নভেম্বর ২২, ২০২০
প্রথমে চলুন আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
আমরা জানি পৃথিবী সৌরজগতের একটি ছোট গ্রহ, যা মিল্কিওয়ে নামের ছায়াপথের একটি অংশ। সূর্য একটি নক্ষত্র এবং আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রস্থল। এখন 100 থেকে 200 বিলিয়ন নক্ষত্রের একটি সমষ্টি কল্পনা করুন। হ্যাঁ, এটি আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে।
মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা ২০০-৩০০ বিলিয়ন প্রায়। এই বিপুল সংখ্যক ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি এমনিতেও আমাদের কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়, তারপরও যদি বলা হয় যে এর পরে কি আছে, নিশ্চয়ই সেটা আমাদের সকল চিন্তাশক্তিকে পাড় করে যাবে। যদিও হরহামেশাই এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা কল্পনার জগতে হারিয়ে যাই। কিন্তু কোন কূলকিনারা করতে পারি না। সত্যিই তো, যার শুরু আছে তার তো কোথাও শেষ থাকা উচিত। ঠিক এই জায়গাটাতেই চলে আসে বাবল ইউনিভার্স তত্ত্বটি। মহাবিশ্বের সৃষ্টি তত্ত্বের একটি চমৎকার এবং কল্পনা শক্তির চরম পরীক্ষা নেওয়া তত্ত্বটি হল এই বাবল ইউনিভার্স তত্ত্বটি।
চলুন দেখে নেওয়া যাক বিজ্ঞানীদের মতে কি এই বাবল ইউনিভার্স এবং কিই বা আছে আমাদের এই মহাবিশ্বের বাইরে।
“বাবল ইউনিভার্স” তত্ত্ব
বিজ্ঞানীদের একটি চমকপ্রদ তত্ত্ব হল “দ্য বাবল ইউনিভার্স”। এই তত্ত্ব অনুসারে, মহাবিশ্বকে একটি সাবানের বুদবুদ বা বাবলের সাথে তুলনা করা হয় এবং আপনি যদি এরকম বুদ্বুদে ভরা একটি সমুদ্র কল্পনা করেন তবে তাদের প্রত্যেকটি একটি সম্পূর্ণ আলাদা মহাবিশ্বকে উপস্থাপন করে। প্রতিটি বুদবুদ একটি হাইপার স্পেসে ভাসছে, ঠিক যেমন প্রতিটি গ্যালাক্সি এই মহাবিশ্বের অসীম শূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন সাইন্স ফিকশন মুভির কল্যাণে আমাদের অনেকের কাছেই হাইপারস্পেস শব্দটি চেনা চেনা লাগতে পারে। নির্দিষ্ট করে বললে হাইপারস্পেস হল তিন মাত্রার অধিক কোন স্পেস। বলতে গেলে এটি সম্পূর্ণই আমাদের কল্পনার বাইরে একটি জগত। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই স্পেসে 10 বা 11 টি মাত্রা রয়েছে বলে মনে করা হয়। আমরা যেখানে আছি ত্রিমাত্রিক স্পেস বা স্থানাঙ্ক ব্যবস্থায়, সময় বিবেচনা করলে এটি চার-মাত্রিক। অনেকের কাছে হাইপারস্পেস সম্পূর্ণই কাল্পনিক মনে হতে পারে। তবে তিন মাত্রার একটি স্থান ব্যবস্থায় থেকে কোনভাবেই ১০ বা ১১ মাত্রার স্থান ব্যবস্থা কে অস্বীকার করা যাবে না।
আমরা জানি যে আমাদের মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট হারে প্রসারিত হচ্ছে। সুতরাং, মহাবিশ্ব যদি কোনও বুদ্বুদের মধ্যে থাকে তবে বুদবুদটিকে প্রসারিত হিসাবে বিবেচনা করা যায়। হাইপারস্পেসের এই সম্প্রসারণ বিগ ব্যাং তত্ত্বের ধারণা নিয়ে আসে। যদি দুটি প্রসারিত বুদবুদ একে অপরের সাথে সংঘর্ষ করে এবং মহাবিশ্বের একটি নতুন বুদ্বুদ গঠন করে বা একটি বুদ্বুদ বিভক্ত হয়ে গিয়ে দুটি আলাদা মহাবিশ্বের সৃষ্টি করে তবে এটিই হতে পারে নতুন একটি বিগ ব্যাং।
প্যারালাল ইউনিভার্স
বাবল ইউনিভার্স বা মহাবিশ্বের ধারণাটি প্যারালাল ইউনিভার্স বা মাল্টিভার্স এর ধারণা নিয়ে আসে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সুবাদে বিজ্ঞানীরা প্যারালাল ইউনিভার্স এর বেশ জোরালো দাবি করে থাকেন।
সাধারণ ভাষায় প্যারালাল ইউনিভার্স বা মাল্টিভার্স বলতে আমাদের মহাবিশ্বের মতোই সমান্তরাল কিছু মহাবিশ্ব কথা বিবেচনা করা হয়, যেখানে সময় আমাদের উল্টোদিকে প্রবাহিত হয়। অর্থাৎ, বিশ্বজগতের কোথাও ঠিক এমন একটি মহাবিশ্ব আছে, যেখানে হয়তো আমাদের মতোই মিল্কিওয়ে ছায়াপথ আছে, আছে নানা নীহারিকা। সেখানেও সৌরজগতের মাঝে পৃথিবী নামে নীলাভ একটি গ্রহ আছে, যে গ্রহে হয়তো এই মুহূর্তে আপনার মতো দেখতে কেউ একজন অসীম আগ্রহ নিয়ে প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব সম্পর্কে পড়াশোনা করছে। অর্থাৎ, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও একইরকমের কিছু সমান্তরাল মহাবিশ্ব রয়েছে, যারা একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানে না। একেই সাধারণভাবে প্যারালাল ইউনিভার্স বলা হয়ে থাকে।
যদিও বাবল ইউনিভার্স তত্ত্বটি শুধু মাত্র একটি বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস মাত্র। তবে কে জানে, সম্ভবত আপনার মাল্টিভার্স ডাবল হয়তো হাইপার স্পেসে ভাসমান অন্য কোন বাবলে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রার আরেকটি মহাবিশ্বে জীবনযাপন করছে।
কমেন্ট বক্সে লেখাটি সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানান |
Leave a comment