“In the great European Drama you the stern realities of life, Lofty passion and heroism of sentiments. With us it is all softness, all romances. We forget the world of reality and dream of Fairylands. Ours are dramatic poems …” –বন্ধুর কাছে লেখা মধুসূদনের এই পত্রে পাশ্চাত্ত্য নাট্যসাহিত্যের কঠোর বাস্তবতা, উচ্চ হৃদয়াবেগ শৌর্য প্রকাশের অসামান্য উৎকর্ষ এবং স্বদেশীয় নাট্যসাহিত্যের কোমল ভাব, দৈন্য, সম্বন্ধে শ্রদ্ধা ও বেদনার এই দ্বৈত মনোভাব অনুভব করা যায়। বাংলা নাটকের দুর্বল খাতে তিনি আনতে চেয়েছিলেন সাগরপারের লবণাক্ত প্লাবন, বীরোচিত গাম্ভীর্য এবং মানুষের বাস্তব জীবন অবাস্তবতার সংঘাতের দ্বান্দ্বিক রূপায়ণ। তিনি ভাবের স্বদেশীয়ত্ব রক্ষা করে, সেইসঙ্গে পাশ্চাত্য নাটকের উপাদান সংগ্রহ করে নাটক লিখতে চেয়েছিলেন –”I may borrow a necktie but not the whole suit.” এই আত্মবিশ্বাসই তার নাটকে স্বাতন্ত্র্য এনেছে।
মধুসূদন দত্তের নাট্য গ্রন্থসমূহ:
(ক) পৌরাণিক নাটক : ‘শর্মিষ্ঠা’ (১৮৫৯), ‘পদ্মাবতী’ (১৮৬০)।
(খ) ঐতিহাসিক নাটক : ‘কৃষ্ণকুমারী’ (১৮৬১)।
(গ) রূপক নাটক : ‘মায়াকানন’ (১৮৭৪), ‘বিষ না ধনুৰ্গুণ’ (অসমাপ্ত)।
(ঘ) প্রহসন : ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ (১৮৬০)।
১৮৫৮ সালে বেলগাছিয়া নাট্যশালায় অভিনীত রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুল সর্বস্ব’ নাটককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সবাসাচী মধুসুদনের “শর্মিষ্ঠা” বাঙালী পাঠকের মনোলোকে পেল প্রবেশের ছাড়পত্র। এতদিন বাংলা নাটক ছিল ভারতচন্দ্রের যাযাবরী উদ্দামতা আর মধ্যযুগীয় সাহিত্যের পরিবেশ শাসিত রুচিনিষ্ঠার ফসল। তা দেখে সত্যসন্ধ কবির আক্ষেপোক্তি–
“অলীক কুনাট্য-রঙ্গে মজে লোকে রাঢ় বঙ্গে
নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।”
আর এর ফলেই মহাভারতীয় যযাতি-শর্মিষ্ঠা দেবযানীর কাহিনীর রূপ ও রেখায় নতুনভাবে জন্ম নিল মধুসূদনের মানস সরোবরে। কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’-এর অপরিচিত আবির্ভাব এখানে যেমন বিদ্যমান তেমনি শেক্সপীয়ারের নাট্যাদর্শও এখানে লক্ষণীয়। নিয়তি-লাঞ্ছিত ‘শর্মিষ্ঠা’র চরিত্র নাটকের মধ্যে অনশ্বর রেখায় উজ্জ্বল। বাংলা নাট্যসন্ধির মুহূর্তে নবসৃষ্টির মাঙ্গলিক গাওয়ার জন্য নাটকটি তৎকালে বিপুলভাবে অভিনন্দিত হয়েছিল। মধুসূদনের এ সম্বন্ধে অভিমত : “I am of opinion that Sarmistha is the best drama we have in our language that it is at once classical, chaste and full of genuine poetry.” কিন্তু গ্রন্থটিতে মধুসূদনের শিক্ষানবিশীর পরিচয় পরিস্ফুট বলে এর ত্রুটিগুলি অনুপেক্ষণীয়–
-
(১) কাহিনীগত ত্রুটি হল সমস্ত ঘটনার দৃশ্যময় উপস্থাপনা বিরলদৃষ্ট। অনেক ঘটনা বাস্তবে না ঘটে যেন কবির মনোজগতে সংঘটিত হয়েছে। যেমন—শর্মিষ্ঠা দেবযানীর বিবাদ নাট্যমধ্যে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার অভিনয়োপযোগী দৃশ্যরূপ অনুপস্থিত।
-
(২) সংলাপজনিত ত্রুটি : সংস্কৃতানুগ সালঙ্করা সংলাপ প্রয়োগের ফলে এই নাটকের স্বাভাবিকতা রক্ষিত হয়নি।
‘শর্মিষ্ঠার’ সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে মধুসূদনের ‘পদ্মাবতী’ নাটকের সূত্রপাত। গ্রীসদেশের ‘Apple of Discord’ পুরাকাহিনী থেকে কাহিনী-অংশ নির্বাচিত। গ্রীক নাটকের জুনো-ভেনাস-প্যালাস-প্যারিস ও হেলেন যথাক্রমে শচী-রতি-মুরজা-ইন্দ্রনীল ও পদ্মাবতী চরিত্রে রূপায়িত হয়েছে। ‘ডিসকর্ডিয়া’ নারদ চরিত্রে রূপান্তরিত। সৃজনীশক্তির গুণে পাশ্চাত্ত্য ও প্রাচ্য নাট্যশিল্প হয়েছে একই পথের অভিসারী। শিল্পসুলভ সংলাপ রচনায় ও প্রণয়তত্ত্বের অপূর্ব বর্ণনা-নৈপুণ্যে নাটকটি কমেডিতে শেষ পর্যন্ত পরিণত। ‘শর্মিষ্ঠার’ সংলাপ-জড়তা এখানে নেই। এই নাটকটি রচনা করতে গিয়ে মধুসূদন উপলব্ধি করেন “No real improvement in the Bengali Drama could be expected until Blank verse was introduced into it.” তাই অমিত্র-ছন্দের উল্লোল গর্জনের ক্ষীণাভাস এ নাটকের মধ্যে আছে। এখান থেকেই অমিত্রাক্ষরের বিচিত্রমুখিনতার যাত্রারম্ভ। ছন্দবৈশিষ্ট্য ও স্বাভাবিক সংলাপে নাটকটি প্রাণবন্ত। কিন্তু এর মধ্যে একটি ত্রুটি লক্ষণীয়। তা হলো, মানব চরিত্রগুলি এখানে যেন স্বাধিকার হারিয়ে ফেলে দেব-দেবীর হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে।
এরপর মধুসূদনের শেষ পূর্ণাঙ্গ নাটক ও বাংলা সাহিত্যে প্রথম ট্র্যাজেডি ‘কৃষ্ণকুমারী’ রচিত হয়। এটি নাট্যকার মধুসূদন-প্রতিভার সর্বশ্রেষ্ঠ অভিজ্ঞান। টডের ‘Anals of Rajasthan’-এর আখ্যায়িকা থেকে কাহিনীর উপকরণ সংগৃহীত হয়েছে। পুরাণের কল্পিত কাহিনী থেকে ইতিহাসের ধূসর জগতে এই তাঁর প্রথম পদক্ষেপ।
ইতিহাসকার ও নাট্যকারের মধ্যে পার্থক্য:
ইতিহাসকার আর নাট্যকারের মধ্যে একটি দূরবেধী পার্থক্য দৃশ্যমান। ঐতিহাসিকের ধ্রুব লক্ষ্য, নিজের ব্যক্তিপুরুষকে নিজের ভাব-বেদনাকে তার সত্যান্বেষণ থেকে নিশ্চিহ্ন করা। তিনি এমন এক ঐতিহাসিক সত্যের সন্ধানী যা বিষয়ধর্মী, কিন্তু বিষয়ের অনুভব-সাপেক্ষিক নয়, অভিজ্ঞেয় কিন্তু অভিজ্ঞতা-বিনির্ভর। পক্ষান্তরে, নাট্যশিল্পী তথা সাহিত্যিক ইতিহাসের নীরস তথ্যের রূপ-রিক্ত ভাবনাকে কালি-কলমের চিত্রাঙ্গনায় চিরন্তন করতে প্রয়াসী। ইতিহাসের মৃত ‘ফসিলে’র মধ্যেও তিনি মানব-মানবীর ‘এক বিন্দু নয়নের জল’ আবিষ্কারে ব্রতী হন। তাঁর জগৎ আনন্দ-বেদনা, আশা-আকাঙক্ষার স্পর্শে স্পন্দিত হয়; অন্তলোক ও বিশ্বলোক তার মধ্যে একাত্ম হয়ে ওঠে। তাই ইতিহাসের দ্বারা সংযম-শাসিত হয়েও তিনি অনেক ক্ষেত্রে ‘আপন মনের মাধুরী মিশায়ে’ চরিত্র ও ঘটনার যোজন বর্জনে নিযুক্ত হন। ভাষার ঈশিত্ব ও প্রসাদগুণে ইতিহাস তখন নান্দনিক গুণে ঋদ্ধ হয়। কালি-কলমের চিত্রাল্পনায় মণ্ডিত সেই ইতিহাসের জগৎ তখন শিল্পসত্যে রূপান্তরিত হয়। জাতপ্রাজ্ঞ মধুসূদনের কল্পনায় ইতিহাস বিকৃত হয়নি।
মধুসূদনের উদ্যোগে উল্লিখিত টডের গ্রন্থটির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে কল্পনামূলক ইতিহাসের ‘ইন্দ্রপ্রস্থ’ রচনার কাজ সূচনা হয়। মধুসূদন থেকে এই ঐতিহাসিক শিল্প-বোধের সূচনা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে বঙ্কিমচন্দ্র, রমেশচন্দ্র, দ্বিজেন্দ্রলাল, ক্ষীরোদপ্রসাদ প্রমুখ প্রতিভার পরিচর্যায় ‘নানামুখী ভাবনায়’ তার বিকাশ ঘটে। এঁরা প্রায় প্রত্যেকেই টডের কিংবদন্তীমূলক কাহিনীর প্রতি আকৃষ্ট হন। টডের মাধ্যমেই তাঁদের ঐতিহাসিকবোধের সাহিত্যিক প্রকাশ ঘটে। প্রসঙ্গক্রমে স্মরণীয়, পাশ্চাত্যে আধুনিক নাট্যকারদের মধ্যেও অনেকে গ্রীসীয় উপকথার স্বর্ণখনি থেকে উপকরণ নিয়েই সমৃদ্ধ নাটক রচনার চেষ্টা করেছেন—-ও নীল (‘Mouring Becomes Electra’), এলিয়ট (The Family Reunion’), কক (‘The Infernal Machine’), সার্ত্র (‘The Flies), রবিনসন জেফার্স (‘Medea’) হমানস্তল (‘Elektra’), জিদ্ (Ajex’), ক্লদেনৎ, ইয়েটস্, এজরা পাউন্ড প্রভৃতি। অবশ্য আধুনিক চিন্তা প্রকাশের প্রয়োজনে এঁদের ফ্রয়েড, ফ্রেজারের কাছেও যেতে হয়েছে।
কৃষ্ণকুমারীতে টডের উপাদান:
টডের গ্রন্থে মুগ্ধ মধুসূদন কেশব গাঙ্গুলীকে লিখেছিলেন—”For two nights, I set up for hours pouring over the tremendous pages of Tod and about 1 A. M. last Saturday, the Muses smiled !” ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকের সূত্র অনুসন্ধানের এই দুঃষ্প্রাপ্য-মুহূর্তটুকুর বর্ণনাদানের পরেই নাট্যকারের স্বচ্ছ স্বীকারোক্তি : “I have made the list of Dramatist personage as short as I could, for I wish to leave no loophole for our manager to escape through” বোঝা যায়, সূতীক্ষ্ণ চিন্তার ছকে সমস্ত নাটকটির কায়ানির্মাণ করা হয়েছিল। তারপরই লক্ষ্য করি প্রতিভার প্রাচুর্য সত্ত্বেও তাঁর মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রকাশ, Historic Tragedy-র মধ্যে স্ত্রী-চরিত্র প্রয়োজনে নয়, ছোটো রাজার ইচ্ছানুযায়ী তার আয়োজন করা হয়েছিল— “If the Chota Raja should grumble about the Females, please tell him I undertake to find 3 out of the 4 !”
নাটকের মূল কাহিনী, উদয়পুর রাজপরিবারের ঘটনা টডের ধারানুযায়ী রচিত হয়। মেবারের অসহায় অবস্থা, দেশরক্ষার জন্য রাণার কৃষ্ণাকে হত্যার আদেশ এবং আত্মবলিদানের মাধ্যমে কৃষ্ণার মৃত্যুর ঘটনা ইতিহাসপ্রসিদ্ধ। তবে কৃষ্ণার মৃত্যু বর্ণনায় নাট্যকার স্বকীয়তার পরিচয় দিয়েছেন। খড়গাঘাতে কৃষ্ণার মৃত্যু চমকপ্রদ এবং এর মধ্য দিয়ে কৃষ্ণার আত্মোৎসর্গের গৌরব এবং বেদনার বাণী উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। কিন্তু ‘রাজস্থানে’ আছে কৃষ্ণা আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে—একবার নয়, তিনবার। তিন রকম বিষের ক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর, চতুর্থবার মারাত্মক বিষের প্রয়োগ ক্রিয়ায় তার মৃত্যু ঘটে। টডের সংবেদী ভাষায় : ‘She received it with a smile, wished the scene over, and drank it. The desires of barbarity were acomplished, She slept, a sleep from which she never awoke.” Rajasthan (1914) Vol.1.P. 369. কৃষ্ণার শোকে তার মাতার মৃত্যুর ঘটনা ইতিহাসে বর্ণনা করা হয়েছে। নাটকেও অহল্যা দেবীর “জন্মের মতন বিদায় নেবার কথা” উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য কেশব গাঙ্গুলীকে লেখা চিঠি থেকে জানা যায় “the poor queen also dies but behind the scenes.’ কৃষ্ণকুমারী কাহিনীতে একমাত্র চমকপ্রদ মৃত্যু ছাড়া নাটকীয় উপাদান বিরল। সম্ভবত সেই কারণে মধুসূদন লিখেছিলেন : “The story of Krishna, though tragic is barren of incidents”. কৃষ্ণার রোমান্টিক নায়িকারূপ, মানসিংহের প্রতি তার অনুরাগ, সঙ্গীতে আসক্তি, উদ্যান-প্রীতি নাট্যকারের কবি-কল্পনার সোনালী ফসল।
‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকে, ভীমসিংহ, কৃষ্ণকুমারী, অহল্যা দেবী, জগৎসিংহ ঐতিহাসিক চরিত্র। কৃষ্ণকুমারী এখানে সমস্ত সদ্গুণাবলীর আকর। চঁাদেও কলঙ্ক অনায়াসলভ্য, সূর্যমণ্ডলীতেও ক্ষত, কিন্তু কৃষ্ণা শুভ্র নিরঞ্জন, ভীমসিংহের সাজানো বাগানের সবচেয়ে সুন্দর, পবিত্র ও মালিন্যমুক্ত পুষ্প। জগৎসিংহ কিছুটা লঘুচপল। বলেন্দ্র সিংহ আপাতচপল, কিন্তু শেষাংশে তাঁর নিরুপায় অবস্থা আশ্চর্য সকরুণ, স্নেহ ও কর্তব্যের যুগ্ম দ্বন্দ্বে ক্ষত বিক্ষত। এখানে তিনি যেন অভিশপ্ত। কৃষ্ণা-জননী অহল্যা প্রথম থেকেই বিষণ্ণ বেদনায় নিষ্প্রভ। কাহিনীর শেষে তাঁর “মহারাজ, তুমি ও হাত দিয়ে আমাকে ছুঁও না, তোমার হাতে আমার কৃষ্ণার রক্ত লেগে আছে” উক্তি, জীবনের গভীরতম সত্যে মর্মস্পর্শী। আপন সাম্রাজ্যের ভগ্নস্তূপের উপর দণ্ডায়মান ভীমসিংহের স্বজনহীন রাজপুরীর দিকে তাকিয়ে ‘হা কৃষ্ণা! হা কৃষ্ণা! হা কৃষ্ণা!’ বলে বজ্র-হৃদয়ের যে অতলস্পর্শী রিক্ততা, তা যেন অনাবৃষ্টির দগ্ধ প্রান্তরের রৌদ্রজ্বালাময় আকাশের দিকে তাকিয়ে কোনো এক নিষ্পত্র বনস্পতির ভগ্নহৃদয়ের অন্তহীন হাহাকার!
কৃষ্ণকুমারীতে সংস্কৃত নাটকের উপাদান:
নাটকের উপকাহিনী জয়পুরের ঘটনা। বিলাসবতী, মদনিকা, ধনদাস এবং উদয়পুরের তপস্বিনীর কায়ানির্মাণে ইতিহাস নয়, নাট্যকারের কল্পনার ছায়াই অবলম্বন। অবশ্য শূদ্রকের ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকের বসন্তসেনা, মদনিকা ও শকারের অলক্ষ্য প্রভাব সম্ভবত পড়েছে। বিলাসবতী বসন্তসেনার মত বারবিলাসিনী নারী, তবু সে অকৃত্রিম প্রণয়ে অচঞ্চলা ও প্রিয়তমের কল্যাণ কামনায় নিয়োজিতা। চরিত্রটি প্রাণের সতেজ উজ্জ্বলতায় পরিপূর্ণ। বিলাসবতীর নাটকে আগমন কাহিনীতে জটিলতা সৃষ্টির প্রয়োজন ঘটেছে। মদনিকার চক্রান্তের অন্তরালেও তারই স্বার্থ-সংসক্তি স্মরণীয়। বিলাসবতী চরিত্রটিও শুধুমাত্র নাট্যকারের কল্পনার স্বয়ংসিদ্ধ সৃষ্টি নয়, “This জগৎসিংহ of জয়পুর had a favourite mistress. Tod gives har name as the ‘Essence of Camphor’, I think we may bring her in and allow her jealousy full play…” এ নাটকে তপস্বিনীরও অস্তিত্ব অপ্রয়োজনীয় নয়। উদয়পুরের দুর্ভাগ্যের দিনে রাজপরিবারের মনে সান্ত্বনার বাণী সিঞ্চনে তার ভূমিকা মোটামুটি সার্থক হয়ে উঠেছে। ধনদাসও সর্বক্ষেত্রে শকারের অনুকৃতি নয়।
‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটকে যে চরিত্রচিত্রণ তৎকালীন এবং উত্তরকালিক বিচারে মধুসূদনের একটি অন্যতম ত্রুটি বলে সমালোচকেরা মনে করেন, তা হল বিলাসবতী-সখী মদনিকা। রাজকুমারী কৃষ্ণার জীবনে সুখ-শাস্তি অপসারণের কাজে তার দায়িত্ব ছিল অনেকখানি। জগৎসিংহ ও বিলাসবতীর প্রণয় কাহিনী, কৃষ্ণাকে জগৎসিংহের বিবাহের ইচ্ছা দেখে বিলাসবতীর ঈর্ষা, মদনিকা ও ধনদাসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রভৃতি প্রসঙ্গ নাট্যকারের মৌলিক কল্পনায় উদ্ভাবিত। ঘটনাগুলি নাটকের মধ্যে জটিলতা আনয়নে সহায়ক হয়েছে। মদনিকার কৃষ্ণকুমারী ও মানসিংহের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য যেন সেতুসম্ভব অবস্থান ঘটেছে। দুজনের মধ্যে আছে অপরিচয়ের দূরত্ব। তবু পরস্পরের মনের মধ্যে প্রেমের ভাব জাগাবার জন্য মদনিকার সক্রিয়তা সমালোচকের দৃষ্টিতে অনৈতিহাসিক, অবিশ্বাস্য এবং আপত্তিকর বলে মনে হয়েছে। অবশ্য স্বয়ং স্রষ্টার কাছে ‘Madanika is my favourite’, সম্ভবত, এখানে তিনি সংযুক্তাকে লাভ করার জন্য পৃথ্বীরাজের নিযুক্ত ধাত্রী এবং বাণভট্টের ‘কাদম্বরী’ গদ্যকাব্যে পত্রলেখার স্মরণে চরিত্রটি অঙ্কন করেছেন। নিরপেক্ষ বিচারে, নাটকের গতি নিয়ন্ত্রণে মদনিকার ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না। চরিত্রটিও প্রাণপ্রাচুর্যে উজ্জ্বল, জীবনরসে উদ্দীপ্ত, বুদ্ধিমত্তায় সজ্জিত।
নাট্যকার কাহিনীর মধ্যে মহারাষ্ট্রপতি, মানসিংহ ও আমির খাঁর বৃত্তাস্ত এনে ভারাক্রান্ত করেন নি। ইতিহাসের উপাদান নির্বাচনে এবং তার নাটকীয় সদ্ব্যবহারে তাঁর নাট্যশিক্ষাজ্ঞানের নিষ্ঠা ও মনন প্রকাশমান। ঐতিহাসিক পটভূমির উপস্থাপনে এবং ইতিহাসের তথ্য-নুড়ির মধ্য দিয়ে রসগঙ্গার ধ্রুবপদী জলতরঙ্গ সুর শোনানোর নৈপুণ্যে নাটকটি সার্থক ঐতিহাসিক নাটকরূপে বিবেচ্য।
‘কৃষ্ণকুমারী’র পর মধুসূদনের ‘মায়াকানন’ প্রকাশিত হয়। নাটকটি যেন কবি-চিত্তের বেদনাক্লাস্ত মনের প্রকাশ। অতীতের রূপকথাশ্রিত স্বপ্নাভিসারে যাত্রা করেছে কবি-মন। নাটকটির আদি-মধ্য ও অভ্যন্তরে বহে চলেছে শুধু বিষাদের অবিছিন্ন প্রবাহ। মানুষের অকৃত্রিম প্রণয়ের উপর দৈবশক্তির অকারণ অভিসম্পাত বর্ষিত হয়েছে।
প্রহসনঃ ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ ও ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’:
যুগন্ধর মধুসূদনের প্রতিভা শুধু মহাসমুদ্রের উদাত্ত মহাসঙ্গীতেই পরিপূর্ণ ছিল না, তা নির্ঝরিণীর হাস্যমধুর কলগীতিও সৃষ্টি করেছিল। বীররস প্রকাশের ক্ষেত্রে তিনি অগ্রজ মহানায়ক, আবার নির্মল হাস্যরসের ধারা সৃষ্টিতে তিনি নব-ভগীরথ। অশুদ্ধ ভাঁড়ামীর উদ্দামতা, ‘সুধারস অনাদরে’ তনুমন ক্ষয়কারী হলাহল পানে রুচিহীনতার বিষব্রণ বাংলার সাহিত্য-শরীরে যখন প্রকট, তখন ‘অলীক কুনাট্য রঙ্গে’ শোনা গেল তার কণ্ঠে নির্মল শুভ্র সংযত রসিকতার অতুলন নান্দীপাঠ। ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ আর ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসন দুটি নিয়ে আবির্ভূত হলেন প্রথম সার্থক প্রহসন স্রষ্টা এবং প্রথম শোভন রুচির নাট্যকার। মধুসূদনের প্রহসন দুটি বাস্তবতাবোধ, সমাজ-সমালোচনা আর কৌতুকরস সৃষ্টির এক অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু মধুকরী কল্পনার বর্ণোজ্জ্বল আকাশ-বিহার নয়, ধূলিমলিন বাস্তব জগতের কঠিন মৃত্তিকাতেও ছিল তার স্বচ্ছন্দ পদসঞ্চার। আকাশ এবং মাটির মধ্যে তিনি যেন এক সেতুবন্ধী সওদাগর।
ল্যাটিন ‘Farcio’ থেকে উদ্ভূত ইংরেজী ‘Farce’ শব্দটির প্রতিশব্দ ‘প্রহসন’, যার মৌল লক্ষ্য হল, হাস্যরসাত্মক জীবনালেখ্য সৃষ্টি—’The type of drama stuffed with low humour and extravagant wit’; সমকালীন ঘটনা বা কোনো প্রচলিত মতবাদের উপর প্রহসন রচনার দৃষ্টান্ত ভারতীয় সাহিত্যে অবিরল। নাট্য-শাস্ত্রকারের নির্দেশানুসারে সেখানে ভাষাকে স্বাভাবিক রাখা ও সমাজের নিম্নস্তরের লোকদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করা প্রায় অপরিহার্য ছিল। মধুসূদন প্রহসন রচনায় ভারতীয় ধারাই অনুসরণ করেছেন। অবশ্য ‘La Comedy of Farce’ জাতীয় বিদেশী প্রহসন থেকে উপাদান সংগ্রহ করা হয়ত এই মধুকরব্রতী শিল্পীর পক্ষে অসম্ভব ছিল না। তবে মুখ্যত নাট্যকার এখানে ভারতীয় নাট্যশাস্ত্র দ্বারা উদ্বোধিত হয়েছেন।
মধুসূদন দত্তের প্রহসনের ভাষা:
‘একেই কি বলে সভ্যতা’ সমসাময়িক নব্যবঙ্গের এক নিখুঁত আলেখ্য। ইয়ংবেঙ্গলের কালাপাহাড়ী মনোভাব, অনুকরণ-প্রিয়তা, মদ্যাসক্তি আর উচ্ছৃঙ্খল তারুণ্য এই প্রহসনে আশ্চর্য দক্ষতায় উদ্ঘাটিত হয়েছে। চরিত্রগুলি শুধু অঙ্কন নয়, একেবারে যেন বাস্তব সমাজ থেকে আহরিত। তাই এদের চরিত্র, সংলাপ ও বেশভূষা আমাদের অত্যস্ত সুপরিচিত।
মদ্যপানরত কালীনাথের সংলাপ : “রোসো ভাই আরো একটুখানি খেয়ে নি। দেখো যে গুড় জেনারেল হয়, সে কি সুযোগ পেলে তার গ্যারিসনে প্রোবিজন জমাতে কসুর করে”, নবকুমারের প্রাণোচ্ছল ভাষণ : “জেন্টেলমেন ইন দি নেম অফ ক্রীডস, লেট আস এনজয় আওয়ারসেলভস্”, কিংবা বাবাজীর আধুনিক মনোবৃত্তির পরিচয়“রাধে কৃষ্ণ! আ! বাঁচলেম; আজ কি কুলগ্নেই বাড়ী থেকে বের হয়েছিলেম” এই চরিত্রগুলি কল্পনার ফসল নয়, মধুসূদনের তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণশক্তি ও অভ্রান্ত লোকচরিত্রজ্ঞানের পরিচায়ক। নাটকের দ্বিতীয় গর্ভাঙ্কে নাট্যকার শান্তশীল বাঙালীর অন্তঃপুরে প্রবেশ করে তৎকালীন বঙ্গললনাদের যেন তুলে এনে আমাদের সামনে উপস্থিত করেছেন। তাদের অবসর সময়ে তাসখেলার অলস আমোদ-বিলাসের চিত্র– “আমি ভাই বিবি দিলাম”, “মর, ও যে আমাদের পিট, তুই বিবি দিলি কেন”, সেকেলে রঙ্গ-রসিকতা– “সেদিন বাবু জ্ঞানতরঙ্গিণী সভা থেকে ফিরে এসে ঠাকুরঝিকে দেখেই অমনি ধরে ওর গালে একটি চুমো খেলেন”, পারস্পরিক স্নেহপ্রীতি-সিক্ত কথাবার্তা : “ও ঠাকুরজি, আজ দেখ তোর ভারী আহ্লাদের দিন। দেখ হয়ত তোর দাদা আজ আবার এসে তোকে নিয়ে সেরকম রঙ্গ বাধায়” – অনবদ্য শিল্প-দক্ষতায় প্রস্ফুটিত। মেয়েলী হাস্যপরিহাস এবং তাদের কথাবলার ভঙ্গী এবং বৈশিষ্ট্য নাট্যকার আশ্চর্য সাবলীলতায় পরিবেশন করেছেন। প্রচলিত বাগ্ভঙ্গি এবং বাংলা প্রবাদ সংলাপে স্থান পাওয়ায় কোনো কোনো চরিত্র স্বল্প সময়েই মন কেড়ে নেয়। এ প্রসঙ্গে বারবিলাসিনীদের কথাবার্তা স্মরণ করা যায় “ওলো বামা, গুরো পোড়ামুখোর আক্কেল দেখলি”, “তোর যেমন পোড়া কপাল, তাই ও হতভাগাকে রেখেচিস। আমি হলে এতদিনে কুলোর বাতাস দিয়ে বিদেয় করতুম”, “আজ মুড়ো খ্যাংরা দে বিষ ঝাড়ব”, “মিনসের রকম দেখ না, যেন তুলসী বনের বাঘ।” এসব চরিত্র শতাব্দীর ভ্রূকুটি আর শাসন উপেক্ষা করে আজো স্বমহিমায় আসীন। সমাজ-সমস্যা এই নাটকে আছে। কিন্তু তার বাড়াবাড়ি নেই। শাণিত ব্যঙ্গ আছে, কিন্তু তাকে ছাপিয়ে উঠেছে অনর্গল হাসির অফুরন্ত প্রবাহ। বঙ্কিমচন্দ্র তাই প্রহসনটিকে রাজসিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন : “Is this Civilization ? Is the best (farce) in our language.” রামগতি ন্যায়রত্ন বলেছিলেন : “আমাদিগের বিবেচনায় এরূপ প্রকৃতির যতগুলি পুস্তক রচিত হইয়াছে তন্মধ্যে এইখানি সর্বোৎকৃষ্ট।”
মধুসূদনের দ্বিতীয় প্রহসন বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ তার অসামান্য প্রতিভার আর এক স্বাক্ষর। এখানেও নাট্যকার মৃত্তিকাকারী। স্থূল-বিরস-বিসদৃশ গ্রামজীবনের মর্মলোকে অবগাহন করে বীক্ষণ-নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন। নগর জীবনের বিদগ্ধ এবং বিলাসী জীবন ত্যাগী ‘সাহেব মধুসূদন’ এখানে নেমে এসেছেন গ্রামজীবনের পঙ্ককুণ্ডে, আর সেখান থেকেই যেন মুখের ভাষা সমেত তুলে এনেছেন হানিফ আর ফতেমাকে, গদাধর, ভক্তপ্রসাদ আর পুঁটিকে। প্রথম প্রহসনে তিনি চরিত্রের অসঙ্গতি দেখিয়ে মৃদু শ্লেষমিশ্রিত পরিহাসের উপভোগ্য রসসৃষ্টিতে তৎপর ছিলেন, আর দ্বিতীয় প্রহসনে তিনি চরিত্রের অপরাধ উদ্ঘাটন করে তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গের চাবুক নিয়ে যেন অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রথম প্রহসনে ইয়ংবেঙ্গলী সমাজের প্রতি তার মনোভাব অনেকখানি প্রশ্রয় শিথিল, কিন্তু দ্বিতীয় প্রহসনে প্রাচীনপন্থী, হিন্দুধর্ম ধ্বজাধারী ও ইন্দ্রিয়াসক্ত সমাজের প্রতি তাঁর ক্রোধ বহ্নিদীপ্তিতে প্রকাশিত এখানেও হাস্যরস প্রবহমান, কিন্তু ব্যঙ্গোক্তি প্রধানতম। মিনাণ্ডার রচিত নব গ্রীক কমেডি এবং পরবর্তীকালে বেন জনসন ও মলিয়ারের কমেডিতে যে জটিল ষড়যন্ত্রমূলক বৃত্তগঠনরীতি লভ্য, তার সঙ্গে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ প্রহসনের বৃত্তগঠনরীতির সাদৃশ্য অনুভব করা যায়। এখানে একদিকে জমিদার ভক্তপ্রসাদ, আর অন্যদিকে হানিফ-ফতেমা বাচস্পতির সম্মিলিত প্রতিরোধে এসেছে প্রহসনের রসনিবিড়তা। “ও পুঁটি, এটি তো বড়ো লাজুক দেখচি রে। আমার দিকে একবার চাইতেও কি নাই (ফতে) সুন্দরী, একবার বদন তুলে দুটো কথা কও আমার জীবন সার্থক হোক”—বৃদ্ধ ভক্তপ্রসাদের এই জান্তব কামনা চরিতার্থ করবার প্রচেষ্টা শেষে ব্যর্থ হয়েছে তার স্বীকারোক্তি : “আমি যেমন অশেষ দোষে দোষী ছিলেম, তেমনি তার সমুচিত প্রতিফলও পেয়েছি। এখন নারায়ণের কাছে এই প্রার্থনা করি যে এমন দুৰ্ম্মতি যেন কখনো না ঘটে।”
ভক্তপ্রসাদ নিঃসন্দেহে এক অনন্য ব্যঙ্গচিত্র, কিন্তু হানিফ ও ফতেমা বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয়রহিত। যশোহর জেলার চাষীর মুখের ভাষা এবং তাদের চরিত্রাঙ্কনে মধুসূদনের কৃতিত্ব সহজেই চোখে পড়ে। এদের গ্রাম্য সরলতা, মুখের ও প্রাণের কথা এবং সমস্যাক্লিষ্ট রূপ বিস্ময়কর নৈপুণ্যে উপস্থাপিত হয়েছে। “হা আল্লা, এ কাফের শালা কি মুসলমানের ইজ্জত মাত্যি চায়। দেখিস্ ফতি, যা কয়ে দিচ্ছি, যেন ইয়াদ থাকে, আর তুই সমঝে চলিস” আঞ্চলিক ভাষায় এই ধরনের জীবন্ত সংলাপ রচনার প্রথম কৃতিত্ব সম্ভবত মধুসূদনেরই প্রাপ্য, যার সার্থক উত্তরসূরী তোরাপ চরিত্রের স্রষ্টা দীনবন্ধু মিত্র।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টির তির্যকশীলতা উদ্ভব পরিস্থিতি রূপায়ণ ক্ষমতা জীবনের ভ্রান্তিসন্ধানের অসামান্য নিপুণতা, কৌতুকদীপ্ত বাক্যযোজনা এবং চরিত্র চিত্রণের অনন্য দক্ষতা ইত্যাদি গুণের জন্য তার প্রহসন দুটি বাংলা সাহিত্যের কালোত্তীর্ণ সম্পদ হয়ে উঠেছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় বেলগাছিয়া নাট্যশালার কর্তৃপক্ষ যাদের অনুরোধে কবি এই নাটক লিখেছিলেন, কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত প্রহসন দুটি মঞ্চস্থ করেন নি। তাই অভিমানী কবি আক্ষেপ করে বলেছেন : “Mind, you all broke my wings once about the face; if you play a similar trick this time I shall forswear Bengali and write books in Hebrew and Chinese.” বিতৃষ্ণ মধুসূদন আর প্রহসন লেখেন নি।
বাংলা নাট্যসাহিত্যে মধুসূদনই প্রথম নাট্যকার, যিনি প্রবর্তন করতে চেয়েছিলেন দর্শকের প্রয়োজনে ‘dramatic relief’। মহাকবির জীবন-নাট্যে অকালে যবনিকাপাত না ঘটলে হয়ত আরো বিস্ময় আমাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকত। কিন্তু তিনি ‘ক্ষণিকের অতিথি’ হয়ে রইলেন, যদিও এই ক্ষণকালের আবির্ভাব তাঁকে দান করেছিল গ্লানিহীন অমরতা।
Leave a comment