বেদাধ্যায়ী যাজ্ঞিক অধ্যাপক ব্রাহ্মণ পিতার অযোগ্য পুত্র রূপে বাণভট্ট কিশোর বয়েসেই দেশান্তর দেখার কৌতুহলেই কয়েকজন কবি কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে গৃহত্যাগ করেন, ভবঘুরে বাণভট্ট অল্প বয়স থেকে নানা দেশ দেখে, নানা বিদ্যাচর্চা করে, বহু জ্ঞানী গুণীর সংস্পর্শে এসে যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। গৃহত্যাগ করলেও বাণভট্ট বিদ্যাচর্চায় বিরত ছিলেন না, অবশ্য তাঁর কৌতুহল লেখাপড়ার চেয়ে বাইরের জগৎ ও জীবন সম্পর্কেই সমাধিক ছিল। তাঁর চেহারা সুন্দর, কথাবলার ভঙ্গিটিও বেশ সুন্দর তাই কখনও নট, কখনও নাট্য নির্দেশক, কখনও পুতুল নাচিয়ে কখনও বা পুরাণ কথকের ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন। কবি বাউন্ডুলে হলেও কদাচ লম্পট স্বভাবের ছিলেন না—নারীজাতি সম্পর্কে তাঁর ছিল অসীম শ্রদ্ধা, নারী দেহকে তিনি দেবমন্দিরের সমান পবিত্র বলে মনে করতেন এবং তাঁর পরিচালনাধীন নাট্য গোষ্ঠীতে স্ত্রীলোকের ছিল যথেষ্ট সম্মান, এমন সুচিশুভ্র মনোভাব ও অধ্যায়নশীল মানসিকতা নিয়ে অবতীর্ণ হলেন স্বাধীন রচনার জগতে। হর্ষচরিৎ ও কাদম্বরী নামে দুখানি অসমাপ্ত রচনার জোরেই সংস্কৃত সাহিত্যে তিনি অক্ষয় আসন লাভ করেছেন।


হর্ষচরিত : বাণভট্ট রচিত একখানি ঐতিহাসিক আখ্যায়িকা, সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম সমকালীন মানবচরিত্র আশ্রয়ে জীবনী রচনা। এই গদ্য রচনাটি আট উচ্ছ্বাস বা অধ্যায়ে রচিত। এর মূল আখ্যায়িকা আরম্ভ হয়েছে বাণভটের রাজ দাক্ষিণ্য লাভের পর থেকে অর্থাৎ জাতিবর্গের অনুরোধে রাম যখন হর্ষচরিত বর্ণনা শুরু করেন শ্রীকণ্ঠ নামে একটি দেশের কথা দিয়ে—


থানেশ্বর নামে এক জনপদের রাজা পুশ্যভূতি বংশের প্রতাপশালী রাজা প্রভাকর বর্ধন। তাঁর দুইপুত্র—রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধন এবং এককন্যা রাজ্যশ্রী, রাজ্যশ্রীর বিয়ে হয় মৌখরী রাজ গ্রহবর্মার সঙ্গে। গ্রহবর্মার প্রতিদ্বন্দ্বী মালব কর্তৃক নিহত হন এবং রাজ্যশ্রী বন্দিনী হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন—এই সংবাদ পেয়ে রাজ্যবর্ধন মালবরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে গৌড়াধিপতি শশাংকের হস্তে নিহত হয়েছে—এই নিদারুণ বার্তা পেয়ে স্বয়ং হর্ষবর্ধন যুদ্ধযাত্রা করেন, পথিমধ্যে আবার সংবাদ পেলেন যে রাজ্যশ্রী কারাগার থেকে পলায়ন করে বিন্ধ্যারণ্যের দিকে যাত্রা করেছেন, হর্ষবর্ধন তখন তাঁর যাত্রাপথ পরিবর্তন করে ভগিনী রাজ্যশ্রীর অনুসন্ধানে বিন্ধ্যাপর্বতে প্রবেশ করেন, তথায় এক বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রমুঘাৎ তিনি জানতে পারলেন যে শোকে বিবশ হয়ে রাজ্যশ্রী অগ্নিতে প্রবেশ করেছেন। হর্ষবর্ধন ত্রস্তপদে অগ্রসর হয়ে দেখতে পেলেন—রাজ্যশ্রী অগ্নিপ্রবেশে সমুদ্যত। হর্ষবর্ধন তাকে সেই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনলেন এবং ভ্রাতা ভগিনীর মিলন হল, গ্রন্থটি আকস্মিক ভাবে এখানেই সমাপ্ত হয়েছে।


‘হর্ষচরিত’ আখ্যাটিতে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক একটি চরিত্রের শৌর্যবীর্য মহত্ত্ব, স্নেহপ্রীতির, বিশেষ করে ভগ্নীপ্রেমের সার্থক পরিচয় দিয়েছেন কবি। সেইসঙ্গে সমকালীন রাষ্ট্র ও সমাজের চিত্র, ধর্ম কর্ম, যুদ্ধ বিগ্রহাদির কথাও নিষ্ঠার সঙ্গে বর্ণনা করেছেন। কবির চিত্রাঙ্কন নৈপুণ্যে ঐতিহাসিক অংশ অনেকটাই আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। তবু শ্রী হর্ষের সমকালীন ঐতিহাসিক যে সকল তথ্য এখানে পরিবেশিত হয়েছে তার মূল্য অসামান্য। পরবর্তীকালে ইতিহাস রচনায় অনেক রচনায় অনেক ঐতিহাসিকই এই আখ্যায়িকাকে স্মরণ করেছেন। অবশ্য হর্ষচরিত্রে বাণভট্ট ইতিহাস লিখতে বসেননি। তিনি কাব্যই রচনা করতে চেয়েছেন এবং সেকাজে তিনি যে সফল হয়েছেন তা বলাই বাহুল্য।



অনার্স বাংলা প্রথম পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা দ্বিতীয় পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা তৃতীয় পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা চতুর্থ পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা পঞ্চম পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা ষষ্ঠ পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা সপ্তম পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর
অনার্স বাংলা অষ্টম পত্রের সব প্রশ্ন উত্তর