কী ধরনের বই আমার পড়তে ভালো লাগে

ভূমিকা : গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মাক্সিম গাের্কি বলেছেন, আমার মধ্যে উত্তম বলে যদি কিছু থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী।’ সত্যিকার অর্থেই বই মানুষের মধ্যে ইতিবাচক ভাবনার জন্ম দেয়। মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করে। তাই তাে বই আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। 

আমার বই পড়ার শুরুর কথা : মায়ের কাছ থেকে বর্ণমালা শেখার পর পাঁচ বছর বয়সে আমাকে স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। স্কুলের পাঠ্যবই তখন আমার সঙ্গী হয় । কিন্তু তার অনেক আগে থেকেই আমি বই পড়তাম। ছছাটবেলায় ঠাকুরমার ঝুলি আমাকে খুব আনন্দ দিত। এ গল্পগুলাে আমি নিজে পড়ে যতটা আনন্দ পেতাম, তার চেয়ে অনেক বেশি আনন্দ পেতাম শুনে। এ ছাড়া ঈশপের গল্প, মােল্লা নাসিরউদ্দীনের গল্প, বীরবলের গল্প ও গােপাল ভাঁড়ের গল্প আমার পড়তে ভালাে লাগত। কিন্তু এখন আমি এ রকম বই পড়ি। গােয়েন্দা গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প ছাড়াও আরও নানা রকমের গল্পের বই এখন আমার নিত্যসঙ্গী। 

আমার ভালাে লাগার বই : গােয়েন্দা গল্প পড়তে আমার সবচেয়ে ভালাে লাগে। গােয়েন্দা চরিত্রগুলাের মধ্যে ‘ফেলুদা আমার সবচেয়ে প্রিয়। অমর এ চরিত্রের স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়। ফেলুদাকে নিয়ে সত্যজিৎ রায় অনেকগুলাে গল্প লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে জয় বাবা ফেলুনাথ, কলকাতায় ফেলুদা, বাক্স রহস্য, সােনার কেল্লা, রয়েল বেঙ্গল রহস্য, শেয়াল রহস্য ইত্যাদি। গল্পগুলাে যখন আমি পড়ি, তখন আমার মধ্যে এক রােমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মাঝে মাঝে আমি নিজেকে গল্পের চরিত্র হিসেবেও ভাবতে শুরু করি। ফেলুদার সঙ্গে থাকা তপেসের চরিত্র এ ক্ষেত্রে আমাকে খুবই আকর্ষণ করে। আর জটায়ুর চরিত্র আমাকে আনন্দ দেয়। তবে ফেলুদার চরিত্র এককথায় অসাধারণ। গল্পগুলাে যখন আমি পড়ি, তখন সময় কোন দিক দিয়ে কেটে যায় আমার মনেই থাকে না। সব কাজ ভুলে গল্পগুলাের মধ্যে আমি নিজেকে ডুবিয়ে রাখি। যতক্ষণ একটি গল্প পড়া শেষ না হয়, ততক্ষণ আমি বই ছেড়ে উঠতে পারি না। এক কল্পনার জগতের মধ্যে গল্পগুলাে আমাকে টেনে নিয়ে যায়।

আমার অন্যান্য বইয়ের সংগ্রহ : গােয়েন্দা গল্প ছাড়াও আমার সগ্রহে মুক্তিযুদ্ধের বই, ইতিহাসের বই, সায়েন্স ফিকশন, গণিতের বই ও ম্যাজিক শেখার বই রয়েছে। গােয়েন্দা গল্প পড়ার পাশাপাশি এ বইগুলাে পড়তেও আমার ভালাে লাগে। 

বই পড়ে আমার প্রাপ্তি : আনন্দ পাওয়ার জন্যই আমি মূলত বই পড়ি। তবে গােয়েন্দা গল্পগুলাে আমাকে যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানমনস্ক হতে সাহায্য করেছে। আমার চারপাশের অজানা জগৎ সম্পর্কে আমাকে ধারণা দিয়েছে বই। বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে বই। বই পড়ে আমি মানুষের মন ও তার চিন্তা সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা পেয়েছি। ভবিষ্যতে এ জ্ঞান আমাকে পথ চলতে সাহায্য করবে। আমার পরিবার, বিদ্যালয় ও শিক্ষকদের কাছে আমাকে আদরণীয় করেছে বই। 

উপসংহার : বই আমাকে সব সময় সৎ পথে চলতে সাহায্য করে। আমার মন খারাপ হলে বন্ধুর মতাে আমার পাশে থেকে বই আমাকে সাহায্য করে। বই পড়ে আমি মানুষের জন্য ভালাে কিছু করার প্রেরণা পাই। জ্ঞান ও বুদ্ধিতে মানুষকে শাণিত হতে হলে বইয়ের কোনাে বিকল্প নেই। তাই প্রত্যেকেরই বই পড়া উচিত।