বাংলা রচনা : আমাদের মুক্তিযুদ্ধ

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ
অথবা, মুক্তিযুদ্ধ ও আজকের বাংলাদেশ
অথবা, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
অথবা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ।
অথবা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম 

[সংকেত : ভূমিকা; মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট; মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সংঘটিত আন্দোলন; স্বাধীনতার ঘােষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনা; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন; মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ; পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও চূড়ান্ত বিজয়; উপসংহার ।]

ভূমিকা : বাঙালির জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবােজ্জ্বল ঘটনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই বাঙালি স্বাধীন জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়েই অর্জিত হয় বাঙালির স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা অর্জনের পথ মােটেও সহজ ছিল না। এর জন্য লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে প্রাণ দিতে হয়েছে । তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা। আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছি। এ স্বাধীনতা অর্জন বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা। তাই আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস বেদনাবহুল হলেও গৌরবােজ্জ্বল মহিমায় ভাস্বর।

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট : ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তানের একটি অংশ হিসেবে বাঙালিরা পূর্ব পাকিস্তান লাভ করে । কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাদের দুঃশাসন, শােষণ ও বঞ্চনার মাধ্যমে এদেশকে পাকিস্তানের একটি উপনিবেশে পরিণত করে । কিন্তু বাঙালিরা তা মেনে নেয়নি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে তারা তাদের জাতীয়তাবাদের প্রথম বিজয় সূচনা করে। তারপর আসে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন এবং ৬৬’র ছয়দফা আন্দোলন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ৬ দফা স্বাধিকার দাবির ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ বিপুল ভােটে জয়লাভ করে। বাংলার মানুষের এই বিজয়কে পাকিস্তানি সামরিক সরকার নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। বাঙালি জাতীয়তাবাদকে চিরতরে ধ্বংস করার জন্য দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আপস-আলােচনার নামে প্রহসন চালায়। আলােচনার এক পর্যায়ে হঠাৎ করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘােষণা করলে বাঙালি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা প্রতিবাদ জানানাের উদ্দেশ্যে রাজপথে নেমে আসে। যার ফলে বাঙালির জাতীয় উদ্যানে এক নব অধ্যায় সূচিত হয়। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সারা বাংলায় সর্বাত্মক অসহযােগ আন্দোলন পালিত হয়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জাতির উদ্দেশ্যে যে যুগান্তকারী ভাষণ প্রদান করেন তাতে স্বাধীনতার ঘােষণা। নিহিত ছিল। এরপর ২৫ মার্চ কাল রাতে অতর্কিতে হামলা চালানাে হয় বাঙালির ওপর । অতঃপর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহর থেকে শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে সংঘটিত আন্দোলন : বাংলাদেশকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হলাে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম। এর পূর্বে নানা পর্যায়ে বাঙালি বিভিন্ন সময় ন্যায্য দাবি আদায়ে আন্দোলন পরিচালনা করেছে। এসব আন্দোলনের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখযােগ্য হলাে আমাদের ভাষা আন্দোলন। এটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক অনন্য চেতনাদীপ্ত অধ্যায়। পাকিস্তানের ৫৬%। লােক বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে পাকিস্তান সরকার বাঙালি ও বাংলা ভাষাকে অবহেলা করতে থাকে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র একশ চৌদ্দ দিনের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেলতলায়’ অধ্যাপক আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। এটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম সভা। ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর। এটি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র প্রতিরােধ এবং শুধু উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন সৃষ্টির জন্য তমদুন মজলিসের উদ্যোগে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ভাষা আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালে। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় ঘােষণা করেন, ‘প্রদেশের রাষ্ট্রভাষা কী হবে তা প্রদেশবাসী স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এ ঘােষণার পরই ঢাকায় বিক্ষোভ শুরু হয় এবং ক্রমে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারির পূর্বে বিভিন্ন পথসভা, সমাবেশ ও পতাকা দিবসে বিপুল সাড়া পাওয়া যায় । কিন্তু তৎকালীন সরকার এ আন্দোলন বানচাল করতে তৎপর হয়ে ওঠে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এবং ভাষার দাবিতে রাজপথে পরিচালিত শান্তিপূর্ণ মিছিলে সরকারি পুলিশ গুলি চালিয়ে কয়েকজনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আত্মপ্রকাশ ঘটে যুক্তফ্রন্টের । এই যুক্তফ্রন্টের কাছেই মুসলিম। লীগের শােচনীয় পরাজয় ঘটে এবং পাকিস্তানিদের শাসনের ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে । ভাষা আন্দোলনের পথ পরিক্রমায় সর্বশেষ পর্যায়ে ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৬৫ সালে মৌলিক গণতন্ত্রের নামে আইয়ুব খান এক প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে বাংলার মানুষের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে। এরপর ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে ৩৫ জন বাঙালি সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক একটি মামলা দায়ের করা হয়। এটি হলাে প্রহসনমূলক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। কিন্তু বাঙালিকে তারপরও পাকিস্তান সরকার দমন করতে পারেনি । ৬ দফার সঙ্গে এবার যুক্ত হয় ছাত্রসমাজের ১১ দফা । আইয়ুব সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা, অপরাজনীতি এবং কূটকৌশলের বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বাস্তব বহিঃপ্রকাশ ঘটে ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে। এরই পথ ধরে শুরু হয় ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারিতে ছাত্ররা যে আন্দোলনের সূচনা করে ১৯৬৯ সালের শুরুতে সেটিই গণ-আন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তরের নামে পাকিস্তান সরকারের টালবাহানা জনমনের অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে দেয়। ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানিরা নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় লাভের জন্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয় এবং দেশকে স্বাধীন করে ।

স্বাধীনতার ঘােষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের সূচনা : বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধে যােগদান করেছিল । ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) লক্ষ লক্ষ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশ্যে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন। স্বাধীনতার চেতনায় প্রদীপ্ত বাঙালি জাতির জন্য এ ভাষণ ছিল জাতীয় মুক্তি বা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত সংগ্রামের দিক-নির্দেশনা। বাঙালি জনসমুদ্রকে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানাতে মাত্র ১৮ মিনিটের এ ভাষণই যথেষ্ট ছিল। এর পরের কালাে ইতিহাস সবারই জানা। ২৫ মার্চের রাত বাঙালির জীবনে নিয়ে আসে চরম অশুভ বার্তা। এ রাতেই নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাকবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং গ্রেফতার করা হলাে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করেন । ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তার এ ঘােষণাটি আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হান্নানের কণ্ঠে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয়। এরপর ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘােষণা পাঠ করেন। শুরু হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। গড়ে ওঠে মুক্তিবাহিনী। এ মুক্তিবাহিনী আবার সরকারি পর্যায়ে দুভাগে বিভক্ত ছিল- (১) নিয়মিত বাহিনী এবং (২) অনিয়মিত বাহিনী । নিয়মিত বাহিনীর অন্তর্গত ছিলেন সেসব সদস্য যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী বা ইপিআরের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আর অনিয়মিত বাহিনী গঠিত হয় ছাত্র, যুবক, শ্রমিক, কৃষক ও সকল পর্যায়ের মুক্তিযােদ্ধাদের সমন্বয়ে । বাংলাদেশের অভ্যন্তরেও মুক্তিসেনাদের নিয়ে কয়েকজন বীর বাঙালি গেরিলা বাহিনী সৃষ্টি করেন। সেক্টর এলাকার বাইরে আঞ্চলিক পর্যায়ে যেসব গেরিলা বাহিনী গড়ে ওঠে এগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে, কাদেরিয়া বাহিনী (টাঙাইল), আফসার ব্যাটালিয়ন বা আফসার বাহিনী (ভালুকা-ময়মনসিংহ), হেমায়েত বাহিনী (ফরিদপুর, গােপালগঞ্জ, বরিশাল), রাজনীতিক মতাদর্শভিত্তিক বাহিনী (মুজিব বাহিনী) ইত্যাদি। এভাবে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয় ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন : ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয় ।। রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান হলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মােস্তাক আহম্মদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন কামারুজ্জামান। ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। কর্নেল এমএজি ওসমানীকে প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয় । এই অস্থায়ী সরকারের। অধীনেই পরিচালিত হয় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা এবং প্রবাসী সরকারকে উপদেশ ও পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়। কমিটি গণপ্রজাতন্ত্রী প্রবাসী সরকারকে নানা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করত। ১৯৭১ সালের ১৭। এপ্রিল প্রবাসী বিপ্লবী সরকার আঞ্চলিক কমান্ডারদের নিয়ে গঠন করে একটি ফৌজ এবং সমগ্র দেশকে চারজন দক্ষ সেনা নায়কের নেতৃত্বে চারটি সেক্টরে বিভক্ত করে। মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশের রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে প্রত্যেকটির জন্য একজন। করে সেক্টর কমান্ডারও নিযুক্ত করেন। এভাবেই অস্থায়ী সরকারের তত্ত্বাবধানে নয় মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ তার কাঙিক্ষত লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হয় ।

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণ : ১৯৭১ সনের নভেম্বরের শেষের দিকে মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয়ে ওঠে। ৩ ডিসেম্বর। পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করে। ৪ ডিসেম্বর থেকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনী যৌথভাবে হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়তে শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে স্বীকতি দান করে। ভারত স্থল, নৌ ও বিমান পথে যুদ্ধ শুরু। করে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরাজিত হতে থাকে। ৪ ডিসেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলায় পাকিস্তানি সবগুলাে যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে ১৩ ডিসেম্বরের। মধ্যে বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত হয় ।

পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও চুড়ান্ত বিজয় : ১৪ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ঢাকার মাত্র ১৪ কিলােমিটার দূরে অবস্থান করে । ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও বাঙালি মুক্তিবাহিনী সম্মিলিতভাবে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় পৌঁছে। ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল নিয়াজি তার ৯৪ হাজার সৈন্য নিয়ে অস্ত্রশস্ত্রসহ সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ বাহিনীর অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরােরার নিকট আত্মসমর্পণ করে। ফলে বাংলাদেশের চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হয় ।

উপসংহার : দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ অবশেষে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয় । শত বাধার মুখেও বাংলাদেশের মানুষ থেমে থাকেনি । দৃঢ় প্রত্যয় আর সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে জয় ছিনিয়ে আনতে। বাংলাদেশের মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ থেকে যে চেতনা লাভ করেছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতাে নয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশমাতৃকার টানে বাংলাদেশের মানুষ আত্মত্যাগের যে দৃষ্টান্ত রেখেছে তা ইতিহাসে বিরল । তাঁদের জীবনের বিনিময়েই আজ বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে । তাইতাে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে

সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নােয়াবার নয়।