বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা

সূচনা : বাংলাদেশ ঋতু-বৈচিত্র্যের দেশ। এখানে এক এক ঋতুর এক এক রূপ। ঋতুতে ঋতুতে এখানে চলে সাজ বদলের পালা। নতুন নতুন রঙ-রেখায় প্রকৃতি আলপনা আঁকে মাটির বুকে, আকাশের গায়ে, মানুষের মনে। তাই ঋতু বদলের সাথে সাথে এখানে জীবনেরও রঙ বদল হয়। সে-কারণেই বুঝি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ー

জগতের মাঝে কত বিচিত্র তুমি হেー
তুমি বিচিত্র রূপিণী।

ষড়ঋতুর পরিচয় : পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ঋতুর সখ্যো চারটি হলেও বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। এখানে প্রতি দুই মাস অন্তর একটি নতুন ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। ঋতুগুলাে হচ্ছে- গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এরা চক্রাকারে আবর্তিত হয়। আর প্রত্যেক ঋতুর আবির্ভাবে বাপ্পাদেশের প্রকৃতির রূপ ও সৌন্দর্য বৈচিত্র্যময় হয়ে ওঠে।

গ্রীষ্মকাল : ঋতুচক্রের শুরুতেই আসে গ্রীষ্ম। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল। আগুনের মশাল হাতে মাঠ-ঘাট পােড়াতে পােড়াতে গ্রীষ্মরাজের আগমন। তখন আকাশ-বাতাস ধুলায় ধূসরিত হয়ে ওঠে। প্রকৃতির শ্যামল-স্নিগ্ধ রূপ হারিয়ে যায়। খাল-বিল, নদী-নালা শুকিয়ে যায়। অসহ্য গরমে সমস্ত প্রাণিকুল একটু শীতল পানি ও ছায়ার জন্য কাতর হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে কখনাে হঠাৎ শুরু হয় কালবােশেখির দুরন্ত তাণ্ডব। ভেঙেচুরে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায়। তবে গ্রীষ্ম শুধু পােড়ায় না, অকৃপণ হাতে দান করে আম, জাম, জামরুল, লিচু, তরমুজ ও নারকেলের মতাে অমৃত ফল।

বর্ষাকাল : গ্রীষ্মের পরেই মহাসমারােহে বর্ষা আসে। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। দিগ্বিজয়ী যােদ্ধার বেশে বর্ষার আবির্ভাব। মেঘের গুরুগম্ভীর গর্জনে প্রকৃতি থেমে থেমে শিউরে ওঠে। শুরু হয় মুষলধারায় বৃষ্টি। মাঠ-ঘাট পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। প্রকৃতিতে দেখা দেয় মনােরম সজীব। জনজীবনে ফিরে আসে প্রশান্তি। কৃষকেরা। জমিতে ধান-পাটের বীজ রােপণ করে। গাছে গাছে ফোটে কদম, কেয়া, জুই। বর্ষায় পাওয়া যায় আনারস, পেয়ারা প্রভৃতি ফল।

শরৎকাল : বাতাসে শিউলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে আসে শরৎ। ভাদ্র-আশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এ সময় সাদা মেঘ নীল আকাশে তুলাের মতাে ভেসে বেড়ায়। নদীর তীরে তীরে বসে সাদা কাশফুলের মেলা। বিকেল বেলা মালা গেঁথে উড়ে চলে সাদা বকের সারি। সবুজ ঢেউয়ের দোলায় দুলে ওঠে ধানের খেত। রাতের আকাশে জ্বলজ্বল। করে অজস্র তারার মেলা। শাপলার হাসিতে বিলের জল ঝলমল কলমল করে।

তাই তাে কবি গেয়েছেন一

আজিকে তােমার মধুর মুরতি
হেরিনু শারদ প্রভাতে।
হে মাতঃ বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শােভাতে।

শরতের এই অরূপ রূপের জন্যই শরৎকে বলা হয় ঋতুর রানি।

হেমন্তকাল : ঘরে ঘরে নবান্নের উৎসবের আনন্দ নিয়ে আগমন ঘটে হেমন্তের। কার্তিক-অগ্রহায়ণ দুই মাস। হেমন্তকাল। প্রকৃতিতে হেমন্তের রূপ হলুদ। শর্ষে ফুলে ছেয়ে যায় মাঠের বুক। মাঠে মাঠে পাকা ধান। কৃষক ব্যস্ত হয়ে পড়ে ফসল কাটার কাজে। সােনালি ধানে কৃষকের গােলা ভরে ওঠে, মুখে ফোটে আনন্দের হাসি। শুরু হয় নবান্নের উৎসব। হেমন্ত আসে নীরবে; আবার শীতের কুয়াশার আড়ালে গােপনে হারিয়ে যায়।

শীতকাল : কুয়াশার চাদর গায়ে উত্তুরে হাওয়ার সাথে আসে শীত। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল। শীত রিক্ততার ঋতু। কনকনে শীতের দাপটে মানুষ ও প্রকৃতি অসহায় হয়ে পড়ে। তবে রকমারি শাক-সবজি, ফল ও ফুলের সমারােহে বিষন্ন প্রকৃতি ভরে ওঠে। বাতাসে ভাসে খেজুর রসের ঘ্রাণ। ক্ষীর, পায়েস আর পিঠাপুলির উৎসবে মাতােয়ারা হয় গ্রামবাল্লা।

বসন্তকাল : সবশেষে বসন্ত আসে রাজবেশে। ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্তকাল। বসন্ত নিয়ে আসে সবুজের সমারােহ। বাতাসে মৌ মৌ ফুলের সুবাস। গাছে গাছে কোকিল-পাপিয়ার সুমধুর গান। দখিনা বাতাস বুলিয়ে দেয় শীতল পরশ। মানুষের প্রাণে বেজে ওঠে মিলনের সুর। আনন্দে আত্মহারা কবি গেয়ে ওঠেন—

আহা আজি এ বসন্তে
এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে
এত পাখি গায়।

উপসংহার : বাংলাদেশে ষড়ঋতুর এই লীলা অবিরাম চলছে। বিভিন্ন ঋতু প্রকৃতিতে রূপ-রসের বিভিন্ন সম্ভার নিয়ে আসে। তার প্রভাব পড়ে বাংলার মানুষের মনে। বিচিত্র ষড়ঋতুর প্রভাবেই বালাদেশের মানুষের মন উদার ও ভালােবাসায় পরিপূর্ণ।

আরো একটি

বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ।এদেশের মাঠে-ঘাটে কৃষক ফলায় নারায়ণ ধরনের ফসল।কারণ বাংলাদেশের ছয় ঋতুর সমাহো।প্রত্যেকটা ঋতুরই আলাদা আলাদা গোল্ড রয়েছে।প্রত্যেকটা ঋতুর আলাদা আলাদা ফসল উৎপাদনের কৌশল রয়েছে। বিস্তারিত নিচে আলোচনা করব সাথেই থাকুন।

ভূমিকা

অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না কিভাবে বাংলাদেশের ষড়ঋতুর রচনা লিখবেন চিন্তা নয়। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে ষড়ঋতুর রচনা। সম্পূর্ণ সত্যনির্ভর তথ্য নিয়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারেন আজকের আর্টিকেল হতে জেনে নিতে পারেন কিভাবে বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা লিখতে হয়।
এছাড়া বাংলাদেশ এই যে ছয় ঋতুর দেশ এই দেশে কোন ঋতুতে কোন কোন ফসল বেশি উৎপাদন হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করতে পারবেন। আশা করি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আর দেরি না করে মূল আলোচনায় চলে যাওয়া যাক।

ইংরেজিতে ছয় ঋতুর নাম

বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ বাংলা নামে আমরা যেমন ষড়ঋতু চিনি ঠিক তেমনি এর ইংরেজি কয়েকটি নাম আছে প্রত্যেকটি নাম নিচে তুলে ধরা হলো।
  • গ্রীষ্ম – Summer
  • বর্ষা – Rainy-Season
  • শরৎ  – Autumn
  • হেমন্ত  – Late-Autumn
  • শীত – winter
  • বসন্ত – Spring

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা সহজ

প্রিয় পাঠক এখন আলোচনা করব বাংলাদেশের ষড়ঋতু সহজ রচনা আপনাদের সাথে নিম্নে ষড়ঋতুর সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখা হলো
ভূমিকা বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ দেশ মা বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত ও বসন্ত এই ৬ ঋতু। এই ঋতু গুলো প্রতিবছর নিজ নিজ পসরা সাজিয়ে প্রকৃতিতে হাজির হয়। এদেশের প্রকৃতিকে অপরূপ সৌন্দর্যে ভরিয়ে তোলে।
গ্রীষ্মকাল বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এসময়ে সূর্যের খরতাপে মাঠ ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যায়। এই ঋতুতে কালবৈশাখী ঝড় হয়। এরে যেতে আম, জাম ,কাঁঠাল ,লিচু ,জামরুল ,কলা, আনারস ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়। এ সময় নানা রকম ফুল ফোটে গাছে গাছে।

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ২

বর্ষাকাল আষাঢ় মাস এবং শ্রাবণ মাস এই দুই মাস নিয়েই বর্ষাকালের সময়। বর্ষাকাল বৈচিত্র্যময় একটি ঋতু এ ঋতুতে আকাশ কখনো কালো মেঘে ছেয়ে ওঠে।থেমে থেমেই শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি এছাড়া শুকনো মৌসুমে নদী খাল পুকুর ডোবা বিল পানিতে টইটম্বর হয়ে ওঠে।প্রকৃতির গাছ-গাছালি যেন যৌবন ফিরে পায় সবুজে শ্যামলে ভরে ওঠে প্রকৃতির চারপাশ।
কিন্তু কখনো কখনো শুরু হয় প্রচন্ড বৃষ্টি টানা সাত থেকে আট দিন বৃষ্টি হতে থাকে এবং দেখা দেয় বন্যা পরিস্থিতি তাছাড়া বর্ষাকালে অপরূপ সৌন্দর্য হচ্ছে ফুল গাছে গাছে ফুটে উঠে।বিভিন্ন ফুল এ ফুলের সৌরভ মনকে করে তোলে স্নিগ্ধকর গাছে গাছে দেখা যায় চাপা গন্ধরাজ কেয়া কদম ইত্যাদি সুগন্ধি ফুলের সমাহার।
 
শরৎকাল শরৎকাল বলতে ভাদ্র মাস ও আশ্বিন মাস এই দুই মাস নিয়ে গঠিত এই সময় প্রকৃতির এক অন্যরকম রূপ দেখা যায় আকাশে দেখা যায় সাদা মেঘে ভেসে বেড়াচ্ছে নীল আকাশে। আবার রাতের সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে জ্যোৎস্না স্নিগ্ধ এক পরিবেশ আর সকালের শুভ্র মুহূর্তে দেখা যায় সবুজ ঘাসের উপরে শিশির বিন্দু টলমল করে তাছাড়া শিউলি কাশফুল পদ্মফুল শাপলা ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুণ করে তোলে শরৎ কালের এক আলাদাই সৌন্দর্য রয়েছে।
হেমন্ত কাল হেমন্ত কাল এ ঋতু কথা কি বলবো। কার্তিক ও অগ্রহায়ণ এই দুটি মাস নিয়ে গঠিত হেমন্ত কাল এসময় প্রকৃতি এক অন্যরকম রূপ লাবণ্য ছেড়ে ওঠে মাঠে মাঠে দেখা যায়।কৃষকের সোনা ফলা ধান শীতের আমেজ আসতে না আসতে কৃষকের সোনা ফলা ধান গলায় ওঠা শুরু করে নতুন ধানের গন্ধে মম করে মাঠ ঘাট।তাছাড়া হেমন্ত নিয়ে আসে শীতের এক অপূর্ব সৌন্দর্য হেমন্তকে বরণ করে নেয় কৃষকরা তাদের ধান কেটে ঘরে তোলে এবং অতিথি আপ্যায়নে তৈরি করা হয় নানান পিঠা পুলি যা হেমন্তের সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তোলে।
শীতকাল বাংলাদেশে ষড়ঋতুর মধ্যে শীতকাল খুবই সুন্দর একটি ঋতু। এ ঋতুতে মাঠে-ঘাটে দেখা যায় নানান শাক সবজির সমাহার পৌষ এবং মাঘ এই দুই মাস মূলত শীতকাল এসময় শীতল হাওয়া বয়ে যায় উত্তর দিক থেকে পাতা ঝরতে শুরু করে গাছের নদীর পাড় পুকুর ঘাট মাঠে ঘাটে ছেয়ে যায় ঘন কুয়াশা চাদর যা প্রকৃতির এক অপূর্ব সৌন্দর্যের নিদর্শন হিসেবে আমরা দেখতে পাই দেশীয় বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ করা হয় যা দেখতে এবং খেতে দুটোই ভীষণ পুষ্টিকর।
এসময় বাঁধাকপি ফুলকপি গাজর মুলা ,লাউ ,শিম ,দেশী আলু ,টমেটো ,ধনিয়া পাতা ইত্যাদি শাকসবজি পাওয়া যায়। শীতকাল শুধু সবজি চাষের জন্যই নয় বরং বিভিন্ন ফুল গাছের জন্য বিখ্যাত এসময় বিভিন্ন রকমের ফুল গাছে ধরে। যেমন গোলাপ ফুল গাঁদা ফুল রজনীগন্ধা চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি। এই ফুল প্রকৃতির সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুণ করে তোলে।
বসন্তকাল বসন্তকাল অপূর্ব সৌন্দর্যপূর্ণ একটি ঋতু। বসন্তকাল নিয়ে আসে প্রকৃতির এক নতুন সৌন্দর্য। গাছে গাছে ঝরে যাওয়া পাতাগুলো পুনরায় জন্ম নেয় এবং বসন্তের এই সময়টা খুব একটা ঠান্ডাও থাকে না আবার গরমও থাকে না এক কথায় যাকে বলা হয় নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া। এছাড়া গাছে গাছে ফুটে বাহারি ফুল। তার মধ্যে সবচাইতে সৌন্দর্য আকর্ষণীয় ফুল হচ্ছে পলাশ ফুল এ ফুলের সৌন্দর্য আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয় বসন্তের আমেজকে।
বসন্তের গাছগুলোর মধ্যে যেমন রয়েছে শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়া অশোক এ গাছে যেন আগুন লাগে। মৌমাছিরা উড়ে বেড়ায় নিজ আনন্দে সাথে প্রজাপতিরাও সঙ্গ দেয় মৌমাছিদের। গাছের ডালে বসে কোকিলের কুহুতান শব্দ যেন মনকে মাতাল করে তোলে। সুতরাং এক কথায় বলা যেতেই পারে বসন্ত সত্যিই ঋতুর রাজা ঋতুরাজ।
উপসংহার সবশেষে বলতে চাই বাংলাদেশ ছয় ঋতু দেশ। এই ঋতুর সৌন্দর্য বলে শেষ করা যাবে না। বাঙালিয়ানা ভরপুর রয়েছে এই প্রত্যেকটা ঋতুতে। প্রত্যেকটা ঋতু প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য বয়ে নিয়ে আসে। আর আমাদের জীবনকে ভরিয়ে তুলে নানান সৌন্দর্যে। স্বরলিত লাবণ্য ও সৌন্দর্যে অপরূপা আমাদের এই বাংলাদেশ। এই ষড়ঋতুই বাংলাদেশকে করে তুলেছে অতুলনীয় সৌন্দর্যের প্রতীক।

ঋতু কয় প্রকার ও কি কি

ঋতু কয় প্রকার ও কি কি এখন জেনে নেব। বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার একটি দেশ। এ দেশের জলবায়ু এবং আবহাওয়া গত পরিবর্তনের দিক দিয়ে ঋতু মোট ছয় প্রকার। যথা গ্রীষ্মকাল ,বর্ষাকাল শরৎকাল, হেমন্তকাল ,শীতকাল এবং বসন্তকাল এই মোট ছয়টি ঋতু।

কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে

প্রিয় পাঠক এখন জেনে নেব কোন ঋতুতে কোন ফসল ভালো জন্মে। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ এ প্রত্যেকটার ভেতরে আলাদা আলাদা বৈচিত্র রয়েছে। প্রত্যেকটা ঋতুতে আমরা দেখতে পাই আলাদা আলাদা ফসলের সমারাহো। নিম্নে প্রত্যেক ঋতুতে কোন কোন ফসল জন্মে তা আলোচনা করা হলো।
গ্রীষ্মকাল গ্রীষ্মকাল ঋতুর মধ্য যে ফসল ভালো হয় তাহলে বেগুন ,মিষ্টি কুমড়া, করল্লা, লাল শাক, পুঁইশাক, টমেটো, ডাটা শাক, চাল কুমড়া, ঝিঙ্গা ,কাঁচা মরিচ, তরমুজ ,চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স ,ধুন্দল, কাঁকরোল এই সকল সবজি অনেক বেশি ফলন হয়। সকল সবজি চাষ করলে খাদ্য ঘাটতি অনেকটা কমবে। ছাদের টপে, বাসার আঙিনায় এবং মাঠে ব্যাপক পর্যায়ে চাষ করতে পারে এ সকল সবজি। টপের মধ্যে মিষ্টি কুমড়ার বিচি খুব সহজেই রোপন করে দুই মাসের মধ্যে ভালো ফলন পেতে পারবেন।
এতে আপনি দুই মাসেই মিষ্টি কুমড়া খেতে পারবেন।সম্পূর্ণ গ্রীষ্মকাল জুড়ে চাষাবাদ করতে পারবেন এ সকল সবজি যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। সবজি খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী আর তাও যদি হয় নিজেদের চাষকৃত সব সবজি তাহলে তার পুষ্টিগুণ আরো বেশি পাব আমরা। আশা করি বুঝতে পেরেছেন গ্রীষ্মকালীন কোন ধরনের ফসল ভালো জন্মে।
বর্ষাকাল প্রিয় পাঠক বর্ষাকালের শাকসবজি চাষাবাদ এর জন্য উঁচু জমির ভীষণ প্রয়োজন হয়। কারণ এ সময় অতিবৃষ্টিতে আমাদের ফসল নষ্ট হতে পারে। তার জন্য বর্ষাকালে কোন কোন ফসল আপনি চাষ করবেন তার সঠিক ধারণা বা জ্ঞান আপনার থাকতে হবে। আসুন জেনে নেয়া যাক বর্ষাকালীন শাকসবজি সম্পর্কে।
আষাঢ় মাস হতে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত বর্ষাকাল এসময় আপনারা কাঁকরোল চাষ করতে পারেন দো আঁশ এবং বেলে মাটিতে কাঁকরোল চাষ ভালো হয়। এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে আপনি যদি কাঁকরোল চাষ করতে পারেন তাহলে কাকরোলের বাম্পার ফলন আপনি পেতে পারেন।কাকরোল কন্দমূল এবং কাটিং এর সাহায্যে বংশবিস্তার করে থাকে। কাকরোল গাছ লাগানোর সময় ২ থেকে ৩ মিটার দূরত্বে একটি করে গাছ রোপন করতে হবে। কাঁকরোল এর কিছু উন্নতমানের জাত রয়েছে যেমন মণিপুরী, হাঁসা আসামি, ঝুমকা ইত্যাদি। কাঁকরোল গাছের পুরুষ এবং স্ত্রীর অনুপাত ১০ অনুপাত ১ হওয়া প্রয়োজন।
বর্ষাকালে আরো ভালো একটি ফলন আসে বরবটি গাছ হতে।এই গাছটি ফসল খুব ভালো জন্মে বর্ষাকালে। প্রতি শতাংশে বরবটির বীজ লাগে ২০ গ্রাম করে এবং বরবটির বীজ রোপন করার পূর্বে ২ ঘন্টা পানির মধ্য ভিজিয়ে রাখতে হবে। বরবটির রোপন দূরত্ব অবশ্যই ১০০ সেন্টিমিটার থেকে ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে হওয়া প্রয়োজন। এতে বরবটির ফলন বেশ ভালো হয়। ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে আপনি বরবটি তুলে বাজারে বিক্রি করতে পারবেন এবং নিজেও খেতে পারবেন।
বর্ষাকালে আপনি আগাম সিম গাছ চাষ করতে পারেন এ সময়ের গাছ দ্রুত হারে বড় হতে থাকে এবং আপনি ফলন বেশ ভালো পাবেন। আর আগাম সিম গাছ চাষের জন্য আপনি বাজার মূল্য ভালো পাবেন।

এইটা একটি বিজ্ঞাপন এরিয়া। সিরিয়ালঃ ৩

বর্ষাকালে আপনি ঝিঙ্গা চাষ করতে পারেন এই সময়ে ঝিঙ্গা চাষ অনেক ভালো হয় প্রতি শতকে আপনি ১০ থেকে ১২ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হবে। ঝিঙ্গার বীজটি রোপন করার পূর্বে ১৫ থেকে ২০ ঘন্টা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ঝিঙ্গারও অনেক রকমের জাত রয়েছে। বর্ষাকালে ঝিঙ্গা চাষে আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন কারণ বর্ষাকালে ঝিঙ্গা গাছ খুব দ্রুত হাঁড়ে বাড়তে থাকে। ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে আপনি ঝিঙ্গা খেতে পারবেন এবং বাজারেও বিক্রি করতে পারবেন।
এছাড়া বর্ষাকালে আপনি ডাটা চাস অথবা লাল শাক চাষ, কচু চাষ করতে পারেন এর মধ্যে তিন ধরনের কচু আছে মুকি কচু, পানি কচু, লতি রাজ কচু, ঢেঁড়স, বেগুন, করল্লআ বা উচ্ছে ইত্যাদি আপনি বর্ষাকালে চাষ করতে পারেন এতে ফলন ভালো হয়।
শরৎকাল শরৎ কালে সবজি আবাদ লাভজনক কিন্তু জানা নাই সেগুলো কোন সবজি চলুন জেনে নেয়া যাক। ভাদ্র আশ্বিন মাসে অর্থাৎ শরৎ কালে আপনি কাঁচামরিচের চাষ করতে পারেন এতে করে ভালো ফলন পাবেন।বিজলী প্লাস ও বিজলী জাতীয় কাঁচা মরিচের চারা লাগানোর চেষ্টা করবেন।ভাদ্র এবং আশ্বিন মাসে বেগুন চাষ করতে পারেন যদিও তুলনামূলকভাবে সারা বছর যাবত বেগুন চাষ করা যায়।
কিন্তু এই শরৎ কালে বেগুন চাষে ভালো ফল পাওয়া যায় কারণ এর সঙ্গে পোকামাকড়ের উপদ্রব কম থাকে।এছাড়া আশ্বিন মাসে আপনারা রসুন চাষ করতে পারেন। রসুনের চারা রোপনের পূর্বে অবশ্যই পানি জমে কিনা ওরকম জমি নির্বাচন করবে এঁটেল দোআঁশ মাটিতে রসুনের উৎপাদন ভালো হয়। আশ্বিন মাসে আগাম আরো চাষ করতে পারেন এতে ফসল ভালো হতে পারে।
তবে আলু চাষ করার পূর্বে অবশ্যই জমিকে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে প্রস্তুত করে নিতে হবে যেন আলু উৎপাদন বেশি হয়। দু আঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটি আলু চাষের জন্য সবচাইতে উপযুক্ত মাটি হিসেবে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত।
শরৎকালে ধনিয়া পাতা চাষ করেও লাভবান হওয়া যায় এবং অনেক ফলন ভালো হয়। ধনিয়া প্রায় সব ধরনের মাটিতেই কমবেশি চাষ করা যায় তবে সবচাইতে উপযুক্ত মাটি হল দোআঁশ মাটি। আশা করি বুঝতে পেরেছেন শরৎ কালে কোন ফসল ফলিয়ে আপনি বেশি ফলন পাবেন।
 
হেমন্ত কাল এখন জেনে নেব হেমন্ত কালে কোন কোন ফসল ফলিয়ে বেশি লাভবান হওয়া যায়। নভেম্বর হচ্ছে অগ্রহায়ণ মাসের সময় বাংলায় ঋতুর মধ্যে হেমন্তের যে সময় সেটি হচ্ছে অগ্রহায়ণ। এ সময় নানান সবজি বা ফসল ফলিয়ে থাকে কৃষকরা। এখন জেনে নেব আসলে কোন সবজি চাষ করলে বেশি লাভ হওয়া যায়।
যেমন তরমুজ, বেগুন ঢেঁড়স, লাউ চাষ করতে পারেন ভেনার সেট এই জাতের, করল্লআ ফুলকপি বাঁধাকপি ইত্যাদি হেমন্ত কালের আবাদ করে ভালো ফলন আপনি পেতে পারেন। তবে অবশ্যই হাইব্রিড জাতীয় কোন বীজ কোন চারা রোপন করলে বা বপন করলে আপনার ফলন ভালো হবে তা জেনে বুঝে ফসল ফলানোর চেষ্টা করবেন এতে ভালো ফল পাবেন।
শীতকাল স্থির মৌসুমী বাহারে সবজির সমাহো দেখা যায়। প্রত্যেকটি সবজি আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণে ভরপুর। যা আমাদের শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।এখন জেনে নেব শীতকালে আসলে কোন কোন সবজি চাষ বা ফসল চাষ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়।শীতের প্রথমে আমরা ভালো মানের হাইব্রিড জাতীয় টমেটো চারা লাগাতে পারি এই টমেটো চাষ ভীষণ লাভজনক হয় কৃষকের জন্য শীতের এই মৌসুমে।
বেগুন চাষ ভীষণ লাভজনক শীতের মৌসুমে শীতের মৌসুমে শুরুতেই ভালো উন্নত মানের বেগুনের চারা বাজার থেকে কিনে নিয়ে এসে রোপণ করলে এর ভালো ফলন আপনি পাবেন। এছাড়া পেঁপে চাষীদের সময়ে ভীষণ লাভজনক আর এই পেঁপের জাতের মধ্যে সাহি পেঁপে এবং রেড লেডি অন্যতম। এছাড়া লক্ষ্য রাখবেন পেঁপে গাছের আশেপাশে যেন আগাছা না জান পায় তাহলে পেঁপে সাইজ অনেক ছোট হবে এই ছোট ছোট বিষয়গুলো লক্ষ্য করে আপনি পেঁপের ফলন ভালো করতে পারেন শীতের মৌসুমী।
শীতকালীন ঋতুতে লেবুর গাছ রোপন যদি করা থাকে তাহলে তা পরিচর্যা ভালোভাবে করতে পারেন কারণ এ সময় লেবু হতে ভালো ফলন আশা করা যায়।এছাড়া মিষ্টি কুমড়া চাষ করেও আপনি বেশ লাভবান হতে পারবেন। সিম চাষ যদি করতে চান তাহলে অবশ্যই হাইব্রিড জাতীয় সিম বীজ রোপন করতে পারেন এতে শীতের মৌসুমে আপনি ভালো লাভবান হতে পারবেন। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে পারেন যেমন মুলা, কাঁচা মরিচ, ফুলকপি ,গাজর, বাঁধাকপি, লাউ ইত্যাদি শীতের ঋতুতে চাষ করতে পারেন এতে আপনি বেশ লাভবান হবেন।
বসন্তকাল এখন জেনে নিব বসন্তকালে কোন কোন সবজি চাষ করে ভালো ফসল জন্মে। ফাল্গুন এবং চরিত্রের মাসের সময় কে বসন্তকাল বলে।এ সময় প্রকৃতির এক অন্য বৈচিত্র লাবণ্য আমরা দেখতে পাই। নানান ফুলে সেজে ওঠে প্রকৃতি গাছে গাছে হাজারো ফুলের সুবাস ছড়ায়।
বসন্তের ঋতুতেও সবজি চাষ অনেকটা লাভজনক। আসেন জেনে নেয়া যাক বসন্তকালে কোন ফসল সবচেয়ে লাভজনক হয় আমাদের কৃষকদের জন্য। সারা বছর নানান ধরনের শাকসবজি চাষ করে থাকি আমরা বসন্তের এই মৌসুমে উল্লেখযোগ্যভাবে ডাটা শাক, পটল, করল্লা, কলমি শাক, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা, চাল কুমড়া, পটল ,ধুন্দল ইত্যাদি ফসল খুব ভালো উৎপাদন হয় বসন্তের এই ঋতুতে।

কোন ঋতু কৃষিকাজের জন্য উপযোগী

এখন সবশেষে জেনে নেব কোন ঋতু কৃষিকাজের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কৃষি কাজের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু হলো বর্ষার ঋতু। এসময় প্রত্যেকটা ফসলের ফলন ভীষণ ভালো হয়। কারণ তখন গাছ-গাছালিতে পানির কোন অভাব থাকে না বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হওয়াতে ফলন বেশ ভালো হয়। শুধুমাত্র একটু খেয়াল রাখতে হবে একটু উঁচু স্থানে যেন চাষাবাদ করা হয় বর্ষা মৌসুমে।
তাহলেই বাম্পার ফলন হতে পারে চাষ কৃত ফসল। উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতেই পারছেন কোন কোন ফসল কোন কোন ঋতুতে আবাদ করলে আপনি ভাল ফলন পাবেন সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে নিয়ে আপনিও আজ থেকে শুরু করতে পারেন কৃষিকাজ সেটা হোক আপনার বাসার আঙিনায় বাসার ছাদে অথবা মাঠে।

লেখক এর মন্তব্য

উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে বুঝতেই পারছেন ষড়ঋতুর রচনা কিভাবে লিখতে হয়।এছাড়া ঋতু কয় প্রকার ও কি কি, কোন ঋতু কৃষিকাজের জন্য বেশি উপযোগী এবং ইংরেজিতে ছয় ঋতুর নাম।সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং আপনাদের মতামত কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।