প্রশ্নঃ বাংলা ভাষায় শব্দ গঠন সম্পর্কে পঠন-পাঠনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।

শব্দগঠনের প্রয়োজন বা শব্দগঠন সম্পর্কে পঠন-পাঠনের প্রয়োজনীয়তাঃ বাংলা ভাষায় শব্দগঠন সম্পর্কে পঠন-পাঠনের প্রয়োজন অপরিসীম। নিম্নে এর কয়েকটি দিক উপস্থাপন করা হলো-

১. শব্দের সংখ্যা যে ভাষায় যত বেশি থাকে সে ভাষা তত সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। শব্দের ভাণ্ডার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন উপায়ে শব্দগঠন করার প্রয়োজন দেখা দেয়৷

২. কোনো নির্দিষ্ট শব্দ কিভাবে গঠিত হয় তা জানলে শব্দটি ব্যাকরণগত কোন শ্রেণিতে পড়ে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়। যেমন— ‘ধর্ম’ শব্দটি বিশেষ্য। এর সঙ্গে বিশেষণবাচক ‘ঈয়’ প্রত্যয় যোগ করায় সৃষ্টি হয়েছে ‘ধর্মীয়’ (অর্থাৎ ধর্ম + ঈয়)। এরকম- আত্ম > আত্মীয়, গোত্র > গোত্রীয়, জাতি > জাতীয়, করণ > করণীয়, কেন্দ্র > কেন্দ্রীয় ইত্যাদি। এভাবে আমরা বিশেষণবাচক শব্দ সম্পর্কে ধারণা করতে পারি।

৩. শব্দগঠনের নিয়ম জানা থাকলে বহুল প্রচলিত শব্দের বদলে নতুন নতুন শব্দগঠন করে সহজ ও শ্রুতিমধুর করে মনের ভাব প্রকাশ করা যায়। যেমন- লোকটির দুরবস্থা (= দুঃ + অবস্থা) জেনে খোকন সাহেব তাকে কিছু অর্থ দিয়ে সাহায্য করলেন; তিনি লোকটির আর্থিক (অর্থ + ইক) মুক্তির জন্য নয়; বরং মানবীয় (মানব + ঈয়) কারণেই তাকে সাহায্য করেছেন।

৪. শব্দগঠনের ফলে বানানে ও উচ্চারণে পরিবর্তন ঘটে। ফলে শব্দগঠন জানা থাকলে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা জন্মে। যেমন-

সন্ধি ঘটিত নিয়মঃ 

দুঃসহ = দুঃ+ সহ

দুর্যোগ = দুঃ + যোগ 

সংকীর্ণ = সম্ + কীর্ণ

উপসর্গ-ঘটিত নিয়মঃ

অবিষদ অথচ সভাসদ

অনুষঙ্গ অথচ সঙ্গ, প্রসঙ্গ 

সুষম অথচ অসম

প্রত্যয় ঘটিত নিয়মঃ

স্থায়ী অথচ স্থায়িত্ব

দায়ী অথচ দায়িত্ব

সহযোগী অথচ সহযোগিতা

ভূগোল > ভৌগোলিক

ইতহিাস > ঐতিহাসিক

উপনিবেশ > ঔপনিবেশিক

৫. শব্দগঠনের ক্ষেত্রে ব্যাকরণের নিয়ম সর্বত্র অনুসৃত হয় না, ক্ষেত্রবিশেষে নিয়মের শিথিল প্রয়োগ ঘটে, সে সম্পর্কেও ধারণা করা যায়। যেমন- উদীয়মান, বিরাজমাन ইত্যাদি শব্দের অনুসরণে গঠিত হয়েছে ‘চলমান’ শব্দটি। (উদীয়মান রাজনীতিবিদগণ দেশের বিরাজমান সংকটের কথা ভেবে চলমান আন্দোলন বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।)

৬. সর্বোপরি ভাষাকে শুদ্ধভাবে বলতে পড়তে লিখতে হলে শব্দগঠন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। কেননা শব্দগঠন জানা থাকলে একদিকে যেমন নতুন নতুন শব্দ সৃষ্টির মাধ্যমে ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, অপরদিকে শব্দের বানান, উচ্চারণ, শুদ্ধি- অশুদ্ধি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা জন্মাবে।