প্রশ্নঃ বারমাস্যা বা বারমাসি বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্য উৎপত্তির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল। বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে- কোন দেবী মর্ত্যের মানুষের কাছ থেকে পূজা পেতে চাইলে যে কোন অপরাধে স্বর্গের কোন দেবতা শাপগ্রস্ত হয়ে মর্ত্যে অবতীর্ণ হবে এবং দেবীর পূজার সর্বৈব ব্যবস্থা করে পুনরায় স্বর্গে ফিরে যাবে। তেমনি বারমাস্যাও প্রত্যেক মঙ্গলকাব্যের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

যে কোন ধরনের একটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে উপলক্ষ্য হিসেবে মঙ্গলকাব্যের নায়িকা তার নায়ককে দোষারোপ করে (বা না করে) দীর্ঘ বারো মাসের নায়ক-নায়িকার অর্থনৈতিক দৈন্য বা মানসিক বিরহের যে বর্ণনা প্রদান করা হয় তাকে বারমাস্যা বলে। বারমাস্যা মঙ্গলকাব্যের গতানুগতিক অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। কালকেতু উপাখ্যান থেকে ফুল্লরার বারমাস্যার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল-

বৈশাখ— ভাঙা কুঁড়া ঘরখানি পত্রে ছাওনী

               ভেরাণ্ডার খাম তার আছে মধ্য ঘরে। 

               প্রথম বৈশাখ মাসে নিত্য ভাঙ্গে ঝড়ে।

জ্যৈষ্ঠ—পাপিষ্ঠ জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রচণ্ড তপন। 

             খরতর পোড়ে অঙ্গ রবির কিরণ।

আষাঢ়— অভাগ্য মনে গুণি অভাগ্য মনে গুণি৷ 

               কত শত খায় জোঁক নাহি খায় ফণী॥

আশ্বিন— উত্তম বসনে কেশ করয়ে বনিতা।

                অভাগী ফুল্লরা করে উদরের চিন্তা॥

কার্তিক— কার্তিক মাসেতে হয় হিমের প্রকাশ।

                 যগজনে করে শীত নিবারণ বাস।

                 নিযুক্ত করিলা বিধি সবার কাপড়।

                 অভাগী ফুল্লরা পরে হরিণের ছড়॥

মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া’ পালায়ও নদের চাঁদ বিহনে প্রত্যেক মাসে ফুল্লরার যে বিরহ তা বারমাস্যাতে অঙ্কিত হয়েছে।

মধ্যযুগীয় বিভিন্ন কাব্যে বারমাসির বর্ণনা রয়েছে। নায়ক বা নায়িকার অর্থনৈতিক প্রেম-বিরহ-বেদনা একেক মাসে একেক রূপে প্রকটিত। মধ্যযুগীয় কাব্যে মাসে মাসে নায়ক-নায়িকার বিরহের রঙের যে বর্ণনা তা বারমাস্যা হিসেবে পরিচিত। কোন কোন কাব্যে বারমাস্যার স্থলে চৌতিশার মধ্য দিয়ে এ বিরহ বর্ণিত হয়।