অথবা, বাউল পদাবলির পরিচয় দাও

উত্তর: ‘বাউল’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ‘বাতুল’ শব্দ থেকে। এ নামের তাৎপর্য বিষয়ে পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন বলেছেন, “বহু শতাব্দী ধরিয়া জাতি-পংক্তির বহির্ভূত নিরক্ষর একদল সাধক শাস্ত্রভারমুক্ত মানবধর্মই সাধন করিয়া আসিয়াছেন। তাঁহারা মুক্তপুরুষ, তাই সমাজের কোন বাঁধন মানেন নাই। তবে সমাজ তাঁহাদের ছাড়িবে কেন? তখন তাঁরা বলিয়াছেন, ‘আমরা পাগল, আমাদের কথা ছাড়িয়া দাও। পাগলের তো কোন দায়িত্ব নাই।’ বাউল অর্থ বায়ুগ্রস্ত, অর্থাৎ পাগল।”

বাউলেরা ‘শাস্ত্রভারমুক্ত’ যে মানবধর্মের সাধনা করেছেন, তাকে তাঁরা মানবদেহ ভাণ্ডের মধ্যেই খুঁজে ফিরেছেন, দেহের আদিম ও চিরন্তন আকাঙ্ক্ষাকে মনের সহজ অনুরাগে রাঙিয়ে ডালি দিয়েছেন অনুভবময় ‘মনের মানুষ’-এর দেউলে-নিভৃতে, মনে মনে।

বাউলের গান সেই বাউল সাধনারই অঙ্গ। তাই এ গানের বিষয়বস্তুতে দুটো উপাদান-১. দেহের স্থূল আকাঙ্ক্ষা ও আকুতিকে নিয়মিত করার সাধন প্রয়াস অধিকাংশ বাউল গানে প্রাধান্য পেয়েছে। ২. দ্বিতীয় শ্রেণির সংগীতের উৎস দেহাতীত অনুভব গাঢ়তার কেন্দ্রমূলে। রক্তমাংসের দেহ নিয়ে দেহী যেখানে রূপের অতীত অনুভব-বেদ্যতার মধ্যে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, সেখানকার আনন্দ সৌরভই দুর্লভ দু-একটি বাউল-গীতে ব্যঞ্জনা পেয়েছে;

“ধন্য আমি-বাঁশিতে তোর

আপন মুখের ফুঁক,

এক বাজানে ফুরাই যদি

নাইরে কোন দুখ ।।

ত্রিলোকধাম তোমার বাঁশি,

আমি তোমার ফুঁক্ ।।

ভালমন্দ রন্ধ্রে বাজি,

বাজি নিশুইত রাত।

ফাগুন বাজি, শাঙন বাজি

তোমার মনের সাথ ।।

একেবারেই ফুরাই যদি,

কোন দুঃখ নাই।

এমন সুরে গেলাম বাইজ্যা,

আর কি আমি চাই ।।”