলতে কী বুঝায় সে সম্পর্কে ধারণা থাকা দরকার।
বার্কলি কি একজন আত্মকেন্দ্রিকতাবাদী দার্শনিকঃ বার্কলি কি একজন আত্মকেন্দ্রিকতাবাদী দার্শনিক ছিলেন- এ সম্পর্কে জানার আগে আমাদের জানতে হবে আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ বলতে কী বুঝায়। আত্মকেন্দ্রিকতাবাদের ইংরেজি শব্দ ‘Solipsism’ কথাটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Solus’ থেকে যার অর্থ হলাে ‘alone’ (কেবলমাত্র) এবং ‘ipse’ হলাে ‘self’ বা আমি। ‘Solipsism’ শব্দের অর্থ দাড়ায় কেবল আমারই অস্তিত্ব আছে।
হিউম মনে করেছিলেন যে, বার্কলির দার্শনিক মতবাদে আমার এবং আমার ধারণার অস্তিত্ব আছে। বার্কলি অবশ্যই ঈশ্বরকে টেনে নিয়ে এসে জগতের স্থায়িত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সবকিছুর অস্তিত্ব যখন প্রত্যক্ষণের ওপর নির্ভর করে তখন ঈশ্বরের অস্তিত্বও ব্যক্তি মনের ওপর নির্ভর করে। তাহলে সে একই অবস্থা দাঁড়ালাে যে, আমার এবং আমার ধারণারই অস্তিত্ব আছে। আমরা প্রত্যেকে যে ধারণার জগতে বদ্ধ, বাইরে যাবার উপায় নেই। আমাদের ধারণায় অতিরিক্ত কোনাে বাহ্যবস্তুর সঙ্গে আমাদের যােগাযােগ সম্ভব নয়। বস্তুত যোগাযােগ হবে কী করে? যার সঙ্গে যােগাযােগ হবে সেও আমাদের ধারণা। সেই দল বার্কলির মতবাদের পরিণতি আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ- হিউম একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও আমরা বার্কলির মতবাদকে আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ বলতে পারি না। বার্কলির মতে, অভিজ্ঞতা আমার দ্বারাই সৃষ্টি হচ্ছে না। এর মূলে বাহ্যসত্তার অস্তিত্ব আছে।
বার্কলি ঈশ্বরের ধারণার দ্বারা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যে, আমি এবং আমার ধারণা ছাড়াও অন্য জীবাত্মার অস্তিত্ব আছে। আমার ধারণার জন্য আমি ঈশ্বরের ওপর নির্ভরশীল। এক কথায় বলা যায়, বার্কলি আমি এবং আমার ধারণা ছাড়াও স্রষ্টার সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। সুতরাং বার্কলির ভাববাদকে আত্মকেন্দ্রিকতাবাদ বলে অভিহিত করা মােটেই যুক্তিযুক্ত নয়।
পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বার্কলি ছিলেন একজন খাঁটি ভাববাদী দার্শনিক। জন লকের ভাববাদী দার্শনিক সূত্রের ওপর ভিত্তি করেই তিনি দার্শনিক মত খাড়া করার চেষ্টা করেছেন। তবে শেষ পর্যায়ে তিনি যে আত্মগত ভাববাদ প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন অবশেষে তা আত্মকেন্দ্রিকতাবাদে পর্যবসিত হতে দেখি।
Leave a comment