ইয়ং বেঙ্গলদের উন্মেষ ঘটে কোথায়? আলোচনা কর।
উত্তর: ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে মধ্যবিও হিন্দু ঘরের সন্তানেরা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ লাভ করে। এ কলেজে ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ডিরোজিও। ডিরোজিও বয়সে নবীন হলেও অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তার চরিত্রের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো মুক্তচিন্তার চর্চা করা। তিনি জগৎ ও জীবনের নানা সমস্যা, ধর্ম, বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি সবকিছুকেই যুক্তির সাহায্যে গ্রহণ করতেন। ডিরোজিও তার এ মুক্তচিন্তা ছাত্রদের শিক্ষা দিতেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই তাকে ঘিরে একদল অনুসন্ধিৎসু তরুণ ভিড় করে। তারা প্রচলিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন, আচারসর্বস্ব হিন্দুধর্মকে যুক্তির আলোকে দাঁড় করিয়ে বিচারবিশ্লেষণ করতে শেখে। এ দলই ইয়ং বেঙ্গল নামে বাংলা সাহিত্য ও বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ইতিহাসে সমধিক পরিচিত। এ দলের মধ্যে ছিলেন তারাচাঁদ চক্রবর্তী, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, প্যারীচাঁদ মিত্র, রাধানাথ শিকদার, রামতনু লাহিড়ী প্রমুখ প্রতিভাধর তরুণ।
ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠীর তরুণরা তাদের গুরু ডিরোজিওর কাছ থেকে মুক্তচিন্তার শিক্ষা পায় এবং তারা জগৎ ও জীবনকে জানা চেনার জন্য কৌতূহলবোধ করে। ইয়ং বেঙ্গলদের সম্পর্কে প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক বিনয় ঘোষ যথাযথই বলেছেন, “সমাজচেতনার পুরোগামী মুখপাত্র ইয়ং বেঙ্গল দল। ধর্মসংস্কার আন্দোলনের চোরাগলিতে তাদের নবীন উদ্যমের অনেকটা অপচয় হলেও সমাজ সংস্কার আন্দোলনের আবশ্যকতাও তীব্রভাবে তারা অনুভব করেছিলেন। ইয়ং বেঙ্গলের সমস্ত উচ্ছৃঙ্খলতা ও অসংযমের কথা স্বীকার করেও তাদের এ যুগোপযোগী মনোভাবকে অস্বীকার করা যায় না। একদিকে তারা যেমন ভেঙে ছিলেন, অন্যদিকে তেমনি নতুন করে গড়ে তোলার মতনই ভিত রচনা করতেও চেষ্টার ত্রুটি করেননি। তাদের এ মনোভাবটাই ছিল ঐতিহাসিক। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুক্তি ও বুদ্ধির অগম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও প্রতিরোধের মনোভাবকে বাইরে সাহস করে প্রকাশ করার মতন চারিত্রিক দৃঢ়তা ইয়ং বেঙ্গলের ছিল।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment