ভূমিকা: আধুনিক বাংলা গদ্যরীতির প্রবর্তক হিসেবে প্রমথ চৌধুরীর (১৮৬৮-১৯৪৬) নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্র পর্বের দ্বিতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ গদ্য শিল্পীদের একজন তিনি। বাংলা গদ্যের এক অভিনব রীতির প্রবর্তন ঘটান তিনি। বাংলা সাহিত্যে সমালোচনার ধারা এবং বাংলা গদ্যের ভাষা ও রচনারীতি সমৃদ্ধ হয়েছে প্রমথ চৌধুরীর তীক্ষ্ণধার, বুদ্ধিদীপ্ত, মার্জিত ও সংহত গদ্য ভঙ্গির প্রভাবে। তিনি ফরাসি সাহিত্যের গদ্য কৌশল বাংলা গদ্যে নিয়ে আসেন। প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যিক জীবনের সূচনাই হয়েছিল সাহিত্য সমালোচনার মাধ্যমে। তাঁর সাহিত্য সমালোচনামূলক প্রবন্ধে তিনি সাহিত্যের গতি, প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, প্রকরণ নানা বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য হাজির করেছেন। এসবের মধ্য দিয়েই প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্য দর্শন সম্পর্কে জানা যায়।

‘সবুজপত্রে’ই প্রমথ চৌধুরীর অধিকাংশ রচনা প্রথম প্রকাশিত হয় পরে গ্রন্থাকারে মুদ্রিত হয়। তাঁর রচনাবলির মধ্যে রয়েছে ‘সনেট পঞ্চাশৎ’ কাব্যগ্রন্থ ‘পদচারণা’ ইত্যাদি। তবে প্রধানত তিনি ছিলেন গদ্যশিল্পী, বিশেষভাবে প্রাবন্ধিক। তাঁর গদ্যরচনাসমূহ-‘তেল নুন লড়ি’ (১৯০৬), ‘বীরবলের হালখাতা’ (১৯১৬), ‘নানা কথা’ (১৯১৯), ‘আমাদের শিক্ষা’ [১৯২০], ‘বীরবলের টিপ্পনী’ (১৯২১), ‘রায়তের কথা’ (১৯২৬), ‘নানা চর্চা’ [১৯৩২], ‘ঘরে বাইরে’ [১৯৩৬], ‘প্রাচীন হিন্দুস্থান’ (১৯৪০), ‘বঙ্গ সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত পরিচয়’ [১৯৩৪], ‘আত্মকথা’ [১৯৪৬] এবং ‘প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে হিন্দু মুসলমান’ [১৯৫৩]। এ রচনাগুলো ছাড়াও তিনি গদ্যশিল্পী হিসেবে অনেকগুলো গল্প রচনা করেছিলেন, নিম্নোক্ত গ্রন্থগুলোতে সেগুলো সংকলিত হয়েছে-‘চার ইয়ারি কথা’ [১৯১৬], ‘আহুতি’ [১৯১৯), ‘নীললোহিতের প্রেম’ [১৯৩৪], ‘ঘোষালের ত্রিকথা’ [১৯৩৭], ‘অনুকথা সপ্তক’ [১৯৩৯)।

প্রমথ চৌধুরী সাহিত্যের ক্ষেত্রে কলাকৈবল্যবাদী মতবাদের অধিকারী ছিলেন। তাঁর সাহিত্য চিন্তায় সামাজিক কল্যাণ, মানবিক আদর্শবোধ ইত্যাদি স্থান পায়নি। সাহিত্যের প্রসাদগুণ ও রসগ্রাহীতাকেই তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। তাঁর মতে- “সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া কারও মনোরঞ্জন করা নয়।” (সাহিত্যে খেলা)

সাহিত্যের কোন সামাজিক উপযোগিতা থাকা বাঞ্ছনীয় নয় বলে তিনি মনে করতেন। সাহিত্যের বিচার সৌন্দর্য; শিল্পকে তিনি শিল্পের মানদণ্ডেই বিচারের পক্ষপাতী ছিলেন। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে সাহিত্য রচনা করলে সাহিত্যের স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয় বলে তিনি মনে করতেন।

“স্বদেশের কিংবা স্বজাতির কোনো একটি অভাবপূরণ করা, কোনো একটি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধন করা সাহিত্যের কাজও নয়, ধর্মও নয়; সে হচ্ছে কার্যক্ষেত্রের কথা। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যকে অবলম্বন করাতে মনের ভিতর যে সংকীর্ণতা এসে পড়ে, সাহিত্যের স্ফূর্তির পক্ষে তা অনুকূল নয়।” (সবুজ পত্রের মুখপত্র)

সাহিত্যের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রমথ চৌধুরীর প্রথম কথা হলো, সাহিত্য পাঠককে আনন্দ দান করবে। তাঁর মতে- “মানব মনের প্রীতি সাধনই কাব্যের একমাত্র utility।” (ভারতচন্দ্র)

জয়দেব, ভারতচন্দ্র কাব্যে অশ্লীলতা-আলংকারিক মত, চিত্রাঙ্গদা, যৌবনে দাও রাজটিকা প্রভৃতি প্রবন্ধে প্রমথ চৌধুরী সাহিত্য সমালোচনার মাধ্যমে সাহিত্যের নানা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি মুক্ত মন নিয়ে সাহিত্যে শ্লীলতা- অশ্লীলতা প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন এসব প্রবন্ধে।

প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন এসব প্রবন্ধে।
“জয়দেব” ও “ভারতচন্দ্র” এ দুটি প্রবন্ধে তিনি বলতে চেয়েছেন এঁরা দু’জনেই শ্লীলতার গণ্ডী রক্ষা করেননি। কিন্তু দু’জনের মধ্যে পার্থক্য আছে। সাহিত্যের শ্লীলতা-অশ্লীলতাকে প্রমথ চৌধুরী সামাজিক মানদণ্ডে বিচার করেননি। এর মধ্যে আর্টের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতিই তাঁর কাছে বড়ো কথা।

“ভারতচন্দ্রের অশ্লীলতার ভিতর art আছে, অপরের আছে শুধু nature।” (ভারতচন্দ্র)

জয়দেবই সেই অপর কবি। তাঁর মতে জয়দেবের কাব্যে যে অশ্লীলতা সেখানে কম আছে কিন্তু আর্ট নেই। জয়দেবের প্রেম দেহলোকের উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। কাব্যের সৌন্দর্য কায়িক নয়; অন্তরলোকের ভাবানুভূতি নির্ভর সৌন্দর্যই কাব্যের সৌন্দর্য। রসাহাক শব্দ, রসাত্মকভাব এ দু’য়ের যথার্থ মিলনের মধ্য দিয়ে কাব্য রচিত হয়; যা পাঠকের মনে কল্পনা উদ্দীপনা জাগ্রত করে। কিন্তু জয়দেবের কাব্যে এসবের ঘাটতি দেখা যায়। জয়দেব পাঠকের মনে কল্পনা প্রতিভা জাগরণের অবকাশ রাখেননি। সবকিছুই ছবি এঁকে বলে দিয়েছেন। কোন কিছুই আভাসে বলেননি।

অন্যদিকে ভারতচন্দ্রের কাব্যে শিল্প আছে। ভারতচন্দ্রের কাব্যের অশ্লীলতা শিল্পে উত্তীর্ণ হয়েছে। কাব্যের শিল্পমান ক্ষুণ্ণ হয়েছে কিনা সেটি প্রাধান্য পেয়েছে শ্লীলতা-অশ্লীলতা বিচারে। কাব্যে “অশ্লীলতা অলংকারিক মত” প্রবন্ধে তিনি বলেছেন- “অশ্লীলতা কাব্যদেহের দোষ, অপর কোন বস্তুর নয়। তাদের বিচার পোয়েটিকস এর অন্তর্ভুক্ত, এথিকস্ এর নয়। (কাব্যে অশ্লীলতা আলংকারিক মত)”

প্রমথ চৌধুরীর শিল্প জিজ্ঞাসার শ্রেষ্ঠ পরিচয় রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা কাব্যের সমালোচনা। তাঁর মতে চিত্রাঙ্গদা মহৎ সাহিত্য। কারণ এটি মানব মনের অনিন্দ্য সুন্দর জাগ্রত একটি স্বপ্ন। মানবমনের জাগ্রত স্বপ্নকে রবীন্দ্রনাথ ভাষা ভাবে। অলংকারের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। কল্পলোক ও বস্তু জগৎ দুই-ই মানব মনের সৃষ্টি। আমাদের জীবনের কতকটা বস্তুজগতের কতকটা স্বপ্নলোকের। স্বপ্নলোককে আকার দেন কবি। শিল্পী বাস্তব সমাজে যা অনৈতিক কাব্যে তা রসের সামগ্রী। প্রমথ চৌধুরীর মতে সাহিত্যের আবেদন মানুষের মনের কাছে, মস্তিষ্কের কাছে নয়। সাহিত্যে বাস্তবিক ন্যায় নীতি গ্রাহ্য নয়। যেমন-

“কাব্যের আবেদন মানুষের Moral sense এর কাছে নয় Spiritual sense এর কাছে।” (চিত্রাঙ্গদা)
প্রমথ চৌধুরীর মতে মানুষকে শিক্ষা দেবার দায়িত্ব শিক্ষকদের। সাহিত্যের উদ্দেশ্য মানুষের কল্পনা প্রতিভাকে জাগ্রত করা, পাঠককে আনন্দ দান করা। প্রাবন্ধিকের ভাষায়- “শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মনকে বিশ্বের খবর জানানো, সাহিত্যের উদ্দেশ্য মনকে জাগানো।” (সাহিত্যে খেলা)

প্রমথ চৌধুরীর মতে, সাহিত্য মানুষের জীবন নিয়েই রচিত হবে। সাহিত্যের উপাদান হবে মানব জীবন ও প্রকৃতি।
সাহিত্যে মানব জীবন নিরপেক্ষ কোনো স্বয়ংসিদ্ধ অস্তিত্ব আছে বলে তিনি মনে করতেন না। তবে মানব জীবনের নিতান্ত প্রাত্যহিক বস্তুগত রূপ নয়, তার আদর্শগত শাশ্বত অর্থাৎ শৈল্পিক রূপই যে সাহিত্যের উপজীব্য সে বিষয়ে তাঁর মতামত স্পষ্ট।

“একথা সত্য যে মানবজীবনের সঙ্গে যার ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ নেই, তা সাহিত্য নয়, তা শুধু বাছল। জীবন অবলম্বন করেই সাহিত্য জন্ম ও পুষ্টি লাভ করে, কিন্তু সে জীবন মানুষের দৈনিক জীবন নয়।” (সবুজপত্রের মুখপত্র)

প্রমথ চৌধুরীর মতে বিরাট মানব জীবন ও প্রকৃতি থেকে উপযুক্ত উপাদান নির্বাচন করে; সেই নির্বাচিত উপাদান মানসলোকে ব্যক্তিগত রূপ-রস, সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা মিশিয়ে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে হবে সাহিত্যে।

প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যে যৌবন ধর্মের প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। মানসিক যৌবনের প্রতিষ্ঠাই প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্য সাধনার উদ্দেশ্য ছিল। তিনি পুরাতনকে আঁকড়ে থাকতে চাননি। তাঁর সাহিত্যাদর্শে যে নবীনত্ব বিদ্রোহ ও অগ্রগতি লক্ষ করা যায় তা সাহিত্যে মানসিক যৌবনচর্চার ফল মাত্র। এজন্য তিনি মুক্ত মনের কথা উল্লেখ করেছেন। আমাদের মনকে মুক্ত রাখতে হবে বিশ্বের জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্পকে আত্মস্থ করার জন্য-

“আমাদের নব মন্দিরের চারিদিকে অবারিত দ্বার দিয়ে প্রাণবায়ুর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের যত আলো অবাধে প্রবেশ করতে। পারবে।” (সবুজপত্র)

ইন্দ্রিয়ের জগতে যে বস্তুরূপ তা থেকে প্রমথ চৌধুরী শিল্পানন্দ লাভ করতে চেয়েছেন এবং তা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। কামলোক থেকে রূপলোকে উত্তীর্ণ হওয়াকেই তিনি জীবনের কর্তব্য বলে মনে করতেন।

“রূপজ্ঞানের প্রসাদে মানুষের মনের পরমায়ু বেড়ে যায়, দেহের নয়। সুনীতি সভ্য সমাজের গোড়ার কথা হলেও সুরুচি তার শেষ কথা। শিব সমাজের ভিত্তি সুন্দর তার অভ্রভেদী চূড়া। (রূপের কথা)

অনেকে মনে করেন যুগধর্মের প্রতিষ্ঠা হওয়া দরকার সাহিত্যে এবং সেটিই সাহিত্যের চরম সাধনা হওয়া উচিত। প্রমথ চৌধুরী এ যুক্তি মেনে নিতে পারেননি। তাঁর মতে, যুগধর্মই- সাহিত্যের উৎকৃষ্ট উপাদান বা উপকরণ নয়। কারণ যুগধর্ম বলে কোন একটি যুগের একটি মাত্র বিশেষ ধর্ম নেই। একই যুগে নানা বিরুদ্ধ মতের পরিচয় পাওয়া যায়। মনকেও কোনো একটি কাল সম্পূর্ণ গ্রাস করতে পারে না। আত্মার এক অংশ কালের অধীন, অপর অংশ মুক্ত ও স্বাধীন।

“কাব্যধর্ম আর্ট প্রভৃতি মুক্ত আত্মার লীলা’। সুতরাং ইতিহাস এই সত্যেরই পরিচয় দেয় যে প্রতিযুগের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সমসাময়িক যুগ পরীক্ষিত ও বিচারিত হয়েছে।”

সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রমথ চৌধুরী আধুনিক চিন্তার অধিকারী হলেও তিনি সাহিত্যে নিরেট বস্তুবাদিতাকে মেনে নেননি। তাঁর মতে বস্তু এবং ভাব উভয়ের যথার্থ সামঞ্জস্য বিধানই সাহিত্য-

“অর্থহীন বস্তু এবং পদার্থহীনভাব এ দু’য়ের কোনটাই সাহিত্যের যথার্থ উপাদান নয়। রিয়ালিজমের পুতুল নাচ এবং আইডিয়ালিজমের ছায়াবাজি উভয়েই কাব্যে অগ্রাহ্য। কাব্য হচ্ছে জীবনের প্রকাশ।… পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিমাত্রই একাধারে রিয়ালিস্ট এবং আইডিয়ালিস্ট।”

করার প্রাণপণ চেষ্টা করা নতুন সাহিত্যিকদের আক্রমণ করার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। মলাট সমালোচনা, শিশু সাহিত্য, বর্তমান বঙ্গসাহিত্য প্রভৃতি প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন। বর্তমান বঙ্গ সাহিত্য প্রবন্ধে বাংলা সাহিত্যের বিস্তৃতি সম্পর্কে সমালোচকদের যে অভিযোগ তা খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন। প্রমথ চৌধুরীর মতে, সাহিত্যের মধ্য দিয়ে মানুষ আত্মপ্রকাশ করে। বিংশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক সৃষ্টির কারণ বাঙালি জাতির জাগরণ এবং আত্মপ্রকাশ করবার ব্যাকুলতা। তাঁর মতে আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে ভালো প্রচেষ্টা। যুগপরিবর্তনের সাথে সাথে সাহিত্যের রূপরীতি বিষয়বস্তু পরিবর্তিত হবেই। সুতরাং পূর্বধারণা বা মানদণ্ডে সাহিত্যকে একইভাবে সবসময় বিচার করা ঠিক নয়।

তবে প্রমথ চৌধুরীর চিন্তার মধ্যে দ্বৈততা দেখা যায়। মাঝে মাঝে ভাবের আবেগে এমন সব কথা বলেছেন পরবর্তীতে অন্য প্রবন্ধে তার বিপরীত কথা বলেছেন। কিন্তু যখন বলেছেন অত্যন্ত মনোগ্রাহী করে বলেছেন।
প্রমথ চৌধুরীর সাহিত্যের ক্ষেত্রে আনন্দসর্বস্ব নীতির (Art for art’s sake) পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি সমস্ত রকমের জড়তা, স্থিরতা, শিথিলতা, নিচেষ্টতার বিরোধী ছিলেন। তিনি সাহিত্যের উপযুক্ত বিষয় নির্বাচন ও ভাবের সাথে আঙ্গিকের সুসামঞ্জস্যের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেছেন তার সাহিত্যাদর্শে।

সাহিত্যে প্রাণসঞ্চারের জন্য তিনি চলিত ভাষাকে সাহিত্যে ব্যবহারের পক্ষে সমর্থনসূচক উক্তি করেছেন।
“লেখকের যদি ভাষাকে সুকুমার করবার চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে তাকে সুস্থ এবং সবল করবার চেষ্টা করেন তা হলে বঙ্গ সাহিত্যে আবার প্রাণ দেখা দেবে।” (মলাট সমালোচনা)

ভাষা যে সাহিত্যের বিষয় অনুযায়ী হওয়া জরুরি এবং সাহিত্যের শিল্পনৈপুণ্যের সৃষ্টিতে ভাষা যে গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টিকেও প্রমথ চৌধুরী তাঁর সাহিত্যাদর্শে উল্লেখ করেছেন। “সুন্দর ভাষা কাব্যসৌন্দর্যের একটি প্রধান অঙ্গ। ছন্দে এবং ভাষায় সর্বপ্রকার শৈথিল্য কবিতার পক্ষে সাংঘাতিক।” (বর্তমান বঙ্গ সাহিত্য)

সুতরাং বলা যায় প্রমথ চৌধুরী তাঁর সাহিত্যাদর্শে আর্টকে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। শিল্পের সৌন্দর্যগুণ ও আনন্দগুণই প্রাধান্য পেয়েছে তাঁর চিন্তায়ই নামের সার্থকতা যথার্থরূপে প্রতিপন্ন হয়েছে তাঁর অম্লমধুর রসযুক্ত কথাসাহিত্যের বিভিন্ন রচনাময়। অসংখ্য পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিষয়বস্তুর আলোচনা প্রসঙ্গে যেসব শুকনো নীরস বিষয়বস্তু এসেছে তা তাঁর বলার ভঙ্গিতে তার মধ্যে প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। বলার ভঙ্গি বলার বিষয়বস্তুকে ছাপিয়ে উঠেছে। সাধু ও চলিত ভাষার তর্কে তাঁর জয়ের চিহ্ন বাংলা গদ্যের সর্বত্র বর্তমান। তাঁর রচনারীতির প্রবাদও বাংলা সাহিত্যে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বাংলা কথ্যরীতির উৎকর্ষ সাধনে বীরবলের প্রভাব স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও অস্বীকার করতে পারেননি। তাই বলা হয় “মার্জিত রুচি, বুদ্ধির দীপ্তি, অপূর্ব বাকচাতুর্য ও স্মিত রসিকতায় প্রমথ চৌধুরীর সমপর্যায়ের লেখক বাংলা সাহিত্যে বিরল।”

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ উপরের লেখায় কোন ভুল থাকে তাহলে দয়া করে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন আমরা সেটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবো, ধন্যবাদ।