মাটির বাড়ির দেয়ালে, পাঁচিলে ফ্রেসকো, রিলিফ সমন্বিত যে চিত্র দেখতে পাওয়া যায়, তাই দেয়ালচিত্র হিসেবে পরিচিত। আদিবাসী জনসমাজে— সাঁওতাল, সরাক, মাহাতাে, ভূমিজ, কামার, কুমাের, ডােম, বাউরি প্রভৃতি জাতিগােষ্ঠীর ক্ষেত্রে দেয়ালচিত্রের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। সাঁওতাল লােকপুরাণে গল্পের আকারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে আবশ্যিক আচরণবিধির মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রাচীনকালে শিকারের কাজে পুরুষদের সাফল্য কামনা করে ঘরের দেয়ালে ছবি আঁকত মেয়েরা। এই জাদুবিশ্বাসই ক্রমে সৌন্দর্যবােধের ভাবনায় রূপান্তরিত হয়েছে। সাঁওতাল গৃহে দেয়ালচিত্রের আধারবূপে পিণ্ডা বা পিণ্ডে এবং কাথের কথা উল্লেখযােগ্য। পিণ্ডে দেয়ালের ছবি আঁকার ক্যানভাসের পরিসীমা রচনায় এবং রঙের বৈচিত্র্য স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ।
আর কাথের মধ্যে রয়েছে ফ্রেসকো ও রিলিফ জাতীয় কাজ। রিলিফ তৈরি করা হয় সাধারণত প্রথম গৃহনির্মাণের সময়, আর ফ্রেসকো প্রতি বছরের উৎসব-অনুষ্ঠানের সময় নতুন করে দেয়ালে আঁকা হয়। কাথ বা দেয়াল পুরুষেরা তৈরি করলেও মূলত মহিলারাই দেয়াল চিত্রণের কাজ করতেন। সাঁওতাল বাড়ির দেয়ালে কখনও ধনুকের মতাে কিংবা অর্ধবৃত্তাকার রেখার ক্ৰমআবর্তন দেখা যায়, আবার কোথাও জ্যামিতিক নকশার আকারে পদ্ম, গাঁদা, সূর্যমুখী, গােলাপ; ময়ূর, ঘুঘু, মুরগি, পেঁচা, হাতি, প্রজাপতির ছবি দেখা যায়। গিরিমাটি, গুঁড়াে নীল, আলতা, খড়িমাটি, সিমপাতার রস লাগিয়ে জ্যামিতিক আকার ও ছবিতে বৈচিত্র্য আনা হয়। কোশে কোশে রিলিফের কাজে খণ্ডিত কাহিনিচিত্র ও ইঙ্গিতধর্মী রিলিফের কাজও লক্ষ করা যায়।
Leave a comment