বাত ব্যথা হল এমন একটি সমস্যা যা আমাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে কারণ বাতের ব্যথা হলো এমন একটি যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা যা আমাদের চলাফেরায়, উঠতে বসতে অনেক অসুবিধা হয়। এমন অনেক মানুষ আছেন বাতের ব্যথার কারণে তারা হাঁটতে পর্যন্ত পারে না। তবে বাতের ব্যথা শীতকালে একটু বেশি হয় এবং বর্ষার সময় আবহাওয়া যখন স্যাঁতসাঁতে হয় তখনও এই ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।

তবে বাত ব্যথা এবং বাত জ্বর এক নয়। আমরা অনেকেই বাত ব্যথা এবং বাতজ্বরকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলি। বাত ব্যথা থেকে রক্ষা পেতে আপনারা ইউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন এবং অনেক আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে যেগুলো আপনারা নিতে পারেন। নিচে বাত ব্যথা কি – বাত ব্যথা হলে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –

বাত ব্যথা কি

বাত হল এক প্রকার ঘাতক রোগ যা মানুষকে শরীরবৃত্তিয় রোগ বা সিস্টেমিক ডিজিজ। যার উপসর্গ পুরো শরীর জুড়ে হতে পারে। বাতকে আবার রিউমার্টেভ আর্থাইটিস বা সংক্ষেপে  RA  বলা হয়। এটি মানুষের অটোই মিউন ব্যাধি। বাত রোগ হলে মানুষের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম যা মানব শরীরের জয়েন্ট গুলোকে আক্রমণ করে থাকে। বাত যাকে ইংরেজিতে Arthritsitis  আর্থাইটিস এবং এই আর্থাইটিস হলো গ্রিক শব্দ।

সুতরাং অ্যাথাইটিস হলো অস্থি সন্ধির প্রদাহ যা হলে অস্থি সন্ধির প্রদাহ হয় এবং এটা মানব শরীরের একাধিক অস্থিসন্ধি আক্রান্ত হতে পারে। বাত ব্যথা ছোট মানুষের চেয়ে বড় মানুষের ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা বিশেষ করে যাদের বয়স বেশি তাদের জন্য আরও বেশি সমস্যা। বাত ব্যথার উৎপত্তি হয় সাধারণত অস্থি সন্ধিতে ইউরিক এসিড বেশি হওয়ার কারণে। ইউরিন বা প্রসাবের মাধ্যমে যে পরিমাণ ইউরিক এসিড বেরিয়ে যাওয়ার কথা সে পরিমাণ

ইউরিক অ্যাসিড বের হতে না পারলে বাত ব্যথা হয়। আমাদের শরীরে যদি দীর্ঘমেয়াদি কোন ব্যথা থাকে যেমন আমাদের অস্থির সন্ধিতে ব্যথা হয় তাকে বলা হয় বাত ব্যথা।আমাদের শরীরে যদি দীর্ঘমেয়াদি কোন ব্যথা থাকে যেমন আমাদের অস্থিসন্ধিতে, মাংস এবং হাড়ে যে ব্যাথা থাকে তাকে বলা হয় বাত ব্যথা। বাত ব্যথা সাধারণত ১৫ বছরের পরে হয়ে থাকে অর্থাৎ বয়স হলে বাত ব্যথা হয়ে থাকে আর বয়সের সাথে সাথে যে ব্যাথা হয় তাকে বলা হয় অস্টিওআর্থাইটিস।

বাত ব্যথা ও বাতজ্বরের মধ্যে পার্থক্য

বাত ও বাদশার এক নয় আমরা অনেকেই মনে করি বাপ ও বাতজ্বর একই রোগ কিন্তু মোটেও তা
নয়

বাত জ্বর সাধারণত জন্মের শুরু থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে

বাত ১৫ বছর বয়সের পর থেকে হয়ে থাকে

বাত জ্বর হলে গিটে গিটে ব্যথা হয়

বাত হলে গিটে সহ মাংস পেশীতে এবং হাড়ে ও ব্যথা হয়।

বাত জ্বর হলে গিঁটে ফুলে যায়।

বাত হলে গিঁটে নাও ফুলতে পারে আবার ফুলেও যেতে পারে।

বাত জ্বর কে রিমেটিভ ফিভার বলা হয়।

বাত কে সাধারণত অস্টিও আর্থাইটিস বলা হয়।

বাত জ্বর  শরীরে বড় বড় জয়েন্ট গুলো আক্রান্ত হয়।

বাত ব্যথায় বড় join সহ আরো মাংসপেশীতে ব্যাথা আক্রান্ত হয়।

বাত জ্বর ১৫ বছর বয়সের পর আর হয় না।

 

বাত পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে বেশি দেখা যায় আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ম্যানপোজ বা রজনঃ বৃত্তি পর অর্থাৎ ৪৫ বছর বয়সে বেশি দেখা যায় তবে ২০ বছর বয়সেও হতে পারে।

বাত জ্বরে লিভার, কিডনি, হৃদপিণ্ড  দীর্ঘমেয়াদি আক্রান্ত হতে পারে।

বাত ব্যথার সাময়িক একটি রোগ।বাত ব্যথা হলেও পাঁচ থেকে সাত সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যেতে পারে আবার সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে আবার ফিরে আসতে পারে।

বাত জ্বর হলে ব্যায়াম করা যায় না।

বাত ব্যথায় ব্যায়াম খুব উপকারী।

বাত ব্যথার প্রকারভেদ

বাত ব্যথা বা বাত রোগ অনেক প্রকার হয়ে থাকে। যথা-

    • গেঁটে বাত
    • অস্টিও আর্থাইটিস বা অস্থি সংযোগ সন্ধি প্রদাহ
    • গাঁট বা সন্ধি বাত বা ফোলা বাত
    • সায়াটিকা বাত
    • আমবাত
    • আর্টিকেরিয়া
    • এলার্জি বাত
    • মেরুদন্ড  প্রদাহ বাত
    • বাতজ্বর
    • সেপটিক বা আর্থাইটিস
    • সংক্রামক বাত
    • পাশ্ব বাত
    • স্বন্ধ বাত
    • ঘাড়ের বাত ইত্যাদি

    কোথায় কোথায় বাত ব্যথা হয়

    মানব শরীরে যে কোন অঙ্গে বাত ব্যথা হতে পারে। তবে অস্থি সন্ধি ও হাড় জয়েন্টে বেশি ব্যথা দেখা যায়।

    হাঁটুতে ব্যথা বা দুর্বলতা

    বাতের ব্যথা সবচেয়ে বেশি হাটুতে হয়ে থাকে। হাঁটুতে ব্যথা হলে হাঁটুর জয়েন্ট ব্যথা অনুভূত হয় এবং দাঁড়ানোর সময় বেশি ব্যথা হয়ে থাকে। এছাড়াও হাটু ফুলে যায়, বসে থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর পর সকালে উঠে দাঁড়াতে গেলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়ে থাকে।

    হাতের আঙ্গুলে ব্যথা ও লাল ভাব

    বাত ব্যথার কারণে হাতের আঙ্গুলের জয়েন্ট গুলো ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় হাতের তালুতে মনে হয় ব্যথা হচ্ছে আবার চীবানোর সমস্যাও হতে দেখা যায়। অনেক সময় বাত ব্যথার কারণে নখের মধ্যে ও জ্বালা অনুভূত হয় কখনো মনে হয় নখগুলো উপড়ে ফেলে দিলে শান্তি পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সর্দি জ্বর হলে বেশি ব্যথা অনুভূত হয়।

    পায়ের গোড়ালি ব্যথা

    বাত ব্যথায় পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক ব্যথা আছে যেগুলো চলাচল করা যায় না বা হাঁটতে অনেক কষ্ট হয় আবার অনেক এমন ব্যথা আছে যেগুলোতে ব্যথা হাটার পর ভালো হয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর অথবা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে এমন ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।

    পায়ের আঙ্গুলে ব্যথা

    বাত ব্যথার কারণে পায়ের আঙ্গুলেও ব্যাথা হয় বিশেষ করে পায়ের আঙ্গুলের অস্থি সন্ধি বা জয়েন্ট ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় জুতা পরার কারণে ও হতে পারে তবে বাত ব্যথায় পায়ে বেসি জুতা পরা যায় না ও অসস্তি বোধ হয়। তবে পায়ের আঙ্গুল ব্যাথা হলে যদি একটু মেসেজ করা যায় তাহলে আরাম অনুভূত হয়।

    কাঁধে ব্যথা

    বাত ব্যথা হলে কাঁধে ব্যথা অনুভূত হয়। বিশেষ করে ঘাড়ে, কাঁধে, দুই হাতের জয়েন্ট যেখান থেকে শুরু হয় সেখানে ব্যথা অনুভূত হয়। কখনো কখনো বা কাঁধে, মেরুদন্ডের যে হাড় আছে এর মধ্যে জ্বালা অনুভূত হয় এবং ব্যথা করে এটি বাত ব্যথার আরেকটি উপসর্গ।

    কব্জি অসারতা

    বাতের ব্যথা অনেক সময় কবজিতে বেশি অনুভূত হয়। কব্জি ফুলে যেতে ও দেখা যায়। কব্জি থেকে ব্যথা হাতের আঙ্গুলেও যেতে দেখা যায় তবে এ সময় হাতের তালু এবং কব্জি মেসেজ করলে আপনি পাম্পিং বল দিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন এতে ব্যথা থেকে আরাম পাবেন। অথবা আপনি যদি দুই হাতের তালু ঘষে গরম সৃষ্টি করতে পারেন তাহলে আরাম বোধ করবেন। এছাড়া আপনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচের মাংসপেশিতে চাপ দিতে পারেন এতে আরাম পাবেন।

    বাত ব্যথার কারণ

    বাত ব্যথা হওয়ার জন্য কিছু কিছু কারণ রয়েছে যা বাত ব্যাথাকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে থাকে। যেমন

    অপুষ্টি

    ভিটামিনের অভাবে বাত ব্যথা হতে পারে বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব হলে বাত ব্যথা বেশি হয়।

    বয়স

    বয়স বাত ব্যথার অন্যতম কারণ। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৪৫ থেকে ৫০ এবং মেয়েদের ৪৫ বছরের পরে ব্যথা বেশি দেখা যায় তবে ২০ বছর বয়সে ব্যথা হতে পারে। বয়সের সাথে সাথে যে ব্যথা হয় তাকে আর্থাইটিস বলে। বয়স যত বাড়ে সাথে সাথে তরুণার্থী ভঙ্গুর হয়ে পড়ে এবং তা পূর্ণ গঠনের ক্ষমতা ও হারিয়ে ফেলে তাই বয়স যত বাড়ে বাতের ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনাও ততই বাড়ে।

    লাইফ স্টাইল ও জীবন পরিচালনা

    জীবন পরিচালনার জন্য বাত ব্যথা হতে পারে। যেমন – ধূমপান করলে বা যেকোনো নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে বাত ব্যথা হতে পারে আবার পর্যাপ্ত ব্যায়ামের অভাবেও বাত ব্যথা হতে পারে।

    আঘাত

    পূর্ববর্তী বড় ধরনের কোন আঘাতের কারণেও বাতব্যাতা হতে পারে।

    পারিবারিক ইতিহাস

    এমন অনেক ব্যথা আছে যা পারিবারিক ভাবেও চলে আসে তাই পরিবারের কারো যদি এ ব্যথা থাকে তাহলে আপনারও বাত ব্যথা হতে পারে।

    ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ

    ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ও বাতের ব্যথা হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে যে বাতব্যাথা হয় তাকে ক্লিবশিলা বা এলার্জি ব্যথা বলা হয়। আবার অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ব্যথা হলে রিএক্টিভ আর্থ্রাইটিস বলা হয়ে থাকে।

    অতিরিক্ত ওজন

    অতিরিক্ত ওজন শরীরের জয়েন্ট গুলিকে চাপ দেয় তাই যাদের অতিরিক্ত ওজন থাকে তাদের বাতের ব্যথা বেশি হতে দেখা যায়।

    লিঙ্গ ভেদ

    বেশিরভাগ বাত ব্যথা মহিলাদের হতে দেখা যায়

    নিয়মিত অ্যালকোহল পান করা

    নিয়মিত অ্যালকোহল পান করলে শরীর থেকে ইউরিক এসিড বের হতে পারেনা। অতিরিক্ত ইউরিক
    অ্যাসিড অস্থিসন্ধিতে জমা হয়ে বাত ব্যাথা হতে পারে।

    বাত ব্যথার উপসর্গ ও লক্ষণ

    বাত ব্যথার বিভিন্ন রকম উপসর্গ দেখা যায় এই উপসর্গগুলো কারো মধ্যে বেশি আবার কারো মধ্যে কম অনুভূত হয়। বাতের ব্যথা দৈনিক জীবন যাপনে অস্বস্তি নিয়ে আসতে পারে। অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, ফোলা, গরম অনুভূত হওয়া, জ্বর জ্বর ভাব, মুখে বিষাদ ইত্যাদি লক্ষণও দেখা যায়। এছাড়াও যে লক্ষণ গুলো দেখা যায় তা হল-

      • হাত – পা অতি সন্ধিতে ব্যথা।
      • হাত ব্যবহারের অক্ষমতা বা ও অস্বস্তি বোধ করা।
      • শরীরের বিভিন্ন স্থানের মাংসপেশীতে লালচে ভাব দেখা দেওয়া।
      • হাঁটতে বা চলাফেরা করতে অক্ষমতা।
      • শরীরের বিভিন্ন জায়গা ফুলে যাওয়া।
      • ওজন কমে যাওয়া।
      • মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া।
      • পেশীর ব্যথা ও দুর্বলতা।
      • জয়েন্টের চারপাশে ফুলে যাওয়া বা অস্বস্তি হওয়া।
      • চলাফেরা ও কাজের গতি কমে যাওয়া।
      • বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
      • শরীরে জ্বর জ্বর অনুভূত হওয়া।
      • বুকে ব্যথা করা।

      বাত ব্যথা হলে করণীয়

        • বাত ব্যথা হলে আপনাকে যা করতে হবে তা হল
        • নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
        • সুষম খাবার খেতে হবে।
        • ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার খেতে হবে।
        • নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে।
        • পরিমিত ব্যায়াম করতে হবে।
        • পাম্পিং বল দিয়ে হাতের ব্যায়াম করতে হবে।
        • অতিরিক্ত পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
        • শরীর যেন ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
        • দৈনিক কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখতে হবে।
        • দুশ্চিন্তা পরিহার করতে হবে।

        বাত ব্যথার রোগ নির্ণয়

        বাতের ব্যথা হলে আপনাকে অবশ্যই একজন ইউরোলজিস্ট এর শরণাপন্ন হতে হবে আর এ ক্ষেত্রে বাত ব্যথা হলে রোগ নির্ণয়ের জন্য আপনাকে যে পরীক্ষাগুলো করানো হবে তা হলো-

         

        • Anti ccp antibody
        • LFT
        • URM
        • SCT
        • UPCR
        • CRP
        • RF SERUM
        • ESR
        • CBC
        • ANA/ANF, IFA(HEP-2)

        তবে আপনাকে রিমোটওলজি ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার আপনাকে আরো অন্য পরীক্ষাও দিতে
        পারেন।

        বাত ব্যথার চিকিৎসা

        Methox,Folix, Etorix,Precodil,Dexoforex,Lnbcal-D,Angenta

        OR

        Methotrexate Tablet ,Methotrexate Tablet, FolicAcid Tablet,Rabeprazole – Domperidone Capsule,Calcium citrate +Folinicacid+Vitd3-Tablet, Sulfasalazine-Tablet,Aceclofenac Tablet

        বাত ব্যথার ঔষধের নাম কি

        যাদের বাত ব্যথা রয়েছে তারা সাধারণত অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যথার ওষুধ খেয়ে থাকেন। তাই আপনি যদি ব্যথার ওষুধ খেতে চান এক্ষেত্রে আপনি ডিক্লোমল ট্যাবলেট (Diclomol Tablet) খেতে পারেন। এটি এন্টি ইনফ্লামেটরি বেদনা নাশক একটি ঔষধ। আর এই বেদনা নাশক ঔষধ আপনার ব্যথা,জ্বর, গাট বা জয়েন্টের ফোলা ভাব, শরীরের প্রদাহ উপশম করতে সহায়তা করবে কারণ এই ঔষধটি নন স্টেরয়েডাল ঔষধ যা রিউমাটয়েড আর্থাইটিস এর সাথে জড়িত সকল প্রকার লক্ষণ গুলিকে দমন করবে।

        এবং আপনার অস্টিও আর্থাইটিসের সাথে যুক্ত সকল প্রকার বেদনাদায়ক প্রদাহের মতো উপসর্গগুলি এবং কোমল উপসর্গগুলির জন্য এই ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনি আইবুপ্রোফেন (মট্রিন আইবি, অ্যাডভিল), অ্যাসিটামিনোফেন, টাইলেনল, নেপ্রোক্সেন সোডিয়াম, আলেভ এই ঔষধগুলিও আপনার জয়েন্টের ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করবে। এছাড়াও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউরোলজিস্ট ডাক্তারগণ আপনাকে ঘুমের ঔষধ খাওয়ার সাজেস্ট করবেন – যেমন ট্রিপটিন, জোসাট ইত্যাদি।

        আপনি কখনো অন্যের কথা শুনে বা গুগলে সার্চ করে ঔষধের নাম দেখে ঔষধ খাবেন না মনে রাখবেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খেলে আপনি যে কোন গুরুতর সমস্যার মধ্যে পড়তে পারেন। তাই আপনি যে ওষুধ খান না কেন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপর ওষুধ খাবেন।

        কি খেলে বাত ব্যথা বাড়ে

        ব্যথা বিশেষ করে বাতের ব্যথা মনে হয় মানুষের জীবনের নিত্য দিনের সঙ্গী। এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল যাদের ব্যাথার সমস্যা নেই আর বাতের ব্যথা তো অসহ্য এক যন্ত্রণা। শীতের সময় বাতের ব্যথা অনেক বেড়ে যায় আবার যখন বর্ষা আসে তখন আবহাওয়া স্যাঁতসেতে হয়ে যায় এবং এই সময়ও বাতের ব্যথা প্রচণ্ড বেড়ে যায়। শীত এবং বর্ষা, এই দুই আবহাওয়াতেই বাতের ব্যথা প্রচন্ড বাড়ে। আবার যখন আমাদের বয়স বেড়ে যায় তখন অস্থিগুলো দুর্বল হয়ে যায় যার কারণে ও বাতের ব্যথা অনেক বেড়ে যায়।

         সেই সঙ্গে কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দিতে পারে। যখন এই বাতের ব্যথা বাড়ে তখন মনে হয় কোন খাবারটা খেলে বাতের ব্যথা বাড়বে আর কোনটা খেলে বাড়বে না যদি জানা থাকতো তাহলে সেই খাবারগুলো পরিহার করতাম এবং নিজে একটু সুস্থ জীবন যাপন করতাম। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো বাত ব্যথা হলে আপনি এড়িয়ে চলবেন –

        ডিম

        আমরা প্রতিদিন ডিম খাই। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ডিম থাকবে না এমনটি হতেই পারে না কারণ ডিম হলো পুষ্টির আধার। কিন্তু ডিমের কুসুমে রয়েছে অ্যারাকিডনিক এসিড। একে আবার ফ্যাটি এসিড বলা হয়। আর এই এসিড বাতের ব্যথা অনেক বাড়িয়ে দেয় বিশেষ করে যাদের অস্থি সন্ধির ব্যথা রয়েছে ডিমের কুসুম থেকে তাদের দূরে থাকাই ভালো। এক্ষেত্রে আপনি ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন তবে ডিমের কুসুম আপনাকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে।

        চিনি জাতীয় খাবার

        আপনি যদি বাতের ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলে আজই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিন চিনি জাতীয় খাবার যেমন – পেস্টি, কেক, সোডা কারণ এই খাবারগুলো আপনার আর্থাইটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে তাই এই খাবারগুলো আপনার খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিবেন।

        লাল মাংস

        আপনি আপনার খাদ্য তালিকা থেকে redmit লাল মাংস অবশ্যই কমিয়ে দিবেন তবে বাদ দিতে পারলে ভালো হয়। কারণ এতে রয়েছে পিউরিন নাইট্রাইট আর এই  redmit লাল মাংস ইনফ্লামেশন আরো বাড়িয়ে দিবে যা আপনার ব্যথাকে দ্বিগুণ করে দিবে। এছাড়াও লালমাংশে থাকে টক্সিন গ্লাইকোসেন। আবার লাল মাংসে প্রোটিনের তুলনায় স্যাচুুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। তাই যদি আপনার বাতের ব্যথা থাকে আপনি অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে এগুলো বাদ দিবেন।

        কোমল পানীয়

        বাতের ব্যথা থেকে সুস্থ জীবন যাপন করতে আপনি উচ্চ প্রক্রিয়াজাত খাবার, ভাজা খাবার, অ্যালকোহল, অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার সহ কিছু খাবার এড়িয়ে চলবেন। তাহলে আপনি বাতের ব্যথা থেকে একটু মুক্তি পাবেন।

        আলু

        আলু,মরিচ বা অতিরিক্ত ঝাল, টমেটো, নাইটশেড শাকসবজির পুষ্টি গুন থাকলেও আপনাকে এসব খাবারগুলো বাতের ব্যথায় এড়িয়ে চলতে হবে। আমরা প্রতিটি তরকারিতেই আলু খেয়ে থাকি কিন্তু যাদের গাট ব্যথা বা জয়েন্ট এর ফোলা ভাব রয়েছে তাদের আলু না খাওয়াই ভালো কারণ আলু খেলে এইসব রোগ বেড়ে যায়।

        মিষ্টি দই

        আপনার যদি বাতের সমস্যা থাকে তাহলে আপনি মিষ্টি দই খাওয়া বাদ রাখুন। কারণ মিষ্টি দই খেলে আপনার শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে আর এর প্রধান কারণ হলো মিষ্টি দইয়ে উপস্থিত থাকে transfat নামক একটি উপাদান যা ইউরিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে আপনার গাঁটের ব্যথা বাড়িয়ে দিবে।

        সাদা চাল ও আটা

        আপনার বাতের ব্যথা থাকলে আপনি অবশ্যই সাদা চালের ভাত এবং সাদা আটা খাওয়া কমিয়ে দিবেন। কারণ যখন চাল এবং আটা প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় তখন এর থেকে ফাইবার এবং পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। আর ভাতে থাকে কার্বোহাইড্রেট যা আমাদের শরীরে প্রদাহর সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই আপনি অবশ্যই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অধিক পরিমাণে এগুলো খাওয়া থেকে দূরে থাকুন এবং আপনি লাল আটা এবং অধিক প্রক্রিয়াকরণ ছাড়া চাল খেতে পারেন।

        চিনি

        আপনি বাতের ব্যথায় ভুগে থাকলে অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার বাদ দেন কারণ চিনি খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে সাইটোকাইন তৈরি হবে। আর সাইকোটাইন হল প্রদাহ জনিত প্রোটিন যা গাটের ব্যথার জন্য ক্ষতিকর। তাই আপনি অবশ্যই অতিরিক্ত চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।

        অতিরিক্ত লবণ

        আমরা খাবারের স্বাদ বাড়াতে লবণ ব্যবহার করি আবার আমাদের শরীরের জন্য ও সোডিয়াম প্রয়োজন আর এই সোডিয়ামের প্রধান উৎস হলো লবণ। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার ফলে আমাদের দেহে রিউমা্টেড আর্থারাইটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং শরীরের প্রদাহ বেড়ে যায় যার কারণে বাতের ব্যথা অনেক বেড়ে যায়। তাই বাতের ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে হলে আপনাকে অধিক পরিমাণে লবণ পরিহার করতে হবে।

        দুধ

        আপনার যদি অধিক পরিমাণে বাতের ব্যথা থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই দুধ এড়িয়ে চলতে পারেন কারণ যাদের হিট ট্রান্সপ্লান্ট এর সমস্যা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দুধ এড়িয়ে চলাই উচিত। কারণ হিপ ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার আরো বাড়িয়ে দেয়।

        ঠান্ডা জাতীয় খাবার

        আপনি বাতের ব্যথায় ঠান্ডা জাতীয় কোন খাবার, ঠান্ডা পানীয়, আইসক্রিম, ক্যান্ডি এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কারন এই খাবারগুলোতে চিনি দিয়ে তৈরি হয় এবং অতিরিক্ত মিষ্টি থাকে যা আপনার বাতের ব্যথাকে আরো বাড়িয়ে দিবে।

         শস্য জাতীয় খাবার

        আপনি বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে গম, বার্লির মত খাবার একটু এড়িয়ে চলবেন। কারণ এই খাবার গুলোর দানা আসলে সাদা যাতে রয়েছে গ্লটেন নামক এক প্রকার বিশেষ প্রোটিন যা আপনার বাতের ব্যথাকে অনেক বাড়িয়ে দিবে।

        অ্যালকোহল জাতীয় খাবার

        আপনি অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকা থেকে অ্যালকোহল জাতীয় খাবার বাদ দিবেন এবং আপনি মদ পাণ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন কারণ অ্যালকোহল আর্থাইটিসের ঝুঁকি অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এখন অনেক কোমল পানীয় রয়েছে যেগুলোতে রয়েছে অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল। আর আপনি বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই এই খাবারগুলো থেকে বিরত থাকবেন।

        বিভিন্ন টক ফল

        এমন অনেক ফল রয়েছে যেগুলো আমাদের বাতের ব্যথা বাড়িয়ে দেয় অথচ আমরা সেগুলো জানি না। তাই বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনি অবশ্যই আমড়া জাতীয় ফল, টমেটো, লেবু, শিকড় জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন কারণ এই খাবারগুলো আপনার বাতের ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিবে।

        শেষ কথা

        বাতের ব্যথা খুবই কষ্টদায়ক একটি রোগ আর এই ব্যথা হলে আমরা অস্থির হয়ে যাই। সব সময় মনে হয় কি খেলে বা কি করলে আমরা এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবো। আর এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে আমরা বিভিন্ন খাবার এবং ওষুধ খেয়ে থাকি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধি খাওয়া ঠিক নয় কারণ একেক রোগের একেকটা ঔষধ। ডাক্তারেরা লক্ষণ বুঝে তারপরে ওষুধ দিয়ে থাকেন। আপনারা যে ওষুধে নেটে দেখেন না কেন কখনোই সেটি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তারপরে ওষুধ খাবেন।