ভিশন ২০২১ রূপকল্প : ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ২০২১ সালে জাতীয় আয়ের বর্তমান হিসাব কৃষিতে ২২%, শিল্পে ২৮%, সেবাখাতে ৫০%-এর পরিবর্তে হবে যথাক্রমে ১৫%, ৪০% এবং ৪৫%। ২০২১ সালে বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০% থেকে ১৫% নেমে আসবে। কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮% থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০%। ২০২১ সাল নাগাদ দারিদ্র্যের হার ৪৫% থেকে ১৫% নামবে। ২০২১ সালে গড় আয়ুষ্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত হবে। শিশু মৃত্যুর হার ৫৪% থেকে ১৫%-এ নামিয়ে আনা হবে। সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তােলা হবে।

প্রত্যাশা ও বাস্তবতা : একটি দেশকে ডিজিটালে রূপান্তরের মানে হলাে তাকে ই-স্টেটে পরিবর্তন করা। অর্থাৎ শাসন ব্যবস্থা, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষি ইত্যাদি পরিচালনায় কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে মােবাইল ফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার, ই-লার্নিং, ই-গভর্নেন্স-প্রভূতির সমন্বিত প্রয়ােগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি বিভাগ, জেলা, উপজেলা, গ্রাম। তথ্যপ্রযুক্তি তথা ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে । নেটওয়ার্ক সুবিধার জন্য প্রয়ােজন ফাইবার অপটিকস ক্যাবলকে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া। আর এটা সম্ভব ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে । ই-গভর্নেন্স চালু করা হলে দুনীতির ফাঁকফোকর অনেকাংশে কমে আসবে। দেশের শিক্ষিত বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযােগ পাবে। মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। দূরত্বকে জয় করে মানুষের দোরগােড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই প্রয়ােজন ই-গভর্নেন্স ।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিবন্ধকতাসমূহ : ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে আধুনিক সােনার বাংলা। থাকবে না ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হরতাল, বােমাবাজি, পাচার, দখল, নারী নির্যাতন। কিন্তু এরূপ স্বপ্নীল বাংলাদেশ গড়ার পদে পদে রয়েছে অসংখ্য বাধা। আর্থিক দীনতা, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহীনতা, দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা, পেশিশক্তির দৌরাত্ম, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বিদ্যুতের অভাব, যাতায়াত ও যােগাযােগের অভাব প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতা সে পথকে কণ্টকাকীর্ণ করে রেখেছে। এছাড়া জনগণের সদিচ্ছার অভাব, আত্মকেন্দ্রিক মনােভাব এবং গভীর দেশপ্রেমের অভাবও এ পথকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। ডিজিটাল

বাংলাদেশের সতর্কতা : ডিজিটালাইজেশনকে বিকেন্দ্রীকরণের অর্থে না দেখলে ফাইবার অপটিকস দিয়ে বাংলাদেশ ঘিরে ফেললেও লাভ হবে না। বিকেন্দ্রীকরণ একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের পথে প্রথম সােপান । শিশুদের ৯/১০ বছরের আগে প্রযুক্তি ব্যবহারে যত কম অভ্যস্ত করানাে যায় ততই মঙ্গল। এর চেয়ে বেশি তাকে প্রকৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই জরুরি। কারণ, প্রকৃতি থেকে দূরে রেখে ফার্মের মুরগির মতাে ছােটোবেলা থেকে কম্পিউটারে আসক্ত করে তুললে তার মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে ওঠার আশঙ্কাই বেশি। ডিজিটাল হলাে একটি যান্ত্রিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা কীভাবে চলবে তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন মানুষকেই করতে হবে, যন্ত্র নিজে করবে না। সমাজবিদ, মনােবিদ, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে সমন্বয়ে এমনভাবে পরিকল্পনাটি করতে হবে, যাতে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলাে কাটিয়ে আমরা নির্বিঘ্নে সামনে এগিয়ে যেতে পারি ।

উপসংহার : বর্তমানে ডিজিটাল ব্যবস্থায় ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভিডিও কনফারেন্স, ফাইবার অপটিকস ক্যাবল মানুষের দূরত্বের অবস্থানকে কাছের করে দিয়েছে। ইউনিয়ন থেকে সচিবালয় পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রগুলােতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে যুগােপযােগী ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব । সরকার ও জনগণের সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার অবশ্যই বাস্তবে রূপলাভ করবে জাতি এগিয়ে যাবে । ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে পাব বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকব।