বিদ্যাসাগরের রচনাবলী: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) মহাশয়ের প্রধান রচনাবলীর তালিকাটি নিম্নরূপ- ‘বাংলার ইতিহাস’ (১৮৪৮), ‘জীবন চরিত’ (১৮৪৯), ‘বােধােদয়’ (১৮৫১), ‘শকুন্তলা’ (১৮৫৪), ‘কথামালা’ (১৮৫৬), ‘সীতার বনবাস’ (১৮৬০), ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (১৮৬৯)। পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ-ভিন্ন বিভিন্ন বিষয়ে বিচার-বিতর্কমূলক রচনার মধ্যে উল্লেখযােগ্য ‘বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৫), ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৭১-৭৩) ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্যশাস্ত্র বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫১)। বিদ্রুপাত্মক বেনামী রচনা—’অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩), ‘আবার অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩)। বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’ ও স্বরচিত জীবনী-‘বিদ্যাসাগর চরিত্র’।

বিদ্যাসাগরের সমকালীন সামাজিক পটভূমি:

কালের বিচারে বিদ্যাসাগরের অধিকাংশ রচনাই উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধে লিখিত। বিগত শতাব্দীর প্রথম অর্ধের সামাজিক ইতিহাস নানা বিপরীত শক্তির সংঘাতে আলােড়িত। য়ুরােপীয় সত্যতার স্পর্শে তখন আমাদের বহুকালের প্রসুপ্ত চিত্তে একটা নতুন চেতনা, নতুন আলােড়ন হচ্ছিল, কিন্তু এই চেতনা সংগঠিত ও সংহত হয়ে উঠতে পারেনি। নবােদ্ভূত জীবন-চেতনা জাতীয় জীবনে ধীরে ধীরে স্থায়িভাবে যখন সুপ্রতিষ্ঠিত এবং স্বীকৃত হয়েছে তখনই দেখা দিয়েছে সর্বাত্মকভাবে আধুনিক সাহিত্য-সংস্কৃতি গড়ে তােলবার প্রয়াস। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় অর্ধ নতুন সৃষ্টির কাল, নবযুগের পরিচ্ছন্ন, সুস্পষ্ট লক্ষণ এই সময়ের সাহিত্যকৃতিতে সমুজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে। বিদ্যাসাগর আট বৎসর বয়সে কলকাতায় আসেন এবং ১৮৪১ সালে তাঁর ছাত্রজীবন শেষ হয়। অর্থাৎ কলিকাতাকে কেন্দ্র করে বাঙলা দেশে নবযুগের অভ্যুদয়ের কালটিই বিদ্যাসাগরের জীবনেরও প্রস্তুতি পর্ব। কর্মজীবনে প্রবেশের পর থেকে বাঙলা দেশের সর্ববিধ প্রগতিশীল কর্মধারায় তিনিই ছিলেন অন্যতম প্রধান নায়ক।

বাঙলার ইতিহাসের এই পর্ব-সম্পর্কে শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন, “এক্ষণে আমরা বঙ্গ সমাজের ইতিবৃত্তের যে যুগে প্রবেশ করিতেছি, তাহার প্রধান পুরুষ পণ্ডিতপ্রবর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এককালে রামমােহন। রায় যেমন শিক্ষিত ও অগ্রসর ব্যক্তিগণের অগ্রণী ও আদর্শ পুরুষরূপে দণ্ডায়মান ছিলেন এবং তাহার পদভরে বঙ্গসমাজ কাপিয়া গিয়াছিল, এই যুগে বিদ্যাসাগর মহাশয় সেই স্থান অধিকার করিয়াছিলেন।”

এই যুগের বাঙলা সাহিত্যে বাঙলার সাংস্কৃতিক জীবনে এবং সর্বায়ত সমাজভূমিতে বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিত্বের প্রভাব এত ব্যাপকভাবে পড়েছে যে তাকে ‘বিদ্যাসাগর যুগ’ বলাই সঙ্গত। যুগনায়করূপে বিদ্যাসাগর একটি জাতির জীবনধারার গতি পরিবর্তন করে গেছেন। তাই কোন একটি ক্ষেত্রের কাজের পরিমাপের দ্বারা দেশের ওপরে তার প্রভাবের গুরুত্ব বিচার করা সম্ভব নয়।

রচনা পরিচয়: তবুও একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে বাঙলা গদ্যকে সৃষ্টিশীল সাহিত্যের ভাষায় রূপান্তরই তাঁর প্রধানতম স্থায়ী কীর্তি। বিদ্যাসাগরের রচনাবলীর প্রকাশকালের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কর্মজীবনে প্রবেশের পর থেকে প্রায় ধারাবাহিকভাবে তিনি সাহিত্যচর্চা করেছেন। শিক্ষকরূপেই তিনি জীবন শুরু করেছিলেন। শিক্ষকতার কাজ থেকে পরবর্তীকালে অবসর গ্রহণ করলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরূপে বাঙলা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তিনি আমৃত্যু সংযুক্ত ছিলেন। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর কর্মধারার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য বাঙলা-শিক্ষা প্রচলনের প্রচেষ্টা। বাঙলা ভাষার মাধ্যমে সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোেলবার দায়িত্ব গ্রহণ করে উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক রচনার প্রয়ােজন তিনি অনুভব করেন। এটাই তার বাঙলা ভাষাচর্চার মুখ্য প্রেরণারূপে কাজ করেছে। কিন্তু পূর্ববর্তীকালের পাঠ্যপুস্তক রচয়িতার রচনার সঙ্গে বিদ্যাসাগরের মৌলিক পার্থক্য আছে।

প্রথমত, তিনি রচনার বিষয়বস্তু আহরণ করেছেন সংস্কৃত ও ইংরেজী সাহিত্যের চিরায়ত গ্রন্থ থেকে ও তত্ত্বের পরিবর্তে উচ্চতর সাহিত্যরস পবিবেশনই তার উদ্দেশ্য। দ্বিতীয়ত, তিনি সংগৃহীত বিষয়বস্তু স্বাধীনভাবে, নিজের কল্পনাশক্তি-দ্বারা পুনর্গঠিত করে নিজস্ব ভঙ্গিতে পরিবেশন করেছেন। এইজন্যে তার কোন রচনাকেই ঠিক অনুবাদ বলা চলে না। ‘শকুন্তলা’, ‘সীতার বনবাস’, শেক্সপিয়রের ‘কমেডি অব এররস’ অবলম্বনে রচিত ‘ভ্রান্তিবিলাস’ প্রভৃতি রচনাকে মৌলিক সৃষ্টি বলাই সঙ্গত।

কালিদাসের অভিজ্ঞান-শকুন্তলম নাটক-অবলম্বনে রচিত বিদ্যাসাগরের শকুন্তলার এই নিম্নোদ্ধৃত অংশে নারী চরিত্রগুলির কথােপকথনের প্রাণবন্ত চলিত ভাষাশ্রয়ী বাগভঙ্গি, সখীদের হাস্যপরিহাস এবং তাদের পারস্পরিক প্রীতির সম্পর্ক অপূর্ব মাধুর্য ও স্নিগ্ধ সৌন্দর্যে প্রকাশিত হয়েছেঃ “উভয়ের এইরূপ কথােপকথন হইতেছে, ইত্যবসরে, প্রিয়ংবদা হাস্যমুখে অনসূয়াকে কহিলেন, অনসূয়ে! কি জন্য শকুন্তলা সর্বদাই বনতােষিণীকে উৎসুক নয়নে নিরীক্ষণ করে, জান? অনসূয়া কহিলেন, না সখি! জানি না ; কি বল দেখি। প্রয়ংবদা কহিলেন, এই মনে করিয়া, যে, বনতােফিণী যেমন সহকারের সহিত সমাগতা হইয়াছে, আমিও যেন সেইরূপ আপন অনুরূপ রস পাই। শকুন্তলা কহিলেন, এটি তােমার আপনার মনের কথা।” এই নারী চরিত্রগুলি বাঙালি নারীসুলভ কোমলতা, স্নেহমমতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জল। ভবভূতির ‘উত্তররামচরিত’ নাটক ও সংস্কৃত রামায়ণ অবলম্বনে রচিত ‘সীতার বনবাসে’ ও সীতা অশ্রমুখী বাঙালি কুলবধুতে পরিণত হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের জন্য লেখা হিন্দী ‘বেতাল পচ্চিসী’ অবলম্বনে রচিত ‘বেতাল-পঞ্চবিংশতি’ তেও তিনি নিজস্ব কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। উপযুক্ত স্থানে সুললিত তৎসম শব্দ, তদ্ভব ক্রিয়াপদ ও ইডিয়মের ব্যবহারে বিদ্যাসাগরের শব্দকুশলতার পরিচয় মেলে। ‘ভ্রান্তিবিলাসে’ প্রহসনের বিষয়কে কাহিনীর রূপে প্রকাশ করতে বিদ্যাসাগর নিজের মৌলিক কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন। ‘ভ্রান্তিবিলাসে’র রচনারীতি লঘু, সরস ও অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক।

রচনারীতির বৈশিষ্ট্য: রচনাভঙ্গির স্বকীয়তার জন্যই তার রচনাবলী রসােজ্জ্বল। বাঙলা গদ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের ঐতিহাসিক ভূমিকাটি সঠিকভাবে বুঝতে হলে তাঁর রচনাভঙ্গির অনন্যতা বিষয়ে আলােচনা করা প্রয়ােজন। গদ্য বিদ্যাসাগরের পূর্বেও অনেকে লিখেছেন, কিন্তু বিদ্যাসাগরই সর্বপ্রথম বাঙলা গদ্যকে শিল্পসুষমা-মণ্ডিত করে তােলেন। কবিতার মত গদ্যের যে নিজস্ব ছন্দ আছে, বিদ্যাসাগরের পূর্বে আর কোনও বাঙালি গদ্যলেখক আবিষ্কার করতে পারেননি।

এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “বাঙলা ভাষাকে পূর্ব-প্রচলিত অনাবশ্যক সমাসাড়ম্বরভার হইতে মুক্ত করিয়া তাহার পদগুলির মধ্যে অংশ যােজনার সুনিয়ম স্থাপন করিয়া বিদ্যাসাগর যে বাঙলা গদ্যকে কেবলমাত্র সর্বপ্রকার ব্যবহারযােগ্য করিয়াই ক্ষান্ত ছিলেন তাহা নহে, তিনি তাহাকে শােভন করিবার জন্যই সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। গদ্যের পদগুলির মধ্যে একটি ধ্বনিসামঞ্জস্য পালন করিয়া, তার গতির মধ্যে একটা অনতিলক্ষ্য ছন্দশ্রোত রক্ষা করিয়া বিদ্যাসাগর বাঙলা গদ্যকে সৌন্দর্য ও পরিপূর্ণতা দান করিয়াছেন।”

শিল্পের শৃঙ্খলায় নিয়ন্ত্রিত করে তিনি উচ্ছল বাঙলা গদ্যকে যথার্থ সাহিত্য রচনার উপযুক্ত ভাষায় পরিণত করেছেন—এটাই বিদ্যাসাগরের শ্রেষ্ঠতম কীর্তি। তৎসম শব্দ এবং সমাসবদ্ধ পদ বিদ্যাসাগরের রচনায় নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু সংস্কৃত ভাষা থেকে সংগৃহীত উপাদানগুলি তিনি বাঙলা ভাষার নিজস্ব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিন্যস্ত করেছেন। ভাষা তখনই শিল্পসুষমামণ্ডিত হয়, যখন বিষয়বস্তু উপস্থাপনের অতিরিক্ত একটা সৌন্দর্য ভাষাদেহে বিচ্ছুরিত হয়ে ওঠে। আমাদের গদ্যভাষায় এই সৌন্দর্য প্রথম দেখা গেল বিদ্যাসাগরের রচনায়। অপ্রচলিত আভিধানিক শব্দ পরিহার করে প্রচলিত তৎসম শব্দের প্রয়ােগ, ক্রিয়াপদের বৈচিত্র্য সাধন, কমা, সেমিকোলন প্রভৃতি যতিচিহ্নের ব্যবহার বাক্যের ধ্বনিপ্রবাহকে পর্বে পর্বে ভাগ করে ছন্দপ্রবাহ সৃষ্টি এবং শব্দ ও বাক্যাংশ গ্রন্থনে বাক্যগুলির ভারসাম্য রক্ষা তাদের সুসমঞ্জস ও সূক্ষ রূপ নির্মাণ-এইগুলিই বিদ্যাসাগরের গদ্যের বিশিষ্ট গুণ।

মূল্য-বিচার: বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে বিদ্যাসাগরের মূল্য নিরূপণ করতে গিয়ে মনীষী গােপাল হালদার মন্তব্য করেছেন, “বাঙলা গদ্য ১৮৪৩-৫৭-এর মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়। কেউ একা সে কৃতিত্ব দাবী করতে পারেন না ; তথাপি বিদ্যাসাগরকেই বাঙলাগদ্যের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা বলতে হবে ; আর কেউ তা নন, কেরি নন, রামমােহন নন, মৃত্যুঞ্জয়ও নন। বিদ্যাসাগর শিক্ষার পুস্তক রচনায় ও প্রচার গ্রন্থ রচনায় ও জীবনের শ্রেষ্ঠ দান উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু তা নীরস পাঠ্যপুস্তক নয়, যুক্তিসমৃদ্ধ পরিচ্ছন্ন গ্রন্থ, রসাভিষিক্ত চমৎকার রচনা—এই কারণেও তিনি এই কালের যুগপ্রধান হতে পারতেন। তদুপরি, যিনি বিধবা বিবাহের প্রধান কেন, প্রায় একমাত্র প্রবর্তক, যিনি প্রতিটি রচনায় ও প্রচেষ্টায় পুরুষার্থ ও মানবীয় মহত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন, তিনি এ যুগের প্রথম ‘হিউম্যানিস্ট’। তাই নিশ্চয়ই আধুনিক যুগের ‘যুগপ্রধান’ বলে তাকেই গণ্য করা কর্তব্য সমগ্র উনবিংশ শতাব্দীর বাঙলায়ও আর এমন দ্বিতীয় মানুষ নেই।”

নতুন গদ্যরীতির প্রবর্তক: বিদ্যাসাগরের ভাষা সংস্কৃত-নির্ভর সাধুভাষা, কথ্যরীতির ওপরে তিনি নির্ভর করেন নি। কথ্যরীতির গদ্য নিয়ে পরীক্ষা ফোর্ট উইলিয়ম-এর যুগ থেকেই চলে আসছে। কিন্তু এই রীতিতে লিখিত ‘আলালের ঘরের দুলাল’, ‘হতােম পাচার নকশা’র মধ্যে দু-একটা ব্যতিক্রম ভিন্ন বাঙলা সাহিত্যের মূল ধারা সাধুরীতিকে অবলম্বন করেই অগ্রসর হয়েছে। ‘সবুজপত্র’-এর পূর্ব পর্যন্ত বাঙলা সাহিত্যের প্রধান বাহন যে সাধুরীতির গদ্য, তার যথার্থ সূচনা বিদ্যাসাগরের রচনায়। বর্ণনাত্মক গদ্যভাষার মূল কাঠামােটা তিনিই প্রস্তুত করেছিলেন, তাই তাকে ‘বাংলা সাধুভাষার জনক’ বলা যায়। বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে মৌলিকতার অভিযােগ কেউ কেউ উত্থাপন করেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, বিদ্যাসাগর পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা মাত্র, তাঁর রচনা মৌলিক নয়, সবই ইংরেজি অথবা সংস্কৃতের অনুবাদ, সুতরাং বাঙলা ভাষার শ্রেষ্ঠ লেখকের সম্মান তার প্রাপ্য নয়। এই অভিমত বা অভিযােগ অযৌক্তিক।

রাজনারায়ণ বসু সেই বিষয়ে যথার্থই বলেছেন : “অনেকে মনে করেন, বিদ্যাসাগরের উদ্ভাবনী শক্তি নাই, তিনি যাহা লিখিয়াছে, তাহা অনুবাদ মাত্র, কিন্তু যিনি তাহার রচিত ‘সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’ এবং বিধবা-বিবাহ বিচার গ্রন্থ পাঠ করিয়াছেন, তিনি বিদ্যাসাগরের অসাধারণ স্বকপােলরচনা-শক্তি নাই, এমন কখনই বলিতে পারিবেন না। বাঙলা ভাষায় বক্তৃতা করিবার সময় তাহা সমাপনকালে অনেক ইংরেজীওয়ালা অজ্ঞাতসারে বিদ্যাসাগর-রচিত বিধবাবিবাহ সম্বন্ধীয় দ্বিতীয় পুস্তকের উপসংহারের অনুকরণ করিয়া থাকেন। তাহার প্রণীত সীতার বনবাসে ভবভূতির উত্তরচরিত ও বাল্মীকির রামায়ণের কোন কোন অংশ গৃহীত হইয়াছে সত্য, কিন্তু উহাতে তাহার নিজেরও অনেক মনােহর রচনা আছে। উহা তাহার একপ্রকার স্বকপােলকল্পিত গ্রন্থ বলিলে হয়।”