জাতীয় পাখি দোয়েল

ভূমিকা :

“ … কোকিল ডাকে কুহু কুহু

দোয়েল ডাকে মুহু মুহু

নদী যেথায় ছুটে চলে

আপন ঠিকানায়

একবার যেতে দেনা আমার ছােট্ট সােনার গাঁয়। ”

বাংলাদেশ অসংখ্য রূপ-রং-কণ্ঠের পাখির সমারােহে সমৃদ্ধ। যে-পাখির গান আর ডালে ডালে নেচে বেড়ানাে দেখে মনে চঞ্চলতা জাগে তার নাম দোয়েল। বাংলার অতি পরিচিত এক পাখি। দোয়েল বাংলাদেশে গানের পাখি হিসেবেও স্বীকৃত। 

আকৃতি : আকৃতির দিক থেকে দোয়েল ছােট পাখি। এরা সাধারণত ৫-৬ ইঞ্চি লম্বা হয়। স্ত্রী ও পুরুষ দোয়েল রং, আকার ও চেহারায় পৃথক হয়। পুরুষ দোয়েলের মাথা, ঘাড়, গলা, বুক ও পিঠের পালক চকচকে নীলাভ কালাে। নিচের বাকি অংশের পালক সাদা। এদের ডানা কালচে বাদামি রঙের, তার মাঝে পিঠঘেঁষে সাদা ছােপ আর টানা দাগ। লেজ লম্বা, সরু থেকে মােটা। লেজে মাঝের দুটো পালক কালাে, বাকি অংশ সাদা, এদের চোখ ও ঠোট কালাে এবং পা গাঢ় সিসা রঙের। স্ত্রী দোয়েলের রং অনেকটা বাদামি ও ধূসর, দেখতে ময়লা বালির মতাে। দোয়েল সবসময় তার লেজ উঁচু করে রাখে।

খাদ্য ও বাসস্থান : পােকামাকড় দোয়েলের প্রধান খাদ্য। আকারে ছােট বলে এদের তেমন বেশি খাদ্যের প্রয়ােজন হয় না। দোয়েল শস্যকণা খেয়ে থাকে। এদের শিমুল ও মাদার ফুলের মধু খেতেও দেখা যায়। দোয়েল ঝােপঝাড়ে একাকী বা জোড়াসহ বাসা বেঁধে বাস করে। মানুষের বসতের কাছাকাছি দেয়াল কিংবা গাছের গুঁড়িতেও বাসা বাঁধে। দোয়েল গাছের ডালে বাসা বাঁধতে পারে না। এরা খড়-কুটো বা শুকনাে ঘাস জমা করে বাসা তৈরি করে।

প্রকৃতি : দোয়েল চঞ্চল এবং অস্থির প্রকৃতির পাখি। নাচের ঢঙে এরা লাফিয়ে চলে। মাটি থেকে দশ ফুট উচ্চতার ভেতরে এরা অল্প দূরত্বে উড়ে চলে। এদের দীর্ঘক্ষণ শূন্যে ভাসতে দেখা যায় না।

বিশেষত্ব : দোয়েলের বিশেষত্ব এর মােহন সুরে ও সংগীতে । আকর্ষণীয় এই আদুরে পাখিটি সুন্দর সুরে গান করে এবং আস্তে আস্তে শিস দেয়। বসন্তকালে এদের নাচ ও গানে মন ভরে ওঠে। কোকিল সবচেয়ে পরিচিত তবে অতিথি গানের পাখি। আর এরা আমাদের একান্তই প্রকৃতির গানের পাখি। সারাদিন, এমনকি সন্ধ্যার পরও দোয়েল গান গায়।

কেন জাতীয় পাখি : বাংলার প্রকৃতির সঙ্গে দোয়েলের রূপ, রং, স্বভাব, গান মিশে আছে। দোয়েল তার সহজাত চঞ্চলতায় গাছের ডালে বসে যখন গান করে ও শিস দেয়, তখন বাঙালি বাংলার অপার সৌন্দর্য উপভােগ করতে পারে। বাংলার সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির সঙ্গে ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে আছে বলেই দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি।

উপসংহার : বাংলাদেশের সর্বত্র দোয়েল পাখি দেখা যায়। প্রকৃতির প্রতিকূলতা, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যে যে ক্ষতি হচ্ছে, তাতে এ-পাখিও রেহাই পাচ্ছে না। দোয়েল তথা সব পাখির জন্ম, বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।