নানা সর্গে বা পরিচ্ছেদে বিভক্ত, ঐশী প্রেরণায় অনুপ্রাণিত সুমহান কোনো বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে এক বা একাধিক বীরোচিত চরিত্র কিংবা অতিলৌকিক শক্তি সম্পাদিত নিয়তি নির্ধারিত ঘটনাকে মহাকাব্য বা Epic বলে। এটি বীর রসাত্মক কিন্তু ক্লাসিকধর্মী। এর ভাষা, ছন্দ, কাহিনি এবং গঠন বিন্যাসে বিরাটত্বের জন্ম দেয়। বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্য ধারার শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য মাইকেল মধুসূদন রচিত মেঘনাদবধ কাব্য। তিনি পাশ্চাত্যের সাথে প্রাচ্য ভূমির সংযোগ সাধন করে এটি রচনা করেন। ছন্দ এবং ঘটনার বিন্যাসে এটি শ্রেষ্ঠ ধারায় রচিত। তিনি এ কাব্যে পৌরাণিক কাহিনিকে নবরূপ দিয়েছেন।
মাইকেল মধুসূদনকে অনুসরণ করে পরবর্তীতে হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, অনন্দচন্দ্র মিত্র, যোগীন্দ্রনাথ বসু, কায়কোবাদ এবং ইসমাইল হোসেন সিরাজী মহাকাব্য রচনা করেন।
নবীনচন্দ্র সেন মহাকাব্যের উপযোগী সুবিশাল কাহিনিকে অবলম্বন করে তিন খানা মহাকাব্য রচনা করেন।
রৈবতক (১৮৮৩), কুরুক্ষেত্র (১৮৯৩) এবং প্রভাস (১৮৯৬) এ তিনটি ত্রয়ী মহাকাব্য হিসেবে স্বীকৃত যদিও এ তিনটি মহাকাব্য শ্রেষ্ঠতার বিচারে সাফল্য লাভ করতে পারেনি।
ইসমাইল হোসেন সিরাজী মাইকেলের যান্ত্রিক অনুকরণ করে। স্পেন বিজয় কাব্য (১৯১৪) রচনা করেন। এ কাব্যে তিনি অমিত্রাক্ষর ছন্দের মধ্যে মিত্রাক্ষীর ছন্দের অবতারণা করেছেন। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধকে অবলম্বন করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় কায়কোবাদ ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্যটি রচনা করেন। এভাবে হামেদ আলী- কাশেম বধ, জয়নাল উদ্ধার, সোহরাব বধ, এবং যোগীন্দ্রনাথ বসু, পৃথ্বীরাজ শিবাজী প্রভৃতি মহাকাব্য রচনা করেছেন। এভাবে মাইকেলের হাত ধরে ইতিহাস ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে মতাকাব্যের ধারা বিকাশ লাভ করে। তবে মেঘনাদবধ কাজের ন্যায় অন্যান্য মহাকাব্য পূর্ণাঙ্গ বা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারেনি। তাই সর্বোপরি আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্যের ধারা একটি নব সংযোজন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।
Leave a comment