প্রশ্নঃ বাংলা দোভাষী পুঁথি সাহিত্যের উদ্ভব ও বিকাশ সংক্ষেপে আলোচনা কর। 

উত্তরঃ সাহিত্যের অন্যান্য শাখার মত দোভাষী পুঁথি সাহিত্যের উদ্ভবেও যুগপ্রভাব কাজ করেছে। সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পূর্বে অর্থাৎ মোগল শাসনের শেষ দিকে ইরান থেকে এদেশে ধর্মনেতা ও পীর ফকিরদের মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্নের চেষ্টা চলে, সে সময় এদেশে বসবাসরত ইরানী শিয়াদের মাধ্যমে ফারসি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। পীরের কাছে দেব-দেবীর পরাজয়ের ও পীর প্রতিষ্ঠা লাভের উপাখ্যান রচনা, ধর্মশাস্ত্রের অনুবাদ অনুকরণ ইত্যাদি শুরু হয়।

এছাড়া সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পর বাংলাদেশে এক অরাজক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। সংস্কৃতির বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ১৭৬০-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ ক্রান্তিকাল বলে পরিচিত। এ সময় কোন শক্তিমান সৃজনশীল কবির আবির্ভাব ঘটে নি। রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব শাসন ব্যবস্থার সাথে সমাজ ব্যবস্থার উপরও পড়েছে। ইংরেজ শাসন শুরু হয়, ফলে উচ্চবিত্ত মুসলমান ক্ষমতা হারিয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, এবং মুসলমানেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। আর্থসামাজিক অবক্ষয় দেখা দেয়, ফলে এ সময় এদেশে ভাল সাহিত্য নির্মিত হয় না, ফলে অশিক্ষিত জনগণকে আনন্দ দিতে পুঁথি সাহিত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শক্তিমান কবি ভারতচন্দ্রের মৃত্যুর পর, তার অঞ্চলে (ভুরসুট পরগণার বসন্তপুর) ইসমাইল গাজীকে উপলক্ষ করে একটা পীরের আস্তানা গড়ে ওঠে। সাধারণের কাছে তিনি বড় খাঁ গাজী নামে পরিচিত। এই বড় খাঁ গাজীকে কেন্দ্র করে ভুরসুট মান্দারনে পুঁথি সাহিত্যের কেন্দ্র গড়ে ওঠে। শত বছরে পুঁথি সাহিত্য নানা বিষয় নিয়ে রচিত হয়েছে। ফলে এ সাহিত্য নানা মাত্রা পেয়েছে। সে দিক বিবেচনায় বিষয়ানুসারে পুঁথি সাহিত্যকে আমরা চার ভাগে ভাগ করেছি-

১. প্রণয়োপাখ্যান— ইউসুফ জোলেখা, সয়ফুল মুলুক বদিউজ্জামান, লায়লী মজনু, গুলে বকাওলী ইত্যাদি।

২. যুদ্ধ সম্পর্কিত— জঙ্গনামা, আমীর হামজা, সোনাভান, কারবালা যুদ্ধ ইত্যাদি। 

৩. পীর পাঁচালি— গাজী কালু চম্পাবতী, সত্যপীরের পুঁথি ইত্যাদি।

৪. ইসলাম ধর্ম, ইতিহাস, নবী আউলিয়ার জীবনী ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কিত— কাসাসুল আম্বিয়া, তাজকিরাতুল আউলিয়া, হাজার মসলা ইত্যাদি।