বাংলা রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
অথবা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারি 


[ সংকেত ; ভূমিকা; মাতৃভাষা; মাতভাষা দিবসের পটভূমি; উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ভাষা আন্দোলনের চেতনা; একাত্তরের স্বাধানতা যুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের চেতনা; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একশ; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোক্তা; আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও একুশ; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও বিশ্বজনীন উপলব্ধি; ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অঙ্গীকার; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দেশপ্রেমের এক অক্ষয় দৃষ্টান্ত; উপসংহার । ]


ভূমিকা : মানুষের মনের ভাব প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম হলাে ভাষা। আর মাতৃভাষার মাধ্যমে মনের ভাৰ স্বতঃস্ফূর্তভাৰে যতটা প্রকাশ করা যায়, অন্য কোনাে ভাষার মাধ্যমে ততটা প্রকাশ করা সম্ভব নয় । তাইতাে বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করেছিল। আর এজন্যই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায় । ভাষার দাবিতে এমন আত্মত্যাগ ইতিহাসে বিরল । তাই দিনটির গুরুত্ব বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও নাড়া দিয়েছিল । সেই লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে । 


মাতৃভাষা : মাতৃভাষা অর্থ মায়ের ভাষা । মানুষ জন্মসূত্রে ভাষা লাভ করে না। মানুষকে তা আয়ত্ত করতে হয়। শিশু মায়ের কাছ থেকে প্রথম যে ভাষা শেখে, তাই তার মাতৃভাষা । আরও সহজভাবে বলা যায়, জন্মের পর একটি শিশু তার মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা আয়ত্ত করে তাকে মাতৃভাষা বলে। আর এটি হলাে একটি জাতির স্বদেশি ভাষা। মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রতিটি জাতি, গােষ্ঠী তার স্বীয় ভাব আদান-প্রদান করে থাকে । 


মাতৃভাষা দিবসের পটভূমি : যুগে যুগে শোষণ-বঞ্চনার শিকার দুঃখিনী বাংলা একসময় রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে ১৯৪৮ সালে এবং চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ‘৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি । ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ মােহাম্মদ আলি জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স (বর্তমানে সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে এক জনসভায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘােষণা দিলে সমগ্র বাঙালি জাতির হৃদয়ে তুমুল আন্দোলনের ঝড় ওঠে। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে পূর্ব বাংলার মানুষ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে পুঞ্জীভূত হতে থাকে বিক্ষোভ । ১৯৪৯ থেকে ‘৫১ সাল পর্যন্ত জোরালাে হয়ে ওঠে ভাষার দাবি । ৫২-এর শুরুতেই এই দাবি আরও প্রবল হয়ে ওঠে। ‘৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন ও সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলন প্রতিহত করতে পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা সংগঠিতভাবে তা অমান্য করলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে শহিদ হয় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা আরও অনেকে। ভাষার দাবিতে বাঙালিরা রাজপথে যেভাবে সেদিন রক্ত ঝরিয়েছিল, ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এমন করে আর কোনাে জাতি রক্ত ঝরায়নি। বাংলার ইতিহাসে সেদিনই সত্যিকার অর্থে বাঙালিরা ভাষাকে যােগ্য সম্মান দিয়ে স্বদেশের প্রতি যথার্থ কর্তব্য পালন করেছিল । মাতৃভাষার এই অক্ষয়। ইতিহাসের প্রাণকেন্দ্র শহিদমিনার বাঙালির হৃদয়ের মানচিত্রে একটি অক্ষয় বিন্দু; যেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির সৰ মিছিল এসে মিলিত হয় ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।


উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ভাষা আন্দোলনের চেতনা : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির চেতনায় যে জাতীয়তাবাদের বুনিয়াদ স্থাপিত হয়, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তার প্রতিফলন ঘটে। পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনতার এগারো দফার ভিত্তিতে পরিচালিত গণঅভ্যুত্থান বাঙালির জাতীয় চেতনাকে আরও বেগবান করে তােলে। ফলে শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের চেতনা । ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চেতনায় বাঙালি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল বলেই একাত্তরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল । কেননা ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময়ই বাঙালি বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানিরা তাদের প্রাণের ভাষাকে কেড়ে নিতে চাইছে। আর তারা পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। সরকারের রাজস্ব আয়ের সিংহভাগই তারা সেখানে ব্যয় করছে। সরকারের উচ্চপদস্থ পদগুলাে তারা দখল করে নিচ্ছে। পূর্বপাকিস্তানকে শােষণ করে শূন্য করে দেবার কৌশল অবলম্বন করছে। ফলে বাঙালি ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকচক্র ক্ষমতা হস্তান্তর করতে টালবাহানা শুরু করে। পূর্বপাকিস্তানিরা তা মেনে নিতে রাজি হয়নি। তারা স্বাধীনতার সংগ্রামে লিপ্ত হয়। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতার। আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেবার জন্য ইয়াহিয়া সরকার ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতের গভীরে ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেয়। তারা বাঙালির ওপর গণহত্যা চালায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, অপরিসীম ত্যাগ এবং ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের এই স্বাধীনতা ও চূড়ান্ত বিজয়। আর বাঙালি এ বিজয়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছিল ১৯৫২ সালের। ভাষা আন্দোলন থেকে । 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে একুশ : ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্যাদা দানের জন্য সংগ্রামী বাঙালি আত্মাহুতি দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল । সেই শহিদ দিবসই আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং প্রতিবছর বিশ্বের বহু দেশে তা পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সাধারণ অধিবেশনের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সেদিন যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘােষণার প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রস্তাবটি ২৬টি দেশের সমর্থনসহ ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশ কর্তৃক উত্থাপিত হয় এবং অধিবেশনে উপস্থিত সব সদস্যের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে প্রস্তাবটি সঙ্গে সঙ্গেই গৃহীত হয়। এ প্রস্তাবের ফলে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেক ভাষাশহিদের রক্তে রাঙানাে অমর একুশ বিশ্ব ইতিহাসে এক নতুন মর্যাদা পেয়েছে। নতুন সহস্রাব্দে বাঙালি জাতির চির গৌরব মহান ভাষা আন্দোলন বিশ্ববাসীর চেতনায় এক নব মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ধারণা সমুন্নত করার লক্ষ্যে ইউনেস্কো। প্রতিবছর এ দিনে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। 


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্যোক্তা : একুশে ফেব্রুয়ারিকে ইউনেস্কো কর্তৃক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার পেছনে কাজ করেছে কানাডার ‘মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দুজন বাঙালি যুবক রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম । তারা একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস। হিসেবে স্বীকৃতি দানের জন্য প্রথমে সংগঠনের দশজন বিদেশিকে নিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে আবেদন জানান। বিষয়টি পাঠানাে হয় ইউনেস্কোতে । কিন্তু সেখান থেকে জানানাে হয় কোনাে সংগঠন নয়, সদস্য দেশ থেকে প্রস্তাব যেতে হবে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ থেকে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোতে পেশ করা হয় এবং পরিণামে তা বাস্তবায়িত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ ঘােষণার খসড়া প্রস্তাব বাংলাদেশ ইউনেস্কোর সাধারণ সম্মেলনের ৩০তম পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে উত্থাপন করে। এ অধিবেশনে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনের সময় বাংলাদেশসহ উদ্যোক্তার ভূমিকা রেখেছে ২৭টি দেশ। এ প্রস্তাবে বলা হয়। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে মাতৃভাষার জন্য অভূতপূর্ব আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং সেদিন যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণার প্রস্তাব করা হচ্ছে। 


আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও একুশ : রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রথম ২১ উদ্যাপিত হয় ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে । ১৯৯২ সাল থেকে ত্রিপুরায় ২১শে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে। তবে সরাসরি একুশের আন্তর্জাতিক মর্যাদার প্রথম দাবি আসে বাংলাদেশের গফরগাঁও থেকে। ১৯৯৭ সালে একুশের এক অনুষ্ঠানে গফরগাঁও থিয়েটার নামক সংগঠন একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মর্যাদার দাবি উত্থাপন করে। ১৯৯৯ সালের একুশের সংকলন ‘প্রচ্ছদ’ ‘বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস চাই, একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই’ স্লোগান মুদ্রিত করে। গফরগাঁওয়ের নাট্যকর্মীরা একুশের বিশ্ব মর্যাদার দাবি করে শােভাযাত্রা বের করেন। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয়, কানাডার ‘মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’-এর কথা। এই সংগঠন ২৯ মার্চ ১৯৯৮ জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ নামে একটি দিবস ঘােষণার প্রস্তাব করেন। এভাবে কেটে যায় একটি বছর। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯ । বাংলাদেশ ন্যাশন্যাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর পক্ষে-এর সচিব। অধ্যাপক কামালউদ্দিন আহমদের স্বাক্ষরসহ ১৭ লাইনের প্রস্তাব ও যৌক্তিকতার গুচ্ছটি প্যারিস পৌঁছে যায়। প্রস্তাবের শেষ লাইনটি ছিল—


‘প্রস্তাব করা যাচ্ছে যে, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যারা নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তাদের স্মরণে এ দিনটি বিশ্বজুড়ে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করার জন্য ঘােষণা দেওয়া হােক।’

ইউনেস্কোর নির্বাহী বাের্ডের ১৫৭তম অধিবেশন এবং ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। অনেক বাধা আসে, কিন্তু সকল বাধা পেরিয়ে ১৬ নভেম্বর, ১৯৯৯ সেই কাক্ষিত ঘােষণা আসে। প্রস্তাবক হিসেবে মূল অধিবেশনে বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের নামও যুক্ত হয়। প্রস্তাবকের সমর্থক হয় ভারত, পাকিস্তানসহ ২৭টি দেশ। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও বিশ্বজনীন উপলব্ধি ; আন্তর্জাতিক স্তরে একশ পেয়েছে অভূতপূর্ব সম্মান। এ সম্মান বাঙালির কাছে নানা তৎপর্য নিয়ে ধরা দেবে এবং বিশ্ববাসীর কাছেও তা বিশেষ পরিচিতি লাভ করবে। সমগ্র বিশ্ব একদিন নিজেদের মাতৃভাষা সম্বন্ধে সচেতন হবে, সর্বোপরি এ দিবসের ইতিহাসকে জানতে গিয়ে জানতে পারবে মাতভাষাকে কীভাবে সম্মান জানাতে হয়। তাছাড়া একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ রূপে ঘােষিত হবার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মাতৃভাষা যে মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মাতৃভাষার অধিকার যে অন্য সব মৌলিক অধিকারের মতাে বিশ্বজনীন এই উপলব্ধি মানবসভ্যতাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অঙ্গীকার : ভাষা চলমান প্রবহমান স্রোতের মতােই তার পথ চলা। এটি। সার্বজনীন, আবহমান ও লােকায়ত । তাই যুগ থেকে যুগে মাতৃভাষার অবাধ ও ব্যাপক চর্চা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই । একই সাথে পৃথিবীর সকল ভাষার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা পােষণের পাশাপাশি আমাদের দেশের ছােটো ছােটো জাতিসত্তার ভাষা ও সংস্কৃতির অবাধ উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। বড়াে ভাষা কর্তক ছােটো ভাষা গ্রাস, অন্য ভাষার রুক্ষ প্রভাবে কোনাে ভাষার বৈশিষ্ট্য ক্ষুন্ন কিংবা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সংস্কৃতির ধারা বিকাশে যত্নশীল হওয়া এবং শুদ্ধ চর্চা ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ভাষার অতীত ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধিশালী করে তােলা আমাদের কর্তব্য। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দেশপ্রেমের এক অক্ষয় দৃষ্টান্ত : ভাষার চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন, যারা বাংলা ভাষাকে বিশ্বে স্বীকৃতি দিতে তৎপর ছিলেন, তাদের দেশপ্রেমের মহৎ দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে পড়েছে আজ জাতিতে জাতিতে। এভাবেই বিভিন্ন জাতি তার ভাষাকে, তার দেশকে, তার ইতিহাসকে কাছ থেকে জানার চেষ্টায় আরও নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। স্বদেশ চেতনা, স্বদেশপ্রেমের জাগরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কাজ করবে এক মাইল ফলক হিসেবে। 


উপসংহার : বাঙালির বাংলা এখন কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়, ফান তার রং ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের সর্বত্র। নিজ নিজ ভাষাকে সম্মান জানাতে বিশ্ববাসী এখন একযােগে ২১শে ফেব্রুয়ারি দিবসটি উদযাপন করে। ভাষার প্রতিবন্ধন আর মর্ম উপলব্ধিতে একুশ যেন এক শানিত চেতনা হয়ে সমস্ত বিশ্বের সব ভাষাভাষীর অন্তরকে নাড়া দিয়েছে ।